ঢাকা ০৩:৪৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভূতে ধরা কি মানসিক রোগ, কী করবেন

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০২:৩৫:৫৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ নভেম্বর ২০২০
  • ১৬৪ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সাইকিয়াট্রি বা মানসিক রোগীদের মস্তিস্কের বিভিন্ন অংশে ডোপামিন নিউরোট্রান্সমিটার (এক ধরনের হরমোন) অনেক বেশি নিঃসৃত হয়।  মস্তিস্কের এই অতিরিক্ত ডোপামিনের প্রভাবে সাইকিয়াট্রি বা মানসিক রোগী কিছুটা অস্বাভাবিক আচরণ করেন।

সাইকিয়াট্রি রোগীদের এ অস্বাভাবিক আচার-আচরণ দেখে অনেকে বলে থাকেন রোগীটিকে ভূতে ধরেছে, উপরি বাতাস লেগেছে কিংবা কেউ তাকে জাদু টোনা বান মেরেছে।

আসলে এগুলো জাদু টোনা বান নয়। সাইকিয়াট্রি বা মানসিক রোগ সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান সীমিত বলেই সাইকিয়াট্রি রোগকে আমরা কেউ কেউ এমন অদ্ভুত নামে দিয়ে ডাকি।

অনেক মানসিক রোগী আমাদের বলেন, ‘আমার মাথার ভেতর সারাক্ষণ যেন পোকা গিজ গিজ করে’, আমার মনে হয় ‘আমার চামড়ার নিচে দিয়ে ছোট ছোট পোকা হাঁটাহাঁটি করছে’।

কখনও কখনও তারা বলেন যে, টের পাই আমার পেটের ভেতর লিভার, পাকস্থলী যেন এদিক থেকে ওদিক নাড়া চাড়া করছে।

তাদের এই লক্ষণগুলোকে সাইকিয়াট্রির ভাষায় বলা হয় ‘টেকটাইল হ্যালুসিনেশন’। আর এটি সেই ডোপামিন নিউরোট্রান্সমিটারের ওলট-পালটের জন্যই হয়ে থাকে।

হ্যালোসিনেশন আরও অনেক ধরনের হয়। যেমন অডিটরি হ্যালুসিনেশন এ রোগী কান দিয়ে অবাস্তব আওয়াজ শুনতে পান। তিনি শুনতে পান তাকে কেউ যেন কিছু বলছে।

টুকটাক হ্যালুসিনেশন আমাদের হতে পারে। যেমন একা আছেন, গভীর মনোযোগ দিয়ে কিছু করছেন। হঠাৎ মনে হলো, এই মাত্র কেউ যেন আপনাকে নাম ধরে ঢাকল।

মানসিক রোগীরা অনেক সময় তাদের নিকটজনকে হত্যা করে। বেশি হত্যাকাণ্ডের শিকার হয় আপনজন, নিজের শিশুসন্তানও। অনেক সময় মানসিক রোগী ভায়োলেন্ট হয়ে ডাক্তার-নার্স প্যারামেডিককেও হত্যা করে বসে। বাংলাদেশের এর অনেক নজির আছে। এটা কমান্ড হ্যালুসিনেশন এর ফলে হয়। রোগী শুনতে পায় কেউ তাকে বলছে বা কমান্ড করছে ‘একে মেরে ফেল’।

চিকিৎসা

সাইকিয়াট্রি বা মানসিক রোগীদের এসব অদ্ভুত আচরণ গুলো সম্পুর্নরুপে নিরাময় করা যায় এন্টিসাইকোটিক নামের একটা ইনজেকশন বা ট্যাবলেট প্রয়োগে। এই ওষুধ খুব দ্রুত এবং চমৎকার কাজ করে।

এটি ব্রেইনের বাড়তি ডোপামিনের কার্যকারিতা নষ্ট করে। ফলে যে রোগী এতক্ষণ একা একা কথা বলছিল, মানুষজনদের তাড়া করছিল, মারধর করছিল, দিনের পর দিন, রাতের পর চিৎকার চেচামেচি করে সব একাকার করে ফেলছিলো সে কিছুক্ষণের মধ্যে শান্ত সুবোধ হয়ে যায় এবং মাত্র কয়েক দিনের চিকিৎসায় সে সুন্দর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে।

তাই একে আমি বলি ‘ম্যাজিক ড্রাগ’। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের এক যুগান্তকারী আবিষ্কার। এটা মেন্টাল পেশেন্টদের জন্যে বিশ্বের সর্বাধুনিক এবং সবচেয়ে কার্যকরী ওষুধ। বাংলাদেশে এর দাম খুবই  কম।

লেখক: সাইকিয়াট্রিস্ট
সহকারী অধ্যাপক
সিলেট মেডিকেল কলেজ।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

ভূতে ধরা কি মানসিক রোগ, কী করবেন

আপডেট টাইম : ০২:৩৫:৫৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ নভেম্বর ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সাইকিয়াট্রি বা মানসিক রোগীদের মস্তিস্কের বিভিন্ন অংশে ডোপামিন নিউরোট্রান্সমিটার (এক ধরনের হরমোন) অনেক বেশি নিঃসৃত হয়।  মস্তিস্কের এই অতিরিক্ত ডোপামিনের প্রভাবে সাইকিয়াট্রি বা মানসিক রোগী কিছুটা অস্বাভাবিক আচরণ করেন।

সাইকিয়াট্রি রোগীদের এ অস্বাভাবিক আচার-আচরণ দেখে অনেকে বলে থাকেন রোগীটিকে ভূতে ধরেছে, উপরি বাতাস লেগেছে কিংবা কেউ তাকে জাদু টোনা বান মেরেছে।

আসলে এগুলো জাদু টোনা বান নয়। সাইকিয়াট্রি বা মানসিক রোগ সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান সীমিত বলেই সাইকিয়াট্রি রোগকে আমরা কেউ কেউ এমন অদ্ভুত নামে দিয়ে ডাকি।

অনেক মানসিক রোগী আমাদের বলেন, ‘আমার মাথার ভেতর সারাক্ষণ যেন পোকা গিজ গিজ করে’, আমার মনে হয় ‘আমার চামড়ার নিচে দিয়ে ছোট ছোট পোকা হাঁটাহাঁটি করছে’।

কখনও কখনও তারা বলেন যে, টের পাই আমার পেটের ভেতর লিভার, পাকস্থলী যেন এদিক থেকে ওদিক নাড়া চাড়া করছে।

তাদের এই লক্ষণগুলোকে সাইকিয়াট্রির ভাষায় বলা হয় ‘টেকটাইল হ্যালুসিনেশন’। আর এটি সেই ডোপামিন নিউরোট্রান্সমিটারের ওলট-পালটের জন্যই হয়ে থাকে।

হ্যালোসিনেশন আরও অনেক ধরনের হয়। যেমন অডিটরি হ্যালুসিনেশন এ রোগী কান দিয়ে অবাস্তব আওয়াজ শুনতে পান। তিনি শুনতে পান তাকে কেউ যেন কিছু বলছে।

টুকটাক হ্যালুসিনেশন আমাদের হতে পারে। যেমন একা আছেন, গভীর মনোযোগ দিয়ে কিছু করছেন। হঠাৎ মনে হলো, এই মাত্র কেউ যেন আপনাকে নাম ধরে ঢাকল।

মানসিক রোগীরা অনেক সময় তাদের নিকটজনকে হত্যা করে। বেশি হত্যাকাণ্ডের শিকার হয় আপনজন, নিজের শিশুসন্তানও। অনেক সময় মানসিক রোগী ভায়োলেন্ট হয়ে ডাক্তার-নার্স প্যারামেডিককেও হত্যা করে বসে। বাংলাদেশের এর অনেক নজির আছে। এটা কমান্ড হ্যালুসিনেশন এর ফলে হয়। রোগী শুনতে পায় কেউ তাকে বলছে বা কমান্ড করছে ‘একে মেরে ফেল’।

চিকিৎসা

সাইকিয়াট্রি বা মানসিক রোগীদের এসব অদ্ভুত আচরণ গুলো সম্পুর্নরুপে নিরাময় করা যায় এন্টিসাইকোটিক নামের একটা ইনজেকশন বা ট্যাবলেট প্রয়োগে। এই ওষুধ খুব দ্রুত এবং চমৎকার কাজ করে।

এটি ব্রেইনের বাড়তি ডোপামিনের কার্যকারিতা নষ্ট করে। ফলে যে রোগী এতক্ষণ একা একা কথা বলছিল, মানুষজনদের তাড়া করছিল, মারধর করছিল, দিনের পর দিন, রাতের পর চিৎকার চেচামেচি করে সব একাকার করে ফেলছিলো সে কিছুক্ষণের মধ্যে শান্ত সুবোধ হয়ে যায় এবং মাত্র কয়েক দিনের চিকিৎসায় সে সুন্দর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে।

তাই একে আমি বলি ‘ম্যাজিক ড্রাগ’। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের এক যুগান্তকারী আবিষ্কার। এটা মেন্টাল পেশেন্টদের জন্যে বিশ্বের সর্বাধুনিক এবং সবচেয়ে কার্যকরী ওষুধ। বাংলাদেশে এর দাম খুবই  কম।

লেখক: সাইকিয়াট্রিস্ট
সহকারী অধ্যাপক
সিলেট মেডিকেল কলেজ।