আত্মহত্যার বিপক্ষে সোচ্চার তারা

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আত্মহত্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য নানা পেশার মানুষ সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করছেন নিয়মিত। অভিনয় তারকারাও সোচ্চার এ বিষয়ে। সচেতনতামূলক কার্যক্রমে তারাও মানুষকে মোটিভেট করার কাজ করে যাচ্ছেন নিজেদের জায়গা থেকে।

জনপ্রিয় অভিনেতা মোশাররফ করিম এ বিষয়ে বলেন, ‘যে কোনো ধরনের বিষণ্নতা থেকেই আত্মহত্যা করে মানুষ। এ বিষণ্নতার কারণে চিন্তার জায়গায় একটি ব্লকেজ তৈরি হয়। এ থেকে পরিত্রাণের সবচেয়ে বড় উপায় হচ্ছে ইতিবাচক মনমানসিকতা ধারণ করতে হবে। আমি মনে করি জীবনটাকে সৃষ্টিকর্তার প্রতি ছেড়ে দিয়ে ভারমুক্ত থাকা যায়। যেহেতু আত্মহত্যা বিষয়টি নেগেটিভ তাই পজেটিভ চিন্তা করাটা জরুরি।

জীবনটা আসলেই অনেক সুন্দর। মানুষ যা ভাবে তাই দেখতে পায়। আমি যখন সুন্দর ভাবনা ভাবতে শুরু করব, সুন্দর কিছু দেখতে শুরু করব, আমি যখন সুন্দর বুঝব, তখন জীবনটা অর্থবহ লাগবে, উপভোগ্য লাগবে, ভালো লাগবে।’

আত্মহত্যার বিরুদ্ধে জনসচেতনতা তৈরির কাজ করছেন অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরীও। তিনি বলেন, ‘জীবনটাকে যখন কেউ ব্যর্থ মনে করেন তখনই সেই মানুষটা আত্মহত্যা করেন। আমি মনে করি স্বাভাবিক মৃত্যু ছাড়া মানুষের জীবনের শেষ নেই। সেই জীবনটা যদি গুরুত্বপূর্ণ হয় তাহলে মৃত্যুর পরও মানুষ বেঁচে থাকে। মৃত্যু কিন্তু সমস্যার সমাধান নয়। যিনি আত্মহত্যা করছেন, তিনি একই সঙ্গে তার বাবা মা আত্মীয় স্বজনদেরও বড় ধরনের শোকের ভেতর রেখে যাচ্ছেন। আমার কাছে আত্মহত্যা মানে হচ্ছে কাপুরুষতা। মানুষের জীবনে উত্থান পতন থাকবেই।

মানুষের উচিত সেই উত্থান পতনের মোকাবেলা করা। যারা কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে ভয় পান, তারাই আত্মহত্যা করেন। আমি এ কাজটি পছন্দ করি না। যারা এ ধরনের কাজ করতে চান তাদের উদ্দেশ্যে আমি একটা কথাই বলতে চাই, এটা কোনো সমাধান নয়। যিনি এ ধরনের কাজ করার চিন্তা ভাবনা করেন, তার ভাবা উচিত তার জীবনের মালিক কিন্তু তিনি নয়। সৃষ্টিকর্তা, বাবা-মা, আত্মীয়স্বজন সবাই একটি জীবনের অংশীদার।

একটি জীবন কখনই একার নয়। অন্যদিকে মানুষ এখন স্ট্রাগল করতে ভুলে যাচ্ছে। এতে করে হতাশা বাড়ে। হতাশ না হয়ে যেখানে গিয়ে মানুষ ব্যর্থ হয়, সেখান থেকেই যেন নতুন করে জীবনটাকে শুরু করতে পারে, এটাই হচ্ছে জীবনের মূল মন্ত্র।’

আত্মহত্যার বিরুদ্ধে অভিনেতা ও নির্মাতা জাহিদ হাসানও সচেতনতা তৈরির ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা সহজ জিনিসকে অনেক সময়ই সহজ হিসেবে দেখি না। আল্লাহপাক আমাদের এমনিতেই কত নিয়ামত দিয়ে রেখেছেন। আমরা বাতাস থেকে ফ্রি অক্সিজেন পাই। যখন অসুস্থ হই তখন বোঝা যায়, এ অক্সিজেনটি আল্লাহ কত বড় নিয়ামত হিসেবে দিয়েছেন। আমাদের জীবন কিন্তু একটাই। এ জীবনটাই আল্লাহ আমাদের উপহার দিয়েছেন।

নিজের সিদ্ধান্তে কিন্তু কেউ পৃথিবীতে আসেনি। যেটাতে নিজের কোনো ক্ষমতা নেই, সেটি অপব্যবহার করার অধিকার কারও নেই। যেই আত্মহত্যা করবে, সেই ভুল করবে। কখনই কেউই যেন এ ভুল কাজটি না করে, এটা আমার অনুরোধ।’

এ প্রজন্মের জনপ্রিয় অভিনেতা জিয়াউল ফারুক অপূর্বও আত্মহত্যার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে সচেতনতা তৈরির কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘ধর্মে বলা হয়েছে আত্মহত্যা মহাপাপ। আত্মহত্যা কখনই কোনো কিছুর সমাধান নয়। এর কারণে সেই ব্যক্তির পুরো পরিবারের ওপর কষ্টের ছায়াটি থেকে যায়। মানুষ মরণশীল।

অযাচিতভাবে স্বেচ্ছায় মরে যাওয়াটাকে কেউই সহজভাবে মেনে নিতে পারে না। অন্যদিকে সোশ্যাল মিডিয়ার অতি ব্যবহারের কারণে আমরা দিন দিন একা হয়ে যাচ্ছি। এতে করে এক ধরনের একাকিত্ব তৈরি হচ্ছে। ডিজিটাল সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে বেশি। ডিজিটাল সম্পর্ক দিয়ে বেঁচে থাকা কঠিন। আবার যদি আমরা মুখোমুখি বসে আড্ডায় আলোচনায় সময়গুলোকে অতিবাহিত করার চেষ্টা করি তাহলে সহজেই এমন অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয়কে রুখে দিতে পারব।’

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর