ঢাকা ০৫:১৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দিল্লি লকডাউন না মানায় হটস্পট

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৮:৩৬:০০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ জুলাই ২০২০
  • ২১৫ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ভারতের দিল্লিতে হু হু করে বাড়ছে করোনা রোগী। সেখানে ৮০ হাজারের বেশি মানুষ কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন। প্রাণ হারিয়েছেন আড়াই হাজারের বেশি।

বিবিসির এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ভারতেরই বিভিন্ন শহর যখন করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে অনেকটা সফলতা দেখাচ্ছে, তখন যেন মহামারী ঠেকানোর চেষ্টায় কুলিয়ে উঠতে পারছে না ভারতের রাজধানী।

এর কারণ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গোটা দেশে প্রায় তিন মাস যে ‘লকডাউন’ দিয়েছিলেন, তার সেই সুযোগ হেলায় হারিয়েছে দিল্লির কর্তৃপক্ষ। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, দুর্বল কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং, অতিরিক্ত আমলাতান্ত্রিক জটিলতার পাশাপাশি বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবায় মনোযোগ না দেয়া আর রাজনৈতিক বিভেদ রোগীর সংখ্যা বাড়িয়ে তুলছে এ শহরে। দিল্লি এখন করোনার হটস্পটে পরিণত হয়েছে।

ভারতের ছোট শহরগুলো বরং রাজধানীর চেয়ে ভালোভাবে সামাল দিতে পারছে এই মহামারী। কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং পদ্ধতিতে জোর দিয়েছিল কর্নাটক প্রদেশের রাজধানী বেঙ্গালুরু; সংক্রমণ বিস্তার ঠেকাতে বেঙ্গালুরুর এই ব্যবস্থাপনা কাজেও দিয়েছে।

চেন্নাইতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও মৃত্যুর হার সামান্য। ভারতের বাণিজ্যিক কেন্দ্র মুম্বাইও ছোঁয়াচে এই ভাইরাসে বিপর্যস্ত। তবে দিল্লিতে নতুন রোগীর সংখ্যা এখন ঊর্ধ্বমুখী। এ শহরের সবচেয়ে ভালো ও বড় সরকারি হাসপাতালগুলো রোগী সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। অথচ কিছুদিন আগে স্বাস্থ্যসহ সেবা খাতে নাগরিক সুবিধা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতিতে ভর করেই দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর পদে বসেন আম আদমি পার্টির অরবিন্দ কেজরিওয়াল।

জুনের গোড়া থেকেই রোগীর সংখ্যা বাড়ছিল দিল্লিতে; এই এক মাসেই শনাক্ত হয় ৫০ হাজার রোগী। ওই সময় সদ্য অনুমোদন পাওয়া অ্যান্টিজেন টেস্ট কিট দিয়েই অধিকাংশ পরীক্ষা করা হয়েছিল। আধা ঘণ্টার মধ্যেই ফলাফল দিতে পারা এই কিট ব্যবহারের কারণেই ওই মাসে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ব্যাপক হারে বেড়ে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

তবে নমুনা পরীক্ষাকেই সমাধান বলে মনে করছেন না পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশন অব ইন্ডিয়ার সভাপতি ও ভারতের জাতীয় কোভিড-১৯ টাস্কফোর্সের সদস্য কে শ্রীনাথ রেড্ডি। রেড্ডি বিবিসিকে বলেন, অবশ্যই টেস্ট করাতে হবে।

তবে অবস্থা বুঝে তা করতে হবে; উপসর্গ ও অন্যান্য দিক স্পষ্ট বুঝে নিয়েই পরীক্ষা করতে হবে। আর এজন্য রোগের শুরুতেই তা শনাক্ত করা ও ব্যাপকভাবে কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং করতে হবে; যার কোনোটাই এখানে করা হয়নি।

কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং নিয়ে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চের (আইসিএমআর) এক গবেষণা বলছে, জানুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে ভারতে গড়ে প্রতিটি শনাক্ত রোগীর বেলায় তার সংস্পর্শে আসা ২০ জনেরও পরীক্ষা করা হয়।

তবে ভারতে সবখানে এই অনুপাতে কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং করা হয়নি। কর্নাটকে যেখানে গড়ে রোগীর সংস্পর্শে আসা ৯৩ জনকে পরীক্ষা করা হয়েছে, দিল্লিতে এই সংখ্যা ছিল মাত্র ৯ জন।

দিল্লির স্যার গঙ্গা রাম হসপিটালের ভাসকুলার সার্জন আমবারিশ সাত্ত্বিক বলেন, এই মহামারী নিয়ে কুসংস্কার পেয়ে বসেছে সবাইকে। এখন এটা জনস্বাস্থ্য সংকট না হয়ে আইনশৃঙ্খলার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তিনি বলেন, যদি পুলিশ ফোন দেয়, যদি স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ফোন দিয়ে বলে, আপনাকে কোয়ারেন্টিনে নিয়ে যাওয়া হবে, তাহলে কে আর টেস্ট করতে আগ্রহী হবে? বরং মানুষ সময় নেবে এসব ক্ষেত্রে। এটা ছিল একেবারে শাস্তির মতো।

এছাড়া রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব কীভাবে দিল্লির মহামারীতে প্রভাব রেখেছে, তাও উঠে এসেছে বিবিসির প্রতিবেদনে। রাজ্য হিসেবে দিল্লিতে ক্ষমতাসীন কেজরিওয়ালের কর্তৃত্ব শক্ত হলেও তার ক্ষমতাশালী প্রতিপক্ষও রয়েছে। আবার দিল্লিতে থাকা কেন্দ্রীয় সরকারে রয়েছে বিজেপি, যার সঙ্গে আম আদমি পার্টির সম্পর্ক ভালো নয়।

এতে করে একের পর এক নির্দেশনায় জটিলতা দেখা দিচ্ছে; একবার ঘোষণা আসছে, তারপর তা বাতিল করা হচ্ছে। কখনও কখনও ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ঘোষণা পরিবর্তন হচ্ছে। এসব সহজেই আভাস দেয় মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে তাল মিলছে না।

অধ্যাপক রেড্ডি বলেন, একেকবার একেক সিদ্ধান্ত নিয়ে দুলতে পারব না আমরা; প্রতিদিনের এই নাটকের অবসান হোক, এর মধ্যে প্রতিবাদও হয়েছে এর বিরুদ্ধে। তার মতে, রাজধানী হওয়ার কারণেই দিল্লিতে নজরদারি সবচেয়ে ভালো হওয়ার কথা ছিল; অথচ বারবার সিদ্ধান্ত বদলকারী কর্তৃপক্ষের কারণে দিল্লি ব্যর্থ হয়ে রইল।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

দিল্লি লকডাউন না মানায় হটস্পট

আপডেট টাইম : ০৮:৩৬:০০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ জুলাই ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ভারতের দিল্লিতে হু হু করে বাড়ছে করোনা রোগী। সেখানে ৮০ হাজারের বেশি মানুষ কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন। প্রাণ হারিয়েছেন আড়াই হাজারের বেশি।

বিবিসির এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ভারতেরই বিভিন্ন শহর যখন করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে অনেকটা সফলতা দেখাচ্ছে, তখন যেন মহামারী ঠেকানোর চেষ্টায় কুলিয়ে উঠতে পারছে না ভারতের রাজধানী।

এর কারণ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গোটা দেশে প্রায় তিন মাস যে ‘লকডাউন’ দিয়েছিলেন, তার সেই সুযোগ হেলায় হারিয়েছে দিল্লির কর্তৃপক্ষ। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, দুর্বল কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং, অতিরিক্ত আমলাতান্ত্রিক জটিলতার পাশাপাশি বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবায় মনোযোগ না দেয়া আর রাজনৈতিক বিভেদ রোগীর সংখ্যা বাড়িয়ে তুলছে এ শহরে। দিল্লি এখন করোনার হটস্পটে পরিণত হয়েছে।

ভারতের ছোট শহরগুলো বরং রাজধানীর চেয়ে ভালোভাবে সামাল দিতে পারছে এই মহামারী। কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং পদ্ধতিতে জোর দিয়েছিল কর্নাটক প্রদেশের রাজধানী বেঙ্গালুরু; সংক্রমণ বিস্তার ঠেকাতে বেঙ্গালুরুর এই ব্যবস্থাপনা কাজেও দিয়েছে।

চেন্নাইতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও মৃত্যুর হার সামান্য। ভারতের বাণিজ্যিক কেন্দ্র মুম্বাইও ছোঁয়াচে এই ভাইরাসে বিপর্যস্ত। তবে দিল্লিতে নতুন রোগীর সংখ্যা এখন ঊর্ধ্বমুখী। এ শহরের সবচেয়ে ভালো ও বড় সরকারি হাসপাতালগুলো রোগী সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। অথচ কিছুদিন আগে স্বাস্থ্যসহ সেবা খাতে নাগরিক সুবিধা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতিতে ভর করেই দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর পদে বসেন আম আদমি পার্টির অরবিন্দ কেজরিওয়াল।

জুনের গোড়া থেকেই রোগীর সংখ্যা বাড়ছিল দিল্লিতে; এই এক মাসেই শনাক্ত হয় ৫০ হাজার রোগী। ওই সময় সদ্য অনুমোদন পাওয়া অ্যান্টিজেন টেস্ট কিট দিয়েই অধিকাংশ পরীক্ষা করা হয়েছিল। আধা ঘণ্টার মধ্যেই ফলাফল দিতে পারা এই কিট ব্যবহারের কারণেই ওই মাসে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ব্যাপক হারে বেড়ে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

তবে নমুনা পরীক্ষাকেই সমাধান বলে মনে করছেন না পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশন অব ইন্ডিয়ার সভাপতি ও ভারতের জাতীয় কোভিড-১৯ টাস্কফোর্সের সদস্য কে শ্রীনাথ রেড্ডি। রেড্ডি বিবিসিকে বলেন, অবশ্যই টেস্ট করাতে হবে।

তবে অবস্থা বুঝে তা করতে হবে; উপসর্গ ও অন্যান্য দিক স্পষ্ট বুঝে নিয়েই পরীক্ষা করতে হবে। আর এজন্য রোগের শুরুতেই তা শনাক্ত করা ও ব্যাপকভাবে কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং করতে হবে; যার কোনোটাই এখানে করা হয়নি।

কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং নিয়ে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চের (আইসিএমআর) এক গবেষণা বলছে, জানুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে ভারতে গড়ে প্রতিটি শনাক্ত রোগীর বেলায় তার সংস্পর্শে আসা ২০ জনেরও পরীক্ষা করা হয়।

তবে ভারতে সবখানে এই অনুপাতে কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং করা হয়নি। কর্নাটকে যেখানে গড়ে রোগীর সংস্পর্শে আসা ৯৩ জনকে পরীক্ষা করা হয়েছে, দিল্লিতে এই সংখ্যা ছিল মাত্র ৯ জন।

দিল্লির স্যার গঙ্গা রাম হসপিটালের ভাসকুলার সার্জন আমবারিশ সাত্ত্বিক বলেন, এই মহামারী নিয়ে কুসংস্কার পেয়ে বসেছে সবাইকে। এখন এটা জনস্বাস্থ্য সংকট না হয়ে আইনশৃঙ্খলার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তিনি বলেন, যদি পুলিশ ফোন দেয়, যদি স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ফোন দিয়ে বলে, আপনাকে কোয়ারেন্টিনে নিয়ে যাওয়া হবে, তাহলে কে আর টেস্ট করতে আগ্রহী হবে? বরং মানুষ সময় নেবে এসব ক্ষেত্রে। এটা ছিল একেবারে শাস্তির মতো।

এছাড়া রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব কীভাবে দিল্লির মহামারীতে প্রভাব রেখেছে, তাও উঠে এসেছে বিবিসির প্রতিবেদনে। রাজ্য হিসেবে দিল্লিতে ক্ষমতাসীন কেজরিওয়ালের কর্তৃত্ব শক্ত হলেও তার ক্ষমতাশালী প্রতিপক্ষও রয়েছে। আবার দিল্লিতে থাকা কেন্দ্রীয় সরকারে রয়েছে বিজেপি, যার সঙ্গে আম আদমি পার্টির সম্পর্ক ভালো নয়।

এতে করে একের পর এক নির্দেশনায় জটিলতা দেখা দিচ্ছে; একবার ঘোষণা আসছে, তারপর তা বাতিল করা হচ্ছে। কখনও কখনও ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ঘোষণা পরিবর্তন হচ্ছে। এসব সহজেই আভাস দেয় মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে তাল মিলছে না।

অধ্যাপক রেড্ডি বলেন, একেকবার একেক সিদ্ধান্ত নিয়ে দুলতে পারব না আমরা; প্রতিদিনের এই নাটকের অবসান হোক, এর মধ্যে প্রতিবাদও হয়েছে এর বিরুদ্ধে। তার মতে, রাজধানী হওয়ার কারণেই দিল্লিতে নজরদারি সবচেয়ে ভালো হওয়ার কথা ছিল; অথচ বারবার সিদ্ধান্ত বদলকারী কর্তৃপক্ষের কারণে দিল্লি ব্যর্থ হয়ে রইল।