কিশোরগঞ্জে নতুন করে আরও ৫২ জনের করোনা সনাক্ত, মোট সনাক্ত ১৩১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ঘোষিত ঢাকা রেড জোনের অধীন করোনার হটস্পট কিশোরগঞ্জ জেলায় লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ।

সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সোশ্যাল ট্রান্সমিশন ভয়াবহ রূপ ধারণ করায় পরিস্থিতির এমন অবনতি ঘটছে।

১৭, ১৮, ২১, ২২, ২৪ ও ২৫ জুন সংগৃহীত ৩৫৭ জনের নমুনা কিশোরগঞ্জের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পিসিআর ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়।

এই ৩৫৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করে নতুন করে ৫২ জনের করোনা সনাক্ত হয়েছে।

এ নিয়ে জেলায় এ পর্যন্ত মোট ১৩১৭ জনের শরীরে  করোনা সংক্রমণ চিহ্নিত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার নতুন করে করোনা সংক্রমণ সনাক্তের এ তালিকায় জেলার সদর উপজেলায় ২০ জন, হোসেনপুর উপজেলায় ১ জন, করিমগঞ্জ উপজেলায় ৬ জন, তাড়াইল উপজেলায় ১ জন, কটিয়াদী উপজেলায় ৩ জন, কুলিয়ারচর উপজেলায় ৩ জন, ভৈরব উপজেলায় ১৬ জন ও নিকলী উপজেলায় ২ জন রয়েছেন।

এ নিয়ে জেলায় এ পর্যন্ত মোট ১৩১৭ জনের শরীরে  করোনা সংক্রমণ চিহ্নিত হয়েছে।

জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সদস্য সচিব ও কিশোরগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মো. মুজিবুর রহমান বৃহস্পতিবার রাতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

নতুন করে এ ৫২ জনের শরীরে করোনা সংক্রমণ সনাক্ত হওয়ার পর এ জেলায় করোনা সংক্রমণের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩১৭ জনে।

জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সদস্য সচিব সিভিল ডা. মো. মুজিবুর রহমান  এবং কিশোরগঞ্জ শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. সৈয়দ মঞ্জুরুল হকের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, ব্যাপক হারে  কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের কারণে জ্যামিতিক হারে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।

এ সময় তারা বলেন, করোনা উপসর্গ গোপন করা লোকজনের সংস্পর্শে গিয়ে বিপুল সংখ্যক ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্য কর্মী, প্রশাসনের কর্মকর্তা, পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যরাও আক্রান্ত হয়ে পড়ে।

উপরন্তু; কোভিড-১৯ পজেটিভ অনেক লোকজন স্বাস্থ্য বিধি এবং আইসোলেশন কিংবা হোম কোয়ারেন্টিন না মেনে অবাধে বিচরণ করার অভিযোগ উঠেছে বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন।

এ কারণে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি আর-ও বাড়ছে। এ ধরনের রোগীদের চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ মুজিবুর রহমান।

তবে, এদের অধিকাংশই ইতিমধ্যেই সুস্থ হয়ে ওঠেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

আর এ সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী হটস্পট হিসাবে চিহ্নিত কিশোরগঞ্জ জেলার উপজেলা ভিত্তিক এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে, সদর উপজেলার ২৬৮ জন, হোসেনপুর উপজেলার ২৭জন, করিমগঞ্জ উপজেলায় ৮৯ জন, তাড়াইল উপজেলায় ৬৯ জন, পাকুন্দিয়ায় উপজেলায় ৫৪ জন, কটিয়াদী উপজেলায় ৭০ জন, কুলিয়ারচর উপজেলায় ৯১ জন, ভৈরব উপজেলায় ৪৮৪ জন, নিকলী উপজেলায় ২০জন, বাজিতপুর উপজেলায় ৮২ জন, ইটনা উপজেলায় ২৫ জন, মিঠামইন উপজেলায় ৩০ জন, ও অষ্টগ্রাম উপজেলায় ৮ জন।

আর এদের মধ্যে, তাড়াইল উপজেলায় দুই বছরের কোলের শিশুসহ এক পরিবারের ৪ জন, পাকুন্দিয়া উপজেলায় এক পরিবারের ৫ জন, বাজিতপুরে এক পরিবারের ৮ জন, ইটনাতে এক পরিনারের ৪ জন এবং ভৈরবে শিশুসহ এক পরিবারের ৭ সদস্য আক্রান্ত রয়েছেন।

এ ছাড়াও আক্রান্তদের তালিকায় ৪৬ জন ডাক্তার, ১৩ জন নার্স, ৫৮ জন স্বাস্থ্য কর্মী, পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্য ১১ জন এবং ২ জন সহকারী কমিশনার (ভূমি) এসিল্যাণ্ড রয়েছেন।

সূত্রমতে, আক্রান্তদের মধ্যে ৫৪২ জন ইতিমধ্যেই সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে গেছেন।

বাকিরা আইসোলেশন কিংবা হোম কোয়ারেন্টিনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

এ ছাড়া এ পর্যন্ত করোনা সংক্রমণের শিকার হয়ে  এ জেলায় এক শিশুসহ ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে।

সিভিল সার্জন জনাব মুজিবুর আরও জানান, পরিস্থিতি বিবেচনায় ইতিমধ্যেই জেলার সর্বাধিক করোনাক্রান্ত উপজেলা ভৈরবে লকডাউনের ন্যায় স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব রক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিতের ব্যনস্থা করা হয়েছে।

তবে, সরকার নির্ধারিত রেড, ইয়ালো ও গ্রীণ  জোনের  কার্যক্রম শুরু এবং নির্দেশনা আসলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জেলার ভৈরব উপজেলাকে লকডাউনের আওতায় আনা হবে।

দ্বিতীয় ধাপে জলা সদরকে লকডাউনের আওতায় আনার বিষয়টি গুরুত্ব পাবে বলে জানিয়েছেন জেলা করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ কমিটির সদস্য সচিব সিভিল সার্জন ডা. মো. মুজিবুর রহমান।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর