ঢাকা ০৩:৪৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কানপুর গ্রামের উন্নয়নে নিঃসঙ্গ এক বৃদ্ধের লড়াই পেনশনের টাকায় তৈরি করলেন ব্রিজ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০২:৫৬:০৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ মার্চ ২০২০
  • ২২৬ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ গ্রামের নাম কানপুর। না, উত্তরপ্রদেশের বিখ্যাত শহর কানপুর নয়। কানপুর উড়িষ্যার কেওনঝড় জেলার এক প্রত্যন্ত গ্রাম। এমন গ্রাম, যেখানে আজ অবধি বিদ্যুৎ পৌঁছয়নি। গ্রামের আশেপাশে হাসপাতাল, স্কুল-কলেজ কিছুই নেই। নেই পানীয় জলের সঠিক বন্দোবস্ত। কিন্তু সেই গ্রামেই অনেক মানুষ থাকেন যাঁরা স্বপ্ন দেখতে জানেন। নদী পেরিয়ে দিগন্তের সঙ্গে মিশে যায় চাষের মাঠ। সেখানে ফসল ফলান কানপুর গ্রামের মানুষ। ফসলের মাঠে পৌঁছতে এখনও পায়ে হেঁটে নদী পেরোতে হয় তাঁদের। রাজনৈতিক নেতা আর সরকারের গালভরা প্রতিশ্রুতিতে কাজ হয়নি কিছুই। নদীর উপর নেই কোনো সেতু। শুধু চাষের জন্যই নয়, অসুস্থ রোগীদের হাসপাতালে নিয়ে যেতেও নদী পেরোতে হয় পায়ে হেঁটে।

স্থানীয় পুঁজিপতি আর বিধায়কের ৩ লাখ টাকা কোথায় গিয়েছে, কেউ জানেন না। ১০ বছর পেরিয়ে গেল, ব্রিজ তৈরির কাজ তো শুরুও হল না। আর ঠিক এরকম সময়েই সরকারি চাকরি থেকে অবসর নিলেন গঙ্গাধর রাউত। গ্র্যাচুইটি আর প্রভিডেন্ট ফান্ডের কিছুটা টাকা তখন তাঁর হাতে এসেছে। অবশ্য নিজের ভবিষ্যতের জন্য সে টাকা জমিয়ে রাখতেই পারতেন তিনি। কিন্তু তাঁর কথায়, তিনি না করলে কোনোদিন ব্রিজ তৈরির কাজ শুরুই হত না। অতএব সমস্ত সঞ্চয় দিয়ে শুরু করে দিলেন ব্রিজ তৈরির কাজ। গঙ্গাধর আর তাঁর ভাইপো বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে দেখতেন ব্রিজ তৈরির প্রযুক্তি। হিসাব করতেন, খরচ কত হতে পারে। সে হিসাব অবশ্য মেলেনি কিছুই। তাঁদের ধারণা ছিল, ৩ লাখের মধ্যেই কাজ শেষ হয়ে যাবে নিশ্চই। কিন্তু নদীর উপর পিলার গাঁথতে গিয়েই শেষ হয়ে গেল ১০ লাখ টাকা।

এখানেই থেমে যেতে পারতেন গঙ্গাধর। কিন্তু তাহলে তো এই স্বপ্নের জন্মই হত না। মাসে মাসে পেনসনের টাকা দিয়ে এগিয়ে যেতে লাগলেন কাজ। এখনও চলছে। গঙ্গাধর বলছেন, আগামী মাসের মধ্যেই কাজ শেষ হয়ে যেতে পারে। কিন্তু তার জন্য তো টাকার দরকার। কোনোরকম সরকারি বা ব্যক্তিগত সাহায্য তো দূরে থাক, বেশ কয়েকমাস হল আটকে আছে তাঁর পেনশনের টাকাও। তিনি অবশ্য আশ্বাস পেয়েছেন, আগামী মাসেই সেই বকেয়া টাকা ঢুকে যাবে। আর তাহলেই শেষ করে ফেলতে পারবেন ব্রিজের কাজ।

আজকাল তো রাজনৈতিক নেতাদের মুখে গ্রামোন্নয়নের প্রতিশ্রুতি লেগেই আছে। আর সামনে নির্বাচন থাকলে তো কথাই নেই। কিন্তু তাতে কাজের কাজ আর কতটুকুই বা হয়? তবু এভাবেই নতুন গল্পের জন্ম দিলেন গঙ্গাধর। এদেশের আনাচে কানাচে হয়তো আরও কত মানুষ এভাবে দিন বদলের গল্প বুনছেন। আমরা তার কতটুকুই বা খোঁজ রাখি?

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

কানপুর গ্রামের উন্নয়নে নিঃসঙ্গ এক বৃদ্ধের লড়াই পেনশনের টাকায় তৈরি করলেন ব্রিজ

আপডেট টাইম : ০২:৫৬:০৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ মার্চ ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ গ্রামের নাম কানপুর। না, উত্তরপ্রদেশের বিখ্যাত শহর কানপুর নয়। কানপুর উড়িষ্যার কেওনঝড় জেলার এক প্রত্যন্ত গ্রাম। এমন গ্রাম, যেখানে আজ অবধি বিদ্যুৎ পৌঁছয়নি। গ্রামের আশেপাশে হাসপাতাল, স্কুল-কলেজ কিছুই নেই। নেই পানীয় জলের সঠিক বন্দোবস্ত। কিন্তু সেই গ্রামেই অনেক মানুষ থাকেন যাঁরা স্বপ্ন দেখতে জানেন। নদী পেরিয়ে দিগন্তের সঙ্গে মিশে যায় চাষের মাঠ। সেখানে ফসল ফলান কানপুর গ্রামের মানুষ। ফসলের মাঠে পৌঁছতে এখনও পায়ে হেঁটে নদী পেরোতে হয় তাঁদের। রাজনৈতিক নেতা আর সরকারের গালভরা প্রতিশ্রুতিতে কাজ হয়নি কিছুই। নদীর উপর নেই কোনো সেতু। শুধু চাষের জন্যই নয়, অসুস্থ রোগীদের হাসপাতালে নিয়ে যেতেও নদী পেরোতে হয় পায়ে হেঁটে।

স্থানীয় পুঁজিপতি আর বিধায়কের ৩ লাখ টাকা কোথায় গিয়েছে, কেউ জানেন না। ১০ বছর পেরিয়ে গেল, ব্রিজ তৈরির কাজ তো শুরুও হল না। আর ঠিক এরকম সময়েই সরকারি চাকরি থেকে অবসর নিলেন গঙ্গাধর রাউত। গ্র্যাচুইটি আর প্রভিডেন্ট ফান্ডের কিছুটা টাকা তখন তাঁর হাতে এসেছে। অবশ্য নিজের ভবিষ্যতের জন্য সে টাকা জমিয়ে রাখতেই পারতেন তিনি। কিন্তু তাঁর কথায়, তিনি না করলে কোনোদিন ব্রিজ তৈরির কাজ শুরুই হত না। অতএব সমস্ত সঞ্চয় দিয়ে শুরু করে দিলেন ব্রিজ তৈরির কাজ। গঙ্গাধর আর তাঁর ভাইপো বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে দেখতেন ব্রিজ তৈরির প্রযুক্তি। হিসাব করতেন, খরচ কত হতে পারে। সে হিসাব অবশ্য মেলেনি কিছুই। তাঁদের ধারণা ছিল, ৩ লাখের মধ্যেই কাজ শেষ হয়ে যাবে নিশ্চই। কিন্তু নদীর উপর পিলার গাঁথতে গিয়েই শেষ হয়ে গেল ১০ লাখ টাকা।

এখানেই থেমে যেতে পারতেন গঙ্গাধর। কিন্তু তাহলে তো এই স্বপ্নের জন্মই হত না। মাসে মাসে পেনসনের টাকা দিয়ে এগিয়ে যেতে লাগলেন কাজ। এখনও চলছে। গঙ্গাধর বলছেন, আগামী মাসের মধ্যেই কাজ শেষ হয়ে যেতে পারে। কিন্তু তার জন্য তো টাকার দরকার। কোনোরকম সরকারি বা ব্যক্তিগত সাহায্য তো দূরে থাক, বেশ কয়েকমাস হল আটকে আছে তাঁর পেনশনের টাকাও। তিনি অবশ্য আশ্বাস পেয়েছেন, আগামী মাসেই সেই বকেয়া টাকা ঢুকে যাবে। আর তাহলেই শেষ করে ফেলতে পারবেন ব্রিজের কাজ।

আজকাল তো রাজনৈতিক নেতাদের মুখে গ্রামোন্নয়নের প্রতিশ্রুতি লেগেই আছে। আর সামনে নির্বাচন থাকলে তো কথাই নেই। কিন্তু তাতে কাজের কাজ আর কতটুকুই বা হয়? তবু এভাবেই নতুন গল্পের জন্ম দিলেন গঙ্গাধর। এদেশের আনাচে কানাচে হয়তো আরও কত মানুষ এভাবে দিন বদলের গল্প বুনছেন। আমরা তার কতটুকুই বা খোঁজ রাখি?