জয়পুরহাটের কৃষকরা ধান তুলতে শুরু করেছেন। ইরি-বোরো ধানের লোকসানকে পুষিয়ে নিতে মহাজন ও এনজিওদের কাছে ঋণ অথবা ধার নিয়ে যে আশায় বুক বেঁধে তারা ধান লাগিয়েছিলেন সে আশা অনেকটা পূরণ হয়েছে। জয়পুরহাট জেলার চারদিকে মাঠে মাঠে শোভা পাচ্ছে শুধু ধান আর ধান। এরই মধ্যে কৃষক ধান কেটে ঘরে তোলা শুরু করেছে,।
এক বিঘা জমিতে ধান লাগানো থেকে শুরু করে কাটা ও মাড়াই বাবদ কৃষকের খরচ হয়েছে ৫ হাজার ৫শ` টাকা। এর মধ্যে বীজ ক্রয় ২শ` টাকা, জমি চাষ এক হাজার টাকা, সার ১২শ` টাকা, ওষুধ ৫শ` টাকা, শ্রমিক (ধান লাগানো, নিড়ানি, ধান কাটা, ঠোলাই) ২৬শ` টাকা।
Farmer
জয়পুরহাটে ১০ জাতের ধানের চাষ হয়েছে। সেগুলো হলো, ধানী গোল্ড, বিএডিসি-২, হাইব্রিড-২, বি আর-১১, ব্রি-৩৩,৩৪,৩৯, ৪১, ৪২, ৪৯, ৫২, ৬২, বিনা-৭, স্বর্ণা-৫, স্বর্ণা, গুটি স্বর্ণ, মামুন। এই ধানগুলোর মধ্য থেকে স্থানভেদে ১২-১৬ মণ করে ধান আবাদ হয়েছে।
জয়পুরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, এ বছর জয়পুরহাটের ৫টি উপজেলায় ৬৯ হাজার ৪শ` ২০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে ৭১ হাজার ৬শ` ২০ হেক্টর। ২০১৪ সালে ধান উৎপাদন হয়েছে দুই লক্ষ ২১ হাজার ৪শ` ৪৪ মেট্রিক টন। ২০১৫ সালে উৎপাদন আরও বেশি হবে বলে আশা করছেন কৃষি বিভাগ। কারণ এ বছর ধান উৎপাদনের আবহাওয়া অনুকূলে ছিল এবং জুলাই-আগস্ট মাসে প্রচুর বৃষ্টিপাত ছিল, ফলে পোকার আক্রমণ ও জেলার কোথাও কোথাও উচুঁ জমিতে পানির সমস্যা দেখা গেলেও সব জায়গায় পানি থাকায় ধানের ফলন খুবই ভালো হয়েছে।
Farmer
ধানের বাজারদর এখন পর্যন্ত স্থিতিশীল হয়নি। বিভিন্ন হাট-বাজারে বিভিন্ন দামে ধান বিক্রি হচ্ছে। বাজারে নতুন ধান বিক্রি হচ্ছে ৫৫০-৬২০ টাকা পর্যন্ত। তবে এখন যেসব ধান বিক্রি হচ্ছে তা গুদামজাত করার মতো নয়। তাই ধানের দাম বৃদ্ধি হচ্ছে না বলে জানান মিল মালিকরা। দ্রুত এ অবস্থার পরিবর্তন না ঘটলে প্রান্তিক চাষিরা মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। তাদের মাথা তুলে ঘুরে দাঁড়ানোই যেন অনেকটা অসম্ভব হয়ে পড়বে বলে একাধিক কৃষক জানান।
জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার কড়িয়া বাজারের কৃষক মাহমুদ হোসেন ও কালাই উপজেলার হাতিয়র গ্রামের মামুন কাজী জাগো নিউজকে জানান, ধানের দাম বৃদ্ধি হলে আমাদের লাভ হবে এবং আমরা ইরি-বেরো মৌসুমের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবো।
Farmer
জয়পুরহাট সদর উপজেলার ডালিম চাউল কলের স্বত্ত্বাধিকারী রুহুল আমিন জাগো নিউজকে বলেন, সরকার এবার ৩১ টাকা চালের দাম বেঁধে দিয়েছে। আমরা এখনো পুরোদমে চাল তৈরির জন্য ধান কেনা শুরু করিনি। তবে অল্প কিছুদিনের মধ্যে সব চাল কল মালিকরা ধান কেনা শুরু করবেন।
জয়পুরহাট চাল-কল মালিক সমিতির সভাপতি নায়েক আলী জাগো নিউজকে জানান, মিল মালিকরা ধান কেনা শুরু করলে অবশ্যই ধানের দাম এখনকার চেয়ে অবশ্যই বৃদ্ধি হবে।
জয়পুরহাট জেলা কৃষি অধিদফতরের উপ-পরিচালক এজেডএম সাব্বির ইবনে জাহান জাগো নিউজকে জানান, ধান ধরে রাখতে পারলে অবশ্যই ধানের দাম পাওয়া যাবে।