ইতালিয়ান নাগরিক তাবেলা সিজার হত্যাকাণ্ড নিয়ে বক্তব্য দেয়ার পর থেকেই নিজেকে আড়াল করেছেন বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম তথা স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ড. আবদুল মঈন খান। অবশ্য সিজার হত্যাকাণ্ড নিয়ে বক্তব্য দেয়ার পর সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় তথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রে থাকাকালীন বলেছিলেন, তাকে (মঈন খান) জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। প্রধানন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পর থেকেই মূলত নিজেকে আড়াল করেছেন বিএনপির এ নেতা।
এদিকে বর্তমানে তিনি কোথায় রয়েছেন তা নিয়েও নানা আলাপ আলোচনা শোনা যাচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন তিনি ঢাকার বাইরে অবস্থান করছেন। আবার কেউ বলছেন রাজধানীতে থেকেই দলের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন মঈন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা মহানগর পর্যায়ের এক নেতা বলেন, মঈন খান ভদ্র ও ভীতু প্রকৃতির মানুষ। তাই প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর তিনি ভয় পেয়েছেন। এজন্যই এখনও হয়তো দৃশ্যপটে আসছেন না। তবে ঘটনার দুই মাস পার হয়ে গেলেও এখনও প্রকাশ্যে না আসার কারণে তার উপর সন্দেহ আরও বাড়বে বলে মনে করেন দলের একাংশের নেতাকর্মীরা।
তাদের যুক্তি, সরকার হামলা-মামলা দিয়ে দলের শীর্ষ নেতাদেরকে হয়রানি করছে। এটা বিএনপির কাছে স্বাভাবিক একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। মঈন খানের প্রকাশ্যে এসে বিষয়টি খোলাসা করা দরকার। ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত না থেকেও দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকার কারণে নিজেই নিজের বিপদ ঠেকে আনবেন।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর রাতে রাজধানীর গুলশানে ইতালির নাগরিক তাবেলা সিজারকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ওই দিন রাতে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) এ হামলার দায় স্বীকার করেছে বলে জঙ্গি হুমকি পর্যবেক্ষণকারী ওয়েবসাইট ‘সাইট ইন্টিলিজেন্স গ্রুপ’ জানায়।
হত্যার ঘটনা নিয়ে যখন সারাদেশে তোলপাড় তারমধ্যেই পরদিন এ বিষয়ে কথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান। জাতীয় প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত আলোচনাসভায় যোগ দিয়ে তিনি বলেন, “সাম্প্রদায়িক জুজুর ভয় দেখিয়ে এদেশে কেউ পার পাবে না। আমরা জানি, পশ্চিমা বিশ্বে এই জুজুর ভয় দেখিয়ে এই সরকার হয়তো অনেক কিছু লুফে নেয়ার চেষ্টা করছে। হয়তো সাময়িকভাবে তারা লাভবান হতেও পারে। কিন্তু তারা যে সেটা পারবে না, জুজুর শিকার নিজেরাই হবে- তার প্রমাণ ঘটে গেছে গতকাল সন্ধ্যায়।”
ওই সময় জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্কে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওইদিন সন্ধ্যায় সেখানে এক সংবাদ সম্মেলনে মঈন খানের বক্তব্যকে আমলে নিয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ঢাকায় বিদেশি হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিএনপির এক নেতার ‘অতিউৎসাহ’ রহস্যজনক। ঢাকায় গিয়ে এ নেতার ‘অতিউৎসাহের’ ব্যাপারে খোঁজখবর নেয়া হবে।
প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পর বিভিন্ন মহলে আলোচনায় আসে মঈন খান কি তাহলে গ্রেফতার হচ্ছেন? যদিও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সরকারের কাছ থেকে এই ধরনের কোনো নির্দেশনা নেই বলে দাবি করে। তবে নিউইয়র্কে মঈন খানের ব্যাপারে খোঁজখবর নেয়ার কথা বললেও ঢাকার সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে কোনো কথা বলেননি।
এদিকে গ্রেফতারের গুঞ্জনের মধ্যেই হঠাৎ লাপাত্তা হয়ে যান সাবেক মন্ত্রী ড. আবদুল মঈন খান। দলের কর্মসূচিতে খুব বেশি পাওয়া না গেলেও এই শীর্ষ নেতা বিএনপির কূটনৈতিক বিষয়গুলোর দেখভাল করতেন।
মঈন খানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা আছে বিএনপি চেয়ারপারসনের এমন একজন উপদেষ্টা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই প্রতিবেদককে বলেন, মঈন খান কোথায় আছেন জানা নেই। হয়তো সার্বিক অবস্থার কারণে প্রকাশ্যে আসছেন না।
গত এক সপ্তাহ ধরে মঈন খানের ব্যক্তিগত মোবাইলে কল করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া গেছে।
দলের বিভিন্ন নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে থাকেন এমন একজন সহ-দফতর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনি জাগো নিউজে বলেন, সিকিউরিটি রিজনের কারণে মঈন খান হয়তো নিজেকে গুছিয়ে রেখেছেন।
তিনি বলেন, গুলশানে স্থায়ী কমিটির মিটিং ডাকা হলে হয়তো বোঝা যাবে তিনি আসেন কি-না। আমার সঙ্গেও দীর্ঘদিন ধরে কথা হয় না তার।