ঢাকা ০৭:৩৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অধিক মুনাফার প্রবণতায় খুলনায় বন্ধ গলদা চিংড়ি কেনা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৩৮:৫৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ নভেম্বর ২০১৫
  • ৪৭৪ বার

অসাধু চিংড়ি ডিপো মালিকদের অধিক মুনাফা লাভের প্রবণতায় খুলনার চিংড়ি রপ্তানিকারকরা গলদা চিংড়ি কেনা বন্ধ করে দিয়েছেন।গলদা চিংড়ি ধরার ভরমৌসুমে চিংড়ি কেনা বন্ধ করে দেয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে চিংড়ি চাষীরা। চলতি নভেম্বর মাসের ১৫ তারিখ থেকে চিংড়ি প্রক্রিয়াজাত কোম্পানিগুলো গলদা চিংড়ি কেনা বন্ধ করে দিয়েছেন।

দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলা খুলনায় ব্যাপক চিংড়ি চাষ হয়। আগে নোনা পানিতে বাগদা চিংড়ির বেশী হলেও বর্তমানে মিষ্টি পানিতে গলদা চিংড়ি চাষ বেড়েছে। মাঠ পর্যায়ে জুলাই থেকে গলদা চিংড়ি ধরা শুরু হয়। নভেম্বর মাসে গলদা মৌসুম শেষ হতে থাকে। তবে নভেম্বর মাসে হঠাৎ করে গলদা চিংড়ি কেনা বন্ধ করে দেয়ায় বিপাকে পড়েছেন মাঠ পর্যায়ে চাষীরা। অনেকে গলদা চিংড়িকে বাড়তি খাবার খাওয়াতে গিয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাছাড়া সময়মতো চিংড়ি ধরে বিক্রি করতে না পারলে এটি রোগাক্রান্ত হয়ে মারা যেতে পারে।

এ বিষয়ে ডুমুরিয়ার কোমলপুর গ্রামের চিংড়ি চাষি মাহবুবুর রহমান পিকুল বলেন, ঘেরে ১০ হাজার গলদার রেনু ছেড়েছিলাম যা এখন বিক্রয় উপযোগি হয়েছে। ঘের থেকে পানি অপসারন করে বোরো ধানের আবাদ করতে হবে। পানি সরানো যাচ্ছে না। আবার চিংড়ি না ধরলে সেটি মারা যেতে পারে। কিন্তু ডিপোতে গলদা নিচ্ছে না তাই গলদা চিংড়ি ধরতে পারছি না।তিনি জানান, তার ঘেরের চিংড়ি বিক্রি করে ৫/৬ লাখ টাকা পাওয়ার কথা।

বটিয়াঘাটার কৈয়া বাজারের চিংড়ি ডিপো মালিক শেখ মামুনুর রহমান বলেন, মাছ কোম্পানিগুলো বর্তমানে গলদা চিংড়ি নিচ্ছে না। তারা বলছে গলদা চিংড়িতে ব্যাপক অপদ্রব্য ( সাগু, জেলি, জলই) পুশ করা হচ্ছে। চিংড়ি কিনতে না পারার কারণে ঘর চালানো কঠিন হয়ে পড়ছে। আর্থিকভাবে লোকসান হচ্ছে।

ডুমুুরিয়া বাজারের আনোয়ারা পাইকারী মৎস্য আড়তের সাধারণ সম্পাদক গাজী মেহেদী হাসান বলেন, প্রতিদিন সকাল ও দুপুরে এখানে মাছের পাইকারী বাজার বসে। প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার কেজি চিংড়ি কেনা বেচা হত। কিন্তু এখন ২০/৩০ কেজির বেশী হচ্ছে না। তাও বিক্রি হচ্ছে অর্থেক দামে। চিংড়িতে পুশ করা হচ্ছে এমন অভিযোগে ভাল চিংড়িও নষ্ট করে ফেলছে প্রশাসন। তাই ডিপো মালিকরাও চিংড়ি কিনতে চাচ্ছে না।

তিনি অতিবিলম্বে মাছ কোম্পানিগুলো যাতে চিংড়ি ক্রয় করা শুরু করে তার জন্য মালিকদের নিকট দাবি জানিয়ে বলেন, পুশবিরোধী অভিযানের নামে হয়রানি বন্ধ করতে হবে।

বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস্ এক্সপোর্টার্টস এসাসিয়েশনের সহ-সভাপতি শেখ মো: আব্দুল বাকী বলেন, মাঠপর্যায়ে বর্তমানে গলদা চিংড়িতে ব্যাপক অপদ্রব্য পুশ করা হচ্ছে। এটি বন্ধ করতেই সাময়িকভাবে গলদা চিংড়ি কেনা বন্ধ রাখা হয়েছে।

মৎস্য অধিদপ্তরের মান নিয়ন্ত্রণ বিভাগের উপ-পরিচালক প্রফুল্ল কুমার সরকার বলেন, চিংড়ি প্রক্রিয়াজাত কোম্পানিগুলো নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে গলদা চিংড়ি কেনা বন্ধ করে দিয়েছেন। মাঠ পর্যায়ে চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশ করা হচ্ছে। গত মাসে পুশবিরোধী ৪৭টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়েছে।

তিনি বলেন, ডিপোমালিকদের প্রতিযোগিতামূলক দামে চিংড়ি ক্রয় করতে গিয়ে তারা বেশী দামে চিংড়ি কিনছেন। ফলে ক্ষতিপুষিয়ে নিতে চিংড়ির ওজন বাড়ানোর জন্য চিংড়িতে অপদ্রব্য ( সাগু, জেলি, জলই ইত্যাদি) পুশ করছে। এতে চিংড়ির আর্ন্তজাতিক বাজার নষ্ট হচ্ছে। তার হিসেব মতে, গত জুলাই, আগষ্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর এই চার মাসে ১১হাজার ২৬৩ মেট্রিকটন চিংড়ি উৎপাদিত হয়েছে।

খুলনা জেলায় এবার গলদা চিংড়ি ঘেরের সংখ্যা ৪৭ হাজার ৪৬৪ টি যার আয়তন ২০ হাজার ৭০৬ হেক্টর ( ১ হেক্টর= ২দশমিক ৪৭ একর) ও বাগদা চিংড়ির ঘেরের সংখ্যা ২২ হাজার ৭৬১ টি যার জমির পরিমাণ ৩৬ হাজার ৪০৫ হেক্টর।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

অধিক মুনাফার প্রবণতায় খুলনায় বন্ধ গলদা চিংড়ি কেনা

আপডেট টাইম : ১১:৩৮:৫৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ নভেম্বর ২০১৫

অসাধু চিংড়ি ডিপো মালিকদের অধিক মুনাফা লাভের প্রবণতায় খুলনার চিংড়ি রপ্তানিকারকরা গলদা চিংড়ি কেনা বন্ধ করে দিয়েছেন।গলদা চিংড়ি ধরার ভরমৌসুমে চিংড়ি কেনা বন্ধ করে দেয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে চিংড়ি চাষীরা। চলতি নভেম্বর মাসের ১৫ তারিখ থেকে চিংড়ি প্রক্রিয়াজাত কোম্পানিগুলো গলদা চিংড়ি কেনা বন্ধ করে দিয়েছেন।

দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলা খুলনায় ব্যাপক চিংড়ি চাষ হয়। আগে নোনা পানিতে বাগদা চিংড়ির বেশী হলেও বর্তমানে মিষ্টি পানিতে গলদা চিংড়ি চাষ বেড়েছে। মাঠ পর্যায়ে জুলাই থেকে গলদা চিংড়ি ধরা শুরু হয়। নভেম্বর মাসে গলদা মৌসুম শেষ হতে থাকে। তবে নভেম্বর মাসে হঠাৎ করে গলদা চিংড়ি কেনা বন্ধ করে দেয়ায় বিপাকে পড়েছেন মাঠ পর্যায়ে চাষীরা। অনেকে গলদা চিংড়িকে বাড়তি খাবার খাওয়াতে গিয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাছাড়া সময়মতো চিংড়ি ধরে বিক্রি করতে না পারলে এটি রোগাক্রান্ত হয়ে মারা যেতে পারে।

এ বিষয়ে ডুমুরিয়ার কোমলপুর গ্রামের চিংড়ি চাষি মাহবুবুর রহমান পিকুল বলেন, ঘেরে ১০ হাজার গলদার রেনু ছেড়েছিলাম যা এখন বিক্রয় উপযোগি হয়েছে। ঘের থেকে পানি অপসারন করে বোরো ধানের আবাদ করতে হবে। পানি সরানো যাচ্ছে না। আবার চিংড়ি না ধরলে সেটি মারা যেতে পারে। কিন্তু ডিপোতে গলদা নিচ্ছে না তাই গলদা চিংড়ি ধরতে পারছি না।তিনি জানান, তার ঘেরের চিংড়ি বিক্রি করে ৫/৬ লাখ টাকা পাওয়ার কথা।

বটিয়াঘাটার কৈয়া বাজারের চিংড়ি ডিপো মালিক শেখ মামুনুর রহমান বলেন, মাছ কোম্পানিগুলো বর্তমানে গলদা চিংড়ি নিচ্ছে না। তারা বলছে গলদা চিংড়িতে ব্যাপক অপদ্রব্য ( সাগু, জেলি, জলই) পুশ করা হচ্ছে। চিংড়ি কিনতে না পারার কারণে ঘর চালানো কঠিন হয়ে পড়ছে। আর্থিকভাবে লোকসান হচ্ছে।

ডুমুুরিয়া বাজারের আনোয়ারা পাইকারী মৎস্য আড়তের সাধারণ সম্পাদক গাজী মেহেদী হাসান বলেন, প্রতিদিন সকাল ও দুপুরে এখানে মাছের পাইকারী বাজার বসে। প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার কেজি চিংড়ি কেনা বেচা হত। কিন্তু এখন ২০/৩০ কেজির বেশী হচ্ছে না। তাও বিক্রি হচ্ছে অর্থেক দামে। চিংড়িতে পুশ করা হচ্ছে এমন অভিযোগে ভাল চিংড়িও নষ্ট করে ফেলছে প্রশাসন। তাই ডিপো মালিকরাও চিংড়ি কিনতে চাচ্ছে না।

তিনি অতিবিলম্বে মাছ কোম্পানিগুলো যাতে চিংড়ি ক্রয় করা শুরু করে তার জন্য মালিকদের নিকট দাবি জানিয়ে বলেন, পুশবিরোধী অভিযানের নামে হয়রানি বন্ধ করতে হবে।

বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস্ এক্সপোর্টার্টস এসাসিয়েশনের সহ-সভাপতি শেখ মো: আব্দুল বাকী বলেন, মাঠপর্যায়ে বর্তমানে গলদা চিংড়িতে ব্যাপক অপদ্রব্য পুশ করা হচ্ছে। এটি বন্ধ করতেই সাময়িকভাবে গলদা চিংড়ি কেনা বন্ধ রাখা হয়েছে।

মৎস্য অধিদপ্তরের মান নিয়ন্ত্রণ বিভাগের উপ-পরিচালক প্রফুল্ল কুমার সরকার বলেন, চিংড়ি প্রক্রিয়াজাত কোম্পানিগুলো নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে গলদা চিংড়ি কেনা বন্ধ করে দিয়েছেন। মাঠ পর্যায়ে চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশ করা হচ্ছে। গত মাসে পুশবিরোধী ৪৭টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়েছে।

তিনি বলেন, ডিপোমালিকদের প্রতিযোগিতামূলক দামে চিংড়ি ক্রয় করতে গিয়ে তারা বেশী দামে চিংড়ি কিনছেন। ফলে ক্ষতিপুষিয়ে নিতে চিংড়ির ওজন বাড়ানোর জন্য চিংড়িতে অপদ্রব্য ( সাগু, জেলি, জলই ইত্যাদি) পুশ করছে। এতে চিংড়ির আর্ন্তজাতিক বাজার নষ্ট হচ্ছে। তার হিসেব মতে, গত জুলাই, আগষ্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর এই চার মাসে ১১হাজার ২৬৩ মেট্রিকটন চিংড়ি উৎপাদিত হয়েছে।

খুলনা জেলায় এবার গলদা চিংড়ি ঘেরের সংখ্যা ৪৭ হাজার ৪৬৪ টি যার আয়তন ২০ হাজার ৭০৬ হেক্টর ( ১ হেক্টর= ২দশমিক ৪৭ একর) ও বাগদা চিংড়ির ঘেরের সংখ্যা ২২ হাজার ৭৬১ টি যার জমির পরিমাণ ৩৬ হাজার ৪০৫ হেক্টর।