ঢাকা ০৭:৪৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রস সংগ্রহে ব্যস্ত গাছিরা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৬:৩৬:৪৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০১৯
  • ২১০ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ছয় ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। পৌষ-মাঘ শীতকাল হলেও হেমন্তেই পরশ মিলে শীতের। এ সময় পাওয়া যায় সুস্বাদু খেজুর গাছের রস। শীতের সকালে মিষ্টি রোদে বসে এ রস খাওয়ার মজাই আলাদা।

আর এ শীতের শুরুতেই নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় খেজুর গাছের রস সংগ্রহ কাজে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন গাছিরা। প্রতিদিন সকালে গাছিদের খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করতে দেখা যায়। বর্তমানে এ পেশার ওপর অনেক মানুষ নির্ভরশীল। তবে আগের তুলনায় বর্তমানে খেজুর গাছের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে যাওয়ায় এর রসের ঐতিহ্য দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা যায়, এক সময় এলাকায় প্রচুর খেজুর গাছ ছিল। এখন খেজুর গাছের সংখ্যা অনেকটাই কমে গেছে। খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করতে হলে প্রথমে খেজুর গাছের মাথার অংশকে ভালো করে পরিষ্কার করার কাজ করতে হয়। এরপর পরিষ্কার করা সে সাদা অংশ থেকে বিশেষ কায়দায় ছোট-বড় কলসি (মাটির পাত্র) দিয়ে রস সংগ্রহ করা হয়। ছোট বড় বিভিন্ন রকমের খেজুর গাছে অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়েই গাছিদের কোমরে মোটা রশি বেঁধে গাছে ঝুলে খেজুর গাছের রস সংগ্রহের কাজ করতে হয়। গাছিরা প্রতিদিন বিকেলে খেজুর গাছের সাদা অংশ পরিষ্কার করে ছোট-বড় কলসি (মাটির পাত্র) বাঁধে রসের জন্য।

আবার ভোর সাড়ে ৫টা থেকে ৬ টার মধ্যে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে নিয়ে যায় তাদের নির্দিষ্ট স্থানে। কেউ কেউ এ রস এলাকার বিভিন্ন স্থানে ও হাটে-বাজারে (কাঁচা রস) খাওয়ার জন্য বিক্রয় করে। আবার কেউ কেউ সকালেই এ রস দিয়ে বিভিন্ন রকমের পাটালি ও লালি গুড় তৈরি করার কাজ শুরু করেন। গ্রামের অনেকে মানুষ শীতের সকালে সুস্বাদু এ খেজুর রস ও খেজুর রসের তৈরি গুড় নেয়ার জন্য অপেক্ষায় থাকে। এ খেজুর রসের তৈরি বিভিন্ন রকমের পাটালি ও লালি গুড় নিজ উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে চালান হচ্ছে জেলা শহরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। যা দিয়ে তৈরি হয় মুখোরোচক খাবার পায়েস ও হরেক রকমের লোভনীয় পিঠা। এটা বাঙালির হাজার বছরের সংস্কৃতির একটি অংশ। তাই শীত মৌসুমের শুরুতেই খেজুর গাছের রস সংগ্রহ করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা।

উপজেলার রেজাউল ইসলাম, আলতাব হোসেনসহ আরো অনেক গাছিরা বলেন, শীত মৌসুমের শুরুতেই আমরা খেজুর গাছের রস সংগ্রহের কাজ করে থাকি। বছরের এ পাঁচ মাস আমরা খেজুর গাছের রস সংগ্রহ করে থাকি। এ রস থেকে বিভিন্ন রকমের পাটালি ও লালি গুড় তৈরি করে বাজারে বিক্রি করে আমরা জীবিকা নির্বাহ করে থাকি।

তারা আরো বলেন, বর্তমানে যে হারে খেজুর গাছ হারিয়ে যেতে বসেছে এক সময় হয়তো আমাদের এলাকা থেকে খেজুর গাছ হারিয়ে যাবে। এ ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে চাইলে আমাদের সবার উচিত তালগাছের মতো বেশি করে খেজুর গাছ লাগানো এবং তা যত্ম সহকারে বড় করা। যদি আমরা আমাদের এ হাজার বছরের ঐতিহ্যকে আগামী প্রজন্মের জন্য ধরে রাখতে চাই তাহলে এ কাজে আমাদের সবার এগিয়ে আসা উচিত।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

রস সংগ্রহে ব্যস্ত গাছিরা

আপডেট টাইম : ০৬:৩৬:৪৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ছয় ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। পৌষ-মাঘ শীতকাল হলেও হেমন্তেই পরশ মিলে শীতের। এ সময় পাওয়া যায় সুস্বাদু খেজুর গাছের রস। শীতের সকালে মিষ্টি রোদে বসে এ রস খাওয়ার মজাই আলাদা।

আর এ শীতের শুরুতেই নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় খেজুর গাছের রস সংগ্রহ কাজে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন গাছিরা। প্রতিদিন সকালে গাছিদের খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করতে দেখা যায়। বর্তমানে এ পেশার ওপর অনেক মানুষ নির্ভরশীল। তবে আগের তুলনায় বর্তমানে খেজুর গাছের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে যাওয়ায় এর রসের ঐতিহ্য দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা যায়, এক সময় এলাকায় প্রচুর খেজুর গাছ ছিল। এখন খেজুর গাছের সংখ্যা অনেকটাই কমে গেছে। খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করতে হলে প্রথমে খেজুর গাছের মাথার অংশকে ভালো করে পরিষ্কার করার কাজ করতে হয়। এরপর পরিষ্কার করা সে সাদা অংশ থেকে বিশেষ কায়দায় ছোট-বড় কলসি (মাটির পাত্র) দিয়ে রস সংগ্রহ করা হয়। ছোট বড় বিভিন্ন রকমের খেজুর গাছে অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়েই গাছিদের কোমরে মোটা রশি বেঁধে গাছে ঝুলে খেজুর গাছের রস সংগ্রহের কাজ করতে হয়। গাছিরা প্রতিদিন বিকেলে খেজুর গাছের সাদা অংশ পরিষ্কার করে ছোট-বড় কলসি (মাটির পাত্র) বাঁধে রসের জন্য।

আবার ভোর সাড়ে ৫টা থেকে ৬ টার মধ্যে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে নিয়ে যায় তাদের নির্দিষ্ট স্থানে। কেউ কেউ এ রস এলাকার বিভিন্ন স্থানে ও হাটে-বাজারে (কাঁচা রস) খাওয়ার জন্য বিক্রয় করে। আবার কেউ কেউ সকালেই এ রস দিয়ে বিভিন্ন রকমের পাটালি ও লালি গুড় তৈরি করার কাজ শুরু করেন। গ্রামের অনেকে মানুষ শীতের সকালে সুস্বাদু এ খেজুর রস ও খেজুর রসের তৈরি গুড় নেয়ার জন্য অপেক্ষায় থাকে। এ খেজুর রসের তৈরি বিভিন্ন রকমের পাটালি ও লালি গুড় নিজ উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে চালান হচ্ছে জেলা শহরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। যা দিয়ে তৈরি হয় মুখোরোচক খাবার পায়েস ও হরেক রকমের লোভনীয় পিঠা। এটা বাঙালির হাজার বছরের সংস্কৃতির একটি অংশ। তাই শীত মৌসুমের শুরুতেই খেজুর গাছের রস সংগ্রহ করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা।

উপজেলার রেজাউল ইসলাম, আলতাব হোসেনসহ আরো অনেক গাছিরা বলেন, শীত মৌসুমের শুরুতেই আমরা খেজুর গাছের রস সংগ্রহের কাজ করে থাকি। বছরের এ পাঁচ মাস আমরা খেজুর গাছের রস সংগ্রহ করে থাকি। এ রস থেকে বিভিন্ন রকমের পাটালি ও লালি গুড় তৈরি করে বাজারে বিক্রি করে আমরা জীবিকা নির্বাহ করে থাকি।

তারা আরো বলেন, বর্তমানে যে হারে খেজুর গাছ হারিয়ে যেতে বসেছে এক সময় হয়তো আমাদের এলাকা থেকে খেজুর গাছ হারিয়ে যাবে। এ ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে চাইলে আমাদের সবার উচিত তালগাছের মতো বেশি করে খেজুর গাছ লাগানো এবং তা যত্ম সহকারে বড় করা। যদি আমরা আমাদের এ হাজার বছরের ঐতিহ্যকে আগামী প্রজন্মের জন্য ধরে রাখতে চাই তাহলে এ কাজে আমাদের সবার এগিয়ে আসা উচিত।