ঢাকা ০৫:১৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাইলট নিয়োগে পছন্দের প্রার্থীদের দিতে উত্তীর্ণ ৭৬ জনের মধ্যে ২২ জনকেই ভাইভায় ফেল করানো হয়েছিল

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৫৩:৫১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০১৯
  • ২০৯ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইন্সের ক্যাডেট পাইলট নিয়োগে স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে। পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ দিতে উত্তীর্ণ ৭৬ জনের মধ্যে ২২ জনকেই ভাইভায় ফেল করানো হয়েছিল। নিয়ম বহির্ভূত নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল অন্তত ৩২ জনকে।

ভঙ্গ করা হয়েছি ল সিভিল সার্ভিস বিধিমালা। এমনকি যুক্তিহীনভাবে নিয়োগের বয়স ৪০ বছর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছিল। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে এসব তথ্যে সত্যতা পাওয়া গেছে। দুদকের ঊর্ধ্বতন একটি  এমন তথ্য নিশ্চিত করেছে।

এর আগে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তদন্তেও পাইলট নিয়োগে অনিয়মের প্রমাণ পাওয়ার বিষয়টি উঠে এসেছিল।

অনুসন্ধানে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার পর শিগগিরই দায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে যাচ্ছে রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি বিরোধী সংস্থা। যে মামলায় ফাঁসছেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও আবুল মুনীম মোসাদ্দিক আহমেদসহ অন্তত চার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

এ বিষয়ে দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রনব কুমার ভট্টাচার্য্য  বলেন, বিমানের নিয়োগ দুর্নীতিসহ বেশ কিছু অনুসন্ধান চলমান রয়েছে। শিগগিরই মামলা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে মামলা দায়ের হওয়ার আগে সুনির্দিষ্ট কিছু বলা সম্ভব নয়।

অন্যদিকে দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা  বলেন, ক্যাডেট পাইলট নিয়োগে ভাইভা পরীক্ষায় সকল পরিচালকসহ কমিটির সদস্য সংখ্যা ছিল ১০ জন। গত জানুয়ারিতে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ৭৬ জন প্রার্থীর মধ্যে ২২ জনকে মৌখিক পরীক্ষায় ফেল করা হয়েছে। অথচ লিখিত পরীক্ষায় কম নম্বর প্রাপ্ত অনেককেই মৌখিক পরীক্ষায় পাশ করানো হয়েছে। অন্যদিকে ১০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষার সাথে আবার ১০০ নম্বরের ভাইভা নেওয়ার কোনো নজির বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস বিধিমালায় নেই।

তিনি আরো বলেন, এছাড়া পাইলট নিয়োগের বয়স যুক্তিহীনভাবে ৪০ বছর পর্যন্ত বৃদ্ধি করে নীতিহীন কাজ হয়েছে। যা বেরিয়ে এসেছে অনুসন্ধানে। অর্থ্যাৎ ক্যাডেট পাইলট নিয়োগ প্রক্রিয়ার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি থেকে শুরু করে ৩২ জনকে নিয়োগ প্রদান নিয়ম বহির্ভূত ছিল।

অভিযোগ রয়েছে দুই দফা বিমানের ক্যাডেট পাইলট নিয়োগে সীমাহীন দুর্নীতির পেছনে সাবেক এমডি মোসাদ্দিক আহমেদ ও ক্যাপ্টেন ফারহাত জামিলসহ পুরো নিয়োগ কমিটি। অভিযোগ অনুসন্ধানে সাবেক এমডি মোসাদ্দিক আহমেদ, সাবেক এমডি ও পরিচালক (ফ্লাইট অপারেশন্স) ক্যাপ্টেন ফারহাত হোসেন জামিল, ব্যবস্থাপক (নিয়োগ) ফখরুল হোসেন চৌধু্রী ও বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ট্রেনিং সেন্টার (বিএটিসি) অধ্যক্ষ পার্থ কুমার পণ্ডিতসহ বিমানের বর্তমান ও সাবেক ৭ পরিচালককে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক।

গত ২৯ জুলাই জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ক্যাপ্টেন ফারহাত হাসান জামিল দাবি করেন, ‘পাইলট নিয়োগ নিয়ে কোন দুর্নীতি হয়নি। আর ঘুষ, দুর্নীতিও হচ্ছে না।’

অনুসন্ধান কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

এর আগে দুর্নীতি অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে বিমানের ঊর্ধ্বতন ১০ জনের বিদেশ যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ চেয়ে পুলিশের বিশেষ শাখার এসপির (ইমিগ্রেশন) কাছে চিঠি পাঠানো হয়।

অভিযোগের বিষয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন যুগ্মসচিব জনেন্দ্র নাথ সরকার বিমানে পাইলট নিয়োগে দুর্নীতির তদন্ত করেন। সেই প্রতিবেদনের সুপারিশে বলা হয়েছিল, বিমানে পাইলট নিয়োগের আগে পরিচালনা পর্ষদের কাছ থেকে শূন্যপদের অনুমোদন নেয়া হয়নি। শিক্ষাগত যোগ্যতা ও বয়স নির্ধারণে বিমানের প্রচলিত নিয়মনীতি মানা হয়নি। বরং তারা নিজেদের ইচ্ছামতো ব্যাখ্যা দিয়ে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি সংশোধন করে এমডির ভাতিজাসহ কমপক্ষে ৩০-৩২ প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিল করে বিশেষ সুবিধা দেয়া হয়। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার মানবণ্টন ম্যানুয়াল অনুযায়ী না করে মৌখিক পরীক্ষায় শতকরা ৫০ নম্বর রেখে বিশেষ প্রার্থীদের সুবিধা দেয়া হয়। সুপারিশে ক্যাডেট পাইলট নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম সৃষ্টির জন্য নিয়োগের দায়িত্বপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে পরিচালনা পর্ষদ বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে মর্মেও মতামত দেয়া হয়।

সময় মতো পাইলট তৈরি করতে না পারায় বিমানকে বেসরকারি এয়ারলাইন্স থেকে পাইলট ভাড়া ও বিদেশি পাইলট নিয়োগ দিতে হচ্ছে চড়া দাম। এটা বিমানের ফ্লাইট অপারেশন শাখার চূড়ান্ত ব্যর্থতা বলে মনে করে সংশ্লিষ্টরা। একজন ক্যাডেট পাইলটকে গ্রাউন্ড ট্রেনিং, সিমুলেটর ট্রেনিং ও রুট চেক করতে কিছুতেই সাত মাসের বেশি সময় লাগে না। সঠিক সময়ে পাইলট তৈরি না করায় জরুরি ভিত্তিতে চড়া মূল্যে বেসরকারি একটি উড়োজাহাজ সংস্থা থেকে পাইলট ভাড়া করতে হয়। বেসরকারি বিমান সংস্থা থেকে আনা পাইলটদের ফার্স্ট অফিসার হিসেবে নিয়োগ দিয়ে প্রতি মাসে বিমানকে অনেক টাকা গচ্চা দিতে হচ্ছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

পাইলট নিয়োগে পছন্দের প্রার্থীদের দিতে উত্তীর্ণ ৭৬ জনের মধ্যে ২২ জনকেই ভাইভায় ফেল করানো হয়েছিল

আপডেট টাইম : ১০:৫৩:৫১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইন্সের ক্যাডেট পাইলট নিয়োগে স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে। পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ দিতে উত্তীর্ণ ৭৬ জনের মধ্যে ২২ জনকেই ভাইভায় ফেল করানো হয়েছিল। নিয়ম বহির্ভূত নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল অন্তত ৩২ জনকে।

ভঙ্গ করা হয়েছি ল সিভিল সার্ভিস বিধিমালা। এমনকি যুক্তিহীনভাবে নিয়োগের বয়স ৪০ বছর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছিল। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে এসব তথ্যে সত্যতা পাওয়া গেছে। দুদকের ঊর্ধ্বতন একটি  এমন তথ্য নিশ্চিত করেছে।

এর আগে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তদন্তেও পাইলট নিয়োগে অনিয়মের প্রমাণ পাওয়ার বিষয়টি উঠে এসেছিল।

অনুসন্ধানে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার পর শিগগিরই দায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে যাচ্ছে রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি বিরোধী সংস্থা। যে মামলায় ফাঁসছেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও আবুল মুনীম মোসাদ্দিক আহমেদসহ অন্তত চার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

এ বিষয়ে দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রনব কুমার ভট্টাচার্য্য  বলেন, বিমানের নিয়োগ দুর্নীতিসহ বেশ কিছু অনুসন্ধান চলমান রয়েছে। শিগগিরই মামলা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে মামলা দায়ের হওয়ার আগে সুনির্দিষ্ট কিছু বলা সম্ভব নয়।

অন্যদিকে দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা  বলেন, ক্যাডেট পাইলট নিয়োগে ভাইভা পরীক্ষায় সকল পরিচালকসহ কমিটির সদস্য সংখ্যা ছিল ১০ জন। গত জানুয়ারিতে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ৭৬ জন প্রার্থীর মধ্যে ২২ জনকে মৌখিক পরীক্ষায় ফেল করা হয়েছে। অথচ লিখিত পরীক্ষায় কম নম্বর প্রাপ্ত অনেককেই মৌখিক পরীক্ষায় পাশ করানো হয়েছে। অন্যদিকে ১০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষার সাথে আবার ১০০ নম্বরের ভাইভা নেওয়ার কোনো নজির বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস বিধিমালায় নেই।

তিনি আরো বলেন, এছাড়া পাইলট নিয়োগের বয়স যুক্তিহীনভাবে ৪০ বছর পর্যন্ত বৃদ্ধি করে নীতিহীন কাজ হয়েছে। যা বেরিয়ে এসেছে অনুসন্ধানে। অর্থ্যাৎ ক্যাডেট পাইলট নিয়োগ প্রক্রিয়ার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি থেকে শুরু করে ৩২ জনকে নিয়োগ প্রদান নিয়ম বহির্ভূত ছিল।

অভিযোগ রয়েছে দুই দফা বিমানের ক্যাডেট পাইলট নিয়োগে সীমাহীন দুর্নীতির পেছনে সাবেক এমডি মোসাদ্দিক আহমেদ ও ক্যাপ্টেন ফারহাত জামিলসহ পুরো নিয়োগ কমিটি। অভিযোগ অনুসন্ধানে সাবেক এমডি মোসাদ্দিক আহমেদ, সাবেক এমডি ও পরিচালক (ফ্লাইট অপারেশন্স) ক্যাপ্টেন ফারহাত হোসেন জামিল, ব্যবস্থাপক (নিয়োগ) ফখরুল হোসেন চৌধু্রী ও বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ট্রেনিং সেন্টার (বিএটিসি) অধ্যক্ষ পার্থ কুমার পণ্ডিতসহ বিমানের বর্তমান ও সাবেক ৭ পরিচালককে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক।

গত ২৯ জুলাই জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ক্যাপ্টেন ফারহাত হাসান জামিল দাবি করেন, ‘পাইলট নিয়োগ নিয়ে কোন দুর্নীতি হয়নি। আর ঘুষ, দুর্নীতিও হচ্ছে না।’

অনুসন্ধান কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

এর আগে দুর্নীতি অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে বিমানের ঊর্ধ্বতন ১০ জনের বিদেশ যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ চেয়ে পুলিশের বিশেষ শাখার এসপির (ইমিগ্রেশন) কাছে চিঠি পাঠানো হয়।

অভিযোগের বিষয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন যুগ্মসচিব জনেন্দ্র নাথ সরকার বিমানে পাইলট নিয়োগে দুর্নীতির তদন্ত করেন। সেই প্রতিবেদনের সুপারিশে বলা হয়েছিল, বিমানে পাইলট নিয়োগের আগে পরিচালনা পর্ষদের কাছ থেকে শূন্যপদের অনুমোদন নেয়া হয়নি। শিক্ষাগত যোগ্যতা ও বয়স নির্ধারণে বিমানের প্রচলিত নিয়মনীতি মানা হয়নি। বরং তারা নিজেদের ইচ্ছামতো ব্যাখ্যা দিয়ে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি সংশোধন করে এমডির ভাতিজাসহ কমপক্ষে ৩০-৩২ প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিল করে বিশেষ সুবিধা দেয়া হয়। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার মানবণ্টন ম্যানুয়াল অনুযায়ী না করে মৌখিক পরীক্ষায় শতকরা ৫০ নম্বর রেখে বিশেষ প্রার্থীদের সুবিধা দেয়া হয়। সুপারিশে ক্যাডেট পাইলট নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম সৃষ্টির জন্য নিয়োগের দায়িত্বপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে পরিচালনা পর্ষদ বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে মর্মেও মতামত দেয়া হয়।

সময় মতো পাইলট তৈরি করতে না পারায় বিমানকে বেসরকারি এয়ারলাইন্স থেকে পাইলট ভাড়া ও বিদেশি পাইলট নিয়োগ দিতে হচ্ছে চড়া দাম। এটা বিমানের ফ্লাইট অপারেশন শাখার চূড়ান্ত ব্যর্থতা বলে মনে করে সংশ্লিষ্টরা। একজন ক্যাডেট পাইলটকে গ্রাউন্ড ট্রেনিং, সিমুলেটর ট্রেনিং ও রুট চেক করতে কিছুতেই সাত মাসের বেশি সময় লাগে না। সঠিক সময়ে পাইলট তৈরি না করায় জরুরি ভিত্তিতে চড়া মূল্যে বেসরকারি একটি উড়োজাহাজ সংস্থা থেকে পাইলট ভাড়া করতে হয়। বেসরকারি বিমান সংস্থা থেকে আনা পাইলটদের ফার্স্ট অফিসার হিসেবে নিয়োগ দিয়ে প্রতি মাসে বিমানকে অনেক টাকা গচ্চা দিতে হচ্ছে।