নেদারল্যান্ডের রানি ম্যাক্সিমা জরিগুয়েতা সেরুতি আজ মঙ্গলবার দুপুর দেড়টায় বাংলাদেশ ব্যাংকে যাবেন। সেখানে তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমানের সঙ্গে একান্ত বৈঠকে মিলিত হবেন। এজন্য সব প্রস্তুতিও সম্পন্ন করেছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
রানি বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকরণ, নারীর ক্ষমতায়ন, মানবিক উন্নয়ন কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করবেন।
বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর সচিবালয়ের মহাব্যবস্থাপক এ এফ এম আসাদুজ্জামান বলেন, ‘রানি বাংলাদেশ ব্যাংকে আসলে তাকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে আমরা স্পেশ্যাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছি।’
এর আগে তিন দিনের সফরে রানি গতকাল সোমবার বাংলাদেশে আসেন। এ দিন সকাল ৮টা ২৫ মিনিটে তাকে বহনকারী বিমানটি হজরত শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান।
পরে রানি পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) সঙ্গে বৈঠক করেন। বর্তমানে তিনি হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে অবস্থান করছেন। সেখানে সোমবার বিকেলে বিভিন্ন ব্যাংকের নির্বাহীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান।
জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সবার জন্য অর্থনৈতিক সেবার সচেতনতা বাড়ানোই ডাচ রানির এ সফরের উদ্দেশ্য।
এদিকে রানির সফরকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে ব্যাপকভাবে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে সপ্তাহখানেক আগ থেকেই ঢাকায় অবস্থান করছে ডাচ নিরাপত্তা বাহিনীর একটি দল। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, এ সফরে রানি ম্যাক্সিমা রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর ড. আতিউর রহমান, পিকেএসএফ এবং ইউএনডিপির প্রতিনিধিসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এর বাইরে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, বেসরকারি খাত ও উন্নয়ন সহযোগী অংশীদারদের সঙ্গেও তার বৈঠকের কথা রয়েছে।
ঢাকার জাতিসংঘ উন্নয়ন প্রকল্পের কার্যালয় থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ঢাকার বাইরে বেশ কিছু স্থানে রানির সফরের কথা রয়েছে। তিনি নিম্নআয়ের মানুষের জীবনমান উপলব্ধি করতে চান। এ সময়ে তিনি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে স্বাবলম্বী নারী উদ্যোক্তা, গার্মেন্টস কর্মী, অন্যান্য গ্রাহক ও এজেন্টদের সঙ্গেও আলাপ করবেন। এর বাইরে ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে এর কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
ইউএনডিপি বাংলাদেশ জানায়, রানির বাংলাদেশ সফর বিশ্বের সব মানুষকে অর্থনৈতিক সেবায় অন্তর্ভুক্তির সচেতনতা তৈরির প্রয়াসের একটি অংশ। দারিদ্র্য দূরীকরণ, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়নের মতো বিষয়গুলোতে কাঙ্ক্ষিত সাফল্যের মাধ্যমে ২০৩০ সালের টেকসই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অর্থনৈতিক সেবায় যুক্ত হওয়া জরুরি।
আগামী বুধবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করে জাতিসংঘের এই বিশেষ দূতের সফরের বিভিন্ন দিক তুলে ধরবে ইউএনডিপি। ওইদিন রাতেই ঢাকা ছাড়বেন ম্যাক্সিমা।
জানা গেছে, উন্নয়নের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বা ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স ফর ডেভেলপমেন্ট বিষয়ক বিশেষ পরামর্শক হিসেবে রানি ম্যাক্সিমাকে ২০০৯ সালে নিয়োগ দেন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন।
বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য নিরসন, খাদ্য নিরাপত্তা ও শিক্ষার মতো উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ডাচ রানি ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে চলেছেন।