হাওর বার্তা ডেস্কঃ বিশ দিন হয়েছে শামীম-মিমের বিয়ে। কিন্তু এ ক’দিনে শামীম যেতে পারেনি মিমের কাছে। নানাভাবে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় শামীম। একবার কাছে যেতে পারলেই মিম ভুলে যাবে তার প্রেমিককে। আর শামীম হয়ে উঠবে তার স্বামী। দু’জনে সুখের সংসার গড়বে। বিয়ের পর ২০ দিন চেষ্টা করেও যখন মিমের কাছাকাছি যেতে পারেনি তখনই সিদ্ধান্ত নেয় মিমকে হত্যার। গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে মিমকে হত্যা করে শামীম।
গ্রেপ্তারের পর পুলিশের কাছে ও আদালতে হত্যাকাণ্ডের লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছে শামীম। গত রোববার ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে হত্যার দায় স্বীকার করেছে শামীম। বর্ণনা দিতে গিয়ে শামীম জানিয়েছে, বিয়ের পর প্রায় ২০ দিন কেটে গেলেও একবারও মিমের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারেনি সে। যতবারই চেষ্টা করেছে ততবারই নানা বাহানা ও বাধা দিয়েছে মিম। ৯ই নভেম্বর দুপুরে গোসলে যেতে শামীমকে তাড়া দেয় মিম। গোসল শেষে মিমকে খুঁজে পায়নি সে। বাসা ও আশপাশে কোথাও নেই। ফোন বন্ধ। পরবর্তীতে জানতে পারে প্রেমিক শান্ত’র সঙ্গে রয়েছে মিম। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ডেমরার স্থানীয় একটি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী মিমের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিলো একই এলাকার শান্তর। একই এলাকার বাসিন্দা হলেও পরিচয় ও সম্পর্কের সূত্রপাত হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকের মাধ্যমে। চুটিয়ে প্রেম করছিল মিম ও শান্ত। বিষয়টি মিমের পরিবার ও স্বজনদের নজরে এলে নানাভাবে বাধা দেয়া হয়।
তবুও এই প্রেম থেকে ফেরানো সম্ভব হয়নি মিমকে। মিমের সমবয়সী শান্ত একটি কসমেটিকস দোকানের কর্মচারী। এই প্রেম থেকে ফেরাতেই বিয়ের আয়োজন করা হয় নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের চাঁনপাড়ার বাসিন্দা মোটরমেকানিক শামীমের সঙ্গে। ২৪শে অক্টোবর বিয়ে হয় তাদের। বিয়ের পর স্বামীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক থেকে বিরত ছিল মিম। এর মধ্যেই স্বামীর বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে ডেমরার স্টাফ কোয়ার্টার মোড়ে গিয়ে ফোনে ডেকে আনে শান্তকে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে শান্ত জানায়, তাকে ডেকে নিয়ে মিম বলেছিল, ‘তুমি যদি আমাকে না নিয়ে যাও, আমি এই মুহূর্তে আত্মহত্যা করব।’ তারপর ডেমরায় বন্ধুর বোনের বাসায় মিমকে রেখেছিল শান্ত। ওই বাসা থেকেই বাবা হবি কাজীকে ফোনে মিম জানিয়েছিল, সে শান্তর সঙ্গে রয়েছে। কোনোভাবেই শান্ত ছাড়া অন্য কারও সংসার করবে না সে। বাবা হবি কাজী মেয়েকে ফিরে যেতে অনুনয় করেন। একপর্যায়ে বলেন, ফিরে এলে শামীমের সঙ্গে ডিভোর্স করিয়ে শান্তর সঙ্গেই বিয়ে দেয়া হবে। এই প্রতিশ্রুতিতেই ১১ই নভেম্বর ডেমরার বাঁশেরপুলের তাজমহল রোডে বাবার বাসায় ফিরে যায় মিম। এদিকে, শামীম ও মিমের পরিবারের মধ্যে এ বিষয়ে আলোচনা হয়। এক সপ্তাহ পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এই এক সপ্তাহ শামীমের সঙ্গে সংসার করতে মিমকে বুঝানোর চেষ্টা করবে তার মা-বাবা। পরদিনই ঘটে ঘটনা।
মিমের সঙ্গে কথা বলার জন্য ডেমরার ওই বাসায় যায় শামীম। তখন দুপুর ১২টা। দোতলা বাসার একটি কক্ষে মিমের সঙ্গে কথা বলছিল শামীম। বিয়ের পর এই রুমে থেকেছে তারা কয়েক রাত। গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে শামীম জানিয়েছে, দীর্ঘ সময় মিমকে বুঝানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় সে। তার ধারণা ছিলো, কোনোভাবে শারীরিক সম্পর্ক করতে পারলেই শান্তকে ভুলে তার প্রতি আকৃষ্ট হবে মিম। তাই জোর করতে থাকে। অর্ধ বিবস্ত্র করে ফেললেও মিমের বাধার কাছে পেরে ওঠেনি শামীম। একপর্যায়ে মিম খাট থেকে উঠে রুম থেকে বের হতে চেষ্টা করে। শামীমের বাধায় তা পারে না। পরে খাটের পাশের একটি মোড়ায় বসে। শামীম তখন মিমের হাত-পায়ে ধরে শান্তকে ভুলে যেতে অনুনয় করে। মিম এককথায় জানিয়ে দেয়, শান্তকে ভুলা সম্ভব না, একইভাবে শামীমের সঙ্গে সংসার করাও সম্ভব না। এ সময় শামীম বলতে থাকে, ‘আমি না পেলে তোকে আর কেউ পাবে না। কেউ না।’ তারপর মিমের ওড়না দিয়েই তার গলা চেপে ধরে। বাঁচার আপ্রাণ চেষ্টা করে মিম। শামীম শক্ত করে ওড়নায় টান দেয়। মিমের নাক, কান দিয়ে রক্ত বের হয়।
চোখ দু’টি বড় বড় হয়ে যায়। নিথর হয়ে যায় তার শরীর। মৃত্যু নিশ্চিত করে দ্রুত শ্বশুরের বাসা থেকে বের হয়ে যায় শামীম। পরে ঘরে ঢুকেই মিমের রক্তাক্ত নিথর দেহ দেখতে পান তার মা। খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায় পুলিশ। মিমের পিতা হবি কাজী বাদী হয়ে ডেমরা থানায় হত্যা মামলা করেন। পরবর্তীতে ডেমরা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে শামীমের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। ১৫ই নভেম্বর রাতে মুগদা এলাকার একটি বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় শামীমকে। গ্রেপ্তারের পর ১৭ই নভেম্বর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি দেন শামীম। ক্ষুদে ব্যবসায়ী হবি কাজীর তিন মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে মিম ছিল সবার বড়।