মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ঐশীকে বিয়ে করতে চাইলেন জাব্বার আল নাঈম নামের এক যুবক। যুবকটির বাড়ি চাঁদপুর জেলা উল্লেখ করা হয়েছে। ফেসবুক স্ট্যাটাসে যুবকটি লিখেছেন,—- ‘রাষ্ট্রের মাধ্যমে ঐশীকে জানাতে চাই- আমি তাকে বিয়ে করব। তাকে সুন্দর একটা জীবন উপহার দেব। সুন্দর একটা সমাজ দেব। আমার স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করে স্বাভাবিকভাবে বাঁচার সুযোগ দেব’। এদিকে বেশির ভাগ মানুষ ঐশীর ফাঁসির রায়ে আনন্দ প্রকাশ করেছে। ঐশীর রায় কার্যকরের মাধ্যমে সমাজে একটা দৃষ্টান্ত তৈরি হবে বলে মনে করছেন তারা। ঐশীর ফাঁসি পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমান হত্যা মামলায় তাদের মেয়ে ঐশী রহমানকে ‘ডাবল মৃত্যুদণ্ড’ দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি ৪০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরো দুই বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৩-এর বিচারক সাঈদ আহমেদ গত বৃহস্পতিবার জনাকীর্ণ আদালতে এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার সময় ঐশী রহমানসহ অপর দুই আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রায় ঘোষণার পর ঐশী কান্নায় ভেঙে পড়েন। রায় ঘোষণার পরই ঐশীকে সাজা পরোয়ানা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়। রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, সারাদেশ যেখানে শিশু নির্যাতনের বিপক্ষে সোচ্চার সেখানে স্রোতের বিপরীতে গিয়ে একজন শিশুর বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নেয়া খুবই কঠিন ছিল। আসামিপক্ষ থেকে ঐশীকে শিশু, ঘটনার সময় ঐশী মাতাল ছিল আর হত্যাকাণ্ড ছিল নিছক একটি দুর্ঘটনা -এমন দাবি নাকচ করে দিয়ে বিচারক বলেন, আদালতে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত যে, ঐশীর বয়স ১৮ বছরের বেশি। ঘটনার সময় তিনি শিশু ছিলেন না। আর হত্যাকাণ্ডটি নিছক দুর্ঘটনা ছিল না। এটি ছিল একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। সময় নিয়েই ঠাণ্ডা মাথায় খুন করেন ঐশী। বিচারক রায়ের পর্যবেক্ষণে আরো বলেন, ঐশীর খুন করার ইচ্ছা ছিল মূলত তার মাকে; কিন্তু শুধু মাকে খুন করে তো বাঁচতে পারবেন না মনে করে বাবাকেও খুন করেন তিনি। রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বিশেষ পিপি মাহাবুবর রহমান বলেন, হত্যাকাণ্ডের সময় ঐশীর বয়স যে ১৭ বছর ছিল তা প্রমাণ করতে পারেনি আসামিপক্ষ। কারণ আদালতের নির্দেশে গত বছর ২০ আগস্ট ঐশীকে পরীক্ষা করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিত্সকরা জানান, এই কিশোরীর বয়স ১৯ বছরের মতো। ঐশীর আইনজীবী মাহবুব হাসান রানা রায় প্রত্যাখ্যান করে বলেন, অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ‘ও’ লেভেলের শিক্ষার্থী ঐশীর বয়স বিদ্যালয়ের নথি অনুযায়ী ১৮ বছরের কম হওয়ায় তাকে রিমান্ডে নেয়ার মাধ্যমে শিশু আইন লঙ্ঘন করা হয়েছে। বয়সের সমর্থনে খুলনার একটি ক্লিনিকের জন্মসনদও আদালতে দাখিল করা হয়েছে। ঘটনার সময় ঐশীর বয়স ছিল ১৭ বছর। দেশের সংবিধান অনুযায়ী ১৮ বছরের নিচের কাউকে শিশু হিসেবে ধরা হয়। সে হিসাবে ঐশীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া ঠিক হয়নি। স্ত্রী, দুই সন্তান এবং শিশু গৃহকর্মীকে নিয়ে মালিবাগের চামেলীবাগের এক ফ্ল্যাটে থাকতেন পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (রাজনৈতিক শাখা) পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান। ২০১৩ সালের ১৬ আগস্ট ওই বাসা থেকেই তাদের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়। কেঁদেছেন ঐশী রায় ঘোষণার আগে প্রিজন ভ্যানে করে ঐশীকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এ সময় ওড়না দিয়ে তার মুখ ঢাকা ছিল। রায় ঘোষণাকালে আদালতে স্বাভাবিক ছিলেন তিনি। তবে ফাঁসির রায় শোনার পর আর কান্না ধরে রাখতে পারেননি ঐশী। কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে অঝোরে কাঁদতে থাকেন তিনি।
সংবাদ শিরোনাম
ঐশীকে বিয়ে করতে চান সেই যুবক
- Reporter Name
- আপডেট টাইম : ১১:১২:৫৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ নভেম্বর ২০১৫
- ৪০৩ বার
Tag :
জনপ্রিয় সংবাদ