ঢাকা ০৩:০৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গ্রামাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলে বাল্যবিয়ের হার তুলনামূলকভাবে বেশি …অধ্যক্ষ আসাদুল হক

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৪৩:১১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ নভেম্বর ২০১৫
  • ৬৪৯ বার

Exif_JPEG_420

বাংলাদেশে ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগেই ৭৩ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়ে যায়। আন্তর্জাতিক সংস্থা প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের ‘গেটিং দ্য এভিডেন্স : এশিয়া চাইল্ড ম্যারেজ ইনিশিয়েটিভ’ শীর্ষক গবেষণায় উঠে এসেছে এই উদ্বেগজনক তথ্য। এতে বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া ও পাকিস্তানের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। ওই দুটি দেশের তুলনায় বাংলাদেশের অবস্থা খারাপ। আরও যা উদ্বেগজনক তা হলো, দেশে ১২ থেকে ১৪ বছর বয়সেই বিয়ে হয়ে যায় ২৭ শতাংশ মেয়ের। এর পাশাপাশি ছেলেদের ক্ষেত্রে বাল্যবিয়ের হার মাত্র ২ দশমিক ৮ শতাংশ। মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে এ গবেষণার ফল প্রকাশ করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নওয়াব নবাব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে। দেশে বাল্যবিয়ের বিরুদ্ধে নারী সংগঠনগুলো সর্বদাই সোচ্চার ও উচ্চকণ্ঠ। বাল্যবিবাহ নিয়ে কিছু আইনকানুনও আছে। সরকারের উচ্চ পর্যায়েও মাঝে মধ্যে এ বিষয়ে উচ্চবাচ্য করতে দেখা যায়। কিন্তু বাল্যবিয়ের প্রকোপ কমছে না। রাজধানীসহ শহরাঞ্চলে এ বিষয়ে কিছু জনসচেতনতা লক্ষ্য করা গেলেও বস্তি অঞ্চল, গ্রামাঞ্চল ও চরাঞ্চলে অবস্থা ভিন্নতর। উত্তরাঞ্চলেও বাল্যবিয়ের হার তুলনামূলকভাবে বেশি। এ অবস্থায় গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্যাদি আমাদের উদ্বেগ বাড়িয়ে দেয় বৈকি! বাল্যবিয়ের কারণ হিসেবে যেসব বিষয়কে প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে : মেয়েদের ক্ষেত্রে শিক্ষার সুযোগের অভাব, অর্থনৈতিক সুযোগ ও স্বাস্থ্যসেবার অভাব, চরম দারিদ্র্য, দুর্বল বিচার ব্যবস্থা ও আইনগত প্রক্রিয়া, সর্বোপরি সামাজিক নিরাপত্তার অভাব ইত্যাদি। উদ্বেগজনক তথ্য হলো, অধিকাংশ ক্ষেত্রে পুরুষ কর্তৃক যৌন নির্যাতন ও চরম জেন্ডার অসমতাকে স্বাভাবিক দৃষ্টিতে দেখা এবং যৌক্তিক বলে মেনে নেয়া অনুঘটক হিসেবে কাজ করে থাকে বাল্যবিয়ের ক্ষেত্রে। সে অবস্থায় শৈশব ও কৈশোরে একটি মেয়ে স্কুলে যাতায়াতের ক্ষেত্রে নিজেকে অনিরাপদ বোধ করবে সেটাই স্বাভাবিক। সে অবস্থায় একটি মেয়ে স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে অথবা তার পরিবার থেকে তাকে বিয়ে দিয়ে দেয়ার জন্য উদ্যোগী হয়ে ওঠে। এই প্রেক্ষাপটে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান যথার্থই বলেছেন, প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব সরকারের। দেখা যাচ্ছে, বাল্যবিয়ের ক্ষেত্রে পরোক্ষভাবে হলেও সরকার তার দায়িত্ব এড়াতে পারে না।
মিলিনিয়াম ডেভলেপমেন্ট গোল বা এমডিজি অর্জনে বাংলাদেশের সাফল্য সার্কভুক্ত দেশগুলোর তুলনায় ভাল এবং তা ইতোমধ্যে প্রশংসিত হয়েছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। শিশু মৃত্যুর হার কমেছে এবং প্রাথমিক শিক্ষা সম্প্রসারণের হারও সন্তোষজনক। তবে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার প্রতিরোধ করে তৃণমূল পর্যায়ে শিক্ষার আরও প্রসার ঘটাতে হবে। মেয়েদের ক্ষেত্রে শিক্ষা বিশেষ করে ব্যবহারিক শিক্ষার বিস্তার ঘটাতে পারলে তারা ক্রমশ স্বাবলম্বী হয়ে উঠবে। এতে বাল্যবিয়ের হারও কমবে। মেয়েদের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা অর্জন বাল্যবিয়েসহ প্রায় সব ধরনের সমস্যা সমাধানে সহায়ক হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারকেও একটি সুনির্দিষ্ট ও সুদূরপ্রসারী সিদ্ধান্ত এবং পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
দেশের ভূখ- সীমিত। প্রায় ১৬ কেটি জনসংখ্যা অনুপাতে ভূমির পরিমাণ খুবই কম। দারিদ্র্যের পাশাপাশি অত্যধিক জনসংখ্যা রীতিমতো একটি সমস্যা বৈকি! বলা যায়, অন্যতম প্রধান সমস্যা। দুঃখজনক হলেও সত্য, এই দিকটি খুবই অবহেলিত এবং অনির্দেশিত। পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম জোরদার করার পাশাপাশি বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ করা গেলে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হ্রাস টেনে ধরা সম্ভব। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে মেয়েদের বিয়ের বয়স শিথিল অর্থাৎ ১৮-এর নিচে করা নিয়ে দোনামোনো মনোভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিদ্যমান অবস্থায় এর কোন সুযোগ নেই বলেই প্রতীয়মান হয়। বরং যে কোন মূল্যে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ ও প্রতিহত করাই বাঞ্ছনীয়। লেখক: হাওরবার্তা পত্রিকার প্রধান সম্পাদক

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

গ্রামাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলে বাল্যবিয়ের হার তুলনামূলকভাবে বেশি …অধ্যক্ষ আসাদুল হক

আপডেট টাইম : ১০:৪৩:১১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ নভেম্বর ২০১৫

বাংলাদেশে ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগেই ৭৩ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়ে যায়। আন্তর্জাতিক সংস্থা প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের ‘গেটিং দ্য এভিডেন্স : এশিয়া চাইল্ড ম্যারেজ ইনিশিয়েটিভ’ শীর্ষক গবেষণায় উঠে এসেছে এই উদ্বেগজনক তথ্য। এতে বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া ও পাকিস্তানের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। ওই দুটি দেশের তুলনায় বাংলাদেশের অবস্থা খারাপ। আরও যা উদ্বেগজনক তা হলো, দেশে ১২ থেকে ১৪ বছর বয়সেই বিয়ে হয়ে যায় ২৭ শতাংশ মেয়ের। এর পাশাপাশি ছেলেদের ক্ষেত্রে বাল্যবিয়ের হার মাত্র ২ দশমিক ৮ শতাংশ। মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে এ গবেষণার ফল প্রকাশ করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নওয়াব নবাব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে। দেশে বাল্যবিয়ের বিরুদ্ধে নারী সংগঠনগুলো সর্বদাই সোচ্চার ও উচ্চকণ্ঠ। বাল্যবিবাহ নিয়ে কিছু আইনকানুনও আছে। সরকারের উচ্চ পর্যায়েও মাঝে মধ্যে এ বিষয়ে উচ্চবাচ্য করতে দেখা যায়। কিন্তু বাল্যবিয়ের প্রকোপ কমছে না। রাজধানীসহ শহরাঞ্চলে এ বিষয়ে কিছু জনসচেতনতা লক্ষ্য করা গেলেও বস্তি অঞ্চল, গ্রামাঞ্চল ও চরাঞ্চলে অবস্থা ভিন্নতর। উত্তরাঞ্চলেও বাল্যবিয়ের হার তুলনামূলকভাবে বেশি। এ অবস্থায় গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্যাদি আমাদের উদ্বেগ বাড়িয়ে দেয় বৈকি! বাল্যবিয়ের কারণ হিসেবে যেসব বিষয়কে প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে : মেয়েদের ক্ষেত্রে শিক্ষার সুযোগের অভাব, অর্থনৈতিক সুযোগ ও স্বাস্থ্যসেবার অভাব, চরম দারিদ্র্য, দুর্বল বিচার ব্যবস্থা ও আইনগত প্রক্রিয়া, সর্বোপরি সামাজিক নিরাপত্তার অভাব ইত্যাদি। উদ্বেগজনক তথ্য হলো, অধিকাংশ ক্ষেত্রে পুরুষ কর্তৃক যৌন নির্যাতন ও চরম জেন্ডার অসমতাকে স্বাভাবিক দৃষ্টিতে দেখা এবং যৌক্তিক বলে মেনে নেয়া অনুঘটক হিসেবে কাজ করে থাকে বাল্যবিয়ের ক্ষেত্রে। সে অবস্থায় শৈশব ও কৈশোরে একটি মেয়ে স্কুলে যাতায়াতের ক্ষেত্রে নিজেকে অনিরাপদ বোধ করবে সেটাই স্বাভাবিক। সে অবস্থায় একটি মেয়ে স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে অথবা তার পরিবার থেকে তাকে বিয়ে দিয়ে দেয়ার জন্য উদ্যোগী হয়ে ওঠে। এই প্রেক্ষাপটে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান যথার্থই বলেছেন, প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব সরকারের। দেখা যাচ্ছে, বাল্যবিয়ের ক্ষেত্রে পরোক্ষভাবে হলেও সরকার তার দায়িত্ব এড়াতে পারে না।
মিলিনিয়াম ডেভলেপমেন্ট গোল বা এমডিজি অর্জনে বাংলাদেশের সাফল্য সার্কভুক্ত দেশগুলোর তুলনায় ভাল এবং তা ইতোমধ্যে প্রশংসিত হয়েছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। শিশু মৃত্যুর হার কমেছে এবং প্রাথমিক শিক্ষা সম্প্রসারণের হারও সন্তোষজনক। তবে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার প্রতিরোধ করে তৃণমূল পর্যায়ে শিক্ষার আরও প্রসার ঘটাতে হবে। মেয়েদের ক্ষেত্রে শিক্ষা বিশেষ করে ব্যবহারিক শিক্ষার বিস্তার ঘটাতে পারলে তারা ক্রমশ স্বাবলম্বী হয়ে উঠবে। এতে বাল্যবিয়ের হারও কমবে। মেয়েদের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা অর্জন বাল্যবিয়েসহ প্রায় সব ধরনের সমস্যা সমাধানে সহায়ক হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারকেও একটি সুনির্দিষ্ট ও সুদূরপ্রসারী সিদ্ধান্ত এবং পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
দেশের ভূখ- সীমিত। প্রায় ১৬ কেটি জনসংখ্যা অনুপাতে ভূমির পরিমাণ খুবই কম। দারিদ্র্যের পাশাপাশি অত্যধিক জনসংখ্যা রীতিমতো একটি সমস্যা বৈকি! বলা যায়, অন্যতম প্রধান সমস্যা। দুঃখজনক হলেও সত্য, এই দিকটি খুবই অবহেলিত এবং অনির্দেশিত। পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম জোরদার করার পাশাপাশি বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ করা গেলে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হ্রাস টেনে ধরা সম্ভব। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে মেয়েদের বিয়ের বয়স শিথিল অর্থাৎ ১৮-এর নিচে করা নিয়ে দোনামোনো মনোভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিদ্যমান অবস্থায় এর কোন সুযোগ নেই বলেই প্রতীয়মান হয়। বরং যে কোন মূল্যে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ ও প্রতিহত করাই বাঞ্ছনীয়। লেখক: হাওরবার্তা পত্রিকার প্রধান সম্পাদক