ঢাকা ০৩:৪০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

উঠে যাচ্ছে পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০২:১৩:০৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ নভেম্বর ২০১৫
  • ৩৪০ বার

অবশেষে উঠে যাচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষ‍া (পিইসি)। আগামী ২০১৭ সালের পর থেকে প্রাথমিক স্তরের এই সমাপনী পরীক্ষা থাকছে না। ২০১৮ সাল থেকে প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত হওয়ায় এই পরীক্ষা বাদ দেওয়া হবে। তবে, বহাল থাকছে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা। রবিবার শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সাংবাদিকদের এমন ইঙ্গিত দেন।
এদিকে, সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন শিক্ষাবিদরা। তারা বলেন, ৫ম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা উঠে গেলে শিক্ষার্থীদের ওপর থেকে মানসিক চাপ কমবে।
বর্তমান সরকার তার বিগত মেয়াদে ক্ষমতায় আসার প্রথম বছর ২০০৯ থেকে সারা দেশে প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা চালু হয়। বর্তমানে এটাকে দেশের সব থেকে বড় পাবলিক পরীক্ষা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। প্রতি বছর পিইসিতে ৩০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী এই পরীক্ষায় অংশ নিয়ে থাকে।
এদিকে, ২০০৯ সাল থেকে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়ে এলেও জাতীয় শিক্ষা নীতি ২০১০ এ প্রাথমিক স্তরে এ ধরনের পরীক্ষা অনুষ্ঠানের বিষয়ে কোনও সুপারিশ ছিল না। শিক্ষানীতিতে প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণিতে উন্নীত করার সুপারিশ করা হয়। যেটা সরকার পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করে আসছে। আগামী ২০১৮ সাল থেকে এটা পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়িত হবে বলে সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে।
গত ২০০৯ সাল থেকে সমাপনী পরীক্ষা চালুর পর থেকে বিভিন্ন মহল এর বিরোধিতা করে আসছিলেন। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মাথায় পরীক্ষার বোঝা চাপিয়ে দেওয়ায় কঠোর সমালোচনা করেছেন তারা। এরইমধ্যে পরীক্ষা নিয়ে বিভিন্ন অব্যবস্থাপনা ও প্রশ্নপত্র ফাঁসের ‍অভিযোগে সমালোচকদের পাল্লা আরও ভারী হয়ে উঠেছে। অবশ্য, সরকারের পক্ষ থেকে সমালোচনাকে পাত্তা না দিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীকে সরকারের একটি বড় সাফল্য বলেই ফলাও করে প্রচার করা হচ্ছে।
এরইমধ্যে রবিবার শুরু হওয়া জেএসসি পরীক্ষার সার্বিক পরিস্থিতি পরিদর্শনের গিয়ে শিক্ষামন্ত্রী পিইসি পরীক্ষা বাদ দেওয়ার কথা জানান। তিনি বলেন, আগামী ২০১৮ সাল থেকে প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত হবে এবং তা হবে সম্পূর্ণ অবৈতনিক। তাই ওই বছর থেকে আর পঞ্চম শ্রেণিতে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ থাকবে না।
শিক্ষামন্ত্রীর এই ঘোষণা বাস্তবায়িত হলে চলতি বছর ছাড়া সামনে আর দুইটি পিইসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। আগামী ২২ নভেম্বর থেকে সারাদেশে পিইসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ বছর ৩০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী এই পরীক্ষায় অংশ নেবে বলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
পিইসি পরীক্ষা বাদ দিয়ে প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত করার ঘোষণায় স্বাগত জানিয়েছেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এম অহিদুজ্জামান। রবিবার এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমি বরাবরই প্রাথমিক স্তরের এই সমাপনী পরীক্ষার বিপক্ষে ছিলাম। সরকারের এই ধরনের সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই। এতে করে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ কমবে এবং শিক্ষার মানও উন্নতি হবে।
নিউজিল্যান্ডের শিক্ষা ব্যবস্থার উদাহরণ দিয়ে এই শিক্ষাবিদ বলেন, নিউজিল্যান্ডই প্রথম প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত করে। বিশ্বের অন্যান্য দেশে তাদের এই উদ্যোগ ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়। পরে অনেক উন্নত দেশও নিউজিল্যান্ডের ওই্ মডেল অনুসরণ করে এখন প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত করছে। আমাদের দেশেও এটা চালু হলে শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি পাবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

উঠে যাচ্ছে পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা

আপডেট টাইম : ০২:১৩:০৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ নভেম্বর ২০১৫

অবশেষে উঠে যাচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষ‍া (পিইসি)। আগামী ২০১৭ সালের পর থেকে প্রাথমিক স্তরের এই সমাপনী পরীক্ষা থাকছে না। ২০১৮ সাল থেকে প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত হওয়ায় এই পরীক্ষা বাদ দেওয়া হবে। তবে, বহাল থাকছে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা। রবিবার শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সাংবাদিকদের এমন ইঙ্গিত দেন।
এদিকে, সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন শিক্ষাবিদরা। তারা বলেন, ৫ম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা উঠে গেলে শিক্ষার্থীদের ওপর থেকে মানসিক চাপ কমবে।
বর্তমান সরকার তার বিগত মেয়াদে ক্ষমতায় আসার প্রথম বছর ২০০৯ থেকে সারা দেশে প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা চালু হয়। বর্তমানে এটাকে দেশের সব থেকে বড় পাবলিক পরীক্ষা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। প্রতি বছর পিইসিতে ৩০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী এই পরীক্ষায় অংশ নিয়ে থাকে।
এদিকে, ২০০৯ সাল থেকে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়ে এলেও জাতীয় শিক্ষা নীতি ২০১০ এ প্রাথমিক স্তরে এ ধরনের পরীক্ষা অনুষ্ঠানের বিষয়ে কোনও সুপারিশ ছিল না। শিক্ষানীতিতে প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণিতে উন্নীত করার সুপারিশ করা হয়। যেটা সরকার পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করে আসছে। আগামী ২০১৮ সাল থেকে এটা পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়িত হবে বলে সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে।
গত ২০০৯ সাল থেকে সমাপনী পরীক্ষা চালুর পর থেকে বিভিন্ন মহল এর বিরোধিতা করে আসছিলেন। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মাথায় পরীক্ষার বোঝা চাপিয়ে দেওয়ায় কঠোর সমালোচনা করেছেন তারা। এরইমধ্যে পরীক্ষা নিয়ে বিভিন্ন অব্যবস্থাপনা ও প্রশ্নপত্র ফাঁসের ‍অভিযোগে সমালোচকদের পাল্লা আরও ভারী হয়ে উঠেছে। অবশ্য, সরকারের পক্ষ থেকে সমালোচনাকে পাত্তা না দিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীকে সরকারের একটি বড় সাফল্য বলেই ফলাও করে প্রচার করা হচ্ছে।
এরইমধ্যে রবিবার শুরু হওয়া জেএসসি পরীক্ষার সার্বিক পরিস্থিতি পরিদর্শনের গিয়ে শিক্ষামন্ত্রী পিইসি পরীক্ষা বাদ দেওয়ার কথা জানান। তিনি বলেন, আগামী ২০১৮ সাল থেকে প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত হবে এবং তা হবে সম্পূর্ণ অবৈতনিক। তাই ওই বছর থেকে আর পঞ্চম শ্রেণিতে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ থাকবে না।
শিক্ষামন্ত্রীর এই ঘোষণা বাস্তবায়িত হলে চলতি বছর ছাড়া সামনে আর দুইটি পিইসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। আগামী ২২ নভেম্বর থেকে সারাদেশে পিইসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ বছর ৩০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী এই পরীক্ষায় অংশ নেবে বলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
পিইসি পরীক্ষা বাদ দিয়ে প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত করার ঘোষণায় স্বাগত জানিয়েছেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এম অহিদুজ্জামান। রবিবার এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমি বরাবরই প্রাথমিক স্তরের এই সমাপনী পরীক্ষার বিপক্ষে ছিলাম। সরকারের এই ধরনের সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই। এতে করে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ কমবে এবং শিক্ষার মানও উন্নতি হবে।
নিউজিল্যান্ডের শিক্ষা ব্যবস্থার উদাহরণ দিয়ে এই শিক্ষাবিদ বলেন, নিউজিল্যান্ডই প্রথম প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত করে। বিশ্বের অন্যান্য দেশে তাদের এই উদ্যোগ ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়। পরে অনেক উন্নত দেশও নিউজিল্যান্ডের ওই্ মডেল অনুসরণ করে এখন প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত করছে। আমাদের দেশেও এটা চালু হলে শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি পাবে।