ঢাকা ০৩:১১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

স্কুলে যাই না, খড়ি কুড়াই

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৫৪:৩২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ নভেম্বর ২০১৫
  • ৪৭৮ বার

কুলোত যাবার পাই না, খড়ি কুড়াই। ক্লাস টু পর্যন্ত স্কুলোত গেছিনো (গিয়েছিল)। তারপর থাকি (থেকে) আর স্কুলোত যাই নাই। হামরা (আমরা) খুব গরীব মানুষ। হামার ট্যাকা পয়সা নাই। তাই স্কুলোত যাবার পাই ন্যে (পারিনা)। সারা দিন খড়ি কুড়াই, এটাই হামাগোর (আমাদের) কাম (কাজ)।

কথাগুলো বলছিলেন, ফুলছড়ি উপজেলার নদীর তীরে খড়ি কুড়ানো অবস্থায় কালা সোনার চরের শুকতারা (৮), দুলালী (৯) এবং তাসলিমা (৮)।

পরিবারের অভাবের কারণে তারা দ্বিতীয় শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করে আর স্কুলে যেতে পারে নাই। প্রতিদিন নদীর তীরে ভেসে আসা জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ পানি আনা, চাষাবাদ ও মাছ ধরার কাজে সহায়তা দিয়ে এখানকার শিশুরা পরিবারের দু’বেলা খাবার যোগাতে শিশু শ্রমে নিয়োজিত হতে বাধ্য হয়। তদুপরি ১২ থেকে ১৪ বছর বয়সের মধ্যেই চরাঞ্চলের মেয়ে শিশুদের বিয়ে দেয়া হচ্ছে। অভিভাবকরা এখনও মনে করেন মেয়েদের বেশি বয়স হলে তাদের বিয়ে দিতে সমস্যা হয়। এ কারণে শিশু এবং মাতৃ মৃত্যুহারও চরাঞ্চলে বাড়ছে।

এদিকে জেলার অবহেলিত চরাঞ্চলের শিশুরা শিক্ষা, চিকিৎসাসহ সুষ্ঠুভাবে বেড়ে ওঠার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অপুষ্টি ও খাদ্য সংকটের কারণেও তাদের স্বাভাবিক জীবনাচারণ ব্যাহত হচ্ছে। মেয়ে শিশুদের বাল্য বিয়ের প্রবনতাও বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে এ চরাঞ্চলে।

জেলার তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদী বেষ্টিত সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা, ফুলছড়ি ও গাইবান্ধা সদর উপজেলার ২০টি ইউনিয়নের ১০৪টি চরাঞ্চলের শিশু-কিশোরদের বেহাল অবস্থা লক্ষ্যনীয়।

চরাঞ্চলের বিদ্যালয়গুলোতে অনেক শিশু ভর্তি হলেও অভাবের তাড়নায় তাদের লেখাপড়া শেষ করতে পারে না। মাঝপথেই ঝরে পড়ে তারা। সীমাহীন দারিদ্র্যের কারণে শিশুদের স্কুলে যাওয়ার বয়সে সংসারের চাহিদা পূরণে নানা কাজে নিয়োজিত হতে হয় তাদের।

এছাড়াও এই চরে সরকারী স্বাস্থ্য কেন্দ্র বা বেসরকারী পর্যায়ের কোন চিকিৎসা কেন্দ্র ও চিকিৎসক না থাকায় শিশুদের নানা দুরারোগ্য রোগে ভুগে কষ্ট পেতে হয়। বিনোদনের কোন সুযোগ না থাকায় শিশু শ্রমে নিয়োজিত শিশুরা অমানবিক পরিবেশে জীবন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

স্কুলে যাই না, খড়ি কুড়াই

আপডেট টাইম : ১০:৫৪:৩২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ নভেম্বর ২০১৫

কুলোত যাবার পাই না, খড়ি কুড়াই। ক্লাস টু পর্যন্ত স্কুলোত গেছিনো (গিয়েছিল)। তারপর থাকি (থেকে) আর স্কুলোত যাই নাই। হামরা (আমরা) খুব গরীব মানুষ। হামার ট্যাকা পয়সা নাই। তাই স্কুলোত যাবার পাই ন্যে (পারিনা)। সারা দিন খড়ি কুড়াই, এটাই হামাগোর (আমাদের) কাম (কাজ)।

কথাগুলো বলছিলেন, ফুলছড়ি উপজেলার নদীর তীরে খড়ি কুড়ানো অবস্থায় কালা সোনার চরের শুকতারা (৮), দুলালী (৯) এবং তাসলিমা (৮)।

পরিবারের অভাবের কারণে তারা দ্বিতীয় শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করে আর স্কুলে যেতে পারে নাই। প্রতিদিন নদীর তীরে ভেসে আসা জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ পানি আনা, চাষাবাদ ও মাছ ধরার কাজে সহায়তা দিয়ে এখানকার শিশুরা পরিবারের দু’বেলা খাবার যোগাতে শিশু শ্রমে নিয়োজিত হতে বাধ্য হয়। তদুপরি ১২ থেকে ১৪ বছর বয়সের মধ্যেই চরাঞ্চলের মেয়ে শিশুদের বিয়ে দেয়া হচ্ছে। অভিভাবকরা এখনও মনে করেন মেয়েদের বেশি বয়স হলে তাদের বিয়ে দিতে সমস্যা হয়। এ কারণে শিশু এবং মাতৃ মৃত্যুহারও চরাঞ্চলে বাড়ছে।

এদিকে জেলার অবহেলিত চরাঞ্চলের শিশুরা শিক্ষা, চিকিৎসাসহ সুষ্ঠুভাবে বেড়ে ওঠার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অপুষ্টি ও খাদ্য সংকটের কারণেও তাদের স্বাভাবিক জীবনাচারণ ব্যাহত হচ্ছে। মেয়ে শিশুদের বাল্য বিয়ের প্রবনতাও বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে এ চরাঞ্চলে।

জেলার তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদী বেষ্টিত সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা, ফুলছড়ি ও গাইবান্ধা সদর উপজেলার ২০টি ইউনিয়নের ১০৪টি চরাঞ্চলের শিশু-কিশোরদের বেহাল অবস্থা লক্ষ্যনীয়।

চরাঞ্চলের বিদ্যালয়গুলোতে অনেক শিশু ভর্তি হলেও অভাবের তাড়নায় তাদের লেখাপড়া শেষ করতে পারে না। মাঝপথেই ঝরে পড়ে তারা। সীমাহীন দারিদ্র্যের কারণে শিশুদের স্কুলে যাওয়ার বয়সে সংসারের চাহিদা পূরণে নানা কাজে নিয়োজিত হতে হয় তাদের।

এছাড়াও এই চরে সরকারী স্বাস্থ্য কেন্দ্র বা বেসরকারী পর্যায়ের কোন চিকিৎসা কেন্দ্র ও চিকিৎসক না থাকায় শিশুদের নানা দুরারোগ্য রোগে ভুগে কষ্ট পেতে হয়। বিনোদনের কোন সুযোগ না থাকায় শিশু শ্রমে নিয়োজিত শিশুরা অমানবিক পরিবেশে জীবন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছে।