ঢাকা ১১:২০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শরৎ শুভ্রতায় ফুলেল সাজ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:২২:৫৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯
  • ২১৪ বার

হিমেল হাওয়া। নদীর আঁকাবাঁকা স্রোতের গন্তব্য এক অজানা পথে। মাঝির পালের হাওয়ায় বকসাদা কাশফুলগুলো দুলছে মনের আনন্দে। অবারিত কাশফুলের স্নিগ্ধ উপস্থিতিই জানান দিল শরতের আগমন বার্তা। এই বুঝি শরৎ এসেছে। নীল-সাদা আকাশ। এই রোদ এই বৃষ্টি। দুরন্ত কিশোরী ছুটে চলছে ধুলো মাখা পথে। তার যেন সময় এসেছে ভোরের সুবাসিত শিউলি কুড়ানোর। জোছনা রাতে বাড়ি মুখরিত হয় শিউলির পাগল করা সুবাসে। সেই সুবাসে পুজোর দিন প্রতিমার চোখে প্রাণ প্রতিষ্ঠা হয় দেবীর।

শুভ্রতাকে আরো বেশি শুভ্র করে রাখতে ফুলের সাজিতে ভরে ওঠে নানা রঙের ফুলেরা। সাদা আর দুধ সাদার মিলনমেলায় একাকার হয় দোলনচাঁপা, বেলি, শিউলি, শাপলা। রংধনু রঙের ফুলেরও কমতি নেই এই ঋতুতে। নানা রঙের ফুলেরা যেন সুর তুলেছে একই সুরে। জারুল, রঙ্গন, টগর, রাধাচূড়া, মধুমঞ্জুরি, শ্বেতকাঞ্চন, কামিনী, নয়নতারা, ধুতরা, কল্কে, জল পদ্ম, সন্ধামনি, বোগেনভেলিয়া, জয়ন্তিসহ আরো কত কী!

পূজার থালা রাঙাতেই বুঝি থরে থরে ফোটে ঝুমকো জবা, লটকন জবা, লঙ্কা জবা। স্বর্ণচাঁপা আর কাঁঠালচাঁপার লাজুক হাসিতে উদাসী হয়ে যায় পাখিরা। ফুলেই শুধু থেমে নেই শরতের ফুলেরা তারা জলেও খেলা করছে আপন মনের মাধুরিতে। অজস্র ঢেউয়ের মতো ফুটে চলেছে শাপলা, শালুক, রক্তকমল আর জলপদ্ম। টবেও ফুটতে দেখা যায় কঙ্কনা, নীলচিতা আর রেইনলিলি।

শরতে বাঙালি মেয়েদের সাজেও যেন ফুটে ওঠে অপরুপ শুভ্রতা। ফুলের আভাতে নিজেকে করে তোলা যায় একেবারেই স্বতন্ত্র। আটপৌরে শাড়ি, কপালে সিঁদুর রঙের টিপ, চোখে কাজল, চুলে কয়েক গাছি শিউলির মালা। কনের হলুদ সন্ধ্যাটাও সুরভিত করা যায় শিউলির মিলনমেলায়। চুলের এলোখোঁপাতে বেছে নেওয়া যায় কাশডাটা, পদ্ম কিংবা আধফোটা শাপলা। আর অবাধ্য চুলেরা যদি বাধা মানতে নাই চায় তাহলে চুলগুলোকে হালকা ফুলিয়ে টার্সেলে বেঁধে ঝুলিয়ে দেওয়া যায় বিনুনির বাঁধনে। বিপরীত পাশে গুঁজে দেওয়া যায় শাপলা বা পদ্ম।

পুঁতিতে গেঁথে নেওয়া যায় রঙ্গনের মালা, তবে জড়িয়ে নিতে হবে বিনুনি অথবা খোঁপায়। জবা পরতে চাইলে খোলা চুলে ব্লো ডাই করে এক পাশে গুঁজে নিতে হবে কয়েকটি জবা। সাজে আরো বৈচিত্র্য আনতে চুল মুড়িয়ে ফেঞ্চেরোল করে এক পাশে আনতে হবে। অন্যপাশে আটকে নিতে হবে রক্তজবা অথবা হলুদ এলামেন্ডা। যদি ক্লিপ দিয়ে গাঁথা যায় সোনালি চাঁপা তাহলে সৌন্দর্যে-সুগন্ধে নিজেকে করে তুলবে অন্যতমা।

শুধু সাজ নয়, ঘরের সজ্জায়ও নিয়ে আসতে পারেন শরতের নান্দনিকতা। মাটির চাড়িতে স্বচ্ছ জলে ভাসিয়ে দিন চাঁপা, টগর। অথবা রঙিন পদ্ম ও শাপলা। সঙ্গে থাকুক মোম কিংবা প্রদীপের আলো। শরতের প্রকৃতি টুপ করে ঝরে পড়বে আপনার ঘরে। কাঁসার থালায় নিন উপচে পড়া শিউলি। এক পাশে রাখুন শুভ্র শঙ্খ, উঁচু কাঁসার প্রদীপ জ্বলবে তারই পাশে। দেখুন না, কীভাবে বদলে যায় ঘরের কোণটি। যদি চান ঘরের কোণে আলো ছড়াতে, তাহলে কোনায় বসান বড় টব। তাতে রাখুন বড় থালা। থালায় সাজান প্রদীপ, সঙ্গে সবুজ পাতায় মেশানো সাদা শরতের ফুল।

শুধু আকাশ নয়, শরতের প্রকৃতিও যেন সেজেছে নির্মল এক মায়াবী শুভ্রতায়। ফুলেরা ছড়াচ্ছে সুনীল সজীবতা সারাবেলা!

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

শরৎ শুভ্রতায় ফুলেল সাজ

আপডেট টাইম : ১১:২২:৫৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯

হিমেল হাওয়া। নদীর আঁকাবাঁকা স্রোতের গন্তব্য এক অজানা পথে। মাঝির পালের হাওয়ায় বকসাদা কাশফুলগুলো দুলছে মনের আনন্দে। অবারিত কাশফুলের স্নিগ্ধ উপস্থিতিই জানান দিল শরতের আগমন বার্তা। এই বুঝি শরৎ এসেছে। নীল-সাদা আকাশ। এই রোদ এই বৃষ্টি। দুরন্ত কিশোরী ছুটে চলছে ধুলো মাখা পথে। তার যেন সময় এসেছে ভোরের সুবাসিত শিউলি কুড়ানোর। জোছনা রাতে বাড়ি মুখরিত হয় শিউলির পাগল করা সুবাসে। সেই সুবাসে পুজোর দিন প্রতিমার চোখে প্রাণ প্রতিষ্ঠা হয় দেবীর।

শুভ্রতাকে আরো বেশি শুভ্র করে রাখতে ফুলের সাজিতে ভরে ওঠে নানা রঙের ফুলেরা। সাদা আর দুধ সাদার মিলনমেলায় একাকার হয় দোলনচাঁপা, বেলি, শিউলি, শাপলা। রংধনু রঙের ফুলেরও কমতি নেই এই ঋতুতে। নানা রঙের ফুলেরা যেন সুর তুলেছে একই সুরে। জারুল, রঙ্গন, টগর, রাধাচূড়া, মধুমঞ্জুরি, শ্বেতকাঞ্চন, কামিনী, নয়নতারা, ধুতরা, কল্কে, জল পদ্ম, সন্ধামনি, বোগেনভেলিয়া, জয়ন্তিসহ আরো কত কী!

পূজার থালা রাঙাতেই বুঝি থরে থরে ফোটে ঝুমকো জবা, লটকন জবা, লঙ্কা জবা। স্বর্ণচাঁপা আর কাঁঠালচাঁপার লাজুক হাসিতে উদাসী হয়ে যায় পাখিরা। ফুলেই শুধু থেমে নেই শরতের ফুলেরা তারা জলেও খেলা করছে আপন মনের মাধুরিতে। অজস্র ঢেউয়ের মতো ফুটে চলেছে শাপলা, শালুক, রক্তকমল আর জলপদ্ম। টবেও ফুটতে দেখা যায় কঙ্কনা, নীলচিতা আর রেইনলিলি।

শরতে বাঙালি মেয়েদের সাজেও যেন ফুটে ওঠে অপরুপ শুভ্রতা। ফুলের আভাতে নিজেকে করে তোলা যায় একেবারেই স্বতন্ত্র। আটপৌরে শাড়ি, কপালে সিঁদুর রঙের টিপ, চোখে কাজল, চুলে কয়েক গাছি শিউলির মালা। কনের হলুদ সন্ধ্যাটাও সুরভিত করা যায় শিউলির মিলনমেলায়। চুলের এলোখোঁপাতে বেছে নেওয়া যায় কাশডাটা, পদ্ম কিংবা আধফোটা শাপলা। আর অবাধ্য চুলেরা যদি বাধা মানতে নাই চায় তাহলে চুলগুলোকে হালকা ফুলিয়ে টার্সেলে বেঁধে ঝুলিয়ে দেওয়া যায় বিনুনির বাঁধনে। বিপরীত পাশে গুঁজে দেওয়া যায় শাপলা বা পদ্ম।

পুঁতিতে গেঁথে নেওয়া যায় রঙ্গনের মালা, তবে জড়িয়ে নিতে হবে বিনুনি অথবা খোঁপায়। জবা পরতে চাইলে খোলা চুলে ব্লো ডাই করে এক পাশে গুঁজে নিতে হবে কয়েকটি জবা। সাজে আরো বৈচিত্র্য আনতে চুল মুড়িয়ে ফেঞ্চেরোল করে এক পাশে আনতে হবে। অন্যপাশে আটকে নিতে হবে রক্তজবা অথবা হলুদ এলামেন্ডা। যদি ক্লিপ দিয়ে গাঁথা যায় সোনালি চাঁপা তাহলে সৌন্দর্যে-সুগন্ধে নিজেকে করে তুলবে অন্যতমা।

শুধু সাজ নয়, ঘরের সজ্জায়ও নিয়ে আসতে পারেন শরতের নান্দনিকতা। মাটির চাড়িতে স্বচ্ছ জলে ভাসিয়ে দিন চাঁপা, টগর। অথবা রঙিন পদ্ম ও শাপলা। সঙ্গে থাকুক মোম কিংবা প্রদীপের আলো। শরতের প্রকৃতি টুপ করে ঝরে পড়বে আপনার ঘরে। কাঁসার থালায় নিন উপচে পড়া শিউলি। এক পাশে রাখুন শুভ্র শঙ্খ, উঁচু কাঁসার প্রদীপ জ্বলবে তারই পাশে। দেখুন না, কীভাবে বদলে যায় ঘরের কোণটি। যদি চান ঘরের কোণে আলো ছড়াতে, তাহলে কোনায় বসান বড় টব। তাতে রাখুন বড় থালা। থালায় সাজান প্রদীপ, সঙ্গে সবুজ পাতায় মেশানো সাদা শরতের ফুল।

শুধু আকাশ নয়, শরতের প্রকৃতিও যেন সেজেছে নির্মল এক মায়াবী শুভ্রতায়। ফুলেরা ছড়াচ্ছে সুনীল সজীবতা সারাবেলা!