খুলনায় চিকিৎসকদের ওপর হামলাকারীরা গ্রেপ্তার হয়নি পাঁচদিনেও

জেলার তেরখাদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুনের ওপর হামলাকারীরা গত ৫দিনেও গ্রেপ্তার হননি। আসামীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে এমন দাবির প্রেক্ষিতে পুলিশ বলছে আসামীরা পলাতক রয়েছে। গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চলছে।
এ নিয়ে খুলনার চিকিৎসকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আসামীদের গ্রেপ্তার দাবিতে ধর্মঘট পালন করছেন খুলনার সকল সরকারী বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিকের চিকিৎসকেরা। তারা হামলাকারীরা গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত চিকিৎসক ধর্মঘট পালনের ঘোষণা দিয়েছেন। চিকিৎসকদের ধর্মঘটের কারণে হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীরা দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন।

জানা যায়, গত রোববার তেরখাদা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এফ এম অহিদুজ্জামান তার অসুস্থ্য স্ত্রীকে বাসায় গিয়ে দেখার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসক আব্দুল্লাহ আল মামুনকে যেতে বলেন। কিন্তু তিনি হাসপাতালের জরুরী বিভাগের দায়িত্বরত থাকায় যেতে অস্বীকার করেন।

এনিয়ে অহিদুজামানসহ অন্যদেও বাক বিতন্ডা হয়। এক পর্যায়ে তারা চিকিৎসক আব্দুল্লাহ আল মামুনের উপর হামলা করেন। তাদের হামলায় চিকিৎসকের কয়েকটি দাঁত ক্ষতিগ্রস্থ্য হয়। তিনি বর্তমানে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

চিকিৎসককের ওপর হামলার ঘটনায় চিকিৎসক নেতারা সোমবার থেকে আন্দোলন করছেন। তারা সভা, সমাবেশ, সংবাদ সম্মেলন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। বুধবার এক সমাবেশে বৃহস্পতিবার চিকিৎসক ধর্মঘট আহবান করেন। চিকিৎসকদের এই ধর্মঘট হামলাকারীরা গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। যদিও এই সময়ে জরুরি ও মুমুর্ষ রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হবে বলে বিএমএ নেতৃবৃন্দ জানান।

ধর্মঘট চলাকালে বৃহস্পতিবার খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, বর্হিবিভাগে কোন চিকিৎসক নেই। বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা রোগীরা চিকিৎসা নিতে এসে ফিরে যাচ্ছেন। খালিশপুর থেকে গলার চিকিৎসা নিতে আসা মিল শ্রমিক মুক্তিযোদ্ধা মোকলেসুর রহমান বলেন, আজ (বৃহস্পতিবার) গলার চিকিৎসা নিতে এসেছিলাম। কিন্তু হাসপাতালে এসে জানতে পারলাম ডাক্তারেরা ধর্মঘট করছেন। তাই ফিরে যাচ্ছি।

রূপসার লকপুর থেকে শিশু মেয়েকে চিকিৎসা করাতে নিয়ে এসেছিলেন, মোঃ রেজাউল ইসলাম। তিনি বলেন, টিকিট নিতে গিয়ে দেখতে পাই টিকিট দেয়া হচ্ছে না। কারণ জানতে চাইলে হাসপাতালের বর্হিবিভাগের সামনের এক ব্যক্তি জানান, ধর্মঘট চলছে। বাড়ি ফিরে যান।
নগরীর বয়রা এলাকার বাসিন্দা মোসাম্মাৎ সালেহা বেগম (৬০) নাতির সর্দি-কাশির চিকিৎসা করাতে শিশু ওর্য়াডের দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময়ে তাকে এক নারী বলেন, হাসপাতাল বন্ধ। তিনি পরে বাসার দিকে রওয়ানা হন।

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা জানান, আজ (বৃহস্পতিবার) সকাল ৮টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত জরুরী বিভাগে ১৭জন রোগী ভর্তি হয়েছেন।

তেরখাদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার, ডাঃ আহসানুল কবির বলেন, হামলার শিকার মেডিকেল অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন সুস্থ্য হয়ে কর্মস্থলে ফেরেননি। তিনি খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

তেরখাদা থানার উপ-পরিদর্শক আহসান হাবীব বলেন, চিকিৎসক আব্দুল্লাহ আল মামুনের উপর হামলার ঘটনায় ৫জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত নামা ৬/৭ জন উল্লেখ করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার বাদী হয়েছেন হামলার শিকার চিকিৎসক নিজে। মামলার সন্দেহভাজন এক আসামী শেখ রানাকে আটক করা হয়েছে। তদন্তে হামলার সঙ্গে রানার যুক্ত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। মামলার অপর আসামীরা পলাতক রয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

এ বিষয়ে বিএমএ (বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন) খুলনার সভাপতি ডাঃ শেখ বাহারুল আলম বলেন, চিকিৎসকরা মানুষের সেবা করতে চায়। তারা মানুষকে দুর্ভোগের মধ্যে ফেলতে চায় না। চিকিৎসকদেও প্রতিনিয়ত ঝুঁকিতে কাজ করতে হয়। অথচ তাদেরকে নিরাপত্তা দিতে কোন ব্যবস্থা করা হয়নি। প্রতিনিয়ত চিকিৎসকরা হামলার শিকার হচ্ছে। এর কোন প্রতিকার হচ্ছে না।

তিনি বলেন, তেরখাদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও মেডিকেল অফিসারকে বেআইনীভাবে হামলা করা হয়েছে। কোন দায়িত্বরত চিকিৎসক কোন রোগীর বাড়িতে গিয়ে চিকিৎসা দিতে বাধ্য নন। তিনি রাজী হননি তাই তার উপর হামলা করা হয়েছে। হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে ৭২ ঘন্টা সময় দেয়া হয়েছে। পুলিশ গ্রেপ্তার করতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে চিকিৎসক সমাজ ধর্মঘট আহবান করেছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর