মুজিববর্ষে স্বাস্থ্য খাতে ঘটবে ইতিবাচক অগ্রগতি

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মুজিববর্ষে স্বাস্থ্য খাত, এগিয়ে যাবে অনেক ধাপ’- এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বিশেষ  কর্মসূচি গ্রহণ করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে জড়িত দফতর ও অধিদফতরগুলো এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে আছে- দেশের ৮টি বিভাগে মডেল মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র স্থাপন, অধিদফতরের সব স্তরের কর্মীদের স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি, বিভিন্ন জেলায় বিনামূল্যে ইনসুলিন প্রদান এবং জেলা পর্যায়ে অন্তত একটি মডেল ফার্মেসি প্রতিষ্ঠা।

মুজিববর্ষে স্বাস্থ্য খাতের প্রস্তুতি জানতে চাইলে স্বাস্থ্যসেবা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ যুগান্তরকে বলেন, ‘আমরা এখন মুজিববর্ষের ক্ষণ গণনা করছি। এ বর্ষের প্রতিটি মাস আমরা একটি করে জনস্বাস্থ্য বিষয়ক প্রচার ও সচেতনতা মাস হিসেবে নির্ধারণ করেছি। যেমন একটি মাস যক্ষ্মা, একটি মাস সংক্রামক ব্যাধি, একটি মাস ডেঙ্গু, চিকনগুনিয়া প্রতিরোধ ও সচেতনতায় নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া পুষ্টি, মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য, এন্টিমাইক্রোবিয়া রেজিস্ট্যান্স নিয়ে বিভিন্ন মাসে কর্মসূচি পালিত হবে। এছাড়া সকল স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে বৃক্ষরোপণ এবং জেলা পর্যায়ের হাসপাতালে বঙ্গবন্ধু হেলপ ডেস্ক চালু করা হবে। এসব কর্মসূচি বাস্তবায়ন হলে স্বাস্থ্য খাতে ইতিবাচক অগ্রগতি ঘটবে।’

মুজিববর্ষে স্বাস্থ্যসেবা অধিদফতরের পক্ষ থেকে দেশজুড়ে স্বাস্থ্যসেবা ও সচেতনতা সৃষ্টির বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে আছে- বঙ্গবন্ধুর পোর্ট্রেট ও বাণী প্রদর্শন, বেতার-টেলিভিশনে বছরব্যাপী স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কর্মসূচি গ্রহণ, মোবাইল ভ্যানের মাধ্যমে সচেতনতা ও সেবা প্রদান কার্যক্রম, প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে আলোকপাত করে বর্ণাঢ্য র‌্যালি, ব্যানার, পোস্টার, আলোকসজ্জা, স্কুল হেলথ কর্মসূচি (অসংক্রামক রোগ, সংক্রামক রোগ, পুষ্টি, নিরাপদ মাতৃত্ব/প্রসব, বাল্যবিবাহ, অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স), সু্যুভেনির, ডকুমেন্টরি ও ডায়াবেটিক সেবা- ডায়াবেটিক সমিতির সঙ্গে সমন্বয় করে ৩৮টি জেলায় বিনামূল্যে ইনসুলিন প্রদান। এছাড়া প্রত্যেকটি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে একটি করে দীর্ঘজীবী বৃক্ষরোপণ এবং হাসপাতাল/স্বাস্থ্য স্থাপনা পরিচ্ছন্ন করার অংশ হিসেবে ভবন সংস্কার/চুনকাম, টয়লেট বেসিন ট্যাপ পরিচ্ছন্ন রাখা, জানালা-দরজা সংস্কার, টুল টেবিল কিচেন মেরামত, আউটডোরে নতুন টয়লেট স্থাপন ও পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা।

এছাড়া আরও যে বিষয়গুলো বাস্তবায়নে গুরুত্বারোপ করা হবে সেগুলো হল- প্রত্যেক হাসপাতালে ইনফরমেন কাম হেলপ ডেস্ক চালু, ইন্সটিটিউশনাল প্র্যাকটিস ও ইভিনিং আউটডোর চালু, ওয়ানস্টপ কম্প্রিহেন্সিভ ইমারজেন্সি সেবা চালু, বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ে কিডনি ডায়ালাইসিস সেবা চালু, উপজেলা পর্যায়ে জরায়ু মুখের ক্যান্সার এবং স্তন ক্যান্সার চিহ্নিতকরণ, জেলা পর্যায়ে অন্তত একটি মডেল ফার্মেসি এবং উপজেলা পর্যায়ে একটি মডেল মেডেল মেডিসিন শপ চালু করা।

স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ : মুজিববর্ষে একসঙ্গে কর্মসূচি পালন করবে চিকিৎসা শিক্ষা অধিদফতর ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতর। দুটি অধিদফতরের গৃহীত পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে- জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর দৃষ্টিনন্দন প্রতিকৃতি স্থাপন, অধিদফতরসহ সকল প্রতিষ্ঠান সুসজ্জিতকরণ, জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ। স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে শোভাযাত্রা, সাইনবোর্ড ব্যানার স্থাপন, ৬৪ জেলায় বঙ্গবন্ধু উন্নয়ন মেলা আয়োজন, ৮টি বিভাগে মডেল মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র চালু; ডাক্তার-নার্সসহ সংশ্লিষ্ট সবার নির্ধারিত কোটপিন ও বাজ ব্যবহার; প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্যাটেলাইট ক্লিনিক স্থাপনের মাধ্যমে তৃণমূলের মানুষদের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান, অধিদফতরের সকল স্তরের কর্মীদের স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি, দেশের সব মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র ব্রেস্টফিডিং কর্নার চালু, প্রতিষ্ঠানসমূহে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা, সকল সেবাদানকেন্দ্রে কর্মীদের উপস্থিতি ও ওষুধের সরবরাহ নিশ্চিত করা। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর জীবনী ও আদর্শ নিয়ে আলোচনা, মা ও শিশু এবং কিশোর-কিশোরী সমাবেশের আয়োজন, ভ্রাম্যমাণ সেবা কার্যক্রম পরিচালনা, হাসপাতালে সমাজসেবা কার্যক্রম সম্প্রসারণ ও বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম চালু।

এ প্রসঙ্গে চিকিৎসা শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এএইচএম এনায়েত হোসেন বলেন, পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের সঙ্গে যৌথভাবে আমরা মুজিববর্ষের কার্যক্রম পালন করব। মুজিববর্ষে মেডিকেল শিক্ষার্থীরা স্বেচ্ছায় ৫০ হাজার বাগ রক্ত দান করবেন। মেডিকেল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বঙ্গবন্ধুর কর্ম ও জীবনী নিয়ে ২৪টি বিশেষ ক্লাসের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া বছরব্যাপী র‌্যালি, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডসহ বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি পালন করা হবে।

বিএসএমএমইউ : অধিদফতরগুলোর পাশাপাশি মুজিববর্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) বছরব্যাপী কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। সম্প্রতি এ সংক্রান্ত এক সভায় অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া প্রতিটি বিভাগ হতে পরিকল্পিত ও সমন্বিতভাবে জাতির জনকের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের নির্দেশনা দেন। পাশাপাশি বছরব্যাপী মুজিববর্ষ পালনের কর্মসূচি ঘোষণা দেন। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- বঙ্গবন্ধুর দর্শন ও স্বাস্থ্য ভাবনা নিয়ে আলোচনা সভা, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, রচনা প্রতিযোগিতা, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে স্মৃতিজাদুঘর তৈরি, মুজিব শতবর্ষের লোগো সংবলিত বার্ষিক দেয়াল ক্যালেন্ডার-২০২০ তৈরি ও টেলিফোন নির্দেশিকা-২০২০ তৈরি। এছাড়াও মুজিব শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে থাকবে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা, অস্ত্রোপচার (অপারেশন), রোগ নির্ণয় ও ল্যাবরেটরি পরীক্ষাসমূহের ব্যবস্থা।

এছাড়া বিভিন্ন বিভাগ হতে বছরব্যাপী রোগ প্রতিরোধ ও স্বাস্থ্য বিষয়ক জনসচেতনতামূলক পোস্টার প্রকাশ, লিফলেট বিতরণ, স্মারক বক্তৃতা, বঙ্গবন্ধু চেয়ার প্রতিষ্ঠা, শিক্ষা ভ্রমণ, শিক্ষার্থী ও প্রতিযোগীদের মাঝে বঙ্গবন্ধু রচিত অসমাপ্ত আত্মজীবনী বিতরণ, বঙ্গবন্ধুর চিকিৎসা ভাবনা বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাপত্র প্রকাশ এবং উচ্চতর মেডিকেল শিক্ষা কর্যক্রম প্রদর্শনী ইত্যাদি।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর