৮০ টাকা কেজি মধু কিনে ১২০০ টাকায়ও বেচে বড় কোম্পানি

 

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মৌসুমের সময় ৮০ টাকা কেজিতে মধু কিনে বড় কোম্পানিগুলো  মৌমাছি মধু দেয় চার মাস, বাকি ৮ মাস এমনিতেই পোষেণ  চাষিরা  চলতি বছর জাপানে ৪শ মেট্রিক টন মধু রফতানির অর্ডার রয়েছে ।

ধান চাষে ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি কৃষকরা। ধানের দাম না পেয়ে অনেক কৃষক চাষাবাদ ছেড়ে দিয়েছেন। এখন মৌ চাষিরাও বলছেন, দাম না বাড়লে তারাও মধু উৎপাদন ছেড়ে দেবেন। কারণ, মৌ চাষ করে তাদের পেট চলে না। বিপরীতে মৌসুমের সময় ৮০ টাকা কেজি দরে মধু কিনে তা ৫শ থেকে ১২শ টাকায় বিক্রি করে বড় কোম্পানিগুলো।

রাজধানীর ফার্মগেটে বাংলাদেশ এগ্রিকালচার রিচার্স কাউন্সিল (বিএআরসি) প্রাঙ্গণে চলা জাতীয় মৌ মেলা ঘুরে এবং মৌ চাষিদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

মৌ চাষিরা জানান, বড় বড় কোম্পানির কাছে কৃষকরা (মৌ চাষি) জিম্মি হয়ে পড়েছেন। ইতোমধ্যে অনেকে মৌ চাষ ছেড়ে শুধু মধু বিক্রির ব্যবসা করছেন। তাদের কথায়, মৌ চাষ আর মধু বিক্রি করে পেট চলে না। এর চেয়ে চাষিদের কাছ থেকে ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজি দরে মধু কিনে ২০০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা যায়।

মেলায় ঘুরে দেখা যায়, আদিল মৌ খামার, সুন্দর বন বি অ্যান্ড হানি ফার্ম, সজীব মৌ খামার, সোনারগাঁও মৌ খামার, মৌচাক এগ্রো ফুড, সলিড মধু, তাওহিদ মধু, আজাদ মোল্লার মধু, আল্লার দান মৌ খামারসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে মৌ চাষিরা তাদের উৎপাদিত মধু নিয়ে মেলায় এসেছেন। শুধু মৌ চাষিরাই নন, দেশের নামিদামি ব্র্যান্ডের ৭৪টি স্টলও রয়েছে মেলায়।

 

তিনি বলেন, মৌমাছি মধু দেয় বছরে চার মাস। আর ৮ মাস এসব মৌমাছিকে পুষতে হয়। তাদের খেতে দিতে হয়। সরকারিভাবে রেশনের মাধ্যমে চিনি সরবরাহ করা হলে দেশীয় এ সম্পদ টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে। যারা আমাদের কাছ থেকে মধু কিনে, অনেক বড় বড় কোম্পানি আছে; তাদের বলেছি, মধুর দাম বাড়ানোর জন্য। তারা আশ্বাস দিয়েছে আগামীতে তারা মধুর দাম বাড়াবে।

একই সঙ্গে তিনি আরও বলেন, মৌ চাষিদের জন্য সরকার মৌ বক্সসহ যে সকল জিনিস সরবরাহ করে তা যেন মৌ চাষিদের দেয়। যারা মৌ চাষ করে না তারাই বক্সসহ সরকারের দেয়া সকল সামগ্রী পায়। ফলে সরকারের উদ্দেশও সফল হয় না।

মেলায় স্টল দিয়েছেন আদিল মৌ খামারের মালিক মো. আহসান হাবিব খোকন। তিনি এসেছেন নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের থেকে। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, আগে মধুর দাম ছিল। তখন ব্যবসা করে মজা পেতাম। এখন মধুর তেমন দাম পাওয়া যায় না। তবে নারায়ণগঞ্জের যেখানেই মৌ চাষের ট্রেনিং হোক আমি সেখানে ট্রেনার হিসেবে কাজ করি। এছাড়া আমি শুধু মৌ চাষ করি না। আমার প্রিন্টিংয়ের ব্যবসাও আছে।

 

মেলায় অংশ নেয়া এপির স্টলে বিশাল ব্যানারে জাপানে মধু রফতানির বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। স্টলে কর্মরত এপির কর্মকর্তা রিয়াজুল হাসানের সঙ্গে কথা হয়। মৌ চাষিরা বলছেন- মৌসুমের সময় তারা ৮০ টাকা কেজি দরে মধু বিক্রি করেন- এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে জাগো নিউজকে তিনি বলেন, আমরা যে মধুটা কিনি এটা ‘র’ মধু। এটাকে পিউরিফাই করতে আমাদের অনেক টাকা খরচ হয়। এতে দামি দামি মেশিন ব্যবহার করা হয়। বাজার দর অনুযায়ী আমরা মধু কিনি।

জাপানে মধু রফতারি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা এবার জাপানে ৪০০ মেট্রিক টন মধু রফতানির অর্ডার পেয়েছি। দেশের মৌ চাষিদের অধিকাংশ মধু আমরা ক্রয় করি। পরে এগুলো মেশিনের মাধ্যমে পিউরিফাই করে রফতানি করতে হয়। যারা ভালো মধু উৎপাদন করে তাদের মধুই আমরা কিনি। এখনো ৫০০ মেট্রিক টন মধু আমাদের মজুত রয়েছে।

মেলা সূত্রে জানা যায়, মধু চাষের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রায় সাড়ে চার লাখ কৃষক জড়িত। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মধু চাষের কারণে এ বিপুল সংখ্যক কৃষকের কর্মসংস্থান হয়েছে, যা ১০ বছর আগেও ছিল না। আর এসব চাষিরা বছরে গড়ে ৮০০ থেকে ৯০০ মেট্রিক টন মধু উৎপাদন করেন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর