বর্জ্য থেকে জৈব সার বায়োগ্যাস বিদ্যুৎ: প্রকল্পে সহায়তা দিয়েছে এডিবি

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বর্জ্য নিয়ে দুশ্চিন্তার দিন ফুরিয়ে যাচ্ছে। বর্জ্যকে সম্পদে পরিণত করার ক্ষেত্রে রোল মডেলে পরিণত হয়েছে যশোর পৌরসভা। ‘ইন্টিগ্রেটেড ল্যান্ডফিল অ্যান্ড রিসোর্স রিকভারি ফ্যাসিলিটি’ প্রকল্পের আওতায় বর্জ্য থেকেই উৎপাদন হচ্ছে জৈবসার, বায়োগ্যাস এবং বিদ্যুৎ।

অবশিষ্ট পানিও পরিশোধনের মাধ্যমে ব্যবহার উপযোগী করা হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত কোনো বর্জ্যই থাকছে না। সেই সঙ্গে হয়েছে আয়ের পথও। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সহায়তা দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। ৩০ নভেম্বর সরেজমিন প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে এ চিত্র।

সূত্র জানায়, যশোর পৌরসভার হামিদপুর এলাকায় ১৩ দশমিক ৯৭ একর এলাকায় বাস্তবায়ন করা হয়েছে এই প্রকল্পটি। এতে ব্যয় হয়েছে ২৩ কোটি টাকা। এটি ‘সিটি রিজিওন ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের’ আওতায় একটি উপ প্রকল্প। মূল প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সরকারের নিজস্ব তহবিলের পাশাপাশি সহায়তা দিয়েছে এডিবি, কেএফডব্লিউ এবং সিডা। এলাকাটি কিছুদিন আগেও পৌরসভার ডাম্পিং এরিয়া ছিল। ময়লার দুর্গন্ধে চারপাশের পরিবেশ ভারি হয়ে উঠেছিল। আশপাশের রাস্তা দিয়ে নাকে কাপড় না চেপে চলাচল করা দায় হয়ে উঠেছিল।

কিন্তু আজ একেবারেই পাল্টে গেছে সব কিছুই। দেশের প্রথম সমন্বিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্প স্থাপন হওয়ায় এ স্থানটি এখন দর্শনীয় এবং শিক্ষণীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর এ অংশের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর শেষ হয় বাস্তবায়ন। এক্ষেত্রে কোনো মেয়াদ বা ব্যয় বাড়ানো হয়নি।

সরেজমিন দেখা যায়, প্রথমে ট্রাকে যখন বর্জ্য সংগ্রহ করে আনা হয়। তারপর সেটি ওজন স্টেশনে ওজন করার পর স্টোরেজে নেয়া হয়। সেখানে বর্জ্যগুলো বাছাই করা হয়। এরপর সেখান থেকে যেগুলো জৈব স্যার তৈরির উপযোগী সেগুলো জৈবসার প্লান্টে চলে যায়। সেখানে মেশিনের সাহায্যে প্রক্রিয়াকরণ হয়ে পরিণত হয় জৈবসারে।

বাকি অংশ চলে যায় বায়োগাস প্লান্টে। সেখানে উৎপাদিত বায়োগ্যাস দিয়ে তৈরি হয় বিদ্যুৎ। যেসব বর্জ্য একবারেই প্রক্রিয়াকরণ সম্ভব হয় না সেগুলো ফেলা হয় ল্যান্ডফিল্ড সেলে। অন্যদিকে শহরের বিভিন্ন বাড়িতে সেপটিক ট্যাংক থেকে পয়োবর্জ্য সংগ্রহ করা হয়। এখানে যাদের বাসা থেকে পৌরসভা বর্জ্য সংগ্রহ করে তাদেরকে ফি হিসেবে দিতে হয় প্রথম গাড়ির ভাড়া ২৩০০ টাকা। পরের প্রতি গাড়ির ভাড়া দেড় হাজার টাকা। এতে যাদের বাসার সেপটিক ট্যাংক পরিষ্কার করা হয় তাদের এবং পৌরসভার উইন উইন সিচ্যুয়েশন থাকে। এই বর্জ্য দিয়ে তৈরি হচ্ছে বায়োগ্যাস।

প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো. আহসান হাবীব জানান, এই প্লান্টে দৈনিক ৭২০ কিউবিক মিটার বায়োগ্যাস উৎপাদনের সক্ষমতা থাকলেও এখন উৎপাদন হচ্ছে ৪০০ কিউবিক মিটার। এছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে দৈনিক ৪৩০ কিলোওয়াট আওয়ার। বর্তমানে উৎপাদন হচ্ছে ২৫০ কিলোওয়াট আওয়ার। জৈবসার উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে দৈনিক ৪ টন।

বর্তমানে উৎপাদন হচ্ছে ৮০০ কেজি থেকে ১ টন পর্যন্ত। এই প্লান্টটির বার্ষিক পরিচালন ব্যয় হবে ৭৯ লাখ টাকা। জৈবসার, বায়োগ্যাস ও বিদ্যুৎ বিক্রি থেকে আয় আসবে ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। লাভ হবে ৫৬ লাখ টাকা। এডিবির কান্ট্রি ডাইরেক্টর মনমোহন প্রকাশ যুগান্তরকে বলেন, বাংলাদেশে দ্রুত শহরায়ন হচ্ছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। শিল্প ও সেবা খাতের প্রসার হচ্ছে। মানুষ বাড়ছে, আয় বাড়ছে, চলাচল বাড়ছে। এ অবস্থায় সমন্বিত শহরায়ন জরুরি। জমির সঠিক ব্যবহার করতে হবে। বর্জ্য উৎপাদন কমাতে হবে।

যে বর্জ্য উৎপাদন হবে সেগুলোর সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কাজে লাগানো গেলে প্রচুর আয় করা যায়। যশোর পৌরসভা বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় মাইলফলক স্থাপন করেছে। একদিকে জৈবসার, অন্যদিকে গ্যাস ও বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। এটাকে সবুজ বিনিয়োগ বলা হয়। সরকার ও উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার পাশাপাশি বেসরকারি খাতেরও এগিয়ে আসা দরকার। সারা দেশের বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ করে প্রচুর বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়। সামান্য বিনিয়োগ করে মানুষের জীবনকে বদলে দেয়া যায়।

যশোর পৌর মেয়র মো. জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রধান চ্যালেঞ্জ ছিল প্রকল্পের জায়গা থেকে শতবছরের ময়লার স্তূপ সরিয়ে জায়গাটিকে ব্যবহার উপযোগী করা। আমি সবার সহযোগিতায় সেটি করেছি। এখন শহরের বর্জ্য আর যেখানে-সেখানে ফেলা হয় না। মানুষকে সচেতন করেছি। তাদের বর্জ্য সংগ্রহ করে এ প্রকল্পে আনা হচ্ছে। তিনি জানান, বর্জ্য প্রকল্পের পাশাপাশি

এডিবির অর্থায়নে পার্ক, উন্নয়ন, রাস্তা ও ফুটপাত উন্নয়নসহ শহরের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর