২২ গ্রামের মানুষের ভাগ্য ঝুলছে চিত্রা নদীর সাঁকোয়

প্রায় ৫০ বছর আগে চিত্রা নদীর গড়ে উঠেছে । নদীর দু’পাড়ের কমপক্ষে ২২ টি গ্রামের মানুষ এই বাজারের সঙ্গে নানাভাবে জড়িয়ে আছে। দক্ষিণ পাড়ে রয়েছে ৭ টি গ্রাম, আর উত্তরে ১৫ টি। এই গ্রামগুলোর মানুষ কেউ ব্যবসা করেন, কেউ দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটান এই বাজারেই। অথচ একটি সেতুর অভাবে ওই নদীর দুইপাড়ের গ্রামগুলোর লোকজনের বাজারটিতে আসা-যাওয়ার ভোগান্তির শেষ নেই। এই বাজারে খুচরা ও পাইকারি বিভিন্ন মালামাল বিক্রি হয়। এলাকাবাসী বলেন, বছরে ৬ থেকে ৭ মাস তারা বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপার হন, সে সময় নদীতে পানি কম থাকে। বাকি সময়টা অর্থাৎ বর্ষা মৌসুমে পানির চাপে সাঁকোও ভেষে যায়। ফলে তাদেও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তারা দীর্ঘদিন ওই নদীর তর্ত্তিপুর ঘাটে একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু আজও কোনো উদ্যোগ দেখেননি। ফলে ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ উপজেলার তর্ত্তিপুর বাজারের সঙ্গে যুক্তদের ভোগান্তির শেষ নেই। স্থানীয় মালিয়াট ইউনিয়নের তর্ত্তিপুর গ্রামের বাসিন্দা মনিরুল ইসলাম ও শিক্ষক মোবাশ্বের আলী জানান, ১৯৭৩ সালে তর্ত্তিপুর বাজার প্রতিষ্ঠিত। মালিয়াট ইউনিয়নের সেই সময়ের চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান ইউনিয়ন পরিষদটি ঘিরে মাত্র ৪ থেকে ৫ টি টং দোকান দিয়ে যাত্রা শুরু করেন এই বাজার। বর্তমানে এখানে স্থায়ী দোকান আছে ২ শতাধিক। আর সাপ্তাহিক বাজারের আরো দোকান বসে শতাধিক। বাজারে বেশকিছু বড় বড় দোকান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাজারের সঙ্গেই রয়েছে একটি পুলিশ ফাঁড়ি। বাজারটি যে মালিয়াট ইউনিয়নের মধ্যে সেই ইউনিয়নে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে ২১ টি। আর এই বাজারে ব্যবসা বাণিজ্যে জড়িয়ে আছে নদীর উত্তরের মালিয়াট, তর্ত্তিপুর, দিঘেরপাড়া, দলেননগর, মাগুরা, চাকুলিয়া, রাঢ়িপাড়া, পাচকাহুনিয়াসহ ১৫ টি গ্রামের মানুষ এবং দক্ষিণের বারফা, পরাণপুর, আন্দলপোঁতা, কাষ্টসাগরা, সোনালীডাঙ্গাসহ রয়েছে ৭টি গ্রামের মানুষ। নদীর ধার ঘেঁষে রয়েছে উত্তরে তর্ত্তিপুর ও দক্ষিণে বারফা গ্রাম। বাজারের পার্শ্ববর্তী মাগুরা গ্রামের বাসিন্দা নূর আলী জানান, বাজারটি যখন প্রতিষ্ঠা হয় তখন প্রতিষ্ঠাতারা ভেবেছিলেন মালিয়াট ইউনিয়নের ১৫ গ্রামের মানুষ এখানে কেনাবেচা করবেন। কিন্তু অল্প দিনেই এই বাজারের দোকানপাট বাড়তে থাকে। নদীর দক্ষিণ পাড়ের গ্রামের লোকজনও নানাভাবে বাজারে আসতে থাকেন। তারা এই বাজারে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। কিন্তু নদীতে একটি সেতু না থাকায় তাদের ভোগান্তির শেষ থাকে না। তারা তালের নৌকা আর কলার ভেলায় পারাপার হতেন। আর এতে প্রায়ই ঘটতো নানা দুর্ঘটনা। সারাদিন পরিশ্রম শেষে পরিবারের খাবার জোটাতে চাল কিনে বাড়ি ফেরার সময় পানিতে পড়ে নষ্ট হয়েছে এমন নজিরও রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। এই অবস্থায় ১৯৯১ সালে তারা সম্মিলিতভাবে একটি বাঁশের সাঁকো তৈরী করেন। কিন্তু নদীতে পানি বেড়ে গেলে সাঁকো ধরে রাখা যায় না। তাছাড়া এই সাঁকো মাঝে মধ্যেই ভেঙে পড়ে। যার কারনে তারা ওই সাঁকোর স্থানে একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু আজও কেউ এ ব্যাপারে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তিনি বলেন, বাঁশের সাঁকোটির দুই পাশে পাকা সড়কও রয়েছে। এই স্থানে একটি সেতু নির্মাণ করা হলে এলাকার মানুষগুলো সহজেই বাজারে আসা-যাওয়া এবং তাদের উৎপাদিত পণ্য পরিবহন করতে পারতো। এতে গ্রামের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতি হতো, বেড়ে যেতো মানুষের জীবনযাত্রার মান। গ্রামের অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, স্বাধীনতার পরে অনেক জনপ্রতিনিধি এসেছে, তারা ভোটের আগে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ছিল যে, নির্বাচনে জিততে পারলে ও এলাকার মানুষ ভোট দিলে এলাকার সাঁকো আর থাকবে না পাস করার পরে তার প্রথম কাজ হবে ব্রিজ করার। কিন্তু পরে ঐ নেতারা তাদের প্রতিশ্রুতির কথা আর মনে রাখেনি। অবশেষে ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি সেতু নির্মাণের জন্য চেষ্টা করছেন। এ বিষয়ে এলজিইডি’র স্থানীয় প্রকৌশলী হাফিজুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, তর্ত্তিপুর বাজারের দক্ষিণে চিত্রা নদীর তর্ত্তিপুর ঘাটে একটি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ তারা নিয়েছেন। স্থানীয় এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার এ বিষয়ে চেষ্টা করছেন। আশা করা যায় ওই স্থানে একটি সেতু নির্মিত হবে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর