ঢাকা ০৯:১৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
দেশ ও জাতি গঠনে “দৈনিক আমার দেশ” পত্রিকার কাছে নেত্রকোণার জনগণের প্রত্যাশা শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত ভুল অস্ত্রোপচার, যা ঘটেছিল প্রিয়াঙ্কা সঙ্গে সচিবালয়ে উপদেষ্টা হাসান আরিফের তৃতীয় জানাজা সম্পন্ন সাবেক সচিব ইসমাইল রিমান্ডে অবশেষে বিল পাস করে ‘শাটডাউন’ এড়াল যুক্তরাষ্ট্র চাঁদাবাজদের ধরতে অভিযান শুরু হচ্ছে: ডিএমপি কমিশনার নির্বাচনের পর নিজের নিয়মিত কাজে ফিরে যাবেন ড. ইউনূস ইয়েমেন থেকে ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, আহত ১৬ জুলাই আন্দোলন বিগত বছরগুলোর অনিয়মের সমষ্টি: ফারুকী তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ‘সড়কে নৈরাজ্যের সঙ্গে রাজনৈতিক প্রভাব জড়িত

সুনামগঞ্জে হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ ২০ শতাংশও হয়নি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:৪৩:২৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
  • ১১৫ বার

হাওর অধ্যুষিত সুনামগঞ্জ জেলায় প্রবল বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে দেখা দেয় অকাল বন্যা। মার্চ মাসের দিকে শুরু হওয়া এই বন্যার পানি জেলার হাওরের কৃষকদের বোরো ধান ভাসিয়ে নিয়ে যায়। ফলে ধান রক্ষা করতে প্রতি বছর সুনামগঞ্জ জেলায় সরকারিভাবে হাওরে নির্মাণ করা হয় ফসলরক্ষা বাঁধ।

সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী, গত ১৫ ডিসেম্বর সুনামগঞ্জের বোরো ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হয়। নির্দেশনা অনুযায়ী আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কাজ শতভাগ শেষ করার কথা। তবে, নির্মাণ কাজ উদ্বোধনের দেড় মাস অতিবাহিত হলেও জেলার বিভিন্ন উপজেলায় এখনো পুরোদমে শুরু হয়নি বাঁধের কাজ।  সুনামগঞ্জ জেলার বেশির ভাগ হাওরে চাষাবাদ প্রায় শেষ পর্যায়ে। বাঁধের কাজের ধীর গতিতে ফসলহানির আশঙ্কায় রয়েছেন কৃষকরা।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) অফিসের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে সুনামগঞ্জের ১২টি উপজেলার বিভিন্ন হাওরে বোরো ফসল সুরক্ষার জন্য ৭৩৪টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠন করা হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে পুরো জেলায় ১১৮টি বাঁধ নির্মাণের কাজ করা হবে। যার মধ্যে ৭৩৪টি অংশে ৫৯১ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারের জন্য ১২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার।

সুনামগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলার ফসল রক্ষা বাঁধ ঘুরে, স্থানীয় কৃষক এবং হাওর বাঁচাও আন্দোলন নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সুনামগঞ্জে এখন পর্যন্ত বাঁধের ১৫ থেকে ২০ ভাগ কাজ হয়েছে। এখনো জেলার অনেক বাঁধে মাটির কাজই শুরু করেনি প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। সঠিক সময়ে ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ শেষ না হলে ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে বোরো ধানের ক্ষতির আশংকা রয়েছে। তাদের অভিযোগ, হাওরের গুরুত্বপূর্ণ অনেক বাঁধের কাজে ঢিলেমি লক্ষ্য করা গেছে। জেলার ১৫৯টি গুরুত্বপূর্ণ ক্লোজারের (বাঁধের ফাঁকা স্থানের গভীর গর্ত) মধ্যে এখনো অর্ধেকের কাজ শুরু হয়নি। যদিও, প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, ডিসেম্বরের ১৫ তারিখ থেকে শুরু হয়ে এখন পর্যন্ত বাঁধের কাজ ৪২ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে।

হাওর বাঁচাও আন্দোলন জেলা কমিটির সাংগনিক সম্পাদক মোহাম্মদ শহীদনূর আহমেদ বলেন, হাওর বাঁচাও আন্দোলন সংগঠনটি প্রথম থেকেই দাবি জানিয়েছি, কৃষকের ধান রক্ষায় যেনো বাঁধের কাজ সময় মতো শুরু করা হয়। কিন্তু, নির্ধারিত সময়ের দেড় মাস পরেও অনেক বাঁধের কাজ শুরু করেনি কর্তৃপক্ষ। যা নিয়ে আমরা শঙ্কায় আছি।

তিনি বাঁধের কাজ নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ তুলে বলেন, যেসব বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত কম সেই গুলোতে বরাদ্দ বেশি করেছে। পাশাপাশি যেসব মজবুত বাঁধ রয়েছে যেগুলোর উপরের মাটি কেটে আবার ওই বাঁধে মাটি ফেলা হচ্ছে। এই পর্যন্ত পুরো জেলার প্রায় ৩৫০টি বাঁধ পরিদর্শন করেছি। এই ৩৫০টি বাঁধের কাজের কোনো ভালো দিক দেখছি না। আমাদের জরিপ অনুযায়ী, দেড় মাসে মাত্র ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কাজ হয়েছে।

সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার সবচেয়ে বড় হচ্ছে চাপতির হাওর। ২০২২ সালে এই হাওরে প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমিতে ফসল আবাদ করেছিলেন কৃষকরা। কিন্তু সেই বছরের ৬ এপ্রিল রাতে এই চাপতির হাওরের বৈশাখী এলাকার ফসল রক্ষা বাঁধটি ভেঙে হাওরে ঢলের পানি ঢুকে ফসলহানি ঘটেছিল।

কৃষক হানিফ মিয়া রাইজিংবিডিকে বলেন, আমরা গরিব মানুষ। ধান করি, ফসল যদি ভালো হয়ে তা বিক্রি করে সংসার চালাই। কিন্তু এবার বেড়িবাঁধের কাজ এখনো অর্ধেক হয়নি। অন্যান্য বছর তো এই সময়ে কাজ প্রায় শেষ হয়ে যায়। আমাদের সারা দিরাই উপজেলায় আপনি ঘুরে দেখেন, অনেক বাঁধে মাটিই ফেলছে না। মেঘ তুফানের দিন আসার আগেই যদি বাঁধের কাজ শেষ হয় না, তাহলে ২০১৭-২০২২ সালের মতো আমরা কৃষকরা ফসল হারিয়ে অসহায় হয়ে যাবো।

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার মাটিয়ান হাওরের কৃষক আব্দুল হাকিম বলেন, এই বাঁধ গুলোর কাজ আরও দেড়ে মাস আগে শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মাঘ মাস চলে যাচ্ছে তাও আজকে পর্যন্ত বাঁধের কাজ শুরু হয়নি। আর মাত্র অল্প কয়দিন আছে। এর মধ্যে হাওরের ফসল রক্ষায় স্যাররা কোন দিন কাজ শুরু করবেন আর শেষ করবেন এটাই তারাই ভালো জানেন। আমরা কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাদের কি?

মাটিয়ান হাওরের আরেক কৃষক শকংর কুমার বলেন, আমরা বোরো ধানের চারা রোপণের কাজ শেষ করেছি। কিন্তু, এখন বাঁধের কাজ শুরু হয়নি। সরকার বাঁধের জন্য টাকা দিয়েছে, কিন্তু এখনো বাঁধের কাজ শুরুই হয়নি। কবে বাঁধ নির্মাণ করবে তা নিয়ে চিন্তায় আছি। হাওরের বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু করার জন্য অনুরোধ করছি।

অনিয়ম করার উদ্দেশ্যে ধীরগতিতে কাজ করা হচ্ছে অভিযোগ করে হাওর বাঁচাও আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সালেহীন চৌধুরী শুভ বলেন, সুনামগঞ্জে প্রতিবছর দেখি হাওরের কৃষকের কষ্টে ফলানো ধান বাঁধ নির্মাণে গাফলাতির ফলে পাহাড়ি ঢলের কারণে ভেসে যায়। প্রতি বছর কেন হাওরের বাঁধের কাজে অনিয়ম করা হয়? নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাঁধের কাজ কেনো শেষ হয় না? এ বছর নির্ধারিত সময়ে বাঁধের কাজ শেষ না হওয়ার কারণে যদি আগাম বন্যায় ফসলের ক্ষতি হয় তাহলে কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

হাওরে পানি ও মাটির অভাবে বাঁধের কাজ সময়মতো শুরু করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী-১ মামুন হাওলাদার। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, জেলার বিভিন্ন হাওরে পানি থাকায় বাঁধের কাজে কিছুটা ধীরগতি রয়েছে। পানি শুকাতে অনেক সময় লেগে যায়। এছাড়া, অনেক জায়গায় দেখা যায় মাটিই পাওয়া যাচ্ছে না।

তিনি আরও বলেন, জেলার ১৫৯টি ক্লোজারের মধ্যে এখন পর্যন্ত আমরা ১৫৬টি ক্লোজারের কাজ শুরু করেছি। আমাদের কাজের অগ্রগতি ৪২ শতাংশ। আমরা আশা করছি, ফেব্রুয়ারির ২৮ তারিখের মধ্যেই জেলার সব ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ শেষ করতে পারবো।-

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

দেশ ও জাতি গঠনে “দৈনিক আমার দেশ” পত্রিকার কাছে নেত্রকোণার জনগণের প্রত্যাশা শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত

সুনামগঞ্জে হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ ২০ শতাংশও হয়নি

আপডেট টাইম : ১২:৪৩:২৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

হাওর অধ্যুষিত সুনামগঞ্জ জেলায় প্রবল বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে দেখা দেয় অকাল বন্যা। মার্চ মাসের দিকে শুরু হওয়া এই বন্যার পানি জেলার হাওরের কৃষকদের বোরো ধান ভাসিয়ে নিয়ে যায়। ফলে ধান রক্ষা করতে প্রতি বছর সুনামগঞ্জ জেলায় সরকারিভাবে হাওরে নির্মাণ করা হয় ফসলরক্ষা বাঁধ।

সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী, গত ১৫ ডিসেম্বর সুনামগঞ্জের বোরো ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হয়। নির্দেশনা অনুযায়ী আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কাজ শতভাগ শেষ করার কথা। তবে, নির্মাণ কাজ উদ্বোধনের দেড় মাস অতিবাহিত হলেও জেলার বিভিন্ন উপজেলায় এখনো পুরোদমে শুরু হয়নি বাঁধের কাজ।  সুনামগঞ্জ জেলার বেশির ভাগ হাওরে চাষাবাদ প্রায় শেষ পর্যায়ে। বাঁধের কাজের ধীর গতিতে ফসলহানির আশঙ্কায় রয়েছেন কৃষকরা।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) অফিসের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে সুনামগঞ্জের ১২টি উপজেলার বিভিন্ন হাওরে বোরো ফসল সুরক্ষার জন্য ৭৩৪টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠন করা হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে পুরো জেলায় ১১৮টি বাঁধ নির্মাণের কাজ করা হবে। যার মধ্যে ৭৩৪টি অংশে ৫৯১ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারের জন্য ১২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার।

সুনামগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলার ফসল রক্ষা বাঁধ ঘুরে, স্থানীয় কৃষক এবং হাওর বাঁচাও আন্দোলন নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সুনামগঞ্জে এখন পর্যন্ত বাঁধের ১৫ থেকে ২০ ভাগ কাজ হয়েছে। এখনো জেলার অনেক বাঁধে মাটির কাজই শুরু করেনি প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। সঠিক সময়ে ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ শেষ না হলে ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে বোরো ধানের ক্ষতির আশংকা রয়েছে। তাদের অভিযোগ, হাওরের গুরুত্বপূর্ণ অনেক বাঁধের কাজে ঢিলেমি লক্ষ্য করা গেছে। জেলার ১৫৯টি গুরুত্বপূর্ণ ক্লোজারের (বাঁধের ফাঁকা স্থানের গভীর গর্ত) মধ্যে এখনো অর্ধেকের কাজ শুরু হয়নি। যদিও, প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, ডিসেম্বরের ১৫ তারিখ থেকে শুরু হয়ে এখন পর্যন্ত বাঁধের কাজ ৪২ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে।

হাওর বাঁচাও আন্দোলন জেলা কমিটির সাংগনিক সম্পাদক মোহাম্মদ শহীদনূর আহমেদ বলেন, হাওর বাঁচাও আন্দোলন সংগঠনটি প্রথম থেকেই দাবি জানিয়েছি, কৃষকের ধান রক্ষায় যেনো বাঁধের কাজ সময় মতো শুরু করা হয়। কিন্তু, নির্ধারিত সময়ের দেড় মাস পরেও অনেক বাঁধের কাজ শুরু করেনি কর্তৃপক্ষ। যা নিয়ে আমরা শঙ্কায় আছি।

তিনি বাঁধের কাজ নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ তুলে বলেন, যেসব বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত কম সেই গুলোতে বরাদ্দ বেশি করেছে। পাশাপাশি যেসব মজবুত বাঁধ রয়েছে যেগুলোর উপরের মাটি কেটে আবার ওই বাঁধে মাটি ফেলা হচ্ছে। এই পর্যন্ত পুরো জেলার প্রায় ৩৫০টি বাঁধ পরিদর্শন করেছি। এই ৩৫০টি বাঁধের কাজের কোনো ভালো দিক দেখছি না। আমাদের জরিপ অনুযায়ী, দেড় মাসে মাত্র ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কাজ হয়েছে।

সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার সবচেয়ে বড় হচ্ছে চাপতির হাওর। ২০২২ সালে এই হাওরে প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমিতে ফসল আবাদ করেছিলেন কৃষকরা। কিন্তু সেই বছরের ৬ এপ্রিল রাতে এই চাপতির হাওরের বৈশাখী এলাকার ফসল রক্ষা বাঁধটি ভেঙে হাওরে ঢলের পানি ঢুকে ফসলহানি ঘটেছিল।

কৃষক হানিফ মিয়া রাইজিংবিডিকে বলেন, আমরা গরিব মানুষ। ধান করি, ফসল যদি ভালো হয়ে তা বিক্রি করে সংসার চালাই। কিন্তু এবার বেড়িবাঁধের কাজ এখনো অর্ধেক হয়নি। অন্যান্য বছর তো এই সময়ে কাজ প্রায় শেষ হয়ে যায়। আমাদের সারা দিরাই উপজেলায় আপনি ঘুরে দেখেন, অনেক বাঁধে মাটিই ফেলছে না। মেঘ তুফানের দিন আসার আগেই যদি বাঁধের কাজ শেষ হয় না, তাহলে ২০১৭-২০২২ সালের মতো আমরা কৃষকরা ফসল হারিয়ে অসহায় হয়ে যাবো।

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার মাটিয়ান হাওরের কৃষক আব্দুল হাকিম বলেন, এই বাঁধ গুলোর কাজ আরও দেড়ে মাস আগে শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মাঘ মাস চলে যাচ্ছে তাও আজকে পর্যন্ত বাঁধের কাজ শুরু হয়নি। আর মাত্র অল্প কয়দিন আছে। এর মধ্যে হাওরের ফসল রক্ষায় স্যাররা কোন দিন কাজ শুরু করবেন আর শেষ করবেন এটাই তারাই ভালো জানেন। আমরা কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাদের কি?

মাটিয়ান হাওরের আরেক কৃষক শকংর কুমার বলেন, আমরা বোরো ধানের চারা রোপণের কাজ শেষ করেছি। কিন্তু, এখন বাঁধের কাজ শুরু হয়নি। সরকার বাঁধের জন্য টাকা দিয়েছে, কিন্তু এখনো বাঁধের কাজ শুরুই হয়নি। কবে বাঁধ নির্মাণ করবে তা নিয়ে চিন্তায় আছি। হাওরের বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু করার জন্য অনুরোধ করছি।

অনিয়ম করার উদ্দেশ্যে ধীরগতিতে কাজ করা হচ্ছে অভিযোগ করে হাওর বাঁচাও আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সালেহীন চৌধুরী শুভ বলেন, সুনামগঞ্জে প্রতিবছর দেখি হাওরের কৃষকের কষ্টে ফলানো ধান বাঁধ নির্মাণে গাফলাতির ফলে পাহাড়ি ঢলের কারণে ভেসে যায়। প্রতি বছর কেন হাওরের বাঁধের কাজে অনিয়ম করা হয়? নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাঁধের কাজ কেনো শেষ হয় না? এ বছর নির্ধারিত সময়ে বাঁধের কাজ শেষ না হওয়ার কারণে যদি আগাম বন্যায় ফসলের ক্ষতি হয় তাহলে কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

হাওরে পানি ও মাটির অভাবে বাঁধের কাজ সময়মতো শুরু করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী-১ মামুন হাওলাদার। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, জেলার বিভিন্ন হাওরে পানি থাকায় বাঁধের কাজে কিছুটা ধীরগতি রয়েছে। পানি শুকাতে অনেক সময় লেগে যায়। এছাড়া, অনেক জায়গায় দেখা যায় মাটিই পাওয়া যাচ্ছে না।

তিনি আরও বলেন, জেলার ১৫৯টি ক্লোজারের মধ্যে এখন পর্যন্ত আমরা ১৫৬টি ক্লোজারের কাজ শুরু করেছি। আমাদের কাজের অগ্রগতি ৪২ শতাংশ। আমরা আশা করছি, ফেব্রুয়ারির ২৮ তারিখের মধ্যেই জেলার সব ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ শেষ করতে পারবো।-