হাওর বার্তা ডেস্কঃ মাটির কলসের পানি পান করার-প্রাচীন কাল হতেই বলা হয়েছে যে শরীরের জন্য ঠাণ্ডা পানি ক্ষতিকর এবং তারা কঠিনভাবে নিয়ম অনুসরণ করতেন, স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি পান করতেন। একান্ত বিপদে না পড়লে, তারা ঝর্ণা বা পুকুরের ঠাণ্ডা পানি কখনই সরাসরি পান করতেন না, পানিকে কিছুক্ষণ স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রেখে, তাপমাত্রা কমিয়ে তারপর পান করতেন।
ঠাণ্ডা পানি পান করলে যে কেবল পাকস্থলীর কার্যক্ষমতায় ত্রুটি দেখা দেয় তা নয়, এটি হার্টের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা ধীরে ধীরে নষ্ট করে। এছাড়াও মাটির পাত্রে পানি পান করার আছে নানা গুণ-
** আমরা যখনি পানি পান করি, তা আমাদের রক্তের সাথে মিশতে ১৫-২০ মিনিট সময় নেয়। পানি পান করার পর তা প্রথমে পাকস্থলীতে যায়। পাকস্থলীর তাপে পানিতে ক্ষতিকর কোন জীবাণু থাকলে তা ধ্বংস হয়, এটা কেবল তখনি ঘটে যখন আমরা স্বাভাবিক তাপমাত্রার বা কিছুটা উষ্ণ পানি পান করি। ঠাণ্ডা পানি পান করলে পাকস্থলীর যে নিজস্ব তাপমাত্রা থাকে তা কমে যায় এবং ক্রমাগত ঠাণ্ডা পানি পান করলে, ধীরে ধীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে থাকে, ফলে সময়ের অনেক আগেই নানা ধরণের অসুস্থতা চলে আসে। পাকস্থলী হতে পানি খুদ্রান্তের ভিলির মাধ্যমে ব্যাপন ক্রিয়ার মাধ্যমে পানি রক্তে চলে আসে। রক্তের এ পানি পোর্টাল ভেইনের মাধ্যমে লিভারে যায়, লিভারে পানি পরিশোধিত হওয়ার পর, পানি কোষে কোষে যায়। এ পদ্ধতি পানি পান করার পর প্রতিবারই হয়ে থাকে।
** বেঁচে থাকার জন্য পানি অতি প্রয়োজনীয় উপাদান। শুদ্ধ পানি পান করার জন্য নানা ধরণের ওয়াটার পিউরিফাইয়ার আজ ঘরে ঘরে। প্লাস্টিক বোতলজাত মিনারেল ওয়াটার পান করছি, অথবা শুদ্ধ পানি পান করার জন্য পানি ফুটিয়ে তা ঠাণ্ডা করে রাখছি স্টিলের বোতল বা কলসিতে, কিংবা রাখছি কাচের জগ বা বোতলে। যত রকমের পানি পান করিনা কেন, এসব পানি হতে মাটির পাত্রে রাখা পানি শরীরের জন্য অনেক উপকারী। কারন মাটির পাত্রে রাখা পানি অধিক অক্সিজেন সমৃদ্ধ এবং ক্ষারীয়।
** আজ থেকে চার পাঁচ দশক আগে আমাদের এশিয়া মহাদেশের বেশীরভাগ অঞ্চলে মাটির কলসি, সুরাই ইত্যাদিতে পান করার পানি রাখা হত। আগের লোকদের বিশ্বাস ছিল যে মাটির পাত্রে রাখা পানি আবহাওয়া অনুসারে ঠাণ্ডা বা স্বাভাবিক মাত্রায় থাকে, কথাটি সত্য। আবহাওয়া অনুযায়ী মাটির পাত্রে রাখা পানির তাপমাত্রাও নিয়ন্ত্রিত হয়।
** মাটির পাত্রের গায়ে যে অসংখ্য ছিদ্র থাকে তার মাঝ দিয়ে বাতাসের অক্সিজেন মাটির পাত্রের পানিতে যায় ফলে এ পানি বেশী অক্সিজেন সমৃদ্ধ হয়। মাটির পাত্রে থাকা পানি কিছুটা ক্ষারীয় হয়, এবং এ ক্ষারীয় পানি পান করলে রক্তের অতিরিক্ত অম্লতা (এসিডিটি) দূর হয় এবং শরীর সুস্থ্য থাকে। মাটির পাত্রে রাখা পানি প্রতিদিন পান করার ফলে হজমশক্তি শক্তিশালী হয়, পেটফুলা, গ্যাস ইত্যাদি হতে মুক্ত থাকা যায়।
** বর্তমানে অনেক বৈজ্ঞানিকগণ স্বীকার করেছেন যে ফ্রিজের ঠাণ্ডা পানি ক্ষতিকর কিন্তু মাটির পাত্রে রাখা পানি স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। মাটির কলসি বা সুরাইকে সপ্তাহে এক বা দুবার ধুয়ে পরিষ্কার করতে হয়। একটা পরিষ্কার কাপড় দিয়ে ভিতরটা ঘষে পরিষ্কার করলেই হয়। পরিষ্কার করার জন্য কোন সাবান বা ডিটারজেন্টের প্রয়োজন হয় না।
** যারা ঠাণ্ডায়ে ভুগেন, সহজেই কাশ হয়, তারাও মাটির কলসি বা সুরাইয়ের পানি প্রতিদিন পান করলে একসময় তাদের ঠাণ্ডা লাগার প্রতি রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।তবে কেউ যদি দুচার সপ্তাহ কলসি বা সুরাইয়ের পানি পান করেই মনে করেন ঠাণ্ডার প্রতি রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে, তাহলে এটা ভুল। বর্তমান যুগে তথ্যের অভাব নেই, কেউ বলছে এটাই করুণ, কেউ বলছে ওটা উপকারী।আবার আমিও বলছি পূর্বের যুগের মত মাটির কলসির পানি পান করতে। আসুন কিছুদিন যাচাই করে দেখি মাটির পাত্রে রাখা পানি খেয়ে উপকৃত হচ্ছি কি না?