ঢাকা ০২:১২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৫, ৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সবার জন্য সুস্থ কিডনি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৪:৪৯:৫৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২২ এপ্রিল ২০১৯
  • ২১৮ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আমাদের দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের মধ্যে কিডনি অন্যতম। দেখতে অনেকটা শিমের বিচির মতো এই অঙ্গ মানবদেহে এক জোড়া থাকে। দেহের অপ্রয়োজনীয় পানি, খনিজ লবণ ও বিপাক ক্রিয়ায় উৎপন্ন বর্জ্য পদার্থগুলোকে বের করার মাধ্যমে দেহের পানি ও প্রয়োজনীয় খনিজ লবণগুলোর ভারসাম্য বজায় রাখে। কিছু প্রয়োজনীয় হরমোন তৈরির মাধ্যমে রক্তের লোহিত কণিকা উৎপাদন, ক্যালসিয়ামের ভারসাম্য বজায় রাখার মাধ্যমে সুষ্ঠু হাড় গঠন ও দেহের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখতে সহায়তা করে। কিন্তু এই কিডনি যখন তার স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা হারায় তখন দেহে ঘটে নানা বিপত্তি। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতা, জন্মগত ত্রুটি, বংশগত রোগ, নেফ্রাইটিস, ব্যথানাশক ওষুধ সেবনসহ নানাবিধ কারণে বিশ্বে ধীরগতির কিডনি বিকল রোগীর সংখ্যা ক্রমাগত বেড়ে চলেছে।

কিডনি রোগীদের মধ্যে ক্রনিক কিডনি ডিজিজ বা দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগ অন্যতম। ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ হচ্ছে এর প্রধানতম কারণ। এ রোগে আক্রান্ত প্রায় ৪০ শতাংশ ডায়াবেটিসজনিত কারণে ও প্রায় ২০ শতাংশ উচ্চ রক্তচাপজনিত কারণে হয়ে থাকে। এ ছাড়া গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিস, পাইলোনেফ্রাইটিস, বারবার মূত্রনালি বা কিডনি সংক্রমণ প্রভৃতি কারণে ক্রনিক কিডনি ডিজিজ হতে পারে।

অ্যাকিউট কিডনি ইনজুরি বা স্বল্পমেয়াদি কিডনি বৈকল্য সাধারণত দীর্ঘমেয়াদে ব্যথানাশক সেবন, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন বিশেষ করে যথেচ্ছ অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহারের কারণে হতে পারে। তাছাড়া বিভিন্ন বিষক্রিয়ায়, তীব্র পাতলা পায়খানা বা বমিজনিত কারণে সৃষ্ট পানিশূন্যতা, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, শরীরে তীব্র আঘাত, তীব্র জীবাণু আক্রমণ প্রভৃতি কারণে দেখা দিতে পারে এই আকস্মিক কিডনি বৈকল্য।

দীর্ঘমেয়াদি কিডনি জটিলতায় প্রাথমিক অবস্থায় দেহে সাধারণত কোনো উপসর্গ দেখা দেয় না বলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রোগীরা ব্যাপারটাকে খুব একটা গুরুত্ব দিতে চান না।

যখন রোগী উপসর্গগুলো যেমন শরীরে পানি আসা, মুখ ফুলে যাওয়া, প্রস্রাব কম হওয়া, দুর্বলতা, অরুচি প্রভৃতি টের পান তখন উভয় কিডনির কার্যক্ষমতা প্রায় ৫০ ভাগ কমে আসে এবং কিডনির স্থায়ী ক্ষতি শুরু হয়ে যায়। ফলে রোগের প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে ডায়ালাইসিস বা কিডনি প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হয়। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষই এই চিকিৎসার ব্যয়ভার বহনে সক্ষম নন। তাই, কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি সম্পর্কে জানা এবং এ জন্য নিয়মিত পরীক্ষা করানো অত্যন্ত জরুরি।

কিডনির রোগ প্রতিরোধযোগ্য। এ জন্য প্রয়োজন সচেতনতা। প্রাথমিক অবস্থায় এ রোগের কারণ নির্ণয় করা গেলে চিকিৎসার মাধ্যমে কিডনি বিকল হওয়া প্রতিরোধ করা যায়।

কিডনিকে সুস্থ রাখতে ও কিডনি জটিলতা এড়াতে তাই আমাদের নিচের কথাগুলোকে জানতে ও মানতে হবে।

– যেহেতু দীর্ঘমেয়াদি কিডনি জটিলতার অন্যতম প্রধান কারণ ডায়াবেটিস, তাই ডায়াবেটিস হলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখুন। নিয়মিত রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা, প্রস্রাবে অ্যালবুমিনের পরীক্ষা ও সিরাম ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষা করা জরুরি। সেই সঙ্গে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শে ডায়াবেটিসের ওষুধ সেবন বা ইনসুলিন নিতে হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

সবার জন্য সুস্থ কিডনি

আপডেট টাইম : ০৪:৪৯:৫৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২২ এপ্রিল ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আমাদের দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের মধ্যে কিডনি অন্যতম। দেখতে অনেকটা শিমের বিচির মতো এই অঙ্গ মানবদেহে এক জোড়া থাকে। দেহের অপ্রয়োজনীয় পানি, খনিজ লবণ ও বিপাক ক্রিয়ায় উৎপন্ন বর্জ্য পদার্থগুলোকে বের করার মাধ্যমে দেহের পানি ও প্রয়োজনীয় খনিজ লবণগুলোর ভারসাম্য বজায় রাখে। কিছু প্রয়োজনীয় হরমোন তৈরির মাধ্যমে রক্তের লোহিত কণিকা উৎপাদন, ক্যালসিয়ামের ভারসাম্য বজায় রাখার মাধ্যমে সুষ্ঠু হাড় গঠন ও দেহের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখতে সহায়তা করে। কিন্তু এই কিডনি যখন তার স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা হারায় তখন দেহে ঘটে নানা বিপত্তি। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতা, জন্মগত ত্রুটি, বংশগত রোগ, নেফ্রাইটিস, ব্যথানাশক ওষুধ সেবনসহ নানাবিধ কারণে বিশ্বে ধীরগতির কিডনি বিকল রোগীর সংখ্যা ক্রমাগত বেড়ে চলেছে।

কিডনি রোগীদের মধ্যে ক্রনিক কিডনি ডিজিজ বা দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগ অন্যতম। ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ হচ্ছে এর প্রধানতম কারণ। এ রোগে আক্রান্ত প্রায় ৪০ শতাংশ ডায়াবেটিসজনিত কারণে ও প্রায় ২০ শতাংশ উচ্চ রক্তচাপজনিত কারণে হয়ে থাকে। এ ছাড়া গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিস, পাইলোনেফ্রাইটিস, বারবার মূত্রনালি বা কিডনি সংক্রমণ প্রভৃতি কারণে ক্রনিক কিডনি ডিজিজ হতে পারে।

অ্যাকিউট কিডনি ইনজুরি বা স্বল্পমেয়াদি কিডনি বৈকল্য সাধারণত দীর্ঘমেয়াদে ব্যথানাশক সেবন, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন বিশেষ করে যথেচ্ছ অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহারের কারণে হতে পারে। তাছাড়া বিভিন্ন বিষক্রিয়ায়, তীব্র পাতলা পায়খানা বা বমিজনিত কারণে সৃষ্ট পানিশূন্যতা, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, শরীরে তীব্র আঘাত, তীব্র জীবাণু আক্রমণ প্রভৃতি কারণে দেখা দিতে পারে এই আকস্মিক কিডনি বৈকল্য।

দীর্ঘমেয়াদি কিডনি জটিলতায় প্রাথমিক অবস্থায় দেহে সাধারণত কোনো উপসর্গ দেখা দেয় না বলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রোগীরা ব্যাপারটাকে খুব একটা গুরুত্ব দিতে চান না।

যখন রোগী উপসর্গগুলো যেমন শরীরে পানি আসা, মুখ ফুলে যাওয়া, প্রস্রাব কম হওয়া, দুর্বলতা, অরুচি প্রভৃতি টের পান তখন উভয় কিডনির কার্যক্ষমতা প্রায় ৫০ ভাগ কমে আসে এবং কিডনির স্থায়ী ক্ষতি শুরু হয়ে যায়। ফলে রোগের প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে ডায়ালাইসিস বা কিডনি প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হয়। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষই এই চিকিৎসার ব্যয়ভার বহনে সক্ষম নন। তাই, কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি সম্পর্কে জানা এবং এ জন্য নিয়মিত পরীক্ষা করানো অত্যন্ত জরুরি।

কিডনির রোগ প্রতিরোধযোগ্য। এ জন্য প্রয়োজন সচেতনতা। প্রাথমিক অবস্থায় এ রোগের কারণ নির্ণয় করা গেলে চিকিৎসার মাধ্যমে কিডনি বিকল হওয়া প্রতিরোধ করা যায়।

কিডনিকে সুস্থ রাখতে ও কিডনি জটিলতা এড়াতে তাই আমাদের নিচের কথাগুলোকে জানতে ও মানতে হবে।

– যেহেতু দীর্ঘমেয়াদি কিডনি জটিলতার অন্যতম প্রধান কারণ ডায়াবেটিস, তাই ডায়াবেটিস হলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখুন। নিয়মিত রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা, প্রস্রাবে অ্যালবুমিনের পরীক্ষা ও সিরাম ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষা করা জরুরি। সেই সঙ্গে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শে ডায়াবেটিসের ওষুধ সেবন বা ইনসুলিন নিতে হবে।