উৎসবের আরেক অনুষঙ্গ বাংলা নববর্ষের খাবার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সম্রাট আকবরের সময় প্রতি চৈত্র মাসের শেষ দিনের মধ্যে সব খাজনা, মাসুল ও শুল্ক পরিশোধ করতে হতো। খাজনা-শুল্কের ‘ঝামেলা’ মুক্তির পরদিন অর্থাৎ নতুন করে হিসাবের খাতা খোলার দিন, পহেলা বৈশাখে ভূমি মালিকরা নিজ অঞ্চলের স্বজন, প্রতিবেশীদের মিষ্টান্ন খাইয়ে আপ্যায়ন করত। এভাবেই প্রচলিত হয় মিষ্টিমুখ করে বর্ষবরণের রীতির।

সময়ের পরিক্রমায় বাংলা বর্ষবরণের খাবারে বহুমাত্রিকতার ছোঁয়া লেগেছে। বাসাবাড়ি, হোটেল-রেস্তোরাঁর খাবারের তালিকায় মিষ্টান্নের সঙ্গে ভাত, মাছ, মাংস, ভর্তা, ভাজি, চিড়া, মুড়ি, মুড়কি, বাতাসা, নাড়ু, মিছরি, কদমাসহ রকমারি খাবার থাকে। উৎসব উদ্‌যাপনে বাংলা সংস্কৃতির ধারক-বাহক হিসেবে পরিচিত এসব খাবার পরিবারের সদস্য, বন্ধু বা পরিচিতজনকে সঙ্গে নিয়েই খাওয়া হয়।

দুয়ারে কড়া নাড়ছে পহেলা বৈশাখ। সব ধর্ম-বর্ণের মানুষের অংশগ্রহণে বাংলা বর্ষবরণ বাঙালির সবচেয়ে বড় উৎসবে পরিণত হয়েছে। এরই মধ্যে এ উৎসবের জন্য বিভিন্ন পদ রান্নার উপকরণ কিনতে যে যার সামর্থ্য অনুসারে ছুটছে নামিদামি চেইন শপ থেকে পাড়ার মোড়ের দোকানে। চাহিদা বাড়ায় অনেক পণ্যের দাম বেড়েছে। অনেকে খরচ বাঁচাতে খোঁজখবর নিয়ে মূল্যছাড়ের দোকানে যাচ্ছে।

সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বৈশাখী অফার হিসেবে স্বপ্ন, আগোরা, ফ্যামিলি বাজার, থ্রি এস, মীনা বাজার, হাবিব সুপার মার্কেট, সাউদিয়া সুপার মার্কেট, প্রিন্স বাজারসহ বিভিন্ন শপিং মল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকাভেদে ছাড়ের পরিমাণও ভিন্ন। ধনেপাতা, পেঁয়াজ, রসুন, বিভিন্ন ধরনের মসলা, ফল, চাল, রান্নার তেল, বিভিন্ন ধরনের মাছে ১০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত দাম কম রাখা হচ্ছে। স্বপ্নতে ৪০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি করা হচ্ছে ২৫৫ টাকায়।

তবে শুধু বৈশাখের আমেজের কারণেই আবার অনেক কিছুর দাম বেড়েছে। বিশেষভাবে ভর্তা-ভাজি খাওয়ার তরিতরকারির দাম বাড়তি। বেগুন ভর্তা খাওয়ার জন্য বেগুনের চাহিদাও বাড়তি। তাই দাম বেড়েছে। বিক্রি বেড়েছে সুগন্ধি চাল, মসলা, ঘি, দুধ, পানীয়, মিষ্টি ও মৌসুমি ফলের। ইলিশের দাম দ্বিগুণ হওয়ার ঘটনা প্রতিবছরের। এবার বেড়েছে মাংসের দামও। এমনকি ভর্তা খাওয়ার কুঁচো চিংড়ির দাম বেড়েছে পহেলা বৈশাখের কারণে।

বৈশাখে মিষ্টির চাহিদা থাকে। এদিনের জন্য ক্রেতার বাড়তি চাহিদা বিবেচনায় রেখে নামিদামি মিষ্টির দোকান প্যারাডাইস, প্রিমিয়াম, আলী বাবা, মরণচাঁদ গ্র্যান্ড সন্স, জয়পুরহাট, বিক্রমপুর মিষ্টান্ন ভাণ্ডার, রসসহ বিভিন্ন দোকান প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে। তবে মিষ্টির ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা জানায়, বৈশাখে সাধারণ মিষ্টির চেয়ে দেশের ঐতিহ্যবাহী মিষ্টির চাহিদা বাড়ে।

বৈশাখ নিয়ে জনমানুষের এই আগ্রহ বৃদ্ধির বিষয়ে পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, ‘বাঙালির বর্ষবরণের উৎসবে নিজস্ব সংস্কৃতির বিকাশ ও প্রকাশের আগ্রহ বেড়েছে। বর্ষবরণের সর্বজনীন উৎসব পালন করার রীতি ছড়িয়ে পড়ছে। এই দিনটি মিলন ও সম্প্রীতির প্রতীক হয়ে উঠেছে।’

সূত্র: কালের কণ্ঠ

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর