ঢাকা ০৭:৫৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৫, ২৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ফসলরক্ষা বাঁধকে স্থায়ী সড়কে রূপান্তরের দাবি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৫:৫৩:৪০ অপরাহ্ন, সোমবার, ৮ এপ্রিল ২০১৯
  • ৩৩০ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার বিভিন্ন হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধকে স্থায়ী সড়ক হিসাবে রূপান্তরের দাবি জানিয়েছেন হাওরপাড়ের বাসিন্দারা। বিশ্বম্ভরপুর বাজার থেকে ফতেহপুর ইউনিয়নের খরচার হাওরপাড়ের রাধানগর, রায়পুর, বাহাদুরপুর গ্রাম হয়ে জিরাগ তাহিরপুর পর্যন্ত বাঁধ নির্মাণ হয়ে সাচনা-নিয়ামতপুর যোগাযোগ সড়কে মিলিত হয়েছে।

অপর দিকে ফতেহপুর ইউনিয়নের বিশ্বম্ভরপুর গ্রামের পশ্চিম দিক থেকে আঙ্গারুলি হাওরপাড়ের ফুলভরি, গোপালপুর, চান্দারগাঁও, রঙ্গারচর ও উমেদপুর হয়ে তাহিরপুর উপজেলার হালির হাওর ও শনির হাওরপাড়ের বালিজুরী ইউনিয়নের বালিজুরী ও আনোয়ারপুর গ্রামে গিয়ে ফসলরক্ষা বাঁধ মিলিত হয়েছে। এই দুই বাঁধকে স্থায়ী সড়ক হিসাবে রূপান্তর করা হলে তাহিরপুর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সাথে সহজ যোগাযোগ মাধ্যম সৃষ্টি হবে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যসহ শিক্ষার হার বৃদ্ধি পাবে। সড়ক যোগাযোগের উন্নয়ন হলে হাওরপাড়ের মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন হবে বলে মনে করেন স্থানীয়রা।

বৃহস্পতিবার উপজেলার বিভিন্ন হাওরের পিআইসি নির্মিত ফসলরক্ষা বাঁধ দেখতে গেলে হাওরপাড়ের মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত বছরে নির্মিত ফসলরক্ষা বাঁধের উপর দিয়ে বর্ষার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করেছে। মানুষ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াত করেছেন। গত বর্ষা মওসুমেও ফসলরক্ষা বাঁধের তেমন ক্ষতি হয়নি। পাহাড়ি ঢলের প্রবল ¯প্রোতে বাঁধের উপরিভাগে এবং ঢালু স্থানের সামান্য মাটি সরেছে। বর্ষা মওসুমে বিশেষ প্রয়োজনে বাঁধের ক্লোজারগুলো ভেঙে দেয়া হয়েছিল।

কিন্তু মূল বাঁধগুলো শক্ত মাটির রাস্তা হয়ে মানুষ ও যানবাহন চলাচলের উপযোগী হয়ে আছে। এই সড়কের উপর দিয়ে আশপাশের গ্রামের মানুষ ছাড়াও বিভিন্ন উপজেলা এবং নেত্রকোনো, মোহনগঞ্জ এলাকার মানুষ বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় ব্যবসা-বাণিজ্য করতে সাচনা বাজার হয়ে গাড়ি ও পায়ে হেঁটে চলাচল করছেন। সড়কটি পাকাকরণ করা হলে এবং প্রতিটি ক্লোজারে কালভার্ট সেতু নির্মাণ করা হলে সারাবছর এই বাঁধের উপর দিয়ে মানুষ ও যানবাহন চলাচল করতে পারবে। এতে হাওরপাড়ের বাসিন্দাদের জীবনমান উন্নয়ন হবে।

হাওরপাড়ের একাধিক বাসিন্দা জানান, গত বছর থেকে এই ফসলরক্ষা বাঁধ সড়ক হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। স্থানীয় কৃষকদের ফসল পরিবহন, যাত্রী বহনকারী হালকা যানবাহন, স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, চাকুরিজীবী ও বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের চলাচলে ব্যবহৃত হচ্ছে এসব বাঁধ। এবারও এই ফসলরক্ষা বাঁধের উপর যে পরিমাণে মাটি ফেলা হয়েছে, এই মাটি যদি বর্ষা মওসুমে তেমন ক্ষয় না হয়, তবে আগামী বছর পাকা সড়ক নির্মাণের সুযোগ সৃষ্টি হবে। হাওরের জমি থেকে যে পরিমাণে মাটি উত্তোলন করে এবার বাঁধ সংস্কার বা নির্মাণ করা হয়েছে, তা আগামী শুকনা মওসুমে এই পরিমাণে মাটি পাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়বে। এজন্য দ্রুত স্থায়ী সড়ক নির্মাণের জন্য প্রতিটি ক্লোজারে কালভার্ট নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

ফসলরক্ষা বাঁধের পাশে অবস্থিত রায়পুর গ্রামের বাসিন্দা নিখিল চন্দ্র বর্মণ বলেন,‘গত বছর শুকনা মওসুমে বাঁধের উপর দিয়ে হেঁটে ও যানবাহনে করে মানুষ চলাচল করেছেন। বর্ষায়ও হেঁটে চলেছেন বিভিন্ন পেশার মানুষ। বর্ষায় ভেঙে দেয়ায় ক্লোজারের ভাঙনে সাঁকো নির্মাণ করে যাতায়াত করে আসছেন মানুষজন। ফসলরক্ষা বাঁধ পাকাকরণের দাবি আমাদের।’

বাহাদুরপুর গ্রামের বাসিন্দা জহর লাল বর্মণ বলেন,‘বাঁধের যে মাটি এবার ফেলা হয়েছে, আগামী বছর পর্যাপ্ত মাটি পেতে সমস্যা হতে পারে। বাঁধের মাটি খুবই শক্ত ও মজবুত হয়েছে, বাঁধের উপর দিয়ে মানুষ গাড়ি নিয়ে চলাচল করতে পারেন। বাঁধ পাকাকরণ এবং ক্লোজারে কালভার্ট নির্মাণ দাবির বাস্তবায়ন জরুরি প্রয়োজন।’ নেত্রকোনো ও মোহনগঞ্জের ব্যবসায়ী সৈয়দ কামাল উদ্দিন ও বরুন রায় বাঁধের উপর দিয়ে মটর সাইকেল চড়ে সাচনাবাজার থেকে এসেছেন। তাঁরা বলেন,‘আমরা গত বছর থেকে সাচনা বাজার হয়ে মটর সাইকেলে চলাচল করে আসছি। সড়কটি পাকা করা হলে স্থায়ী সড়কে রূপান্তর হয়ে যেতো। এতে সকল মানুষের যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়ন হতো।’

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সমীর বিশ্বাস বলেন,‘ফসলরক্ষা বাঁধের উপরিভাগে ব্লক এবং সাইটে গার্ডওয়াল দিয়ে স্থায়ী সড়ক করা যায়। বাঁধের বিভিন্ন স্থানে ক্লোজার আছে, সেগুলোকে এমনভাবে বন্ধ করতে হবে, যাতে বর্ষায় হাওরের মাছের প্রজনন বৃদ্ধিতে বেশি করে পানি প্রবেশ করতে তা খুলে দেয়া যায়। তবে এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরিকল্পনা আছে। এসব কাজ অনেকটা ব্যয়বহুল। নানা কারণে স্থায়ী সড়কে রূপান্তরের উদ্যোগ নেয়া যাচ্ছে না। আগামীতে বাঁধ নির্মাণে পর্যাপ্ত মাটি পেতে ফসলি জমি কাটতে হবে, এমনটাই হতে পারে। বাঁধকে স্থায়ী সড়কে রূপান্তর করা হলে জীবনমানের উন্নয়ন হবে। এই সড়ক দিয়ে হাওরপাড়ের বাসিন্দা ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ চলাচল করতে পারবে।’

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

ফসলরক্ষা বাঁধকে স্থায়ী সড়কে রূপান্তরের দাবি

আপডেট টাইম : ০৫:৫৩:৪০ অপরাহ্ন, সোমবার, ৮ এপ্রিল ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার বিভিন্ন হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধকে স্থায়ী সড়ক হিসাবে রূপান্তরের দাবি জানিয়েছেন হাওরপাড়ের বাসিন্দারা। বিশ্বম্ভরপুর বাজার থেকে ফতেহপুর ইউনিয়নের খরচার হাওরপাড়ের রাধানগর, রায়পুর, বাহাদুরপুর গ্রাম হয়ে জিরাগ তাহিরপুর পর্যন্ত বাঁধ নির্মাণ হয়ে সাচনা-নিয়ামতপুর যোগাযোগ সড়কে মিলিত হয়েছে।

অপর দিকে ফতেহপুর ইউনিয়নের বিশ্বম্ভরপুর গ্রামের পশ্চিম দিক থেকে আঙ্গারুলি হাওরপাড়ের ফুলভরি, গোপালপুর, চান্দারগাঁও, রঙ্গারচর ও উমেদপুর হয়ে তাহিরপুর উপজেলার হালির হাওর ও শনির হাওরপাড়ের বালিজুরী ইউনিয়নের বালিজুরী ও আনোয়ারপুর গ্রামে গিয়ে ফসলরক্ষা বাঁধ মিলিত হয়েছে। এই দুই বাঁধকে স্থায়ী সড়ক হিসাবে রূপান্তর করা হলে তাহিরপুর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সাথে সহজ যোগাযোগ মাধ্যম সৃষ্টি হবে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যসহ শিক্ষার হার বৃদ্ধি পাবে। সড়ক যোগাযোগের উন্নয়ন হলে হাওরপাড়ের মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন হবে বলে মনে করেন স্থানীয়রা।

বৃহস্পতিবার উপজেলার বিভিন্ন হাওরের পিআইসি নির্মিত ফসলরক্ষা বাঁধ দেখতে গেলে হাওরপাড়ের মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত বছরে নির্মিত ফসলরক্ষা বাঁধের উপর দিয়ে বর্ষার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করেছে। মানুষ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াত করেছেন। গত বর্ষা মওসুমেও ফসলরক্ষা বাঁধের তেমন ক্ষতি হয়নি। পাহাড়ি ঢলের প্রবল ¯প্রোতে বাঁধের উপরিভাগে এবং ঢালু স্থানের সামান্য মাটি সরেছে। বর্ষা মওসুমে বিশেষ প্রয়োজনে বাঁধের ক্লোজারগুলো ভেঙে দেয়া হয়েছিল।

কিন্তু মূল বাঁধগুলো শক্ত মাটির রাস্তা হয়ে মানুষ ও যানবাহন চলাচলের উপযোগী হয়ে আছে। এই সড়কের উপর দিয়ে আশপাশের গ্রামের মানুষ ছাড়াও বিভিন্ন উপজেলা এবং নেত্রকোনো, মোহনগঞ্জ এলাকার মানুষ বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় ব্যবসা-বাণিজ্য করতে সাচনা বাজার হয়ে গাড়ি ও পায়ে হেঁটে চলাচল করছেন। সড়কটি পাকাকরণ করা হলে এবং প্রতিটি ক্লোজারে কালভার্ট সেতু নির্মাণ করা হলে সারাবছর এই বাঁধের উপর দিয়ে মানুষ ও যানবাহন চলাচল করতে পারবে। এতে হাওরপাড়ের বাসিন্দাদের জীবনমান উন্নয়ন হবে।

হাওরপাড়ের একাধিক বাসিন্দা জানান, গত বছর থেকে এই ফসলরক্ষা বাঁধ সড়ক হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। স্থানীয় কৃষকদের ফসল পরিবহন, যাত্রী বহনকারী হালকা যানবাহন, স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, চাকুরিজীবী ও বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের চলাচলে ব্যবহৃত হচ্ছে এসব বাঁধ। এবারও এই ফসলরক্ষা বাঁধের উপর যে পরিমাণে মাটি ফেলা হয়েছে, এই মাটি যদি বর্ষা মওসুমে তেমন ক্ষয় না হয়, তবে আগামী বছর পাকা সড়ক নির্মাণের সুযোগ সৃষ্টি হবে। হাওরের জমি থেকে যে পরিমাণে মাটি উত্তোলন করে এবার বাঁধ সংস্কার বা নির্মাণ করা হয়েছে, তা আগামী শুকনা মওসুমে এই পরিমাণে মাটি পাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়বে। এজন্য দ্রুত স্থায়ী সড়ক নির্মাণের জন্য প্রতিটি ক্লোজারে কালভার্ট নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

ফসলরক্ষা বাঁধের পাশে অবস্থিত রায়পুর গ্রামের বাসিন্দা নিখিল চন্দ্র বর্মণ বলেন,‘গত বছর শুকনা মওসুমে বাঁধের উপর দিয়ে হেঁটে ও যানবাহনে করে মানুষ চলাচল করেছেন। বর্ষায়ও হেঁটে চলেছেন বিভিন্ন পেশার মানুষ। বর্ষায় ভেঙে দেয়ায় ক্লোজারের ভাঙনে সাঁকো নির্মাণ করে যাতায়াত করে আসছেন মানুষজন। ফসলরক্ষা বাঁধ পাকাকরণের দাবি আমাদের।’

বাহাদুরপুর গ্রামের বাসিন্দা জহর লাল বর্মণ বলেন,‘বাঁধের যে মাটি এবার ফেলা হয়েছে, আগামী বছর পর্যাপ্ত মাটি পেতে সমস্যা হতে পারে। বাঁধের মাটি খুবই শক্ত ও মজবুত হয়েছে, বাঁধের উপর দিয়ে মানুষ গাড়ি নিয়ে চলাচল করতে পারেন। বাঁধ পাকাকরণ এবং ক্লোজারে কালভার্ট নির্মাণ দাবির বাস্তবায়ন জরুরি প্রয়োজন।’ নেত্রকোনো ও মোহনগঞ্জের ব্যবসায়ী সৈয়দ কামাল উদ্দিন ও বরুন রায় বাঁধের উপর দিয়ে মটর সাইকেল চড়ে সাচনাবাজার থেকে এসেছেন। তাঁরা বলেন,‘আমরা গত বছর থেকে সাচনা বাজার হয়ে মটর সাইকেলে চলাচল করে আসছি। সড়কটি পাকা করা হলে স্থায়ী সড়কে রূপান্তর হয়ে যেতো। এতে সকল মানুষের যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়ন হতো।’

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সমীর বিশ্বাস বলেন,‘ফসলরক্ষা বাঁধের উপরিভাগে ব্লক এবং সাইটে গার্ডওয়াল দিয়ে স্থায়ী সড়ক করা যায়। বাঁধের বিভিন্ন স্থানে ক্লোজার আছে, সেগুলোকে এমনভাবে বন্ধ করতে হবে, যাতে বর্ষায় হাওরের মাছের প্রজনন বৃদ্ধিতে বেশি করে পানি প্রবেশ করতে তা খুলে দেয়া যায়। তবে এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরিকল্পনা আছে। এসব কাজ অনেকটা ব্যয়বহুল। নানা কারণে স্থায়ী সড়কে রূপান্তরের উদ্যোগ নেয়া যাচ্ছে না। আগামীতে বাঁধ নির্মাণে পর্যাপ্ত মাটি পেতে ফসলি জমি কাটতে হবে, এমনটাই হতে পারে। বাঁধকে স্থায়ী সড়কে রূপান্তর করা হলে জীবনমানের উন্নয়ন হবে। এই সড়ক দিয়ে হাওরপাড়ের বাসিন্দা ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ চলাচল করতে পারবে।’