ঢাকা ০৬:২৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কিশোরগঞ্জের হাওরসমূহে পানির জন্য হাহাকার দেখা দিয়েছে, কৃষি আবাদ ব্যাহত

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৪:০২:৩২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ মার্চ ২০১৯
  • ৩৪১ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ চৈত্র মাসে আগাম পাহাড়ি ঢলে হাওরে বছরের একমাত্র বোরো ফসল তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা সব সময় কৃষকদের তাড়া করলেও এই ফাল্গুনেই কিশোরগঞ্জের হাওরসমূহে পানির জন্য হাহাকার দেখা দিয়েছে। চারদিকে খাল বিল শুকিয়ে চৌচির। এঁটেল এবং দো-আঁশ মাটির এসব এলাকায় মাটি ফেটে ধানক্ষেতে গর্তের সৃষ্টি হচ্ছে। খাল এবং বিলে পানি না থাকার কারণে বিপাকে পড়েছেন জেলার ইটনা, মিঠাইমন, অষ্টগ্রাম, বাজিতপুর, নিকলী উপজেলার কয়েক শতাধিক কৃষক পরিবার। পাশাপাশি ইঁদুর কেটে সাবাড় করছে উঠতি ধানের গোছা।

এবার মৌসুমের শুরুতেই কিশোরগঞ্জের নদীগুলোতে তীব্র পানি সংকট দেখা দিয়েছে। অধিকাংশ নদ-নদীতে পলি পড়ে নাব্যতা হারিয়ে গেছে, কোন কোন স্থানে চর জেগে ওঠেছে। ফলে বর্ষা মৌসুম ছাড়া নদীগুলো নৌপথের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। তেমনি নদীগুলো শুকিয়ে যাওয়ায় বোরো মৌসুমে বেশিরভাগ নদ-নদীর অংশ খাল-বিল কার্যত পানি সেচে কৃষকদের ফসল উৎপাদনে কোন ভূমিকা রাখতে পারছে না।

কৃষকেরা জানিয়েছেন, কোথাও কোথাও জমির মাটি ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। শুকিয়ে মরে যাচ্ছে অনেক জমির ধানের চারাও। কৃষকদের ভাষ্য, হাওরের পানি দ্রুত নদীতে নেমে গিয়ে এ অবস্থা তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া, হাওরের জলমহাল ও ছোট ছোট জলাধার শুকিয়ে যাওয়া ও বৃষ্টিপাত না হওয়া এর জন্য দায়ী।

নিকলী উপজেলার কৃষক নুরুল ইসলাম ও আব্দুর রশিদ জানান, অষ্টগ্রামের হাওরগুলোতে তাঁদের প্রায় ৮০ একর বোরো জমি থাকলেও সেচের অভাবে ও যোগাযোগের কারণে বিগত ৮ বছর যাবত অনাবাদি রাখতে বাধ্য হচ্ছেন।

নিকলী উপজেলার বরুলিয়া হাওরের কৃষকদের মতে, বিগত বছরগুলোতে বরুলিয়া খালটি একাধিকবার খনন করলেও পর্যাপ্ত গভীর হয়নি, যে কারণে বর্ষার আগে এখানে পানি পাওয়া যায় না। ফলে সেচের অভাবে প্রতিবছর ৫-৬ শত একর ফসলি জমি এ হাওরে অনাবাদি থেকে যাচ্ছে।

প্রতিবছর নিকলী, বাজিতপুর, মিঠামইন, ইটনা ও অষ্টগ্রাম উপজেলার বিভিন্ন হাওরে প্রায় ১৮-২০ হাজার একর বোর জমি অনাবাদি থাকে বলেও জানায় স্থানীয় কৃষকরা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে জমি অনাবাদি থাকে অষ্টগ্রামের জোয়ানশাহী, সাপমারি, বরগুনা, বরুলিয়া, উজায়মারি, ফেনাগুনা, ছুটোলিয়া, ফেল্লাগুডা, কান্দিরখলা হাওরে।

হাওর উপজেলা (মিঠামইন-ইটনা ও অষ্টগ্রাম) আসনের সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহমেদ তৌফিক বলেন, হাওরের মানুষকে বাঁচাতে ইতোমধ্যে আগাম বন্যার কবল থেকে প্রধান ফসল বোরো ধান রক্ষা করা এবং ভাঙনের তান্ডবে বিলীন হয়ে যাওয়া গ্রামগুলো পুনরুদ্ধারকল্পে ‘কালনী-কুশিয়ারা প্রকল্প’ হাতে নেয়া হয়েছে। প্রকল্পে কাজ চলছে। প্রকল্পের সার্বিক কাজ বাস্তবায়নের হলে হাওরবাসী নৌ-পথে যোগাযোগসহ বোরো জমিতে সেচের সমস্যা দূর হবে।

এ ব্যাপারে কিশোরগঞ্জের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শফিকুল ইসলাম হাওরের বোরো জমিতে ইঁদুরের আক্রমণ ও সেচের অভাবে জমি পতিত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি জানান, বিভিন্ন জায়গা থেকে ইঁদুরের আক্রমণের খবর আসছে। তবে ইঁদুরের আক্রমণ এখনো মহামারি পর্যায়ে পৌঁছায়নি। ইঁদুর দমনে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তাঁর মতে, সব মিলিয়ে হাজার দশেক একর বোরো জমি এবার পতিত রয়েছে। এর কারণ হিসেবে তিনি পলি পড়ে প্রতিবছর খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় সেচ সংকটের কথা উল্লেখ করেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

কিশোরগঞ্জের হাওরসমূহে পানির জন্য হাহাকার দেখা দিয়েছে, কৃষি আবাদ ব্যাহত

আপডেট টাইম : ০৪:০২:৩২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ মার্চ ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ চৈত্র মাসে আগাম পাহাড়ি ঢলে হাওরে বছরের একমাত্র বোরো ফসল তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা সব সময় কৃষকদের তাড়া করলেও এই ফাল্গুনেই কিশোরগঞ্জের হাওরসমূহে পানির জন্য হাহাকার দেখা দিয়েছে। চারদিকে খাল বিল শুকিয়ে চৌচির। এঁটেল এবং দো-আঁশ মাটির এসব এলাকায় মাটি ফেটে ধানক্ষেতে গর্তের সৃষ্টি হচ্ছে। খাল এবং বিলে পানি না থাকার কারণে বিপাকে পড়েছেন জেলার ইটনা, মিঠাইমন, অষ্টগ্রাম, বাজিতপুর, নিকলী উপজেলার কয়েক শতাধিক কৃষক পরিবার। পাশাপাশি ইঁদুর কেটে সাবাড় করছে উঠতি ধানের গোছা।

এবার মৌসুমের শুরুতেই কিশোরগঞ্জের নদীগুলোতে তীব্র পানি সংকট দেখা দিয়েছে। অধিকাংশ নদ-নদীতে পলি পড়ে নাব্যতা হারিয়ে গেছে, কোন কোন স্থানে চর জেগে ওঠেছে। ফলে বর্ষা মৌসুম ছাড়া নদীগুলো নৌপথের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। তেমনি নদীগুলো শুকিয়ে যাওয়ায় বোরো মৌসুমে বেশিরভাগ নদ-নদীর অংশ খাল-বিল কার্যত পানি সেচে কৃষকদের ফসল উৎপাদনে কোন ভূমিকা রাখতে পারছে না।

কৃষকেরা জানিয়েছেন, কোথাও কোথাও জমির মাটি ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। শুকিয়ে মরে যাচ্ছে অনেক জমির ধানের চারাও। কৃষকদের ভাষ্য, হাওরের পানি দ্রুত নদীতে নেমে গিয়ে এ অবস্থা তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া, হাওরের জলমহাল ও ছোট ছোট জলাধার শুকিয়ে যাওয়া ও বৃষ্টিপাত না হওয়া এর জন্য দায়ী।

নিকলী উপজেলার কৃষক নুরুল ইসলাম ও আব্দুর রশিদ জানান, অষ্টগ্রামের হাওরগুলোতে তাঁদের প্রায় ৮০ একর বোরো জমি থাকলেও সেচের অভাবে ও যোগাযোগের কারণে বিগত ৮ বছর যাবত অনাবাদি রাখতে বাধ্য হচ্ছেন।

নিকলী উপজেলার বরুলিয়া হাওরের কৃষকদের মতে, বিগত বছরগুলোতে বরুলিয়া খালটি একাধিকবার খনন করলেও পর্যাপ্ত গভীর হয়নি, যে কারণে বর্ষার আগে এখানে পানি পাওয়া যায় না। ফলে সেচের অভাবে প্রতিবছর ৫-৬ শত একর ফসলি জমি এ হাওরে অনাবাদি থেকে যাচ্ছে।

প্রতিবছর নিকলী, বাজিতপুর, মিঠামইন, ইটনা ও অষ্টগ্রাম উপজেলার বিভিন্ন হাওরে প্রায় ১৮-২০ হাজার একর বোর জমি অনাবাদি থাকে বলেও জানায় স্থানীয় কৃষকরা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে জমি অনাবাদি থাকে অষ্টগ্রামের জোয়ানশাহী, সাপমারি, বরগুনা, বরুলিয়া, উজায়মারি, ফেনাগুনা, ছুটোলিয়া, ফেল্লাগুডা, কান্দিরখলা হাওরে।

হাওর উপজেলা (মিঠামইন-ইটনা ও অষ্টগ্রাম) আসনের সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহমেদ তৌফিক বলেন, হাওরের মানুষকে বাঁচাতে ইতোমধ্যে আগাম বন্যার কবল থেকে প্রধান ফসল বোরো ধান রক্ষা করা এবং ভাঙনের তান্ডবে বিলীন হয়ে যাওয়া গ্রামগুলো পুনরুদ্ধারকল্পে ‘কালনী-কুশিয়ারা প্রকল্প’ হাতে নেয়া হয়েছে। প্রকল্পে কাজ চলছে। প্রকল্পের সার্বিক কাজ বাস্তবায়নের হলে হাওরবাসী নৌ-পথে যোগাযোগসহ বোরো জমিতে সেচের সমস্যা দূর হবে।

এ ব্যাপারে কিশোরগঞ্জের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শফিকুল ইসলাম হাওরের বোরো জমিতে ইঁদুরের আক্রমণ ও সেচের অভাবে জমি পতিত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি জানান, বিভিন্ন জায়গা থেকে ইঁদুরের আক্রমণের খবর আসছে। তবে ইঁদুরের আক্রমণ এখনো মহামারি পর্যায়ে পৌঁছায়নি। ইঁদুর দমনে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তাঁর মতে, সব মিলিয়ে হাজার দশেক একর বোরো জমি এবার পতিত রয়েছে। এর কারণ হিসেবে তিনি পলি পড়ে প্রতিবছর খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় সেচ সংকটের কথা উল্লেখ করেন।