দুটি কক্ষ একজন শিক্ষক

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মাটি বন জঙ্গল নদী খাল বিলের মধ্যে বেড়ে ওঠে নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী। তাদের মূলধারার জীবনযাপনে সম্পৃক্ত করার জন্য সরকারের উদ্যোগ হিসেবে ঠাকুগাঁওয়ের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবহেলিত নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর শিক্ষার মান বৃদ্ধির জন্য স্কুল নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্য নিয়েই নির্মিত একটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংকটে জর্জরিত। স্কুলটিতে না আছে পর্যাপ্ত শিক্ষক, আর না আছে ক্লাসঘর। আধুনিক শিক্ষার পর্যাপ্ত উপকরণ তো তাদের কল্পনা। স্কুলটির নামকরণ করা হয় আদিবাসী বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

যদিও বিদ্যালয়টির অর্থায়ন করছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় তবু এর ভগ্ন দশা সীমাহীন। স্কুলে একজন শিক্ষক দিয়ে চলছে ৫৩ শিক্ষার্থীর পাঠদান। দুটি আধা পাকা ঘর ছাড়া স্কুলের শ্রেণিকক্ষ বলতে কিছু নেই। শিক্ষার্থীরা ক্লাসে গাদা গাদি করে বসতে পারলেও পাঠদানে তেমন মনোযোগ দিতে পারে না বলে জানিয়েছে একাধিক শিক্ষার্থী। স্কুল কর্তৃপক্ষ জানান, ২০১৬ সালে সরকার নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর শিক্ষার মান বৃদ্ধি ও সবার জন্য শিক্ষা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে উপজেলার যাদুরাণীবাজারে স্কুলটি নির্মাণ করা হয়।

বিদ্যালয়টি দীর্ঘদিন ধরে ভবন সংকটে ভুগছে। ফলে ব্যাহত হচ্ছে নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর শিক্ষাদান কর্যক্রম। সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়টিতে ছোট ছোট দুটি আধা পাকা ইটের দেয়াল ও টিনের ছাউনির কক্ষ রয়েছে। একটিতে পড়ানো হয় প্রাক-প্রাথমিকের ২৩ শিশুকে আর অন্যটিতে প্রথম শ্রেণির ৩০ শিশুকে। জায়গার অভাবে গাদাগাদি করে বসতে হয়। এক ছাত্রের অভিভাবক কনক মুর্মূ বলেন, আমরা খুশী আছি যে আমার মেয়েটি স্কুলে যাচ্ছে। সরকার যেমন স্কুলের উদ্যোগ নিয়েছে আশা করি তাদের উপরে তোলার দায়িত্বও তারা নেবেন। কিন্তু উপবৃত্তি না পাওয়ায় আমার মেয়ের খরচ চালানো আমার জন্য কঠিন। যে শিশুরা জন্মের পর থেকেই শিখে আসে পশু পাখী মাছ শিকার, প্রকৃতির মতো বন্য আর স্বাধীন যাদের জীবন তাদের বিদ্যালয়ের অনুশাসনের মধ্যে আনা সহজ ব্যাপার নয়। তাদের মূলধারার জনগোষ্ঠীর স্রোতধারায় আনার জন্য আরো বেশি উদ্যোগ, বেশি বাজেট ও বেশি প্রয়াস প্রয়োজন-বলেন শিক্ষাবিদ ও পরিবেশ রসায়নবিদ অধ্যাপক আবু বকর সিদ্দীক।

বিদ্যালয়ের দুটি ক্লাসেই একজন মাত্র শিক্ষক চিন্তামণি মুর্মূকে দিয়ে ক্লাস চালানো হয়। তিনি বলেন, এতগুলো শিক্ষার্থীর মাঝে একজন শিক্ষকের পাঠদান অনেকটা কঠিন। তা ছাড়া দুটি মাত্র রুমে জায়গা সংকটে শিক্ষার্থীদের গাদাগাদি করে বসতে হয়। এতে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে বলেও জানান এ শিক্ষক। বিদ্যালয়ের সভাপতি সনিরাম হেমরম জানান, উপজেলার নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর ৯ গ্রামের শিক্ষার্থীরা তাদের নিজস্ব ভাষা জ্ঞানের পাশাপাশি প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করবে এ আশায় বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সরকারিভাবে  উপজেলা প্রাথমিক অফিস থেকে পাঠ্য বই দেয়া হলেও নেই উপবৃত্তির ব্যবস্থা। এই স্কুলটিতে দুটি কক্ষ আর একজন শিক্ষক দিয়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মান ব্যাহত হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।

এ ব্যাপারে হরিপুর প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আজিজার রহমান বলেন, বিদ্যালয়টি আমার দপ্তরের অধীন নয়, সরাসরি ইউএনও অফিসের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়, তাই এটা সম্পর্কে আমি বিষদ বলতে পারবো না। হরিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এমজে আরিফ বেগ জানান, প্রধান মন্ত্রীর কার্যালয়ের অর্থায়নে বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষককে মাসে তিন হাজার টাকা ভাতা দেয়া হয়। বিদ্যালয়টিতে ভবন ও অন্যান্য অবকাঠামোগত উন্নয়নে পর্যাপ্ত বরাদ্দ আর আরো বেশি বেতনে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হলে এ অঞ্চলের নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে তা ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছেন এ অঞ্চলের নৃতাত্ত্বিক অধিবাসীরা।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর