বিদ্যালয়টিতে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী থাকলেও শিক্ষক আছেন মাত্র একজন

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলায় রাজাপুর ইয়াছিন মেমোরিয়াল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিতে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী থাকলেও শিক্ষক আছেন মাত্র একজন। যার ফলে বিদ্যালয়টির লেখাপড়া দীর্ঘদিন ধরে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ভেস্তে যেতে বসছে এই এলাকায় সরকারের সবার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা কর্মসূচি।

শরণখোলার এই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিতে প্রায় দুই বছর ধরে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ৬টি ক্লাসের শিক্ষার্থীদের মাঝে মধ্যে দু’একটি ক্লাস হলেও অধিকাংশ সময়ই কোনো ক্লাস হয় না।

স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে ভোলা নদীর তীরে ওই স্কুলটি স্থাপিত হলেও সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকার পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর ছেলে-মেয়েদের এখন বিদ্যালয়টি কোন উপকারে আসছে না। অভিভাবকরা তাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া করার জন্য প্রতিদিন স্কুলে পাঠালেও অধিকাংশ সময় ক্লাস না করেই বাড়ি ফিরতে হচ্ছে তাদের।

শিক্ষক সংকটের কারণে নানা সমস্যার পাশাপাশি স্কুলটিতে নেই কোনো শৃঙ্খলা। এক সময় স্কুলটির সুনাম থাকলেও চরম শিক্ষক সংকটের কারণে দিন দিন ঐতিহ্য হারাচ্ছে এই বিদ্যাপিঠ। উপজেলা সদর থেকে একটু দুর্ঘম এলাকায় স্কুলটির অবস্থান হওয়ায় উপজেলা শিক্ষা দফতর কর্তৃপক্ষের কোনো নজরদারিও নেই। এছাড়া অধিকাংশ শিক্ষকরা সদরমুখী হওয়ায় ওই স্কুলে যোগদান করতে আগ্রহী নন কেউ। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর শিশুদের শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য উপজেলা শিক্ষা দফতরকে বার বার অনুরোধ করা হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তা আমলে নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, রাজাপুর ইয়াছিন মেমোরিয়াল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির ৬টি শ্রেণিতে ভর্তি থাকা শিক্ষার্থীদের অধিকাংশরই অভিভাবকদের পেশা সুন্দরবনের কাঠকাটা ও মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করা। তাদের পক্ষে ছেলেমেয়েদের নামিদামি বিদ্যাপিঠে লেখাপড়া শেখানো সম্ভব সম্ভব। তাই বাধ্য হয়ে স্থানীয় ওই স্কুলটিতে শিশুদের ভর্তি করলেও ফলাফল শূন্য। স্কুলটিতে মানসম্মত ভবন, ক্লাশরুম, উপবৃত্তি, টিফিন ব্যবস্থাসহ সরকারি নানা সুযোগ সুবিধা থাকলেও চরম সংকট রয়েছে শিক্ষকের। দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক সংকটের কারণে সরকারি নানা উদ্যোগের সুফল ভোগ করতে পারছে না শিক্ষার্থীরা।

স্থানীয় বাসিন্দা ও রাজাপুর ইয়াছিন মেমোরিয়াল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির পরিচালনা পরিষদের সভাপতি প্রভাষক কামাল হোসেন তালুকদার বলেন, স্কুলের শিক্ষক সংকটের বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে বহুবার লিখিতভাবে অবহিত করা হয়েছে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে সংশ্লিষ্টরা কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় কোমলমতি শিশুদের পড়ালেখা গত দু’বছর যাবত এক প্রকার বন্ধ আছে।

এছাড়া মাঝে মধ্যে দু’একজন শিক্ষক বিদ্যালয়টিতে যোগদান করলেও কিছু দিন পর শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে অন্য স্কুলে বদলি হয়ে যান। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জেনে-শুনেও কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।

সরকারি এই বিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল আউয়াল বলেন, তার একার পক্ষে সকল শ্রেণির দু’শতাধিক শিক্ষার্থী ম্যানেজ করে পাঠদান অসম্ভব। এছাড়া শিক্ষা অফিসের মাসিক সভাসহ প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডের জন্য সপ্তাহে ৩/৪ দিন তাকে স্কুলের বাইরে ব্যস্ত থাকতে হয়। যার ফলে ওই দিনগুলোতে বিদ্যালয়টি শিক্ষক শুন্য হয়ে পড়ে। স্কুলটিতে ৫ জন শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও এলাকাটি দুর্গম হওয়ায় কোনো শিক্ষকই এখানে বদলি হয়ে আসতে চান না। শিক্ষক সংকটের কারণে শিক্ষার্থীদের পাঠদান ব্যাহত হওয়ার বিষয়সহ শিক্ষক চেয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেও কোনো প্রতিকার মেলেনি।

শরণখোলা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম বলেন, উপজেলার দুর্গম এই স্কুলটিতে মহিলা শিক্ষক পাঠানো যাচ্ছে না। ডেপুটেশনে স্কুলটিতে একজন পুরুষ শিক্ষক পাঠানোর জন্য জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যলয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর