হাওর বার্তা ডেস্কঃ আরবি ‘মুসলিম’ শব্দের ফারসি রূপ হচ্ছে ‘মুসলমান’। মুসলমান শব্দটি লিখতে আরবি ছয়টি অক্ষরের প্রয়োজন হয়। যথাক্রমে মিম, সিন, লাম, মিম, আলিফ এবং নুন। কোনো কোনো ইসলামি গবেষকের মতে, মুসলমান শব্দের প্রতিটি অক্ষরের আলাদা আলাদা তাৎপর্য আছে। যেমন মুসলমান শব্দের প্রথম অক্ষর মিম। মিম অক্ষরের মাধ্যমে ইশারা করা হয়েছে ‘মওত’ তথা মৃত্যুর দিকে। প্রতিটি জীবনের চিরন্তন সত্য এ মৃত্যু।
মুসলমানের শব্দের প্রথম অক্ষর মিম আমার হৃদয়ে মৃত্যুর স্মরণকে জাগ্রত করার কথা বলছে। আল্লাহ পাক পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেন, ‘প্রতিটি প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে।’ মিম অক্ষরটি আমাকে সেই চিরন্তন সত্য মৃত্যুর ব্যাপারে সতর্ক করছে। আমার এ মুসলমান নামটি আমাকে যেন ডেকে বলছে মৃত্যুর স্মরণ তোমাকে সবসময় রাখতে হবে। যে ব্যক্তি মৃত্যুকে যত বেশি স্মরণ করবে, গোনাহ থেকে তত বেশি বেঁচে থাকবে।
মুসলমান শব্দের দ্বিতীয় অক্ষর সিন। সিন অক্ষরের মাধ্যমে ইশারা হলো ‘সিজদা’ করা। মহান রবের সামনে সিজদার মাধ্যমে নিজেকে আল্লাহ পাকের সামনে সমর্পণ করা। প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যথাযথভাবে আদায় করা। ফরজের পাশাপাশি সুন্নত ও নফল নামাজেও অভ্যস্ত হওয়া। রাসুলে আকরাম (সা.) বলেছেন, কেয়ামতের ময়দানে সর্বপ্রথম নামাজের হিসাব হবে। যে ব্যক্তির নামাজ ঠিক থাকবে তার অন্য সব ঠিক আছে। যার নামাজে গরমিল তার অন্য ইবাদতেও গরমিল। তাই মুসলমান দাবি করে এমন প্রতিটি মানুষকে নামাজের প্রতি দায়িত্বশীল হতে হবে। সিজদায় অবনত, মোনাজাতে আকুলপ্রাণ হতে হবে।
মুসলমান শব্দের দ্বিতীয় অক্ষর সিনের আরেক ইশারা হলো ‘সতর’। সতর বলে বোঝানো হচ্ছে নিজের পর্দা ঠিক রাখা এবং অন্যের ক্ষেত্রে পর্দা মেনে চলা। প্রতিটি মুসলমানের জন্য নামাজের মতোই নিজে পর্দা করা এবং পরিবারের সদস্যদের পর্দা রক্ষা করা ফরজ। মৃত্যুর স্মরণের পাশাপাশি প্রতিদিনের যদি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ও পর্দা ঠিক থাকে তাহলে বোঝা যাবে আমার মুসলমানি ঠিক আছে। আমি ইসলামের ওপর অবিচল আছি।
মুসলমান শব্দের তৃতীয় অক্ষর লাম। লাম শব্দের মাধ্যমে ইশারা হলো, ‘লিল্লাহ’ শব্দের দিকে। লিল্লাহ মানে হলো, শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে। একজন মুসলমানের সব কিছুই হতে হবে শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। পারস্পরিক ভালোবাসা বা পারস্পরিক বিচ্ছিন্নতা সব কিছুর মাধ্যম হবে লিল্লাহ। আল্লাহর জন্য এটিই মুসলমানের পরিচয়। এটাই একজন মুসলমানের বৈশিষ্ট্য। লাম শব্দের আরেকটি তাৎপর্য হলো ‘হালাল’। প্রতিটি মুসলমানের জন্য আবশ্যকীয় দায়িত্ব হলো সর্বাবস্থায় হালাল খাদ্য খাওয়া। হালাল পথে জীবিকা উপার্জন করা। হারাম কোনো খাদ্য বা বস্তু সব মুসলমানের জন্য সম্পূর্ণ নাজায়েজ এবং নিষিদ্ধ।
মুসলমান শব্দের চতুর্থ অক্ষর মিম। মিম অক্ষরের মাধ্যমে ইশারা করা হয়েছে ‘মহব্বত’ এর দিকে। মহব্বত ও ভালোবাসা হতে হবে আল্লাহর সঙ্গে। আর আল্লাহ বলেছেন, আমাকে ভালোবাসতে হলে আমার রাসুলের অনুসরণ করো। তার মানে বোঝা গেল প্রতিটি মুসলমানের জন্য আবশ্যকীয় কর্তব্য হলো, প্রতিটি কাজে আল্লাহর ভালোবাসা ও প্রিয় নবীজির আনুগত্য করা। তবেই সে ব্যক্তি পরিপূর্ণ মুসলমান হতে পারবে। আল্লাহ এবং তার প্রিয় রাসুলকে ভালোবাসার পাশাপাশি ইসলামের অনুপম নিদর্শনগুলোকেও ভালোবাসতে হবে।
মুসলমান শব্দের পঞ্চম অক্ষর হলো ‘আলিফ’। আলিফ অক্ষরের মাধ্যমে ইশারা করা হয়েছে ‘আমানত’ এর দিকে। আমরা মনে করি আমানত মানে শুধু সম্পদের সংরক্ষণ। বিষয়টি শুধু তা নয়, বরং আমার কাছে আমার প্রতিবেশীর সম্মান আমানত। তার সম্পদ আমার কাছে আমানত। তার শান্তি-প্রশান্তি আমার কাছে আমানত। এমন কোনো কাজ বা কথা বলা যাবে না যাতে করে আমার প্রতিবেশীর হক নষ্ট হয়। এটাই হলো মুসলমানের প্রকৃত আমানতদারী। এটাই ইসলামের শিক্ষা। রাসুলে আকরাম (সা.) বলেছেন, যার হাত ও মুখের অনিষ্ট থেকে প্রতিবেশী নিরাপদ নয়, সে মুসলমান নয়।
মুসলমান শব্দের ষষ্ঠ অক্ষর হলো নুন। নুন শব্দের দ্বারা ইশারা করা হয়েছে ‘আন-নাহয়ু’ বাক্যের দিকে। যার অর্থ হলো, সব ধরনের নিষেধ থেকে বেঁচে থাকা। সব রকমের হারাম থেকে বাঁচা। হারাম বলা থেকে, হারাম দেখা থেকে, গোনাহের কথা শোনা থেকে, হারাম খাওয়া থেকে বেঁচে থাকার দিকেই ইশারা করা হয়েছে মুসলমান শব্দের নুনের মাধ্যমে।
লেখক : নির্বাহী পরিচালক, শরিয়াহ রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ