ঢাকা ১১:১৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দলাদলি ছড়াবে তৃণমূলে বিপদে পড়বে জামায়াত, উৎসাহ হারাবেন স্বতন্ত্ররা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৫৯:৫৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ অক্টোবর ২০১৫
  • ৪০৮ বার

ইউনিয়ন পরিষদসহ স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচন দলীয়ভাবে হলে তৃণমূল পর্যায়ে তার সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে। দলীয় পরিচয়ে চিহ্নিত হওয়ার ভয়ে স্থানীয় সুশীল ব্যক্তিরা নির্বাচন থেকে দূরে থাকবেন। ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা বিরোধী রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে বাধা দেবে। হানাহানি ছড়িয়ে পড়বে ঘরে ঘরে। আর অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্রশাসক বসানোর বিধান থাকায় স্থানীয়ভাবে ঝামেলা জিইয়ে রেখে প্রশাসক নিয়োগের পথ সুগম করা হবে, যা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয় বলে মনে করেন স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা আরো বলেন, শত বছরের পুরনো একটি বিষয় বদলে ফেলার আগে পর্যাপ্ত আলোচনা হওয়া দরকার ছিল, বিশেষ করে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য এক শতাংশ ভোটারের সমর্থন সংগ্রহ করা কঠিন হবে। নিবন্ধিত না হলেও আঞ্চলিক দলগুলোকে এ নির্বাচনের আওতায় আনা জরুরি বলেও মত তাঁদের। আর দলীয় প্রতীকে সব নির্বাচন হলে সবচেয়ে বিপাকে পড়বে জামায়াতে ইসলামী। কারণ আদালতের আদেশে দলটির নিবন্ধন বাতিল হয়ে গেছে। এর ফলে জাতীয় নির্বাচনে লড়তে না পারলেও এত দিন দলটি স্থানীয় পর্যায়ের ভোটযুদ্ধে অংশ নিতে পারত। এবার সে পথও রুদ্ধ হতে চলেছে। ফলে জামায়াতের অস্তিত্বই এখন বিরাট প্রশ্নের মুখে পড়েছে বলে মনে করছেন তাঁরা।
গত সোমবার মন্ত্রিসভা বৈঠকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয়ভাবে করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞরা কালের কণ্ঠকে এসব মতামত জানান। তবে তাঁরা সরকারের এ সিদ্ধান্তের ইতিবাচক দিকও খুঁজে পেয়েছেন। আর তা হলো, দলীয় পরিচয়ে নির্বাচন হলে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর দায় দলের ওপরও বর্তাবে। একই সঙ্গে নির্বাচনে সহিংসতা কমবে বলেও জানিয়েছেন তাঁরা।
সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার কালের কণ্ঠকে বলেন, সরকার দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করার নানা যুক্তি দিচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে প্রার্থীরা দলীয় শৃঙ্খলায় আসবেন। তাঁদের রাজনৈতিক পরিচয় থাকবে। আর অরাজনৈতিক ব্যক্তিরাও নির্বাচন করতে পারবেন। সরকারের এই তিনটি যুক্তিই অগ্রহণযোগ্য, অযৌক্তিক ও অসার। দলীয় শৃঙ্খলা বলে এখন কিছুই নেই। দলীয় প্রধান শুধু ধর্মীয় বিষয় নিয়ে কেউ বাড়াবাড়ি করলে ব্যবস্থা নেন, কিন্তু দলীয় সদস্য খুনখারাবি করলে, টেন্ডারবাজি করলে তাঁর বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক দল ব্যবস্থা নেয় না। সরকারের আরেকটি যুক্তি হলো, প্রার্থীদের রাজনৈতিক পরিচয় থাকবে। রাজনৈতিক পরিচয় থাকলে কি তাঁরা সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালাবেন না? এখনো দলীয় নেতারা রাজনৈতিক পরিচয়েই নানা অপকর্মে জড়াচ্ছেন। আর অরাজনৈতিক ব্যক্তির এক শতাংশ ভোটারের সমর্থন নিয়ে নির্বাচন করাটাও কঠিন। কারণ ইউনিয়ন পরিষদের ওয়ার্ড পর্যায়ে সবাই সবাইকে চেনে। এ অবস্থায় কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে মনোনয়নপত্রে স্বাক্ষর করে নিজের পরিচয় প্রকাশ করতে চাইবে না।
বদিউল আলম মজুমদার আরো বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে নির্দলীয়ভাবে স্থানীয় নির্বাচনের বিধান থাকলেও রাজনৈতিক দলগুলো তা মানে না। তাই যদি হয়, তাহলে তো এ দেশে কোনো আইনকানুনের দরকার নেই। কারণ তারা আইনের ঊর্ধ্বে থাকতে চায়। বাঙালি দল করতে পারে না, কিন্তু দলাদলিতে ওস্তাদ। এই দলাদলি তৃণমূল পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়বে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হলে। দলীয়ভাবে নির্বাচন হতে পারে, যেমনটি হয় ইংল্যান্ড বা ভারতে। কিন্তু ভারতের গণতন্ত্র আর আমাদের গণতন্ত্র কি এক? ইংল্যান্ডে বিরোধী দলকে যে মর্যাদা দেওয়া হয়, আমাদের দেশে কি তা দেওয়া হয়? গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাজনৈতিক দল মানে হচ্ছে স্বচ্ছতা বা দায়বদ্ধতা। আমাদের দেশে কি সেই গণতন্ত্র আছে? বর্তমান ব্যবস্থায় অনেক নির্বাচনী এলাকার মানুষ তাঁদের এলাকার কোনো সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিকে নির্বাচনে দাঁড় করিয়ে দেন। অনেক ক্ষেত্রে তিনি জিতেও আসেন। কিন্তু দলীয় নির্বাচন হলে সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিরা লড়তে আসবেন না। আর প্রার্থীদের মনোনয়ন দেওয়াকে কেন্দ্র করে টাকার খেলা চলবে।’
সীমাহীন সময়ের জন্য প্রশাসক নিয়োগের বিধান রাখাও ঠিক হচ্ছে না বলে মনে করেন তিনি। তাঁর প্রশ্ন, এখানে প্রশাসক নিয়োগে কি গণতন্ত্র প্রশ্নবিদ্ধ হবে না? প্রশাসকরা তো অনির্বাচিত। অনির্বাচিত ব্যক্তি সরকার গঠন করলে প্রশ্ন ওঠে, তাহলে অনির্বাচিত ব্যক্তি কিভাবে ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভায় দায়িত্ব নেবেন? স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমদও এ বিষয়ে একমত। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রশাসকদের সময় বেঁধে দেওয়া উচিত। তাঁদের ৯০ দিনের বেশি সময় দেওয়া উচিত হবে না। অনির্বাচিত ব্যক্তিদের প্রশাসক পদে বসালে সংবিধান লঙ্ঘিত হবে।’ অধ্যাপক তোফায়েল আহমদ আরো বলেন, অনেক আঞ্চলিক দল রয়েছে যারা নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত নয়। উদাহরণ হিসেবে তিনি জনসংহতি সমিতির কথা উল্লেখ করেন। পার্বত্য চট্টগ্রামে এই দলটির ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। কিন্তু নিবন্ধিত না হওয়ার কারণে তারা স্থানীয় ভোটে অংশ নিতে পারবে না। আঞ্চলিক দলগুলোকে নির্বাচনে আসার সুযোগ দেওয়া দরকার।
একজন অতিরিক্ত সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দলীয়ভাবে নির্বাচন করা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনা হওয়া দরকার ছিল। আর মন্ত্রিসভায় প্রস্তাব যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা অনুমোদন করে দেওয়া হলো। অনেক বিষয়েই প্রথমে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে চূড়ান্ত অনুমোদন হয়। মন্ত্রিসভা আরো সময় নিতে পারত। যাই হোক শেষ পর্যন্ত দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলে তা যেন সুষ্ঠু হয়, সব রাজনৈতিক দলের সে চেষ্টাই থাকা উচিত।
দলীয় মনোনয়ন নিয়ে জটিলতা বাড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী ছায়েদুল হক। মন্ত্রিসভা বৈঠকেই তিনি এ আশঙ্কা প্রকাশ করলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের দলের সংসদীয় বোর্ড আছে। ওই বোর্ড জাতীয় সংসদের প্রার্থী মনোনয়ন দেয়। স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন স্তরের নির্বাচনগুলোর ক্ষেত্রেও প্রার্থী মনোনয়ন বোর্ড গঠন করে দেব। দলের গঠনতন্ত্র সংশোধন করে এ পদ্ধতি সংযোজন করা হবে। জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নের জন্য বোর্ড থাকবে। যারা বোর্ডের সিদ্ধান্ত মানবে না, তাদের বহিষ্কার করা হবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক আখতার হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘স্থানীয় সরকারের নির্বাচন ভেতরে ভেতরে সব সময় দলীয়ই ছিল। এমনকি ভোটের পর সংবাদমাধ্যমগুলোর যে বিশ্লেষণ, সেখানেও দলভিত্তিক তথ্যই আমরা পেয়েছি। বর্তমানে শুধু প্রতীক নেই, আর সবই আছে।’
প্রশাসক নিয়োগের বিষয়ে অবশ্যই মানুষকে ব্যাখ্যা দিতে হবে। এ বিধান অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য থাকা উচিত নয়। প্রশাসক রাখতে হলে সময় নির্দিষ্ট করে দিতে হবে। আর দলীয়ভাবে হলেই নির্বাচনে মারামারি হবে এই ধারণা ঠিক নয়। রাজনৈতিক দলের একটা শৃঙ্খলাও আছে। মারামারি তখনই হয়, যখন কেউ বয়কট করে।
অনেক ক্ষেত্রে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে স্থানীয় লোকজন দলনিরপেক্ষ ব্যক্তিদের দাঁড় করিয়ে দেয়। দলীয়ভাবে নির্বাচন হলে এ ধরনের মানুষ নির্বাচন করতে নিরুৎসাহিত হবেন কি না জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক বলেন, ‘কেন নিরুৎসাহিত হবেন? আমাদের দেশের অনেক মানুষ নাম লিখিয়ে হয়তো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। কিন্তু সবাই কোনো না কোনোভাবে কোনো একটি দলের সমর্থক।’ তিনি আরো বলেন, ‘নির্বাচনে সবাইকে অংশ নিতে হবে। অংশ না নিলে যত সংস্কারই করেন না কেন তা সফল হবে না। সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অনেক কিছু দেখেছি। যাঁরা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন, সেই সময় পর্যন্ত তাঁরাও অনেক ভোট পেয়েছেন। সব সময়ই সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে চাপে রাখতে হবে।’
জেলা পরিষদ নির্বাচন প্রসঙ্গে আখতার হোসেন বলেন, জেলা পরিষদ বিরাট অঞ্চল নিয়ে হয়। সরাসরি নির্বাচন হলে তাঁরা এমপিদের চেয়েও বেশি পাওয়ারফুল হবেন। তাঁদের দ্বন্দ্ব হবে এমপিদের সঙ্গে। জেলা পরিষদের নির্বাচন করার আগে এসব বিষয় ভাবতে হবে।
স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয়ভাবে হওয়ার বিষয়টিকে ইতিবাচক বলে মনে করছেন জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয়ভাবে করার জন্য বহুদিন ধরে আমরা দাবি করে এসেছি। অবশেষে সরকার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েছে। এ জন্য সরকারকে সাধুবাদ জানাই। এখন আগের তুলনায় দায়বদ্ধতা অনেকাংশে বেড়ে যাবে। একই সঙ্গে নির্বাচনে সহিংতা কমবে। কারণ দলগুলো এখন আর কোনো কিছুর দায় এড়াতে পারবে না।’ এটা নির্বাচনী সংস্কৃতিতে পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ডিসেম্বরে পৌরসভার নির্বাচন করার জন্য সংশ্লিষ্ট আইনের অধ্যাদেশ জারি করা হবে। অন্য আইনগুলো যথানিয়মে সংসদে পাস করার পর নির্বাচন করা হবে। এ অবস্থায় আগামী মার্চ মাসে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন করা যাবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। যদিও নির্বাচন কমিশনার মো. আবু হাফিজ কালের কণ্ঠকে বলেছেন, ‘আমরা সব সময় নির্বাচন করার জন্য প্রস্তুত আছি। আগে পৌরসভা নির্বাচন শেষ হোক। তারপর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের বিষয়টি দেখা হবে। আর যথাসময়ে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন করা সম্ভব না হলে কারা দায়িত্ব পালন করবেন সরকারই তা নির্ধারণ করে দেবে। তবে আমাদের পক্ষে সব সময় নির্বাচন করার প্রস্তুতি রয়েছে।’
দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনকে রাজনৈতিক দলগুলোও ভালোভাবে নিচ্ছে না। এরই মধ্যে বিএনপি এর বিরোধিতা করেছে। দলটি বলেছে, দুরভিসন্ধি থেকে স্থানীয় সরকার আইন সংশোধন করা হয়েছে। এই নির্বাচনকে জামায়াতে ইসলামীর জন্য অস্তিত্বের প্রশ্ন হিসেবেও দেখা হচ্ছে। কারণ দলীয়ভাবে নির্বাচন হলে জামায়াত প্রার্থীরা তাতে অংশ নিতে পারবেন না। এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার মো. আবু হাফিজ বলেন, ‘উচ্চ আদালতের রায়ে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। এ কারণে জামায়াত দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। তবে জামায়াত সমর্থিত কোনো ব্যক্তি যদি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে চায় সেটা ভিন্ন বিষয়।’
একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক জানিয়েছেন, নিবন্ধন বাতিলের পর রাজনীতি থেকে জামায়াতে ইসলামীর নাম মুছে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। নির্দলীয় হলে তারা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারত। দলীয়ভাবে হলে সেটা আর সম্ভব হবে না। কারণ আদালতের আদেশে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হয়ে গেছে। সংসদ না থাকায় অর্ডিন্যান্স জারি করে আগামী ডিসেম্বরেই পৌরসভা নির্বাচন করা হবে। নতুন বছরের শুরুতেই হবে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। কাজেই তৃণমূলের নির্বাচন দিয়েই জামায়াত তৃণমূল থেকে বিনাশ হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন সংঘাত-সহিংসতার পথ বন্ধ করবে বলে মনে করেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন। স্থানীয় সরকার আইন সংশোধনের প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর এর বিরোধিতা করছেন অনেক স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ। তাঁদের যুক্তি হচ্ছে, নির্দলীয় যোগ্য ব্যক্তিরা সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ কিংবা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিতে নিরুৎসাহিত হবেন। এর জবাবে গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘ধরেই নিলেন যে মারামারি কাটাকাটি হবে, এতটা এক্সট্রিমে যাবেন কেন? মারামারি-কাটাকাটি হবেই না। জাতীয় পর্যায়ের নির্বাচনে দুই এমপি কোথায় মারামারি করেছেন, তা আমার জানা নেই।’ দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলে তৃণমূল পর্যায়ে ভোটের উৎসব হবে বলে মনে করেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

দলাদলি ছড়াবে তৃণমূলে বিপদে পড়বে জামায়াত, উৎসাহ হারাবেন স্বতন্ত্ররা

আপডেট টাইম : ১০:৫৯:৫৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ অক্টোবর ২০১৫

ইউনিয়ন পরিষদসহ স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচন দলীয়ভাবে হলে তৃণমূল পর্যায়ে তার সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে। দলীয় পরিচয়ে চিহ্নিত হওয়ার ভয়ে স্থানীয় সুশীল ব্যক্তিরা নির্বাচন থেকে দূরে থাকবেন। ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা বিরোধী রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে বাধা দেবে। হানাহানি ছড়িয়ে পড়বে ঘরে ঘরে। আর অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্রশাসক বসানোর বিধান থাকায় স্থানীয়ভাবে ঝামেলা জিইয়ে রেখে প্রশাসক নিয়োগের পথ সুগম করা হবে, যা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয় বলে মনে করেন স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা আরো বলেন, শত বছরের পুরনো একটি বিষয় বদলে ফেলার আগে পর্যাপ্ত আলোচনা হওয়া দরকার ছিল, বিশেষ করে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য এক শতাংশ ভোটারের সমর্থন সংগ্রহ করা কঠিন হবে। নিবন্ধিত না হলেও আঞ্চলিক দলগুলোকে এ নির্বাচনের আওতায় আনা জরুরি বলেও মত তাঁদের। আর দলীয় প্রতীকে সব নির্বাচন হলে সবচেয়ে বিপাকে পড়বে জামায়াতে ইসলামী। কারণ আদালতের আদেশে দলটির নিবন্ধন বাতিল হয়ে গেছে। এর ফলে জাতীয় নির্বাচনে লড়তে না পারলেও এত দিন দলটি স্থানীয় পর্যায়ের ভোটযুদ্ধে অংশ নিতে পারত। এবার সে পথও রুদ্ধ হতে চলেছে। ফলে জামায়াতের অস্তিত্বই এখন বিরাট প্রশ্নের মুখে পড়েছে বলে মনে করছেন তাঁরা।
গত সোমবার মন্ত্রিসভা বৈঠকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয়ভাবে করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞরা কালের কণ্ঠকে এসব মতামত জানান। তবে তাঁরা সরকারের এ সিদ্ধান্তের ইতিবাচক দিকও খুঁজে পেয়েছেন। আর তা হলো, দলীয় পরিচয়ে নির্বাচন হলে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর দায় দলের ওপরও বর্তাবে। একই সঙ্গে নির্বাচনে সহিংসতা কমবে বলেও জানিয়েছেন তাঁরা।
সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার কালের কণ্ঠকে বলেন, সরকার দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করার নানা যুক্তি দিচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে প্রার্থীরা দলীয় শৃঙ্খলায় আসবেন। তাঁদের রাজনৈতিক পরিচয় থাকবে। আর অরাজনৈতিক ব্যক্তিরাও নির্বাচন করতে পারবেন। সরকারের এই তিনটি যুক্তিই অগ্রহণযোগ্য, অযৌক্তিক ও অসার। দলীয় শৃঙ্খলা বলে এখন কিছুই নেই। দলীয় প্রধান শুধু ধর্মীয় বিষয় নিয়ে কেউ বাড়াবাড়ি করলে ব্যবস্থা নেন, কিন্তু দলীয় সদস্য খুনখারাবি করলে, টেন্ডারবাজি করলে তাঁর বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক দল ব্যবস্থা নেয় না। সরকারের আরেকটি যুক্তি হলো, প্রার্থীদের রাজনৈতিক পরিচয় থাকবে। রাজনৈতিক পরিচয় থাকলে কি তাঁরা সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালাবেন না? এখনো দলীয় নেতারা রাজনৈতিক পরিচয়েই নানা অপকর্মে জড়াচ্ছেন। আর অরাজনৈতিক ব্যক্তির এক শতাংশ ভোটারের সমর্থন নিয়ে নির্বাচন করাটাও কঠিন। কারণ ইউনিয়ন পরিষদের ওয়ার্ড পর্যায়ে সবাই সবাইকে চেনে। এ অবস্থায় কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে মনোনয়নপত্রে স্বাক্ষর করে নিজের পরিচয় প্রকাশ করতে চাইবে না।
বদিউল আলম মজুমদার আরো বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে নির্দলীয়ভাবে স্থানীয় নির্বাচনের বিধান থাকলেও রাজনৈতিক দলগুলো তা মানে না। তাই যদি হয়, তাহলে তো এ দেশে কোনো আইনকানুনের দরকার নেই। কারণ তারা আইনের ঊর্ধ্বে থাকতে চায়। বাঙালি দল করতে পারে না, কিন্তু দলাদলিতে ওস্তাদ। এই দলাদলি তৃণমূল পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়বে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হলে। দলীয়ভাবে নির্বাচন হতে পারে, যেমনটি হয় ইংল্যান্ড বা ভারতে। কিন্তু ভারতের গণতন্ত্র আর আমাদের গণতন্ত্র কি এক? ইংল্যান্ডে বিরোধী দলকে যে মর্যাদা দেওয়া হয়, আমাদের দেশে কি তা দেওয়া হয়? গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাজনৈতিক দল মানে হচ্ছে স্বচ্ছতা বা দায়বদ্ধতা। আমাদের দেশে কি সেই গণতন্ত্র আছে? বর্তমান ব্যবস্থায় অনেক নির্বাচনী এলাকার মানুষ তাঁদের এলাকার কোনো সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিকে নির্বাচনে দাঁড় করিয়ে দেন। অনেক ক্ষেত্রে তিনি জিতেও আসেন। কিন্তু দলীয় নির্বাচন হলে সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিরা লড়তে আসবেন না। আর প্রার্থীদের মনোনয়ন দেওয়াকে কেন্দ্র করে টাকার খেলা চলবে।’
সীমাহীন সময়ের জন্য প্রশাসক নিয়োগের বিধান রাখাও ঠিক হচ্ছে না বলে মনে করেন তিনি। তাঁর প্রশ্ন, এখানে প্রশাসক নিয়োগে কি গণতন্ত্র প্রশ্নবিদ্ধ হবে না? প্রশাসকরা তো অনির্বাচিত। অনির্বাচিত ব্যক্তি সরকার গঠন করলে প্রশ্ন ওঠে, তাহলে অনির্বাচিত ব্যক্তি কিভাবে ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভায় দায়িত্ব নেবেন? স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমদও এ বিষয়ে একমত। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রশাসকদের সময় বেঁধে দেওয়া উচিত। তাঁদের ৯০ দিনের বেশি সময় দেওয়া উচিত হবে না। অনির্বাচিত ব্যক্তিদের প্রশাসক পদে বসালে সংবিধান লঙ্ঘিত হবে।’ অধ্যাপক তোফায়েল আহমদ আরো বলেন, অনেক আঞ্চলিক দল রয়েছে যারা নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত নয়। উদাহরণ হিসেবে তিনি জনসংহতি সমিতির কথা উল্লেখ করেন। পার্বত্য চট্টগ্রামে এই দলটির ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। কিন্তু নিবন্ধিত না হওয়ার কারণে তারা স্থানীয় ভোটে অংশ নিতে পারবে না। আঞ্চলিক দলগুলোকে নির্বাচনে আসার সুযোগ দেওয়া দরকার।
একজন অতিরিক্ত সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দলীয়ভাবে নির্বাচন করা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনা হওয়া দরকার ছিল। আর মন্ত্রিসভায় প্রস্তাব যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা অনুমোদন করে দেওয়া হলো। অনেক বিষয়েই প্রথমে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে চূড়ান্ত অনুমোদন হয়। মন্ত্রিসভা আরো সময় নিতে পারত। যাই হোক শেষ পর্যন্ত দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলে তা যেন সুষ্ঠু হয়, সব রাজনৈতিক দলের সে চেষ্টাই থাকা উচিত।
দলীয় মনোনয়ন নিয়ে জটিলতা বাড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী ছায়েদুল হক। মন্ত্রিসভা বৈঠকেই তিনি এ আশঙ্কা প্রকাশ করলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের দলের সংসদীয় বোর্ড আছে। ওই বোর্ড জাতীয় সংসদের প্রার্থী মনোনয়ন দেয়। স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন স্তরের নির্বাচনগুলোর ক্ষেত্রেও প্রার্থী মনোনয়ন বোর্ড গঠন করে দেব। দলের গঠনতন্ত্র সংশোধন করে এ পদ্ধতি সংযোজন করা হবে। জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নের জন্য বোর্ড থাকবে। যারা বোর্ডের সিদ্ধান্ত মানবে না, তাদের বহিষ্কার করা হবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক আখতার হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘স্থানীয় সরকারের নির্বাচন ভেতরে ভেতরে সব সময় দলীয়ই ছিল। এমনকি ভোটের পর সংবাদমাধ্যমগুলোর যে বিশ্লেষণ, সেখানেও দলভিত্তিক তথ্যই আমরা পেয়েছি। বর্তমানে শুধু প্রতীক নেই, আর সবই আছে।’
প্রশাসক নিয়োগের বিষয়ে অবশ্যই মানুষকে ব্যাখ্যা দিতে হবে। এ বিধান অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য থাকা উচিত নয়। প্রশাসক রাখতে হলে সময় নির্দিষ্ট করে দিতে হবে। আর দলীয়ভাবে হলেই নির্বাচনে মারামারি হবে এই ধারণা ঠিক নয়। রাজনৈতিক দলের একটা শৃঙ্খলাও আছে। মারামারি তখনই হয়, যখন কেউ বয়কট করে।
অনেক ক্ষেত্রে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে স্থানীয় লোকজন দলনিরপেক্ষ ব্যক্তিদের দাঁড় করিয়ে দেয়। দলীয়ভাবে নির্বাচন হলে এ ধরনের মানুষ নির্বাচন করতে নিরুৎসাহিত হবেন কি না জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক বলেন, ‘কেন নিরুৎসাহিত হবেন? আমাদের দেশের অনেক মানুষ নাম লিখিয়ে হয়তো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। কিন্তু সবাই কোনো না কোনোভাবে কোনো একটি দলের সমর্থক।’ তিনি আরো বলেন, ‘নির্বাচনে সবাইকে অংশ নিতে হবে। অংশ না নিলে যত সংস্কারই করেন না কেন তা সফল হবে না। সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অনেক কিছু দেখেছি। যাঁরা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন, সেই সময় পর্যন্ত তাঁরাও অনেক ভোট পেয়েছেন। সব সময়ই সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে চাপে রাখতে হবে।’
জেলা পরিষদ নির্বাচন প্রসঙ্গে আখতার হোসেন বলেন, জেলা পরিষদ বিরাট অঞ্চল নিয়ে হয়। সরাসরি নির্বাচন হলে তাঁরা এমপিদের চেয়েও বেশি পাওয়ারফুল হবেন। তাঁদের দ্বন্দ্ব হবে এমপিদের সঙ্গে। জেলা পরিষদের নির্বাচন করার আগে এসব বিষয় ভাবতে হবে।
স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয়ভাবে হওয়ার বিষয়টিকে ইতিবাচক বলে মনে করছেন জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয়ভাবে করার জন্য বহুদিন ধরে আমরা দাবি করে এসেছি। অবশেষে সরকার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েছে। এ জন্য সরকারকে সাধুবাদ জানাই। এখন আগের তুলনায় দায়বদ্ধতা অনেকাংশে বেড়ে যাবে। একই সঙ্গে নির্বাচনে সহিংতা কমবে। কারণ দলগুলো এখন আর কোনো কিছুর দায় এড়াতে পারবে না।’ এটা নির্বাচনী সংস্কৃতিতে পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ডিসেম্বরে পৌরসভার নির্বাচন করার জন্য সংশ্লিষ্ট আইনের অধ্যাদেশ জারি করা হবে। অন্য আইনগুলো যথানিয়মে সংসদে পাস করার পর নির্বাচন করা হবে। এ অবস্থায় আগামী মার্চ মাসে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন করা যাবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। যদিও নির্বাচন কমিশনার মো. আবু হাফিজ কালের কণ্ঠকে বলেছেন, ‘আমরা সব সময় নির্বাচন করার জন্য প্রস্তুত আছি। আগে পৌরসভা নির্বাচন শেষ হোক। তারপর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের বিষয়টি দেখা হবে। আর যথাসময়ে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন করা সম্ভব না হলে কারা দায়িত্ব পালন করবেন সরকারই তা নির্ধারণ করে দেবে। তবে আমাদের পক্ষে সব সময় নির্বাচন করার প্রস্তুতি রয়েছে।’
দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনকে রাজনৈতিক দলগুলোও ভালোভাবে নিচ্ছে না। এরই মধ্যে বিএনপি এর বিরোধিতা করেছে। দলটি বলেছে, দুরভিসন্ধি থেকে স্থানীয় সরকার আইন সংশোধন করা হয়েছে। এই নির্বাচনকে জামায়াতে ইসলামীর জন্য অস্তিত্বের প্রশ্ন হিসেবেও দেখা হচ্ছে। কারণ দলীয়ভাবে নির্বাচন হলে জামায়াত প্রার্থীরা তাতে অংশ নিতে পারবেন না। এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার মো. আবু হাফিজ বলেন, ‘উচ্চ আদালতের রায়ে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। এ কারণে জামায়াত দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। তবে জামায়াত সমর্থিত কোনো ব্যক্তি যদি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে চায় সেটা ভিন্ন বিষয়।’
একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক জানিয়েছেন, নিবন্ধন বাতিলের পর রাজনীতি থেকে জামায়াতে ইসলামীর নাম মুছে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। নির্দলীয় হলে তারা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারত। দলীয়ভাবে হলে সেটা আর সম্ভব হবে না। কারণ আদালতের আদেশে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হয়ে গেছে। সংসদ না থাকায় অর্ডিন্যান্স জারি করে আগামী ডিসেম্বরেই পৌরসভা নির্বাচন করা হবে। নতুন বছরের শুরুতেই হবে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। কাজেই তৃণমূলের নির্বাচন দিয়েই জামায়াত তৃণমূল থেকে বিনাশ হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন সংঘাত-সহিংসতার পথ বন্ধ করবে বলে মনে করেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন। স্থানীয় সরকার আইন সংশোধনের প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর এর বিরোধিতা করছেন অনেক স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ। তাঁদের যুক্তি হচ্ছে, নির্দলীয় যোগ্য ব্যক্তিরা সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ কিংবা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিতে নিরুৎসাহিত হবেন। এর জবাবে গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘ধরেই নিলেন যে মারামারি কাটাকাটি হবে, এতটা এক্সট্রিমে যাবেন কেন? মারামারি-কাটাকাটি হবেই না। জাতীয় পর্যায়ের নির্বাচনে দুই এমপি কোথায় মারামারি করেছেন, তা আমার জানা নেই।’ দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলে তৃণমূল পর্যায়ে ভোটের উৎসব হবে বলে মনে করেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী।