ঢাকা ০১:৩৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫, ৩০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কৃষকের গরু চুরি করে বিএনপি নেতাকর্মীদের ভূরিভোজ, পদ হারালেন দুজন

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৩১:১৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫
  • ৩ বার

জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলায় কৃষকের গরু চুরি করে দলীয় কর্মীদের ভূরিভোজ আয়োজনের অভিযোগ উঠেছে বিএনপি ও দলটির অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান মুক্তা ও রতন সরদার নামের দুজনকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। পরে গরুর মালিক বাদী হয়ে ১২ জনের নামে মামলা করার পর দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

গতকাল শনিবার উপজেলার আদারভিটা ইউনিয়নের দক্ষিণ কয়ড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। বহিষ্কার হওয়া নেতারা হলেন আদারভিটা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরী ও জেলা সেচ্ছাসেবক দলরে সদস্য রতন সরদার।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী কৃষক এফাজ উদ্দিন বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ৭ থেকে ৮ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে থানায় মামলা করেছেন।

মামলার আসামিরা হলেন আদারভিটা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরী (৪৮), মিঠু (৪০), জামিউল (৩৫), আব্দুল হাকিম (৩৫), জেলা সেচ্ছাসেবক দলের সদস্য রতন সরদার (৩৮), সুজন (৪০), বিজ্ঞ চৌধুরী (৪৫), সাজা (৫০), বাদল (৩২) ও ফতু মিয়া (৪০), সুমন মন্ডল (৪০) ও বজলু প্রামাণিক। মামলার আসামিরা প্রত্যেকেই বিএনপি ও দলটির অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী।

পরে পুলিশ গরুর চামড়া ও মাংসসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন স্থানীয় সুমন ও বজলু (কসাই)।

স্থানীয়রা জানান, গতকাল সকালে মাদারগঞ্জ পৌরসভার জোনাইল রাইসিয়া বালিকা দাখিল মাদ্রাসা মাঠে উপজেলা ও পৌর জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের আয়োজনে নারী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ওই সমাবেশে অংশ নেওয়া কর্মী-সমর্থকদের জন্য উপজেলার দক্ষিণ কয়ড়া গ্রামে ভূরিভোজের আয়োজন করেন আদারভিটা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরী এবং তার স্ত্রী জেলা মহিলা দলের অর্থ ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদিকা লায়লা খাতুন ইতি। তবে ভোজের বিরিয়ানি রান্নার জন্য গত শুক্রবার রাতে উপজেলার জোরখালী ইউনিয়নের খামারমাগুরা গ্রামের কৃষক এফাজ মন্ডলের গোয়ালঘর থেকে একটি গরু চুরি করে জবাই করার অভিযোগ ওঠে।

চুরি হওয়া গরুর মালিক কৃষক এফাজ মন্ডল জানান, গত শুক্রবার রাতে গোয়াল ঘরে গরু রেখে ঘুমিয়ে পড়েন তিনি। মধ্য রাতে ঘুম ভেঙে গেলে তিনি দেখতে পান গোয়াল ঘরের দরজ খোলা ও ভেতরে থাকা তার নব্বই হাজার টাকা মূল্যের একটি গরু নেই। তার ডাক-চিৎকারে আশেপাশের লোকজন ছুটে আসেন ও বিভিন্ন জায়গায় গরুর খোঁজ করতে থাকেন। একপর্যায়ে আজ শনিবার ভোরে পার্শ্ববর্তী দক্ষিণ কয়ড়া গ্রামে বিএনপি নেতা মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরীর বাড়িতে চুরি হওয়া গরু জবাইয়ের বিষয়টি নিশ্চিত হন তিনি।

কৃষক এফাজ মন্ডল আরও জানান, গভীর রাতে গরু জবাই করার মত কাউকে না পেয়ে সুমন মন্ডল (৪০), বিজ্ঞ চৌধুরী (৪৫), কসাই বজলু প্রামাণিক (৪৫) ও কয়েকজন কর্মীর সহায়তায় বিএনপি নেতা মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরী নিজেই গরুটি জবাই করেন। পরে ওই গরুর মাংস দিয়ে কর্মী-সমর্থকদের জন্য বিরিয়ানি রান্না করা হয় ও আংশিক মাংস রেখে দেওয়া হয়। এরপর প্রতিবেশী ও স্থানীয়দের সহায়তায় গরুর চামড়াসহ একই এলাকার কসাই বজলু প্রামাণিককে হাতেনাতে ধরে ফেলেন কৃষক এফাজ মন্ডল। বিষয়টি জানাজানি হলে মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরী ও তার স্ত্রী লায়লা খাতুন ইতি বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। পরে পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে সুমন মন্ডল ও বজলু প্রামাণিক কসাই নামে দুই জনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এ সময় গরুর চামড়া ও ২০ কেজি গরুর মাংস জব্দ করা হয়।

অভিযোগের বিষয়ে মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরীর মুঠোফোনে বারবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। তার বাড়িতে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।

মুক্তা চৌধুরীর বড় ভাইয়ের স্ত্রী জানান, তাদের বাড়িতে প্রতিবছরই গরু জবাই করে লোকজনকে খাওয়ানো হয়। এই গরুটি গরুর মালিকের কাছ থেকে কিনে নেওয়া হয়েছে। তারা ষড়যন্ত্রের শিকার।

মাদারগঞ্জ মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ওয়াজিউর রহমান জানান, শনিবার সকালে দক্ষিণ কয়রা গ্রামের মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরীর বাড়িতে গিয়ে উত্তেজিত সহস্রাধিক লোকের মধ্য থেকে সুমন মন্ডল ও বজলু প্রামাণিককে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। পরে তাদের গ্রেপ্তর দেখানো হয়। এ সময় অভিযুক্ত মাহমুদুল হাসান মুক্তা পালিয়ে যান।

উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মঞ্জুর কাদের বাবুল খান বলেন, ‘মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরীর বিষয়টি আমরা শুনেছি। অভিযোগের সত্যতা পেলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

মাদারগঞ্জ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মো. সাইদুর রহমান জানান, গরু চুরির অভিযোগে দুই জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

কৃষকের গরু চুরি করে বিএনপি নেতাকর্মীদের ভূরিভোজ, পদ হারালেন দুজন

আপডেট টাইম : ১১:৩১:১৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫

জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলায় কৃষকের গরু চুরি করে দলীয় কর্মীদের ভূরিভোজ আয়োজনের অভিযোগ উঠেছে বিএনপি ও দলটির অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান মুক্তা ও রতন সরদার নামের দুজনকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। পরে গরুর মালিক বাদী হয়ে ১২ জনের নামে মামলা করার পর দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

গতকাল শনিবার উপজেলার আদারভিটা ইউনিয়নের দক্ষিণ কয়ড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। বহিষ্কার হওয়া নেতারা হলেন আদারভিটা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরী ও জেলা সেচ্ছাসেবক দলরে সদস্য রতন সরদার।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী কৃষক এফাজ উদ্দিন বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ৭ থেকে ৮ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে থানায় মামলা করেছেন।

মামলার আসামিরা হলেন আদারভিটা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরী (৪৮), মিঠু (৪০), জামিউল (৩৫), আব্দুল হাকিম (৩৫), জেলা সেচ্ছাসেবক দলের সদস্য রতন সরদার (৩৮), সুজন (৪০), বিজ্ঞ চৌধুরী (৪৫), সাজা (৫০), বাদল (৩২) ও ফতু মিয়া (৪০), সুমন মন্ডল (৪০) ও বজলু প্রামাণিক। মামলার আসামিরা প্রত্যেকেই বিএনপি ও দলটির অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী।

পরে পুলিশ গরুর চামড়া ও মাংসসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন স্থানীয় সুমন ও বজলু (কসাই)।

স্থানীয়রা জানান, গতকাল সকালে মাদারগঞ্জ পৌরসভার জোনাইল রাইসিয়া বালিকা দাখিল মাদ্রাসা মাঠে উপজেলা ও পৌর জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের আয়োজনে নারী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ওই সমাবেশে অংশ নেওয়া কর্মী-সমর্থকদের জন্য উপজেলার দক্ষিণ কয়ড়া গ্রামে ভূরিভোজের আয়োজন করেন আদারভিটা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরী এবং তার স্ত্রী জেলা মহিলা দলের অর্থ ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদিকা লায়লা খাতুন ইতি। তবে ভোজের বিরিয়ানি রান্নার জন্য গত শুক্রবার রাতে উপজেলার জোরখালী ইউনিয়নের খামারমাগুরা গ্রামের কৃষক এফাজ মন্ডলের গোয়ালঘর থেকে একটি গরু চুরি করে জবাই করার অভিযোগ ওঠে।

চুরি হওয়া গরুর মালিক কৃষক এফাজ মন্ডল জানান, গত শুক্রবার রাতে গোয়াল ঘরে গরু রেখে ঘুমিয়ে পড়েন তিনি। মধ্য রাতে ঘুম ভেঙে গেলে তিনি দেখতে পান গোয়াল ঘরের দরজ খোলা ও ভেতরে থাকা তার নব্বই হাজার টাকা মূল্যের একটি গরু নেই। তার ডাক-চিৎকারে আশেপাশের লোকজন ছুটে আসেন ও বিভিন্ন জায়গায় গরুর খোঁজ করতে থাকেন। একপর্যায়ে আজ শনিবার ভোরে পার্শ্ববর্তী দক্ষিণ কয়ড়া গ্রামে বিএনপি নেতা মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরীর বাড়িতে চুরি হওয়া গরু জবাইয়ের বিষয়টি নিশ্চিত হন তিনি।

কৃষক এফাজ মন্ডল আরও জানান, গভীর রাতে গরু জবাই করার মত কাউকে না পেয়ে সুমন মন্ডল (৪০), বিজ্ঞ চৌধুরী (৪৫), কসাই বজলু প্রামাণিক (৪৫) ও কয়েকজন কর্মীর সহায়তায় বিএনপি নেতা মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরী নিজেই গরুটি জবাই করেন। পরে ওই গরুর মাংস দিয়ে কর্মী-সমর্থকদের জন্য বিরিয়ানি রান্না করা হয় ও আংশিক মাংস রেখে দেওয়া হয়। এরপর প্রতিবেশী ও স্থানীয়দের সহায়তায় গরুর চামড়াসহ একই এলাকার কসাই বজলু প্রামাণিককে হাতেনাতে ধরে ফেলেন কৃষক এফাজ মন্ডল। বিষয়টি জানাজানি হলে মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরী ও তার স্ত্রী লায়লা খাতুন ইতি বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। পরে পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে সুমন মন্ডল ও বজলু প্রামাণিক কসাই নামে দুই জনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এ সময় গরুর চামড়া ও ২০ কেজি গরুর মাংস জব্দ করা হয়।

অভিযোগের বিষয়ে মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরীর মুঠোফোনে বারবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। তার বাড়িতে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।

মুক্তা চৌধুরীর বড় ভাইয়ের স্ত্রী জানান, তাদের বাড়িতে প্রতিবছরই গরু জবাই করে লোকজনকে খাওয়ানো হয়। এই গরুটি গরুর মালিকের কাছ থেকে কিনে নেওয়া হয়েছে। তারা ষড়যন্ত্রের শিকার।

মাদারগঞ্জ মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ওয়াজিউর রহমান জানান, শনিবার সকালে দক্ষিণ কয়রা গ্রামের মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরীর বাড়িতে গিয়ে উত্তেজিত সহস্রাধিক লোকের মধ্য থেকে সুমন মন্ডল ও বজলু প্রামাণিককে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। পরে তাদের গ্রেপ্তর দেখানো হয়। এ সময় অভিযুক্ত মাহমুদুল হাসান মুক্তা পালিয়ে যান।

উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মঞ্জুর কাদের বাবুল খান বলেন, ‘মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরীর বিষয়টি আমরা শুনেছি। অভিযোগের সত্যতা পেলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

মাদারগঞ্জ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মো. সাইদুর রহমান জানান, গরু চুরির অভিযোগে দুই জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।