হাওর বার্তা ডেস্কঃ আওয়ামী লীগের দুর্গ বলে পরিচিত জামালপুর সদর উপজেলার মাটি মানুষের নেতা চারবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও সাবেক ভূমিমন্ত্রী মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আলহাজ রেজাউল করিম হীরা এমপি এবারও মনোনয়ন প্রত্যাশী। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য এই প্রার্থী আওয়ামী লীগের দুর্গ ধরে রাখতে কাজ করে যাচ্ছেন।
তবে এবার আওয়ামী লীগের দুর্গে আঘাত হানতে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন জামালপুর পৌরসভার পরপর দুইবারের নির্বাচিত মেয়র কেন্দ্রীয় বিএনপির নেতা অ্যাডভোকেট শাহ্ মোহাম্মাদ ওয়ারেছ আলী মামুন। এই জনপ্রিয় নেতা পৌরসভার সীমানা ডিঙিয়ে সদর উপজেলার সাধারণ মানুষের মন জয় করে আওয়ামী লীগের দুর্গ জয় করতে গ্রাম পর্যায়ে সংগঠনকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি গড়ে তুলেছেন দলের বিশাল কর্মীবাহিনী।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা মনে করছেন, আওয়ামী লীগের একাধিক শক্তিশালী প্রার্থীর সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আওয়ামী লীগের দুর্গে আঘাত হানতে পারে বিএনপি-জামায়াত জোটের এই প্রার্থী।
আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রার্থীদের মধ্যে অন্যতম হলেন, আওয়ামী লীগের দুর্গ জয়ী সবার প্রিয় হীরা ভাই নামে পরিচিত চারবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও সাবেক ভূমিমন্ত্রী ও ভূমি মন্ত্রণালয় সংত্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আলহাজ রেজাউল করিম হীরা এমপি। তার কর্মী ও সমর্থকরা বলেন, সাদাসিধে জনপ্রিয় এই নেতাকে দলীয় মনোনয়ন না দেওয়া হলে আওয়ামী লীগের এই দুর্গে ফাটল দেখা দেবে। আর এই সুযোগে বিএনপি-জামায়াত জোটের প্রার্থী দুর্গে শক্ত আঘাত হানতে পারে।
তবে একাধিক শক্তিশালী প্রার্থীর মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, জেলা আইনজীবী সমিতির তিনবার নির্বাচিত সভাপতি বিশিষ্ট আইনজীবী, কবি ও সাহিত্যিক আলহাজ মুহাম্মদ বাকী বিল্লাহ্ ও জামালপুর আওয়ামী লীগের কা-ারি হিসেবে পরিচিত জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক আহম্মেদ চৌধুরী এই দুজনই মনোনয়ন প্রত্যাশী।
তাদের মধ্যে ফারুক আহাম্মেদ চৌধুরী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি দলীয় কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি এমপি মনোনয়ন প্রত্যাশায় কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হওয়ার সুবাদে উপজেলার বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন ও সামাজিক (মসজিদ-মাদ্রাসা, স্কুল কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান) উন্নয়নে কাজে তার সহায়তার কারণে সাধারণ মানুষকে আরও বেশি কাছে নেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করেছেন।
তিনি জনপ্রতিনিধি হওয়ার সম্মান আর স্বাদ পাওয়ায় এখন মানুষের মণিকোঠায় স্থান পেতে নিজেকে উৎসর্গ করে কাজ করছেন সদর উপজেলার মাটি ও মানুষের জন্য। আর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়েও অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ বাকী বিল্লাহ অনেক আগে থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ের প্রতিটি দলীয় সভা-সমাবেশে যোগ দিয়ে নিজের অবস্থানকে নেতাকর্মীদের কাছে তুলে ধরার পাশাপাশি নৌকায় ভোট প্রার্থনার জন্য নেতাকর্মীদের দোয়া ও সমর্থনের কাজ করে যাচ্ছেন।
এই আসনে আওয়ামী লীগের আরেক সম্ভাব্য প্রার্থী হলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য জেলার ধনাঢ্য ব্যবসায়ী রেজাউল করিম রেজনু (সিআইপি)। তিনি এক সময়ের জেলা আওয়ামী লীগের একজন পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। শহরে বাণিজ্যিক এলাকা তমালতলায় জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের জন্য তার মায়ের নামে থাকা মার্কেটের একটি ফ্লাট ১০১ টাকায় আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে লিখে দেন। এই ফ্লাটেই পরিচালনা হয়ে আসছিল আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যক্রম। কিন্তু জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে তিনি এখন দলের মূলস্রোতের বিপরীতে পড়লেও এ আসনের একজন সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে প্রচার-প্রচারণায় মাঠে রয়েছেন তরুণ ধনাঢ্য এই নেতা।
জামালপুর শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য জেলা আইনজীবী সমিতির পাঁচবার নির্বাচিত সভাপতি, দুইবারের নির্বাচিত বার কাউন্সিলের সদস্য প্রবীণ রাজনৈতিক নেতা ও আইনজীবী এইচ আর জাহিদ আনোয়ারও এবার মনোনয়নপ্রত্যাাশী। তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে জেলা পরিষদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীর ফারুক আহাম্মেদ চৌধুরীর কাছে পরাজিত হন। সম্ভাব্য এই প্রার্থী আশাবাদী আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন।
এ আসনের অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী হলেন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শিল্পপতি ইঞ্জিনিয়ার মোজাফফর হোসেন। নির্বাচন এলেই তিনি এলাকায় আসেন এবং তার কিছু সমর্থক নেতাকর্মী সঙ্গে নিয়ে গণসংযোগ শুরু করেন। এ ছাড়া এই আসনে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে রয়েছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য এবং এক সময়ের তুখোড় ছাত্রনেত্রী মারুফা আক্তার পপি, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ব ম জাফর ইকবাল জাফু, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. আব্দুল মান্নান, আওয়ামী লীগ নেতা শিল্পপতি ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আলী ও জামালপুর সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বিজন কুমার চন্দ। তবে এসব মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মাঠে তেমন গণসংযোগ নেই বলে মন্তব্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের।
অপরদিকে আওয়ামী লীগের দুর্গে বিএনপির জয়ের পতাকা উড়াতে হাটঘাট এমনকি কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন জামালপুর জেলা বিএনপির প্রভাবশালী নেতা জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, ময়মনসিংহ বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক, দুইবারের নির্বাচিত সাবেক পৌর মেয়র অ্যাডভোকেট শাহ মোহাম্মদ ওয়ারেছ আলী মামুন। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনটি বিএনপিকে উপহার দিতে তিনি গ্রাম পর্যায়ে দলের সাংগঠনিক অবস্থা খুবই শক্তিশালী করে গড়ে তুলছেন। গড়ে তুলেছেন বিশাল কর্মীবাহিনী।
বিএনপির দুর্দিনের কারি হিসেবে পরিচিত জনপ্রিয় এই নেতা পৌরসভার গণ্ডি পেরিয়ে পুরো সদর উপজেলায় মানুষের মনে নিজের অবস্থান তৈরি করে নেওয়ার প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দুর্গ জয়ে নিজে এবং দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে যারা তার বিপক্ষে রয়েছেন তাদের ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। তার সমর্থকরা বলেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে তিনিই আওয়ামী লীগের দুর্গে আঘাত হানতে পারবেন।
এই আসনে বিএনপির সম্ভাব্য অন্যান্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হলেন, সাবেক স্বাস্থ্য উপমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল হক, সাবেক মহিলা এমপি নিলুফার চৌধুরী মনি। তবে এই দুই সম্ভাব্য দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী হলেও দলীয় কর্মকা-ের তাদেরও তেমন কোনো অবস্থান নেই।
এছাড়া এ আসনের জোটের শরিক দল জাতীয় পার্টির নেতা মো. জাকির হোসেন খান ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) জামালপুর জেলা শাখার সভাপতি জুলফিকার মোহাম্মদ জাহিদ জোটের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। তারা দলীয় মনোনয়ন পেলে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
তবে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ দলের প্রায় একডজন শক্তিশালী মনোনয়নপ্রত্যাশী হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। তারা মনে করছেন, এ অবস্থায় রেজাউল করিম হীরা এমপি ছাড়া যে কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হলে দলের অন্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে কোন্দল সৃষ্টির পাশাপাশি দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে দ্বিধাবিভক্তির সৃষ্টি হবে মন্তব্য তৃর্ণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের। দলের নেতাকর্মীদের দ্বিধাবিভক্তির এবং কোন্দল সৃষ্টি হলে আওয়ামী লীগের দুর্গ বলে খ্যাত জামালপুর সদরের এই আসনটি রক্ষা কঠিন হয়ে পড়বে বলেও মন্তব্য করছেন তারা।