হাওর বার্তা ডেস্কঃ রাজধানীতে জাল টাকা তৈরির কারখানার সন্ধান এবং বিপুল পরিমাণ জাল টাকা ও জাল টাকা তৈরির সরঞ্জামসহ ০৬ জাল টাকা কারবারিকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের একটি টিম।
গ্রেফতারকৃতরা হলো-মোঃ আবুল হোসেন ওরফে ইমন (৩৫), শেখ সুমন (৩২), মোঃ ছগির হোসেন ওরফে শাহীন (৪২), মোঃ ইকবাল হোসেন (৩২), স্বপ্না (১৯) ও তৌকীর আহম্মেদ ওরফে সুজন (৩০)।
গ্রেফতারের সময় তাদের হেফাজত থেকে ৫১ লক্ষ জাল টাকার নোট এবং জাল টাকা তৈরির কাজে ব্যবহৃত ১টি ল্যাপটপ, ০২ টি কালার প্রিন্টার, টাকা তৈরির বিভিন্ন কাগজ, প্রিন্টারে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের কালি, স্কীন বোর্ড, জাল টাকায় ব্যাবহৃত ফয়েল পেপার ও বাংলাদেশী প্রচলিত আসল ২৯,৮,০০ টাকা উদ্ধার করা হয়।
২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ০৪.৪০ টায় তুরাগ থানাধীন ০৮ নং ওয়ার্ডের বাউনিয়া বাদালদী রোডের একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে এ জাল টাকা তৈরির কারখানার সন্ধানসহ তাদেরকে গ্রেফতার করে ডিবি-উত্তর বিভাগের অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও প্রতিরোধ টিম।
ডিবি সূত্রে জানা যায়, গ্রেফতারকৃত ইমন এই জাল টাকা তৈরির কারখানার মালিক। সে ও তার সহযোগীরা মিলে আর্থিকভাবে অভাবি লোকদের দিয়ে উত্তরাসহ ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে জাল টাকার ব্যবসা করে আসছিল। তাদের মধ্যে সুজন এই কারখানায় প্রিন্টের কাজে ব্যবহৃত কালি সরবরাহ করত। এই চক্রটি প্রতিমাসে প্রায় এক কোটি জাল টাকা বাজারজাত করত। উদ্ধারকৃত সরঞ্জামাদি দিয়ে আরো প্রায় ০৭ কোটি জাল টাকা প্রস্তুত করার পরিকল্পনা ছিল তাদের। ইমন প্রথম জীবনে কাউছার নামে একজনের সাথে জাল টাকা তৈরিতে সহযোগীতা করত। পরবর্তী সময়ে সে ২০১৩ সাল থেকে নিজেই সরঞ্জামাদি ক্রয় করে জাল টাকা তৈরি শুরু করে। জাল টাকা তৈরির অপরাধে সে একবার গ্রেফতারও হয়েছিল। বর্তমানে সে বাংলাদেশে সর্বোচ্চ জাল নোট প্রস্তুতকারী। জানা যায় সে প্রতি মাসে প্রায় এক কোটি টাকার জাল নোট তার নিয়োজিত ডিলারের মাধ্যমে বাজারজাত করত।
ডিবি সূত্রে আরো জানা যায়, তারা বিশেষ করে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান (ঈদ/ দূর্গা পূজা) কে সামনে রেখে তাদের তৎপরতা বৃদ্ধি করে। সম্প্রতি আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ও দূর্গা পূজাকে সামনে রেখে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনায় তারা ৪/৫ কোটি জাল টাকা মার্কেটে ছাড়ার পরিকল্পনা নিয়েছিল।ছবিতে জাল টাকা তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম
গ্রেফতারকৃতরা প্রতিনিধি সংগ্রহ করে তাদের তৈরিকৃত জাল টাকা বাজারজাত করন ব্যবসার বিস্তার করত। উৎপাদকের এক লক্ষ টাকা তৈরি করতে খরচ হত প্রায় ১০ হাজার টাকা, পাইকারী বিক্রেতার নিকট বিক্রি করত ১৪-১৫ হাজার টাকায়। প্রাইকারী বিক্রেতা ১ম খুচরা বিক্রেতার নিকট বিক্রি করে ২০-২৫ হাজার টাকায়, ১ম খুচরা বিক্রেতা ২য় খুচরা বিক্রেতার নিকট বিক্রি করে ৪০-৫০ হাজার টাকায় এবং ২য় খুচরা বিক্রেতার মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে সেই টাকার মূল্য হয়ে যায় আসল এক লক্ষ টাকার সমান। মাঠ পর্যায়ে কর্মীরা বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য/দ্রবাদি ক্রয় এর মাধ্যমে এই জাল নোট বাজারজাত করত।
গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে ঢাকা মহানগরসহ বিভিন্ন থানায় জাল নোট সংক্রান্তে একাধিক মামলা রয়েছে। এ সংক্রান্তে তুরাগ থানায় মামলা রুজু হয়েছে।