ঢাকা ১০:০১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মৃগীরোগের লক্ষণগুলো জেনে রাখা ভালো

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৬:২৭:২০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪
  • ১১ বার

মৃগীরোগ স্নায়ুতন্ত্রের জটিলতাজনিত একটি রোগ। মস্তিষ্কের অতিসংবেদনশীলতার কারণে এ রোগ হয়ে থাকে। একজন মৃগীরোগীর মধ্যে একটি বা একাধিক লক্ষণ পরিলক্ষিত হতে পারে। যেমনÑ শরীর শক্ত হয়ে গিয়ে হঠাৎ পড়ে যাওয়া ও অজ্ঞান হয়ে পড়তে পারে। হঠাৎ নমনীয়ভাবে ঢলে পড়তে পারে। হঠাৎ শরীরের কোনো অংশে খিঁচুনি শুরু হওয়া ও পর্যায়ক্রমে তা সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। শিশুদের শরীর হঠাৎ ঝাঁকি খেতে পারে। ঘন ঘন কাজে অমনোযোগী হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। হঠাৎ মাথা বা পিঠ কিংবা পুরো শরীর সামনে ঝুঁকে আসতে পারে। হাত থেকে হঠাৎ করে কিছু ছিটকে পড়তে পারে। হঠাৎ করে অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করা এবং হাত-পা ও মুখের অস্বাভাবিক নাড়াচাড়া শুরু হতে পারে। হঠাৎ শরীরের কোনো অংশে ভিন্ন ধরনের অনুভূতি সৃষ্টি হতে পারে।

প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণা : মৃগীরোগ ঈশ্বরের দেওয়া অভিশাপ। কিন্তু বাস্তবতা হলো, মৃগীরোগের সঙ্গে অভিশাপ বা অলৌকিক বিষয়, যেমনÑ অতীত পাপের শাস্তির কোনো সম্পর্ক নেই। অ্যাজমা, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের মতো মৃগীরোগও একটি রোগ। মৃগীরোগ একটি মানসিক রোগ। সত্যিকার অর্থে, মৃগীরোগ হচ্ছে স্নায়ুতন্ত্রের জটিতাজনিত একটি রোগ, যা প্রায় বিশ ধরনের খিঁচুনি রোগের সমষ্টি। এটি একটি শারীরিক কার্যক্রমের সমস্যা, মানসিক সমস্যা নয়। মৃগীরোগ কারও মাধ্যমে সংক্রমিত হয় না, প্রতিবন্ধীও নয়। কাজ করতেও অক্ষম নয়। স্বাভাবিক মানুষের মতোই কার্যক্ষম ও বুদ্ধিমান। ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে, মৃগীরোগ হচ্ছে সারাজীবনের অভিশাপ। কিন্তু বাস্তবতা হলো, প্রায় ৬০ শতাংশ মৃগীরোগীর সাধারণত খিঁচুনি হয়। যদি কারো পাঁচ মিনিটের বেশি সময় ধরে খিঁচুনি না হয় অথবা পর পর কয়েকবার খিঁচুনি না হয়, তা হলে অ্যাম্বুলেন্স ডাকার প্রয়োজন নেই।

করণীয় : মৃগীরোগ এমন এক রোগ, যা হঠাৎ করে যে কোনো পরিস্থিতিতে রোগীকে আক্রমন করে বসে। ফলে আক্রান্তদের জীবনের ঝুঁকি বেশি। এ ঝুঁকি কমাতে একদিকে যেমন রোগীর জীবনযাত্রার কিছু পরিবর্তন আবশ্যক, তেমনি পারিপার্শ্বিক মানুষেরও অনেক কিছু করণীয় রয়েছে। সাধারণত খিঁচুনি শুরু হওয়র পর নিজ থেকেই থেমে যায়। খিঁচুনি হলে তা থামাতে শক্তি প্রয়োগ রোগীর জন্য ক্ষতিকর। মাংসপেশি ছিঁড়ে যাওয়াসহ নানা রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ সময় শান্ত থাকতে হবে। অধিকাংশ খিঁচুনি কিছু সময়ের জন্য থাকে। রোগীর শরীর থেকে বেল্ট, টাই বা অন্যান্য শক্তভাবে বাধা পোশাক ঢিলা করে দিতে হবে এবং চশমা থাকলে তা খুলে ফেলতে হবে। রোগীকে আঘাত পাওয়া থেকে রক্ষা করতে হবে। রোগীকে মাটিতে পড়তে দেওয়া যাবে না। যদি মেঝেতে পড়ে যায়, তাহলে তার মাথায় কুশন বা বালিশ দিতে হবে। যদি অন্য কিছু না পাওয়া যায়, তাহলে ভাঁজ করা কাপড়-চোপড় ব্যবহার করতে হবে অথবা সাহায্যকারীর হাত ব্যবহার করা যেতে পারে। রোগীকে আগুন বা পানি থেকে দূরে রাখতে হবে। আশপাশ থেকে যে কোনো ধরনের তীক্ষ্ম বা শক্ত বস্তু সরিয়ে ফেলতে হবে। খিঁচুনি বন্ধ হওয়ার পর শ্বাসকষ্ট প্রতিরোধে রোগীকে পাশ ফিরিয়ে শোয়াতে হবে। খিঁচুনি বন্ধ হলেও মুখ থেকে যদি ফেনা বের হয়, তাহলে তা মুছে পরিষ্কার করতে হবে। রোগী রাস্তায় থাকলে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যেতে হবে। খিঁচুনির স্থায়িত্বের প্রতি দৃষ্টি রাখতে হবে। রোগী সম্পূর্ণ ভালো না হওয়া পর্যন্ত তার সঙ্গে থাকতে হবে। রোগীর প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে। রোগীকেও সাবধান থাকতে হবে। নাম, ঠিকানা ও ফোন নম্বর সংবলিত পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখতে হবে। পথ-ঘাটে চলতে সাবধান হতে হবে। খিঁচুনির শেষে রোগীকে চিত্র অনুযায়ী পাশ ফিরিয়ে দিতে হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

মৃগীরোগের লক্ষণগুলো জেনে রাখা ভালো

আপডেট টাইম : ০৬:২৭:২০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪

মৃগীরোগ স্নায়ুতন্ত্রের জটিলতাজনিত একটি রোগ। মস্তিষ্কের অতিসংবেদনশীলতার কারণে এ রোগ হয়ে থাকে। একজন মৃগীরোগীর মধ্যে একটি বা একাধিক লক্ষণ পরিলক্ষিত হতে পারে। যেমনÑ শরীর শক্ত হয়ে গিয়ে হঠাৎ পড়ে যাওয়া ও অজ্ঞান হয়ে পড়তে পারে। হঠাৎ নমনীয়ভাবে ঢলে পড়তে পারে। হঠাৎ শরীরের কোনো অংশে খিঁচুনি শুরু হওয়া ও পর্যায়ক্রমে তা সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। শিশুদের শরীর হঠাৎ ঝাঁকি খেতে পারে। ঘন ঘন কাজে অমনোযোগী হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। হঠাৎ মাথা বা পিঠ কিংবা পুরো শরীর সামনে ঝুঁকে আসতে পারে। হাত থেকে হঠাৎ করে কিছু ছিটকে পড়তে পারে। হঠাৎ করে অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করা এবং হাত-পা ও মুখের অস্বাভাবিক নাড়াচাড়া শুরু হতে পারে। হঠাৎ শরীরের কোনো অংশে ভিন্ন ধরনের অনুভূতি সৃষ্টি হতে পারে।

প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণা : মৃগীরোগ ঈশ্বরের দেওয়া অভিশাপ। কিন্তু বাস্তবতা হলো, মৃগীরোগের সঙ্গে অভিশাপ বা অলৌকিক বিষয়, যেমনÑ অতীত পাপের শাস্তির কোনো সম্পর্ক নেই। অ্যাজমা, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের মতো মৃগীরোগও একটি রোগ। মৃগীরোগ একটি মানসিক রোগ। সত্যিকার অর্থে, মৃগীরোগ হচ্ছে স্নায়ুতন্ত্রের জটিতাজনিত একটি রোগ, যা প্রায় বিশ ধরনের খিঁচুনি রোগের সমষ্টি। এটি একটি শারীরিক কার্যক্রমের সমস্যা, মানসিক সমস্যা নয়। মৃগীরোগ কারও মাধ্যমে সংক্রমিত হয় না, প্রতিবন্ধীও নয়। কাজ করতেও অক্ষম নয়। স্বাভাবিক মানুষের মতোই কার্যক্ষম ও বুদ্ধিমান। ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে, মৃগীরোগ হচ্ছে সারাজীবনের অভিশাপ। কিন্তু বাস্তবতা হলো, প্রায় ৬০ শতাংশ মৃগীরোগীর সাধারণত খিঁচুনি হয়। যদি কারো পাঁচ মিনিটের বেশি সময় ধরে খিঁচুনি না হয় অথবা পর পর কয়েকবার খিঁচুনি না হয়, তা হলে অ্যাম্বুলেন্স ডাকার প্রয়োজন নেই।

করণীয় : মৃগীরোগ এমন এক রোগ, যা হঠাৎ করে যে কোনো পরিস্থিতিতে রোগীকে আক্রমন করে বসে। ফলে আক্রান্তদের জীবনের ঝুঁকি বেশি। এ ঝুঁকি কমাতে একদিকে যেমন রোগীর জীবনযাত্রার কিছু পরিবর্তন আবশ্যক, তেমনি পারিপার্শ্বিক মানুষেরও অনেক কিছু করণীয় রয়েছে। সাধারণত খিঁচুনি শুরু হওয়র পর নিজ থেকেই থেমে যায়। খিঁচুনি হলে তা থামাতে শক্তি প্রয়োগ রোগীর জন্য ক্ষতিকর। মাংসপেশি ছিঁড়ে যাওয়াসহ নানা রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ সময় শান্ত থাকতে হবে। অধিকাংশ খিঁচুনি কিছু সময়ের জন্য থাকে। রোগীর শরীর থেকে বেল্ট, টাই বা অন্যান্য শক্তভাবে বাধা পোশাক ঢিলা করে দিতে হবে এবং চশমা থাকলে তা খুলে ফেলতে হবে। রোগীকে আঘাত পাওয়া থেকে রক্ষা করতে হবে। রোগীকে মাটিতে পড়তে দেওয়া যাবে না। যদি মেঝেতে পড়ে যায়, তাহলে তার মাথায় কুশন বা বালিশ দিতে হবে। যদি অন্য কিছু না পাওয়া যায়, তাহলে ভাঁজ করা কাপড়-চোপড় ব্যবহার করতে হবে অথবা সাহায্যকারীর হাত ব্যবহার করা যেতে পারে। রোগীকে আগুন বা পানি থেকে দূরে রাখতে হবে। আশপাশ থেকে যে কোনো ধরনের তীক্ষ্ম বা শক্ত বস্তু সরিয়ে ফেলতে হবে। খিঁচুনি বন্ধ হওয়ার পর শ্বাসকষ্ট প্রতিরোধে রোগীকে পাশ ফিরিয়ে শোয়াতে হবে। খিঁচুনি বন্ধ হলেও মুখ থেকে যদি ফেনা বের হয়, তাহলে তা মুছে পরিষ্কার করতে হবে। রোগী রাস্তায় থাকলে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যেতে হবে। খিঁচুনির স্থায়িত্বের প্রতি দৃষ্টি রাখতে হবে। রোগী সম্পূর্ণ ভালো না হওয়া পর্যন্ত তার সঙ্গে থাকতে হবে। রোগীর প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে। রোগীকেও সাবধান থাকতে হবে। নাম, ঠিকানা ও ফোন নম্বর সংবলিত পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখতে হবে। পথ-ঘাটে চলতে সাবধান হতে হবে। খিঁচুনির শেষে রোগীকে চিত্র অনুযায়ী পাশ ফিরিয়ে দিতে হবে।