হাওর বার্তা ডেস্কঃ বিশ্বকাপের রানার্স-আপ ক্রোয়েশিয়াকে পাত্তাই দেয়নি স্পেন। উয়েফা নেশন্স লিগে মঙ্গলবার নিজেদের মাঠে মার্কা আসেনসিওর উজ্জীবিত পারফরমেন্সে ৬-০ গোলে ক্রোয়েটদের উড়িয়ে দিয়েছে স্পেন। জুলাইয়ে রাশিয়া বিশ্বকাপে একটু আগে ভাগে বিদায়ে কোচ পরিবর্তন করতে বাধ্য হয় স্পেন। ওই আসরে স্পেনের বিখ্যাত টিকি-টাকা পাস নিয়ে বিশ্বজুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠে।
কিন্তু নেশন্স লিগের প্রথম ম্যাচে ওয়েম্বলিতে ইংল্যান্ডকে ২-১ গোলে পরাজয়ের পরে দ্বিতীয় ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে বড় জয় বিশ্বকাপ পরবর্তী নতুন কোচ লুইস এনরিকেকে ইতোমধ্যেই অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে গেছে।
এই ম্যাচে রিয়াল মাদ্রিদের তরুণ তুর্কি আসেনসিওর দুটি লম্বা দূরত্বের শট এবং সাওল নিগুয়েজের গোলে এলচেতে ঘরের মাঠে বিরতির আগে স্প্যানিশরা ৩-০ গোলে এগিয়ে যায়। এর মধ্যে ৩৫ মিনিটে গোলরক্ষক লোভরে কালিনিচের ভুলে আত্মঘাতি গোলের লজ্জায় ডুবে ক্রোয়েশিয়ানরা। বিরতির পরেই ক্রোয়েটরা তাদের ভাগ্য বদলাতে পারেনি। রডরিগো মোরেনোকে দিয়ে চতুর্থ গোল করানোর পরে সেই আসেনসিওর কর্ণারে সার্জিও রামোস দলের পক্ষে পঞ্চম গোল করেন। আবারো আসেনসিওর সহায়তায় ইসকো ৭০ মিনিটে ম্যাচের ষষ্ঠ গোলটি করেছেন।
চারদিনের ব্যবধানে দুটি বড় দলের বিপক্ষে দুটি জয় স্পেনকে নেশন্স লিগের গ্রুপ-টু’তে পূর্ণ ছয় পয়েন্টসহ শীর্ষে নিয়ে গেছে। গ্রুপের অপর দুই দল ইংল্যান্ড ও ক্রোয়েশিয়া স্পেনের কাছে হেরে এখনো কোন পয়েন্ট অর্জন করতে পারেনি। আগামী মাসে এই দুই দল একে অপরের মোকাবেলা করবে।
বিশ্বকাপের শীর্ষ চারটি দলের মধ্যে দুটি দলের বিপক্ষে খেলতে নামার আগে যে ধরনের আত্মবিশ্বাস প্রয়োজন তার সবটাই ছিল লা রোজাদের বিপক্ষে। কিন্তু বিশেষ করে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে এই ধরনের জয় সকলকে হতবাকই করেছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে এনরিকের নিজস্ব কৌশল এখানে সকলের চোখে পড়েছে। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে সবদিক থেকে স্পেন আধিপত্য বিস্তার করেছে, পুরো ম্যাচেই তাদের উপর চাপ প্রয়োগ করেছে। পুরো ম্যাচে কোনভাবেই বোঝা যায়নি বিশ্বকাপের হতাশার পরে প্রত্যাশার দারুন একটি চাপ রয়েছে স্পেনের উপর। এমনকি একসাথে জেরার্ড পিকে, আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা ও ডেভিড সিলভাদের মত অভিজ্ঞদের অবসরও যেন আসেনসিওদের থামাতে পারেনি। তাদের অনুপস্থিতিতে প্রতিটি খেলোয়াড়ই যেন নিজেদের প্রমানে মরিয়া হয়ে উঠেছিল।
বিশেষ করে ২২ বছর বয়সী তরুন মিডফিল্ডার আসেনসিওর কথা আলাদা করে বলতেই হয়। নিজে গোল করা ছাড়াও দ্বিতীয়ার্ধে তিনটি গোলেই তার সহায়তা এটাই প্রমান করেছে ইয়াগো আসপাসকে রেখে মূল একাদশে এই রিয়াল তারকার অন্তর্ভূক্তি কতটা যৌক্তিক ছিল। তবে মধ্যমাঠে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জ্বলে ওঠা সাওলও ছিলেন দুর্দান্ত। ৬৫ মিনিটে বদলী হিসেবে মাঠ ছেড়ে চলে যাবার সময় নিজ জন্মভূমির মাঠ এস্তাদিও মার্টিনেজ ভালেরোর দর্শকরা দাঁড়িয়ে তাকে অভিবাদন জানাতে ভুল করেনি।
এদিকে ক্রোয়েশিয়ার জন্য এই পরাজয়টা ছিল দারুন লজ্জার। এই ধরনের পারফরমেন্সে ইতোমধ্যেই প্রশ্ন ওঠা শুরু হয়েছে বিশ্বকাপে নিজেদের পারফরমেন্সের আবহটা কতদিন তারা ধরে রাখতে পারবে। লুকা মোড্রিচ, ইভান রাকিটিচ নিজেদের ফর্ম ধরে রাখলেও কার্যত শেষ পর্যন্ত তা দলের জন্য কোন আসেনি। ম্যাচের শুরুর দিকে ইভান সানটিনি দুটি ভাল সুযোগ নষ্ট করেন। বিপরীতে স্পেন নিজেদের সবগুলো সুযোগই কাজে লাগিয়েছে। ২৪ মিনিটে ডানি কারভাহালের ক্রস থেকে সাওলের গোল দলকে এগিয়ে দেয়।
৩৩ মিনিটে দূর পাল্লার শটে আসেনসিও ব্যবধান দ্বিগুন করেন। দুই মিনিট পরে তার বাম পায়ের জোড়ালো শট কালিনিচের ভুলে গোলের ঠিকানা খুঁজে পায়। বিরতির পরেও ক্রোয়েটরা কোন ধরনের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি। ৪৯ মিনিটে রডরিগোর গোলের পরে কর্ণার থেকে একেবারে ফাঁকায় দাঁড়ানো রামোস দলকে আরো এগিয়ে দেন। বক্সের ভিতর আসেনসিওর পাস থেকে শেষ মিনিটে ইসকো দলকে বড় জয় উপহার দেন।