ভারতের মহারাষ্ট্রে গরুর মাংস নিষিদ্ধ করা নিয়ে নিজের মত প্রকাশ করে ভালোই ঝামেলায় পড়েছেন বর্ষীয়ান অভিনেতা ঋষি কাপুর। “ধর্মের সঙ্গে গরুর মাংসকে মেলানো কেন? আমি একজন গরুর মাংস খাওয়া হিন্দু।”- এমন টুইটের পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, বিশেষ করে হিন্দু উগ্রবাদীদের আক্রমনের শিকার হতে হচ্ছে তাকে।
“আমাকে গালি দেওয়া হচ্ছে। আমার পরিবারকে গালি দেওয়া হচ্ছে। ব্যাপারটা এমন যেন, আমরা গোহত্যাকারী এক নাস্তিক পরিবার। কি বিরক্তিকর!”
পুরো ঘটনাটি একটি হোটেলে দুপুরের খাবার খেতে গিয়ে শুরু হয়েছিল বলে জানান ঋষি।
“মার্চের ১৫ তারিখে আমি একটি পাঁচ তারা হোটেলে শুটিং করছিলাম। আমরা লাঞ্চের জন্য বিরতি নিই এবং কফি শপে খেতে গিয়ে দেখি, খাবারের তালিকায় হরিণ, ক্যাঙ্গারু এবং ভেড়ার মাংস রাখা আছে।”
“আমি আমার সহকর্মীদের বললাম, এটাই হচ্ছে গরুর মাংস নিষিদ্ধ করার ফল। এখন তারা অন্য পশু হত্যা করতে শুরু করেছে মাংসের জন্য। আমি জীবনে কখনও খাবারের তালিকায় হরিণের মাংস দেখিনি। আমরা জানি, হরিণ ভগবান শ্রী রামের প্রিয় প্রাণী ছিল। আর সেটাকেই এখন খাদ্য হিসেবে পরিবেশন করা হচ্ছে রেস্তোরাঁয়। আর ভারতে ক্যাঙ্গারুর মাংস?”
তিনি আরও জানান, তার গরুর মাংস সংক্রান্ত টুইটের পর “পুরো জাতিই উঠে পড়ে লেগেছে” তার বিরূদ্ধে।
“আপনি এটা অস্বীকার করতে পারবেন না যে, প্রাণি হত্যা করেই আমরা মাংস খাই। হিন্দু সংগঠনগুলো আমাকে আক্রমণ করছে। তারা আমাকে বলছে নিরামিষাশী হয়ে যেতে। কিন্তু আমি তো তা নই। এবং সেটা একান্তই আমার ব্যাপার।”
ঋষি আরও বলেন, তিনি গরুর মাংস খেতে পছন্দ করলেও নিজের দেশে খান না।
“আমি ভারতে গরুর মাংস খাই না। আমি মাংসর জন্যই খামারে বড় করা গরুর মাংস খাই। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডে শুধু মাংসের জন্যই বিশেষায়িতভাবে গরু পালন করা হয়। আমাদের মতো না। আমাদের দেশে মাংসের জন্য গরু পালন করা হয় না।”
“আমি ভারতে গরুর মাংস খাই না, আমার পরিবারও খায় না। তবে আমার পরিচিত নব্বই শতাংশ হিন্দু গরুর মাংস খান।”
এরপর তিনি তার টুইটের ব্যাপারে মানুষের প্রতিক্রিয়া প্রসঙ্গে বলেন, “আমি ভুল কি বলেছি? মানুষ কেবল আমার কথাগুলোর বিকৃত রূপকেই বেছে নিচ্ছে। তারা আমাকে এবং আমার পরিবারকে গালি দিচ্ছে। আমাদের হিন্দু সংস্কৃতি যদি গরুর মাংস খাওয়াকে নিষেধ করে, তবে এই একই সংস্কৃতি কি আমাকে এবং আমার পরিবারকে গালি দিতে উৎসাহ দেয়?”
“গরুর মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ করলে যদি রেস্তোরাঁগুলো মাংসের জন্য অন্য প্রাণিহত্যা শুরু করে, তাহলে লাভটা কি হল? তাহলে মাছ চাষের ব্যাপারে কী হবে? আমাদের জনশক্তির একটা বিরাট অংশকে এই ক্ষেত্রের কারণে সমুদ্রে থাকতে হয়। তার মানে কি আমরা মাছ খাওয়াও বন্ধ করে দেব? আবারও বলছি, আমি ভারতে গরুর মাংস খাই না।”
“আমরা আমাদের দেশে মাংসের জন্য গো পালন করি না। আমরা গরু রক্ষা করি এবং এর পেছনে একটি বৈজ্ঞানিক কারণ রয়েছে। গরু আমাদের দুধ দেয়, দই দেয়, আমাদের জমি চাষ করে। একইভাবে অনেক দেশে শূকরের মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ, কারণ শূকরকে নোংরা প্রাণি হিসেবে দেখা হয়।”
“দয়া করে ধর্মের সঙ্গে খাবারকে মেলাবেন না। আমি বিশ্বাস করি, আমার খাদ্য নয়, আমার কর্মই আমাকে একজন ভাল মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে। এই সব নিয়ম-নীতি মানুষের তৈরি। আমি এইসব ধর্মীয় নীতিকে শ্রদ্ধা করি।”
“আমি একজন সত্যিকার অর্থেই ঈশ্বরভক্ত হিন্দু। তারপরেও, নিজের মত প্রকাশের পূর্ণ অধিকার আমার আছে। আপনার ভিন্ন মত আছে বলেই আমাকে বাতিল করে দেওয়ার চেষ্টা করবেন না।”
৬২ বছর বয়সী এই অভিনেতা সবশেষে বলেন, “আমি গরুর মাংস খাওয়ার জন্য প্রচার চালাচ্ছি না। আমি স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের পক্ষে কথা বলছি।”