হাওর বার্তা ডেস্কঃ নির্বাচনে একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের প্রতি নির্বাচনী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনেছে পাকিস্তানের মানবাধিকার কমিশন (এইচআরসিপি)।
আজ বৃহস্পতিবার অভিযোগ পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন জানায়, অন্তত একটি জায়গায় দেখা গেছে, নারীদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে তাঁরা কাকে দেবেন। এছাড়া অনেক জায়গায় নারীরা ভোট দিতে গিয়ে ফিরে এসেছেন। পর্যবেক্ষকদের কাছে তথ্যের ভিত্তিতে মানবাধিকার কমিশন এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এইচআরসিপি জানায়, ভোটের দিন কমিশনের পর্যবেক্ষণ দল ৬৭টি আসনের ভোট পর্যবেক্ষণ করেছে। এগুলোর মধ্যে ১২টি আসনে বেলুচিস্তানে, ১৪টি খায়বার পাখতুনখোয়ায়, ২১ পাঞ্জাব ও রাজধানী ইসলামাবাদে এবং ২০টি সিন্ধু অঞ্চলে।
সর্বোপরি, মানবাধিকার কমিশন নির্বাচন কমিশনের পারফরম্যান্সের ব্যাপারে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘কমিশন তার দাপ্তরিক ভালোভাবেই করেছে। কিন্তু এর রাজনৈতিক তৎপরতার কারণে প্রত্যাশা যা ছিল, তাতে ঘাটতি তৈরি হয়েছে।’
আজ সকালে সর্বশেষ বেসরকারি ফলাফলে জানা গেছে, পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে এগিয়ে আছে ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিবিদ বনে যাওয়া ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)।
এদিকে, কারচুপির অভিযোগ এনে কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) এ ফল প্রত্যাখ্যান করেছে।
তবে পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন বলছে, ভোট কারচুপির অভিযোগের সত্যতা নেই।
ইমরান খানের শিবির জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ প্রকাশ করেছে। তবে তাদের পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করতে অপেক্ষা করতে হবে। গতকাল বুধবার ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।
এ পর্যন্ত ভোট গণনা পুরোপুরি শেষ হয়েছে। নির্বাচন কমিশন বলছে, ইমরান খানের পিটিআই ১১৩ আসনে জয় পেয়েছে। নওয়াজ শরিফের পিএমএল-এন পেয়েছে ৬৪টি আসনে জয়, বিলওয়াল ভুট্টোর নেতৃত্বে থাকা পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) পেয়েছে ৪৩ আসনে জয়।
আজ সকালে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা বলেন, কারিগরি ত্রুটির কারণে ফল পেতে বিলম্ব হয়েছে। কমিশন সচিব বাবর ইয়াকুব বলেন, ‘কোনো ষড়যন্ত্র হয়নি, ফল প্রকাশে দেরি করার জন্য কোনো চাপ দেওয়া হয়নি। ফল স্থানান্তর ব্যবস্থা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় দেরি হয়েছে।’
ইমরান খানের শিবির জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী। যদিও পার্লামেন্টের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করতে হলে ১৩৭ আসনে জয় পেতে হবে। না পেলে অন্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জোট করতে হবে।
নওয়াজ শরিফের ভাই শাহবাজ শরিফ নেতৃত্বাধীন পিএমএল-এন ফল প্রত্যাখ্যান করেছে। শাহবাজ অভিযোগ করেন, ভোটকেন্দ্রে অবস্থান নেওয়া সেনাসদস্যরা অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীদের বের করে দিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে শাহবাজ বলেন, ভোট জালিয়াতি হয়েছে। মানুষের মতামতকে অগ্রাহ্য করা হয়েছে। এটা সহ্য করা যায় না।
পিপিপি চেয়ারম্যান বিলওয়াল ভুট্টো বলেন, তিনি এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক ফল পাননি। তিনি বলেন, আমার প্রার্থীরা অভিযোগ করেছেন, দেশজুড়ে ভোটকেন্দ্রগুলো থেকে পোলিং এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে। অমার্জনীয় ও গর্হিত।
পিপিপির মুখপাত্র শেরি রেহমান বলেন, স্পষ্টভাবেই নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করা হয়েছে। একটি দল ছাড়া সব দলকে কোণঠাসা করা হয়েছে।
ভোর ৪টায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) মুহাম্মদ রাজা খান বলেন, গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের জন্য পাকিস্তানের জনগণকে অভিনন্দন। নির্বাচনী কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
সিইসি বলেন, আমি জানি যে ফল ঘোষণায় দেরি হওয়ায় কিছুটা অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। তবে ফল স্থানান্তর প্রক্রিয়াটি নতুন এবং আমরা এই প্রথম এটা বাস্তবায়ন করেছি। সে কারণে কিছু বিলম্ব হয়েছে।