ভর্তি ও নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস এবং পরীক্ষার্থীকে উত্তর জানানোর জন্য চীন থেকে আনা হয় মাস্টারকার্ড ও ব্লুটুথ। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির অতিক্ষুদ্র এ ডিভাইস কানের মধ্যে লুকানো থাকে। ডিভাইসটি বসানো ছিল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সহকারী পরিচালক (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগ) ওমর সিরাজের কক্ষে।
এ চক্রের সদস্যরা তিন ধাপে কাজ করে থাকে। প্রথম ধাপে বিভিন্ন ভর্তি পরীক্ষার জন্য আগের বাছাই করা একটি গ্রুপকে পরীক্ষার হলে পরীক্ষার্থী হিসেবে পাঠায়। তারা পরীক্ষার প্রশ্নপত্র কৌশলে হল থেকে বের করে অপেক্ষমাণ অপর একটি গ্রুপের কাছে হস্তান্তর করে। দ্বিতীয় গ্রুপটি প্রশ্নপত্রটি দ্রুত সমাধান করে সিরাজের কাছে পাঠিয়ে দেয়। পরে সিরাজ চক্রের অন্যদের সহায়তায় চুক্তিবদ্ধ পরীক্ষার্থীদের কাছে ওই ডিভাইসের মাধ্যমে উত্তর সরবরাহ করতেন।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) ভবনের দ্বিতীয় তলায় শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা, কৃষি ব্যাংকের অফিসার নিয়োগ, জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের সহকারী জজ নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তর সরবরাহ করার অভিযোগে তিনজনকে আটক করে র্যাব-৪।
আটকরা হলেন- মো. ওমর সিরাজ (৩২), রেজাউল করিম (৩২) ও ঈশান ইমতিয়াজ হৃদয় (২২)। র্যাবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, আটকের সময় তাদের কাছ থেকে জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন ২০১৪ এর সহকারী জজ নিয়োগ পরীক্ষার উত্তরপত্র ২৩টি, একই পরীক্ষার প্রশ্নপত্র দুটি, দুই লাখ টাকা, এক্সিম ব্যাংকের ৪ লাখ টাকার একটি চেক, বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের সিল, বিভিন্ন ব্যাংকের চেক বই, ৩টি মোবাইল, একটি আইপ্যাড উদ্ধার করা হয়। তারা দীর্ঘদিন ধরে এ কাজ করে আসছিল।
মুফতি মাহমুদ খান জানান, আটক ঈশান ২০১০ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার পর থেকেই এবং বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের স্টোর কিপার রেজাউল চাকরি পাওয়ার পর থেকেই এ কাজ করে আসছিল। সিরাজের স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিনের জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের সহকারী জজ নিয়োগের উত্তরপত্রটিও কৌশলে বের করে পুনরায় জমা করার জন্য তার কাছে ছিল।
চক্রটি প্রতি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার ক্ষেত্রে ১৫ লাখ, কৃষি ব্যাংকের অফিসার নিয়োগের জন্য ৬ লাখ এবং জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের সহকারী জজ নিয়োগের জন্য ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত চেক অথবা নগদ টাকা নিত বলেও জানান কমান্ডার মুফতি মাহমুদ।
এর আগে গত ১৫ সেপ্টেম্বর বিকেলে র্যাব-২ মেডিকেল কলেজ ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের সদস্য জসিম উদ্দিন ভুইয়া (৪১), ডা. জেড এম এ সালেহীন ওরফে শোভন (৪০), এস এম সানোয়ার (৩০) ও আকতারুজ্জামান খান তুষারকে (৩৮) গ্রেফতার করে। এছাড়া তাদের কাছ থেকে এক কোটি ২১ লাখ ৩৮ হাজার টাকা সমমূল্যের বিভিন্ন ব্যাংকের ১৩টি চেক, ৩৮ হাজার টাকা, দুটি মডেল প্রশ্নের ৮৮ কপি প্রশ্ন ও উত্তরপত্র উদ্ধার করা হয়।