একদিকে খুব জোরেশোরে চলছে রাজধানীর অস্থায়ী পশুরহাট গোছানোর কাজ। অন্যদিকে নির্ধারিত সময়ের আগেই আসতে শুরু করেছে এসব হাটে কোরবানির গবাদি পশু। দেশীয় খামারীদের গরু ব্যাপারীরা বৃহস্পতিবার থেকেই হাটগুলোতে আনা শুরু করেছেন। অনেকে আগে থেকেই নিজেদের পশু রাখার জন্য জায়গা দখল করে ঘিরে রাখছেন। হাট তদারকির দায়িত্বে থাকা ইজারাদারের লোকজন বলছেন আগে থেকেই যেভাবে হাটে কোরবানির পশু আসতে শুরু করেছে তাতে এবার গরু সংকট তো হবেই না, বরং চাহিদার তুলনায় বেশি পশু আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর ঈদুল আজহাকে ঘিরে রাজধানীর পশুর হাটগুলোতে কোরবানির পশুর আমদানি শুরু হয়েছে। ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের নির্দেশ অনুযায়ী ঈদের চার দিন আগে থেকে নগরীর অস্থায়ী পশুহাট বসার কথা রয়েছে। কিন্তু এসব হাটের ইজারাদাররা ৮-১০ দিন আগেই গরু, মহিষ রাখার ব্যবস্থা করে ফেলেছে। ফলে ঈদের আগ মুহূর্তে সড়কে যানজট ও চাঁদাবাজি এড়াতে এবং দর্শনীয় স্থানে পশু রাখার জন্য ব্যাপারীরা (গরু বিক্রেতা) বেশ আগে থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রাজধানীর এসব হাটে গরু আনা শুরু করে দিয়েছেন।
সরেজমিন দেখা যায়, রাজধানীর কোরবানির পশুর অস্থায়ী হাটগুলো বাঁশ দিয়ে খুঁটি গেড়ে প্রায় প্রস্তুত করা হয়েছে। এসব হাটে পশু আমদানি শুরু হলেও বেচাকেনা জমতে আরো কয়েক দিন সময় লাগবে। ব্যাপারীরা জানান, বেচাকেনা জমজমাট হয়ে উঠবে ঈদের দুই-তিন দিন আগে। হাট ইজারাদাররা গরু, মহিষ, ছাগল, ভেঁড়া রাখার জন্য আলাদা-আলাদা স্থান নির্ধারণ করে রেখেছেন। ব্যবস্থা রয়েছে উট রাখারও।
নগরীর অস্থায়ী পশুরহাট মেরুল বাড্ডার আফতাবনগর হাটে বুধবার রাত থেকে আসতে শুরু করেছে কোরবানির পশু। এখানে কয়েকজন ব্যাপারী পশু না এনেই আগে থেকে জায়গা দখল করে রশি দিয়ে ঘিরে রেখেছেন। এ হাটের রাখাল হাসমত আলী বলেন, কুষ্টিয়া থেকে তিনি এসেছেন বুধবার। তার মহাজন (গরু ব্যাপারী) শনিবার ২০টা দেশীয় গরু এখানে আনবেন। পরে আসলে ভালো জায়গা পাওয়া যাবে না। তাই তিনি আগে থেকে এসে সামনের দিকে জায়গা রেখেছেন। একই অবস্থা দেখা গেছে খিলগাঁও মেরাদিয়া পশুরহাট, ঝিগাতলা হাজারীবাগ মাঠ, রহমতগঞ্জ খেলার মাঠ, সাদেক হোসেন খোকা মাঠ, উত্তর শাহজাহানপুর, খিলগাঁও মৈত্রী সংঘের মাঠ, ধূপখোলা ইস্ট অ্যান্ড ক্লাব মাঠ, গোপীবাগ ব্রাদার্স ইউনিয়ন সংলগ্ন বালুর মাঠ, পোস্তগোলা শ্মশানঘাট সংলগ্ন খালি জায়গা, খিলক্ষেত আবাসিক প্রকল্পের খালি জায়গা, উত্তরা ১৫ ও ১৬ নম্বর সেক্টরের মধ্যবর্তী সেতুসংলগ্ন খালি জায়গা, মিরপুর সেকশন-৬-এর ইস্টার্ন হাউজিংয়ের খালি জায়গা, কুড়িল ফ্লাইওভার সংলগ্ন পূর্বাচলমুখী ৩০০ ফুট প্রশস্ত সড়ক, মিরপুর সেকশন-১১-এর বাউনিয়া বাঁধসংলগ্ন খালি জায়গা এবং রায়েরবাজার কবরস্থানসংলগ্ন খালি জায়গার অস্থায়ী পশুর হাটে। এছাড়া রাজধানীর একমাত্র স্থায়ী পশুরহাট গাবতলীতে সয়লাব নানা জাতের কোরবানি পশুতে। মূল হাটে এখন আর গরু রাখারও জায়গা নেই। এখন হাটের বর্ধিতাংশে কোরবানির পশু রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, এ বছর ১৬ হাটের সবগুলোর ইজারা সম্পন্ন হয়েছে। এসব হাটে ঈদের চারদিন আগে গবাদি পশু আনা যাবে। আর হাট আয়োজনে ইজারাদাররা কাজ করতে পারবেন ঈদের সাত দিন আগে থেকে।
ঈদুল আজহাকে উপলক্ষ করে শুধু রাজধানী নয়, সারাদেশে স্থানীয় পশুরহাটেও কোরবানির পশুর আমদানি বেড়ে গেছে। প্রতিবছর কোরবানির আগেই ভারতের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য থেকে বাংলাদেশে অনেক ভারতীয় গরু আসে। কিন্তু এ বছর ভারত থেকে গরু আসায় নিষেধাজ্ঞা থাকায় গরুর চাহিদা সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে দেশীয় ব্যাপারীরা। তাই মিয়ানমার থেকে গরু আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এদিকে, এ বছর ভারতীয় গরু আসা পূর্বের তুলনায় অনেক কম থাকার সম্ভাবনা মাথায় রেখে দেশীয় খামারীরা অনেকটা আগ থেকেই হাটে প্রচুর পরিমাণ পশু সরবরাহের প্রস্তুতি নিয়েছেন।
অন্যদিকে, ভারতীয় গরু আনায় ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ায় দালালদের প্রতিজোড়া গরু সীমান্ত পারাপারের জন্য দিতে হচ্ছে ১৪ থেকে ১৬ হাজার টাকা পর্যন্ত। এর বাইরে এ বছর সীমান্ত দিয়ে গরুর আমদানিতে শুল্কের পরিমাণ গত বছরের চেয়ে বাড়ানো হয়েছে। এর সঙ্গে পরিবহন ব্যয় ও পশুখাদ্যের দাম বৃদ্ধি এবং ঘাটে ঘাটে চাঁদাবাজির কারণে গরুর দাম বেশি পড়বে বলে জানান গরুর ব্যাপারীরা।
এদিকে আমাদের গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, দেশীয় অস্ত্রের মুখে ব্যবসায়ী ও ট্রাক চালকদের জিম্মি করে গতকাল নগরীর মীরেরবাজার এলাকা থেকে ১৯টি গরুসহ একটি ট্রাক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় ছিনতাইকারীরা গরু ব্যবসায়ীদের নগদ ৩০ হাজার টাকা ও ৫টি মোবাইল সেট নিয়ে যায়। জয়দেবপুর থানার ডিউটি অফিসার সৈয়দ আবুল হাসেম বলেন, বুধবার সন্ধ্যায় রাজশাহী থেকে গরু কিনে ট্রাকযোগে নোয়াখালী যাওয়ার সময় গাজীপুর মহানগরের মীরেরবাজার এলাকায় গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে গরু বোঝাই ট্রাকটি পৌঁছলে একটি পিকআপ এসে তার গতিরোধ করে। এ সময় পিকআপ থেকে ১০-১২ জন দুর্বৃত্ত দেশীয় অস্ত্রের মুখে চালক, হেলপার ও ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে হাত-মুখ বেঁধে গরুবাহী ট্রাকটি নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় তাদের মহানগরের মাস্টারবাড়ি এলাকায় ফেলে যায়।
খুলনা ব্যুরো জানায়, কোরবানির পশুরহাটে ক্রেতা-বিক্রেতারা গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য খুলনা মেট্রোপলিটান পুলিশ (কেএমপি) পুলিশ তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবে। এছাড়াও হাটে জাল নোট শনাক্ত করার জন্য বুথ স্থাপনও করবে কেএমপি। গতকাল বৃহস্পতিবার মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায় এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে কেএমপি। পুলিশ কমিশনার নিবাস চন্দ্র মাঝির সভাপতিত্বে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ শিরোনাম
রাজধানীতে আসছে কোরবানির পশু
- Reporter Name
- আপডেট টাইম : ০১:২৩:৩৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫
- ৪০১ বার
Tag :
জনপ্রিয় সংবাদ