তেজগাঁও মহিলা কলেজের (ভারপ্রাপ্ত) ভাইস পিন্সিপাল নজরুল ইসলাম

জাকির হোসাইনঃ ঢাকা ফামর্গেইট এলাকায় তেজগাঁও মহিলা কলেজ ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। তেজগাঁও এবং আশেপাশের এলাকার সাধারণ মানুষের সন্তানদের উচ্চশিক্ষার পথ সুগম করার লক্ষ্যে এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আত্মপ্রকাশ। সূচনা লগ্ন থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণিতে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিষয়ে অত্যন্ত সুনামের সাথে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। পরবর্তীতে ১৯৮৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্নাতক (পাস) কোর্সের অধিভুক্তি হয়। বর্তমানে কলেজটিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিবিএ (প্রফেশনাল) কোর্সসহ,১১টি বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) কোর্স ও হিসাববিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে মাস্টার্স র্কোস ‍চালু রয়েছে। গত কয়েক বছর যাবৎ কলেজের ফলাফল সন্তোষজনক হওয়ায় কলেজটিতে ছাত্রীসংখ্যা প্রতিবছর বৃদ্ধি পাচ্ছে। আরও কয়েকটি বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্সখোলার প্রস্তুতি চলছে। জনাব মোহাম্মদ নজরুল ইসলামকে তেজগাঁও মহিলা কলেজের ভাইস পিন্সিপাল হিসেবে নিয়োগ দেয়ায় তার কাজের যোগ্যতা, সততা ও দক্ষতারস্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
অধ্যক্ষ আসাদুল হক এবং বতর্মান (ভারপ্রাপ্ত) ভাইস পিন্সিপাল মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম ও তাঁর ৯০ জন শিক্ষক সহকর্মীর আন্তরিক প্রচেষ্টায় শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

তেজগাঁও মহিলা কলেজ বর্তমানে নারীদের উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে একটি অন্যতম প্রতিষ্ঠান হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মেয়েরা উচ্চশিক্ষার জন্য এ কলেজে আসছে। ইংরেজি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজকর্ম, অথনীতি,হিসাববিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা, মার্কেটিং, ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং, গণিত ও প্রাণিবিদ্যা অনার্স কোর্স ইত্যাদি চালু রয়েছে। এছাড়াও বিবিএ (প্রফেশনাল) কোর্স নারী শিক্ষার কলেজগুলোর মধ্যে একমাত্র অত্র কলেজেই চালু রয়েছে। নতুন (ভারপ্রাপ্ত) ভাইস পিন্সিপাল মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন কলেজের উন্নয়নে কী ভূমিকা পালন করেবেন এমন জিজ্ঞাসায় ভাইস পিন্সিপাল মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম শিক্ষানুরাগী স্যার বলেন আমরা যখন থেকে কলেজের দায়িত্ব নিলাম, তার পূর্বে বিএনপি-জামাত জোট সরকারের আমলে এই কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের ৮ থেকে ১০ মাসের বেতন বাকি ছিল।

আমরা দায়িত্ব নেয়ার পর শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করি এবং বাৎসরিক আয় ৩০ লক্ষ টাকা থেকে প্রায় সাত কোটি টাকায় উন্নীত করি। শিক্ষার্থী সংখ্যা ২৫০ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে প্রায় ৩০০০ জনে উন্নীত করেছি। পূর্বে শ্রেণি কক্ষের স্বল্পতা ছিল, স্বল্পতা নিরসনে কলেজের নিজস্ব অর্থায়নে নতুন ভবনের উপরে তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম তলার পাশাপাশি পুরাতন ভবনের ষষ্ঠ ও সপ্তম তলার নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। খুব শিঘ্রই আরো একটি দশ তলা ভবন নির্মাণের কাজ অতি তাড়াতাড়ি কাজ শুরু হবে। নজরুল স্যার আরো বলেন-
দ্বাদশ পরবর্তী উচ্চশিক্ষাঙ্গনে ভর্তির ক্ষেত্রে যেসব বিষয় ভাবনা হওয়া উচিত তা হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ আছে কিনা, স্বচ্ছন্দে পড়ালেখার উপযোগী কিনা, শিক্ষার্থী যে বিষয়টি পছন্দ করে, সে বিষয়ের ভালো শিক্ষক আছে কিনা, আইসিটির জন্য কম্পিউটার ল্যাব আছে কিনা, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের ব্যবস্থা আছে কিনা, বিজ্ঞান শিক্ষার্থীদের জন্য বিজ্ঞানাগার আছে কিনা, বিগত কয়েক বছরের পরীক্ষার ফলাফল প্রভৃতি।

ভর্তির ক্ষেত্রে ছাত্রীরা তেজগাঁও মহিলা কলেজকে বেছে নেবে, কারণ কলেজটি ঢাকা শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত; যেকোনো দিক থেকে এখানে আসা যায়। কলেজের শিক্ষকমন্ডলী অনেক দক্ষ ও অভিজ্ঞ। তাঁরা খুব যত্নশীলতার সাথে পাঠদান করেন। ক্লাসের পড়া ক্লাসেই পড়িয়ে দেয়া হয়, কোনো পড়া পেন্ডিং থাকে না। শিক্ষার্থীদেরকে প্রাইভেট পড়তে হয় না, টিচাররা ক্লাস শেষে বিশেষ কোচিং দিয়ে অসমাপ্ত পাঠ পড়িয়ে দেন। এজন্য তেজগাঁও মহিলা কলেজের পরীক্ষার ফলাফল বরাবরই ভালো। আরো ফলাফল ভাল করার চেষ্টা করছি। তাছাড়া শুধুমাত্র মেয়েদের উচ্চশিক্ষার জন্য এ প্রতিষ্ঠান হওয়ায় এবং তেজগাঁও কলেজ, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, টেক্সটাইল ইউনিভর্সিটি প্রভৃতি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এর আশেপাশে থাকায় তেজগাঁও মহিলা কলেজের প্রতি অভিভাবকদের দৃষ্টি প্রথমেই আকৃষ্ট হয়।

সবার জন্য উচ্চশিক্ষা, এটি সম্ভব নয়, যুক্তিযুক্তও নয় বলে ভাইস পিন্সিপাল মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম মনে করেন। সমাজে শিক্ষিত বেকার সৃষ্টি না করে কারিগরি শিক্ষার প্রতি সবাইকে আগ্রহী হবার আহ্বান জানান। ১৮ কোটি মানুষকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মাধ্যমে জনশক্তিকে দক্ষ জনসম্পদে রূপান্তর করে বাংলাদেশকে একটি উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করতে হবে। নারীশিক্ষার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন। ডিজিটাল বাংলাদেশ ও ভিশন-’২১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকার প্রায় ২০ হাজার স্কুল ও ১৫০০ শত কলেজে কম্পিউটার ল্যাব ও মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম চালু করেছে। এই কলেজেও একটি উন্নতমানের কম্পিউটার ল্যাব এবং মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের ব্যবস্থা আছে। সকল ছাত্রীর কম্পিউটার শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বর্তমানে উচ্চশিক্ষার জন্য একটি অনুকুল পরিবেশ এই কলেজে শতভাগ বিদ্যামান।

গুণগত শিক্ষার শিক্ষকের প্রকট অভাব সম্পর্কে ভাইস পিন্সিপাল মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম সচেতন। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে নিবিড় প্রশিক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে। নাই বলে বসে থাকলে চলবে না, বিদেশ থেকে কেউ এসে করে দেবে না, আমাদের সমস্যার সমাধান আমাদেরকেই করতে হবে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর