হাওর বার্তা ডেস্কঃ বন্যায় আমন ধানের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বোরো আবাদ শুরু করেছেন শস্য ভান্ডার খ্যাত দিনাজপুরের কৃষকরা। প্রতি বছরই বুক ভরা স্বপ্ন নিয়ে ধান চাষ করলেও ন্যায্য দাম পান না বলে অভিযোগ কৃষকদের। তাই সরকার ঘোষিত ধানের ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তির দাবি জানিয়েছেন তারা। জেলার চিরিরবন্দর উপজেলার সাইতিরা এলাকার কৃষক জসিম উদ্দিন জানান, তিনি আড়াই বিঘা জমিতে আমন ধান রোপন করেছিলেন। বন্যার কারণে যে ফলন ঘরে এসেছে তাতে করে লোকসানে পড়তে হয়েছে। তাই এবার অনেক আশা নিয়ে একই জমিতে বোরো চাষ শুরু করেছেন। আশা করছেন আবহাওয়া ঠিক থাকলে ফলন ভালই হবে।
একই এলাকার কৃষক রফিকুল ইসলাম জানান, ফলন ভাল হলেও আশা করার মতো কিছু নেই। কারণ সরকার যে মূল্য দেয় তা কখনোই কৃষকরা পান না। সরকারি কর্মকর্তাদের যোগসাজসে মুনাফালোভী ব্যবসায়ী কিংবা মধ্যস্বত্বভোগীরা এই লভ্যাংশ পেয়ে থাকে। বিষয়টি সবাই জানলেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। আর তাই হাড়ভাঙা খাটুনির পরও লোকসানে পড়তে হয় কৃষকদের।
সদর উপজেলার দক্ষিণ নগর এলাকার কৃষক বেনু রাম সরকার জানান, যারা কৃষক তারা যেন সরকারি মূল্য পায় এবং সরকারকে ধান দিতে পারে সেজন্য নামের তালিকা রয়েছে। কিন্তু সেই তালিকায় কখনোই প্রকৃত কৃষকদের নাম স্থান পায় না। কৃষকদের নাম করে সেই তালিকায় থাকে দলীয় নেতাকর্মী কিংবা প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের নাম। যার ফলে লোকসানের পুরো ভার পড়ে কৃষকদের ঘাড়ে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর দিনাজপুর অঞ্চলের উপ-পরিচালক ড. মাহবুবুর রহমান জানান, চলতি বছর দিনাজপুর, পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও জেলা নিয়ে গঠিত দিনাজপুর কৃষি অঞ্চলে ২ লাখ ৭৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১০ লাখ ৭৯ হাজার ৪০০ মেট্রিকটন চাল।
তিনি জানান, ইতোমধ্যেই বোরো আবাদ শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত বোরো আবাদের প্রাকৃতিক পরিবেশ ভাল। চাষাবাদের বিষয়টি নিয়ে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা কাজ করছেন। এবার মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা রয়েছে একটি ধানও যাতে করে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। সেই নির্দেশনা মোতাবেক কর্মকর্তারা কাজ করছেন। প্রাকৃতিক কোনও দুর্যোগের মুখোমুখি না হলে ভালো ফলন হবে বলে আশাপ্রকাশ করেন তিনি।
সরকারের দেওয়া নির্ধারিত মূল্য কৃষকরা পায় না বিষয়টি স্বীকার করে দিনাজপুর জেলা প্রশাসক মীর খায়রুল আলম জানান, সরকারি যে ক্রয়মূল্য সেটি যাতে কৃষকরা পায় সেজন্য প্রতিবছরই প্রশাসন তৎপর থাকে। তবে গত বছর কিছু অনিয়ম হয়েছে। কোনোভাবেই কোনও মধ্যস্বত্বভোগী যেন ফায়দা লুটতে না পারে সেজন্য খাদ্য বিভাগ, কৃষি বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘এবারে কৃষকরা তাদের ন্যায্য মূল্য পাবে এতে কোনও সন্দেহ নেই।