ঢাকা ১১:৩২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশে আধুনিক কৃষি যন্ত্রের ব্যবহার করে চাষাবাদের মাধ্যমে দ্বিগুণ লাভ হবে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:০৩:৪৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৮
  • ৪৮৯ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আধুনিক কৃষি যন্ত্র ব্যবহার করে চাষাবাদের মাধ্যমে দ্বিগুণের বেশি লাভ করা সম্ভব। ফসল ফলানোর জন্য জমি চাষ, বীজ বপণ, নিড়ানি, সার দেয়া, কাটা, মাড়াই, ফসল ঝাড়া ও বস্তা প্যাকেট পর্যন্ত সব কিছুই আধুনিক কৃষি যন্ত্রের মাধ্যমে করা সম্ভব। এ পদ্ধতিতে চাষাবাদের মাধ্যমে ফসলের অপচয়ও কমে। ফলে গতানুগতিক পদ্ধতির চাষাবাদের চাইতে ফসলের বেশি ফলনও ঘরে তোলা সম্ভব। বিভিন্ন পর্যায়ের কৃষি বিজ্ঞানীদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, গতানুগতিক পদ্ধতিতে এক একর জমির ধান কাটা, মাড়াই, পরিষ্কার ও বস্তা প্যাকেটের কাজে আট হাজার ৩৩৮ টাকা খরচ হয়। সেখানে একটি মিনি কম্বাইন হারভেস্টার যন্ত্রের মাধ্যমে তিন হাজার ৯৪২ টাকায় এসব কাজ করা সম্ভব। অন্য এক হিসেবে দেখা যায়, গতানুগতিক পদ্ধতিতে এক একর জমির ধানের চারা রোপণে খরচ হয় ছয় হাজার টাকা। তবে রাইস ট্রান্সপ্লান্টার দিয়ে এক একর জমির ধানের চারা রোপণ করতে খরচ হয় মাত্র ১৬০০ টাকা। এখানে অতিরিক্ত খরচ বাঁচে চার হাজার ৪০০ টাকা।

বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, একটি মিনি রিপার দিয়ে ঘণ্টায় ৩০-৫০ শতাংশ ধান এবং ৪৫-৬০ শতাংশ জমির গম কাটা যায়। যন্ত্র দিয়ে ফসল কাটতে প্রতি একরে শ্রমিক লাগে একজন। আর গতানুগতিক পদ্ধতিতে ফসল কাটতে শ্রমিক লাগে আটজন। এ ক্ষেত্রে সময় সাশ্রয় হয় ৮৭ ভাগ।

সিডার নামক যন্ত্র দিয়ে প্রতি ঘণ্টায় ৩০-৩৫ শতাংশ জমিতে গম, ভুট্টা, পাট, ধান, ডাল ও তৈলবীজ জাতীয় শস্য বপণ করা যায়। গতানুগতিক পদ্ধতির চেয়ে আধুনিক যন্ত্র দিয়ে বীজ বপণ করতে ১০-৪০ শতাংশ বীজ কম লাগে। এতে ফসলের ফলন ১০-১৫ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। ৫০ ভাগ সময় ও আর্থিক সাশ্রয় হয়। দুই ফসলের মধ্যবর্তী সময় ৮-১০ দিন কমায়।

বেড প্লান্টার নামক যন্ত্র দিয়ে ১-২ চাষে বেড তৈরি, সার প্রয়োগ ও বীজ বপণের কাজ একই সঙ্গে করা যায়। বেডে ফসল চাষ করলে খরচ ও সময় ২৫ ভাগ কম এবং এ ক্ষেত্রে শ্রমেরও সাশ্রয় হয়। এ যন্ত্রের সাহায্য ঘণ্টায় ২৫-২৭ শতাংশ জমিতে বীজ বপণ করা যায়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ হাওর বার্তাকে জানান, কৃষি কাজে খরচ ও সময় বাঁচাতে এবং অধিক লাভ করতে আধুনিক যন্ত্র ব্যবহারের বিকল্প নেই। কৃষি কাজে সবচেয়ে শ্রম ও সময় নির্ভর কাজ হচ্ছে চারা রোপণ, বীজ বপণ ও ফসল কর্তন। এ কাজগুলো সঠিক সময়ে করতে পারলে কৃষক লাভবান হবে।

তিনি বলেন, দেশের কৃষি অনেক দূর এগিয়েছে। কৃষি উন্নয়নে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের রোল মডেল। গত ১ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘে অনুষ্ঠিত সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট কমিশনের ৫৬তম অধিবেশনের প্রাক্কালে মহাসচিবের রিপোর্টে বাংলাদেশের কৃষি উৎপাদনশীলতা, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, অতি দারিদ্র্য হ্রাসের বিষয়টি বিশেষভাবে স্থান পেয়েছে।

কৃষি তথ্য সার্ভিসের ফার্ম ব্রডকাস্টিং অফিসার কৃষিবিদ হাওর বার্তাকে জানান, কৃষিতে যন্ত্রের ব্যবহার যারা করছেন তারা নিশ্চিতভাবে দ্বিগুণের বেশি বেনিফিট পাচ্ছেন। কৃষিতে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ানোর জন্য সরকার ইতোমধ্যে কিছু কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। কৃষক যাতে গ্রুপ বা সমবায় ভিত্তিক বড় বড় যন্ত্রপাতি কিনতে পারে সে জন্য সরকার ভর্তুকির ব্যবস্থা করেছে।

তিনি আরও বলেন, হাওর ও দক্ষিণ উপকূলী অঞ্চলের কৃষকদের জন্য ৭০ ভাগ এবং অন্যান্য এলাকায় ৫০ ভাগ ছাড়ে গ্রুপ ভিত্তিক কৃষির আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা করা হয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

বাংলাদেশে আধুনিক কৃষি যন্ত্রের ব্যবহার করে চাষাবাদের মাধ্যমে দ্বিগুণ লাভ হবে

আপডেট টাইম : ১১:০৩:৪৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আধুনিক কৃষি যন্ত্র ব্যবহার করে চাষাবাদের মাধ্যমে দ্বিগুণের বেশি লাভ করা সম্ভব। ফসল ফলানোর জন্য জমি চাষ, বীজ বপণ, নিড়ানি, সার দেয়া, কাটা, মাড়াই, ফসল ঝাড়া ও বস্তা প্যাকেট পর্যন্ত সব কিছুই আধুনিক কৃষি যন্ত্রের মাধ্যমে করা সম্ভব। এ পদ্ধতিতে চাষাবাদের মাধ্যমে ফসলের অপচয়ও কমে। ফলে গতানুগতিক পদ্ধতির চাষাবাদের চাইতে ফসলের বেশি ফলনও ঘরে তোলা সম্ভব। বিভিন্ন পর্যায়ের কৃষি বিজ্ঞানীদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, গতানুগতিক পদ্ধতিতে এক একর জমির ধান কাটা, মাড়াই, পরিষ্কার ও বস্তা প্যাকেটের কাজে আট হাজার ৩৩৮ টাকা খরচ হয়। সেখানে একটি মিনি কম্বাইন হারভেস্টার যন্ত্রের মাধ্যমে তিন হাজার ৯৪২ টাকায় এসব কাজ করা সম্ভব। অন্য এক হিসেবে দেখা যায়, গতানুগতিক পদ্ধতিতে এক একর জমির ধানের চারা রোপণে খরচ হয় ছয় হাজার টাকা। তবে রাইস ট্রান্সপ্লান্টার দিয়ে এক একর জমির ধানের চারা রোপণ করতে খরচ হয় মাত্র ১৬০০ টাকা। এখানে অতিরিক্ত খরচ বাঁচে চার হাজার ৪০০ টাকা।

বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, একটি মিনি রিপার দিয়ে ঘণ্টায় ৩০-৫০ শতাংশ ধান এবং ৪৫-৬০ শতাংশ জমির গম কাটা যায়। যন্ত্র দিয়ে ফসল কাটতে প্রতি একরে শ্রমিক লাগে একজন। আর গতানুগতিক পদ্ধতিতে ফসল কাটতে শ্রমিক লাগে আটজন। এ ক্ষেত্রে সময় সাশ্রয় হয় ৮৭ ভাগ।

সিডার নামক যন্ত্র দিয়ে প্রতি ঘণ্টায় ৩০-৩৫ শতাংশ জমিতে গম, ভুট্টা, পাট, ধান, ডাল ও তৈলবীজ জাতীয় শস্য বপণ করা যায়। গতানুগতিক পদ্ধতির চেয়ে আধুনিক যন্ত্র দিয়ে বীজ বপণ করতে ১০-৪০ শতাংশ বীজ কম লাগে। এতে ফসলের ফলন ১০-১৫ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। ৫০ ভাগ সময় ও আর্থিক সাশ্রয় হয়। দুই ফসলের মধ্যবর্তী সময় ৮-১০ দিন কমায়।

বেড প্লান্টার নামক যন্ত্র দিয়ে ১-২ চাষে বেড তৈরি, সার প্রয়োগ ও বীজ বপণের কাজ একই সঙ্গে করা যায়। বেডে ফসল চাষ করলে খরচ ও সময় ২৫ ভাগ কম এবং এ ক্ষেত্রে শ্রমেরও সাশ্রয় হয়। এ যন্ত্রের সাহায্য ঘণ্টায় ২৫-২৭ শতাংশ জমিতে বীজ বপণ করা যায়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ হাওর বার্তাকে জানান, কৃষি কাজে খরচ ও সময় বাঁচাতে এবং অধিক লাভ করতে আধুনিক যন্ত্র ব্যবহারের বিকল্প নেই। কৃষি কাজে সবচেয়ে শ্রম ও সময় নির্ভর কাজ হচ্ছে চারা রোপণ, বীজ বপণ ও ফসল কর্তন। এ কাজগুলো সঠিক সময়ে করতে পারলে কৃষক লাভবান হবে।

তিনি বলেন, দেশের কৃষি অনেক দূর এগিয়েছে। কৃষি উন্নয়নে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের রোল মডেল। গত ১ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘে অনুষ্ঠিত সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট কমিশনের ৫৬তম অধিবেশনের প্রাক্কালে মহাসচিবের রিপোর্টে বাংলাদেশের কৃষি উৎপাদনশীলতা, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, অতি দারিদ্র্য হ্রাসের বিষয়টি বিশেষভাবে স্থান পেয়েছে।

কৃষি তথ্য সার্ভিসের ফার্ম ব্রডকাস্টিং অফিসার কৃষিবিদ হাওর বার্তাকে জানান, কৃষিতে যন্ত্রের ব্যবহার যারা করছেন তারা নিশ্চিতভাবে দ্বিগুণের বেশি বেনিফিট পাচ্ছেন। কৃষিতে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ানোর জন্য সরকার ইতোমধ্যে কিছু কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। কৃষক যাতে গ্রুপ বা সমবায় ভিত্তিক বড় বড় যন্ত্রপাতি কিনতে পারে সে জন্য সরকার ভর্তুকির ব্যবস্থা করেছে।

তিনি আরও বলেন, হাওর ও দক্ষিণ উপকূলী অঞ্চলের কৃষকদের জন্য ৭০ ভাগ এবং অন্যান্য এলাকায় ৫০ ভাগ ছাড়ে গ্রুপ ভিত্তিক কৃষির আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা করা হয়েছে।