আবাদি জমি ও ফলনের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রমের সম্ভাবনা

হাওর বার্তা ডেস্কঃ নাটোরের কৃষকরা বোরো ধান আবাদে এখন ব্যস্ত সময় অতিক্রম করছেন। চলতি রবি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের  কাছাকাছি থাকা বর্তমানে আবাদ কার্যক্রম লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। আবাদি জমির পরিধি লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করার পাশাপাশি ফলনের সম্ভাবনাও রয়েছে আশাতীত।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলায় মোট ৫৫ হাজার ৪০১ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের মাধ্যমে দুই লাখ ১৮ হাজার ১৮৩ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

ইতোমধ্যে জেলার সাতটি উপজেলায় মোট ৫৩ হাজার ৯০৫ হেক্টরে আবাদ কার্যক্রম শেষ হয়েছে। এরমধ্যে উচ্চ ফলনশীল জাতের আবাদি জমির পরিমাণ সর্বাধিক ৫২ হাজার ৮২৩ হেক্টর, হাইব্রিড জাতের চারা রোপন করা হয়েছে মোট ১০ হাজার ৫৭ হেক্টরে এবং ২৫ হেক্টরে স্থানীয় জাত।

চলতি মৌসুমে বরাবরের মতই উচ্চ ফলনশীল বিভিন্ন ধান আবাদে কৃষকদের আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এরমধ্যে সরু জাতের জিরাশাইল বা মিনিকেট ধানের আবাদী জমি ২৮ হাজার ৮৪০ হেক্টর।

ব্রিধান-২৮ ও ব্রিধান-২৯ চাষের প্রতিও কৃষকদের আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। ব্রিধান-২৯ এ পর্যন্ত আবাদ হয়েছে ১৩ হাজার ৫৭০ হেক্টরে এবং ব্রিধান-২৮ পাঁচ হাজার ৪১৫ হেক্টরে।

নাটোরে জেলায় বোরো ধানের আবাদি জমির অর্ধেকের অধিক জমি চলনবিল অধ্যুষিত শস্য ভান্ডার খ্যাত সিংড়া উপজেলাতে। সিংড়া উপজেলায় ৩৭ হাজার ১০০ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ইতোমধ্যে সাড়ে ৩৫ হাজার হেক্টরে হাষাবাদ হয়েছে বলে আবাদ অগ্রগতির প্রতিবেদনে জানা যায়। এই উপজেলায় আগামী এক সপ্তাহ পর্যন্ত আবাদ কার্যক্রম চলবে এবং লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে অতিরিক্ত এক হাজার হেক্টর জমি চাষাবাদের আওতায় আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদুল ইসলাম।

কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে বোরো আবাদে তাঁরা লাইন লোগো পদ্ধতি ব্যবহার করছেন। এছাড়া জমিতে পাখির মাধ্যমে ক্ষতিকর

পোকামাকড় নিধনের জন্যে গাছের ডাল রোপন করে পার্চিং পদ্ধতি অনুসরণ এবং গুটি ইউরিয়ার ব্যবহারও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। লাইন লোগো পদ্ধতিতে ধানের চারা রোপন করলে আগাছা নিধনসহ জমির পরিচর্যা সহজ হয় এবং পার্চিং পদ্ধতি ও গুটি ইউরিয়ার ব্যবহারে ধানের ফলন বৃদ্ধি পায় বলে জানান সিংড়া উপজেলার বড় সাঁঐল গ্রামের কৃষক সাইফুল ইসলাম।

একই এলাকার কৃষক আবুল খায়ের এক সপ্তাহ আগে জমিতে ধানের চারা লাগিয়েছেন। গাছের গোড়ায় গোড়ায় গুটি ইউরিয়া দেওয়ার সময় তিনি বলেন, কৃষি শ্রমিকের খুব সংকট, তাই নিজেই জমিতে কাজ করছি।

নাটোর সদর উপজেলার কাফুরিয়া ইউনিয়নের চাঁদপুর কৃষি ব্লকের উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, এই ব্লকে বেশিরভাগ কৃষক সারি পদ্ধতিতে ধান রোপন করেছেন। লোগো পদ্ধতি অনুসরণ এবং পার্চিং ও গুটি ইউরিয়ার ব্যবহারও দৃশ্যমান অনেক আবাদী জমিতে। উঁচু জমিতে বোরো আবাদ কার্যক্রম শেষ হলেও বন্যা এবং জলাবদ্ধতার কারনে তুলনামূলক নীচু জমির আবাদ কার্যক্রম দেরীতে শুরু হয়েছে বলে জানান মাঠ পর্যায়ের এই কর্মকর্তা।

সিংড়া উপজেলার কুমিরা গ্রামের আদর্শ কৃষক জুলফিকার আনাম তারা চলতি মৌসুমে ১৭ বিঘা জমিতে ঝড়-বৃষ্টি সহনীয় ব্রি-২৮ ও ব্রি-২৯ জাতের ধান চাষ করেছেন।

উৎপাদনের সম্ভাবনা সূচক প্রশ্নের উত্তরে আদর্শ কৃষক তারা বলেন, বিঘা প্রতি গড়ে ৩০ মণ ফলন হবে বলে আশা করছি। সম্ভাব্য উৎপাদনের অন্তত: ৫০০ মণ ধানের সবটুকুই বীজ উৎপাদকের কাছে বিক্রি করবেন বলে অনুকূল আবহাওয়ায় উন্নত ফলনের আশাবাদ ব্যক্ত করেন এই কৃষক জানান।

নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, চলতি মৌসুমে বন্যার পানি নামতে দেরি হওয়াতে জেলার কৃষকরা বোরো আবাদে অধিক আগ্রহী হয়েছেন বলে আবাদী জমির পরিধি লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পাশাপাশি অনুকূল আবহাওয়া এবং কৃষি বিভাগের পরামর্শে প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির ফলে ধানের উৎপাদনও হবে উন্নতমানের এবং আশাতীত।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর