ঢাকা ১১:৫৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

লাউ বিক্রি করে লাখপতি হয়েছে গ্রামের কৃষক

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৩১:৪১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০১৮
  • ৩৫০ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দেড় একর জায়গার ওপর পুকুরের চার পাড়ে মাচা ভরা লাউ, কৃষকের মুখে হাসি। এ বছর সাড়ে তিন লাখ টাকার লাউ বিক্রি করেছে বলে জানান, ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের মাথিয়ারা গ্রামের সফল কৃষক তোফায়েল আহমদ। তিনি বিষমুক্ত সবজি চাষ করেন বলে বেশ পরিচিতি এলাকার হাট-বাজারে। তাই তার উৎপাদিত লাউ বাজারে নিলে অন্য কৃষকের চেয়ে অনেক আগে বিক্রি হয়ে যায়।

বিষমুক্ত সবজি ও একই জমিতে একাধিক শস্যেও চাষ করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। পরিশ্রম, সততা আর ইচ্ছাশক্তি যেকোনো মানুষকে যে সফলতার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যেতে পারে, তার জ্বলন্ত উদাহরণ চাষী তোফায়েল।

লাউয়ের মাচানের নিচে মাছ চাষ। লাউ বিক্রি শেষে ওই মাচানে করলা ও শসা চাষ করেন। তার দেখাদেখি গ্রামের অনেক লোক এখন মাছানে লাউ, নিচে মাছ এবং অন্যন্য সবজি চাষ শুরু করেছেন। তাদের অনেককে তিনি নিজে উৎসাহ ও সহযোগিতা করেছেন। তারা সবাই এখন সাবলম্বী। পাশাপাশি রয়েছে কৃষি বিভাগের উৎসাহ, উদ্বুদ্ধকরণ ও তত্বাবধান। গোটা গ্রামটা এখন যেন সবুজ চাদরে ঢাকা। এক চিলতে জমিও পতিত নেই।

পাঁচগাছিয়া ইউনিয়ন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন জানান, কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে প্রযুক্তি প্রদর্শনী, মাঠ দিবস ও উদ্বুদ্ধকরনের মাধ্যমে স্থানীয় কৃষকদের সহযোগিতা করা হয়েছে।

লাউয়ের হাইব্রিড জাত, সুষম পদ্ধতিতে সার ব্যবহার ও সেক্স ফেরোমিন প্রদ্ধতি প্রয়োগ করে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনের উপায় শেখানো হয়েছে। এসব বিষয়ে মাঠে গিয়ে কৃষকের কাজ নিয়মিত তত্বাবধান করা হয়েছে।

তোফায়েল বলেন, জীবনের শুরুটা ছিল ভিন্ন রকম। এক সময় ট্রাক্টর চালক ছিলেন। যা আয় রোজকার হতো তাই দিয়ে সংসার চালানোই কষ্টকর ছিল। কৃষি বিভাগের উৎসাহে বিশেষ করে কৃষি কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় তিনি ৯৮ সাল থেকে গত প্রায় ২০ বছর যাবত লাউ চাষসহ একটি ছোট খামার চালিয়ে আসছেন। নিজের বা পৈত্রিক কোন জমিজমা ছিল না।

তোফায়েল বলেন, প্রথমে বাড়ির পাশে ৫০ শতাংশ জমি ইজারা নিয়ে সবজি চাষ শুরু করেন। পরে দেড় একর পুকুর বন্ধক নিয়ে আরো বড় আকারে সবজি চাষ করে আসছেন। স্বামী-স্ত্রী, তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে তার (তোফায়েল) সংসার। তিনি নিজেই আয় রোজকারের একমাত্র ব্যক্তি।

বড় ছেলে পলিটেকনিক ইনষ্টিটিউটে আর্কিটেকচার বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র। এক মেয়ে নবম শ্রেণি এবং এক মেয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। ছেলেমেয়ের লেখাপড়া, সংসার খরচ সবই লাউসহ অন্যান্য সবজি চাষের আয় থেকেই হচ্ছে।

পাঁচগাছিয়া ইউনিয়ন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রণব চন্দ্র মজুমদার জানান, উদ্ধুদ্ধকরণের ফলে এ এলাকার কৃষকরা কীটনাশক বা বালাইনাশক ব্যবহার না করে জমিতে স্থাপন করেছে সেক্স ফেরোমন ফাঁদ। বিষমুক্ত সবজি চাষের ফলে মাঠে ফলন বেড়েছে এবং আয় বেড়েছে স্থানীয় কৃষকদের। তিনি জানান, এ মৌসুমে পাঁচগাছিয়ায় ১২ হেক্টর জমিতে লাউ উৎপাদন করা হয়েছে। উৎপাদিত পণ্যের মূল্য প্রায় ১৫ লাখ টাকা।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

লাউ বিক্রি করে লাখপতি হয়েছে গ্রামের কৃষক

আপডেট টাইম : ১০:৩১:৪১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দেড় একর জায়গার ওপর পুকুরের চার পাড়ে মাচা ভরা লাউ, কৃষকের মুখে হাসি। এ বছর সাড়ে তিন লাখ টাকার লাউ বিক্রি করেছে বলে জানান, ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের মাথিয়ারা গ্রামের সফল কৃষক তোফায়েল আহমদ। তিনি বিষমুক্ত সবজি চাষ করেন বলে বেশ পরিচিতি এলাকার হাট-বাজারে। তাই তার উৎপাদিত লাউ বাজারে নিলে অন্য কৃষকের চেয়ে অনেক আগে বিক্রি হয়ে যায়।

বিষমুক্ত সবজি ও একই জমিতে একাধিক শস্যেও চাষ করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। পরিশ্রম, সততা আর ইচ্ছাশক্তি যেকোনো মানুষকে যে সফলতার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যেতে পারে, তার জ্বলন্ত উদাহরণ চাষী তোফায়েল।

লাউয়ের মাচানের নিচে মাছ চাষ। লাউ বিক্রি শেষে ওই মাচানে করলা ও শসা চাষ করেন। তার দেখাদেখি গ্রামের অনেক লোক এখন মাছানে লাউ, নিচে মাছ এবং অন্যন্য সবজি চাষ শুরু করেছেন। তাদের অনেককে তিনি নিজে উৎসাহ ও সহযোগিতা করেছেন। তারা সবাই এখন সাবলম্বী। পাশাপাশি রয়েছে কৃষি বিভাগের উৎসাহ, উদ্বুদ্ধকরণ ও তত্বাবধান। গোটা গ্রামটা এখন যেন সবুজ চাদরে ঢাকা। এক চিলতে জমিও পতিত নেই।

পাঁচগাছিয়া ইউনিয়ন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন জানান, কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে প্রযুক্তি প্রদর্শনী, মাঠ দিবস ও উদ্বুদ্ধকরনের মাধ্যমে স্থানীয় কৃষকদের সহযোগিতা করা হয়েছে।

লাউয়ের হাইব্রিড জাত, সুষম পদ্ধতিতে সার ব্যবহার ও সেক্স ফেরোমিন প্রদ্ধতি প্রয়োগ করে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনের উপায় শেখানো হয়েছে। এসব বিষয়ে মাঠে গিয়ে কৃষকের কাজ নিয়মিত তত্বাবধান করা হয়েছে।

তোফায়েল বলেন, জীবনের শুরুটা ছিল ভিন্ন রকম। এক সময় ট্রাক্টর চালক ছিলেন। যা আয় রোজকার হতো তাই দিয়ে সংসার চালানোই কষ্টকর ছিল। কৃষি বিভাগের উৎসাহে বিশেষ করে কৃষি কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় তিনি ৯৮ সাল থেকে গত প্রায় ২০ বছর যাবত লাউ চাষসহ একটি ছোট খামার চালিয়ে আসছেন। নিজের বা পৈত্রিক কোন জমিজমা ছিল না।

তোফায়েল বলেন, প্রথমে বাড়ির পাশে ৫০ শতাংশ জমি ইজারা নিয়ে সবজি চাষ শুরু করেন। পরে দেড় একর পুকুর বন্ধক নিয়ে আরো বড় আকারে সবজি চাষ করে আসছেন। স্বামী-স্ত্রী, তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে তার (তোফায়েল) সংসার। তিনি নিজেই আয় রোজকারের একমাত্র ব্যক্তি।

বড় ছেলে পলিটেকনিক ইনষ্টিটিউটে আর্কিটেকচার বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র। এক মেয়ে নবম শ্রেণি এবং এক মেয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। ছেলেমেয়ের লেখাপড়া, সংসার খরচ সবই লাউসহ অন্যান্য সবজি চাষের আয় থেকেই হচ্ছে।

পাঁচগাছিয়া ইউনিয়ন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রণব চন্দ্র মজুমদার জানান, উদ্ধুদ্ধকরণের ফলে এ এলাকার কৃষকরা কীটনাশক বা বালাইনাশক ব্যবহার না করে জমিতে স্থাপন করেছে সেক্স ফেরোমন ফাঁদ। বিষমুক্ত সবজি চাষের ফলে মাঠে ফলন বেড়েছে এবং আয় বেড়েছে স্থানীয় কৃষকদের। তিনি জানান, এ মৌসুমে পাঁচগাছিয়ায় ১২ হেক্টর জমিতে লাউ উৎপাদন করা হয়েছে। উৎপাদিত পণ্যের মূল্য প্রায় ১৫ লাখ টাকা।