লাইসেন্সবিহীন ওষুধের দোকান বন্ধে দেশব্যাপী শিগগিরই অভিযান শুরু হচ্ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে রাজধানী ঢাকা থেকে প্রথমে এ অভিযান শুরু হবে। বৃহস্পতিবার বিকালে সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ‘ভেজাল ওষুধ প্রতিরোধে করণীয় সংক্রান্ত’ এক জরুরি বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের এ অভিযানের নির্দেশ দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম।
কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সারাদেশে লাইসেন্সবিহীন ওষুধের দোকানের ছড়াছড়ি। এ সব দোকান থেকে নকল ও অননুমোদিত ওষুধ বিক্রি করা হচ্ছে। এ সব লাইসেন্সবিহীন দোকান বন্ধ করতে দ্রুত সারাদেশে অভিযান পরিচালনার বিকল্প নাই।
বৈঠকে লাইসেন্সবিহীন দোকানের বিরুদ্ধে সারাদেশে দ্রুত অভিযান শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এ জন্য দেশব্যাপী লাইসেন্সবিহীন দোকান চিহ্নিত করে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে দ্রুত প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেন মন্ত্রী। শুধু তাই নয়, অভিযান শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত নতুন লাইসেন্স না দিতেও নির্দেশ দেন মন্ত্রী। কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ভেজাল, নকল বা অননুমোদিত ওষুধ বিক্রি বন্ধে আরো কঠোর হতে হবে। ভেজাল ওষুধ ও খাবার প্রতিরোধে সরকার যে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে তা অব্যাহত থাকবে। কোনোভাবেই এই অভিযান বন্ধ করা হবে না। আরো কঠোর পদক্ষেপ নিতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা কামনা করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
মন্ত্রী বলেন, শুধু লাইসেন্সবিহীন ওষুধের দোকান নয়, দেশে বড় বড় ও বিখ্যাত হাসপাতালগুলোতে ভেজাল ও অননুমোদিত ওষুধ পাওয়া বিক্রি করা হচ্ছে। এ অবস্থা হলে দেশবাসী কোথায় যাবে? নকল ও ভেজাল ওষুধ প্রতিরোধে দোকানে চিকিৎসকদের প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ বিক্রি বন্ধে জনমত সৃষ্টি ও সচেতনতার জন্য কর্মকর্তাদের বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে বলেন মন্ত্রী।
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সভাপতিত্বে বৈঠকে স্বাস্থ্যসচিব সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোস্তাফিজুর রহমান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়েল উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল আহসান খান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. দীন মো. নুরুল হক, বাংলাদেশ ফার্মাসিটিক্যাল ইমপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সুকুমার ঘোষ এমপি, অ্যাসোসিয়েশন ড্রাগস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এহসানুল কবীর, বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক বোর্ডের চেয়ারম্যান ডা. দিলীপ কুমার রায়, বাংলাদেশ ইউনানী বোর্ডের চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলাম মুন্সীসহ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতি, বাংলাদেশ ভেষজ চিকিৎসক সমিতির প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
বৈঠকে মোহাম্মদ নাসিম জাতীয় ওষুধ নীতির সংশোধনে সরকারের উদ্যোগের কথা জানিয়ে বলেন, নতুন ওষুধ নীতিতেও ভেজাল ও নকল ওষুধ বিপনণের বিরুদ্ধে কঠোর বিধান রাখা হবে। দেশে ওষুধ ও খাবারের নকল বন্ধে বেশ কিছুদিন ধরে সরকার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সাহায্য নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় অপরাধীদের শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। ভেজাল ওষুধের কারখানা বন্ধ করা হচ্ছে। সীমিত জনবল ও সম্পদ নিয়ে সরকারের একার পক্ষে কাজটি করা দুরূহ। এজন্য ওষুধ প্রশাসনকে আরো কার্যকর ও শক্তিশালী করা হবে। প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দিয়ে জেলা পর্যায়ের অফিসকে আরো শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
তিনি আরো বলেন, শাস্তি পাওয়ার পরও ব্যবসায়ীরা আবারো একই অপরাধ করছে। এতে করে প্রকৃত ব্যবসায়ীদের জন্যও বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এই প্রবণতা বন্ধ করতে সর্বস্তরের জনগণকে নিয়ে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য সংশ্লিষ্ট মহলের প্রতি আহ্বান জানান মোহাম্মদ নাসিম।