মহাদেবপুরে চলতি আমন ধান চাষ মৌসুমের মাঝামাঝি এই সময়ে মাঠের পর মাঠে শোভা পাচ্ছে সবুজের সমারোহ। আর এ সময়েই জেলার বিভিন্ন মাঠের আমন ধানের নকলকে তরতাজা গাছগুলোতে তাই এখন পচামিনা ও পোকা-মাকড় দমনে কীটনাশক প্রয়োগে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন কৃষকরা।
বিশেষ করে জেলার মহাদেবপুর উপজেলায় চলতি আমন ধান চাষ মৌসুমে পচামিনা ও পোকা-মাকড় দমনে কীটনাশক প্রয়োগে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কৃষকরা।
মহাদেবপুর উপজেলার বেশ কিছু কৃষক জানান, তারা এবার আমন মৌসুমের শুরুতেই বুকভরা আশা নিয়ে দিন ভর মাথার ঘাম পায়ে ফেলে মাঠে কাজ করছেন।
মহাদেবপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওমর ফারুক জানিয়েছেন, এ বছর চলতি আমন মৌসুমে শুধুমাত্র মহাদেবপুর উপজেলার ১০ টি ইউনিয়নে সর্ব মোট ২৭ হাজার ৭ শ ৬০ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ করেছে কৃষকরা। তবে এর মধ্যে উপশী জাতের ধান ২০ হাজার ৩ শ হেক্টর ও বাকি গুলো রয়েছে দেশীয় আতব জাতের ধান।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে আরো জানাগেছে, অন্যান্য বছর আকাশের পানির সংকট থাকলেও চলতি বছর বৃষ্টিপাত হওয়ায় এখন পর্যন্ত পানির অভাব থেকে মুক্ত উপজেলার কৃষকরা।
মহাদেবপুর উপজেলার চকরাজা, দাশড়া, সরস্বতীপুর, শ্যামপুর, খোর্দ্দনারায়নপুর, বাগধানা, নলবলো, ধনজইল ও চৌমাশিয়া সহ বিভিন্ন মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মাঠের পর মাঠ সবুজের সমারোহ যেন দোল খাচ্ছে।
বুধবার সকাল ১০ টারদিকে উপজেলার চৌমাশিয়া গ্রামের মাঠে সরজমিনে গিয়ে দেখা গেলো ফজলু নামের এক যুবক পিঠে স্প্রে মেশিন সেট করে আমন ধান ক্ষেতে কীটনাশক প্রয়োগ করছেন তার কাছে গিয়ে এ প্রতিবেদক জমিতে কি স্প্রে করছেন জানতে চাইলে তিনি জানালেন, ‘আমন ধান চাষ মৌসুমের এটাঁ মাঝামাঝি সময় , এ সময়েই ধান গোর গামরে বসবে ঠিক এ সময়েই ধানের গাছে পচামিনা রোগসহ ও বিভিন্ন পোকা-মাকড় আক্রমন করে থাকে।’ তিনি আরো জানান, যাতে পচামিনা রোগ ও পোকা-মাকড় আক্রমন না করতে পারে এজন্য এলাকার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আরিফুজ্জামান এর পরামর্শে আগেই ধান গাছে কিটনাশক স্প্রে করা হচ্ছে। একই মাঠে একটু দূরে গিয়ে আমন ধান ক্ষেতে কৃষক সাজ্জাদ হোসেন মন্ডলের সাথে দেখা হলে পরিচয় পাওয়ার পর তিনি জানালেন, ‘অন্নান্য বছরের তুলনায় এবারে আবহাওয়া অনকূলে থাকায় এখন পর্যন্ত আমন ধান ক্ষেত ভালই আছে ইতিমধ্যে ধান গামরে বসতে শুরু করেছে’ বলে তিনি হতাশার সুরে জানালেন, ‘খরচের তুলনায় বাজারে ধানের দাম নেই গত ইরি-বোরো মৌসুমের ধান এখনো বিক্রি করতে পারিনি তবে কয়েক দিন আগে কাটা-মাড়াই করে দেড় বিঘা জমির মোট ১৫ মন বর্ষালী ধান পেয়েছি সেটা মাত্র ৪ শত টাকা প্রতি মন দরে লোকসান দিয়ে বিক্রি করেছি আমার খরচের টাকাও উঠেনি বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
এছাড়া এ উপজেলার বেশ কয়েক জন সাধারণ কৃষকদের সাথে আলাপকালে তারা বলেন, ‘গত বছর আমন মৌসুম ও গত ইরি-বোরো মৌসমসহ বর্ষালী ধানের ন্যায্যদাম না পাওয়ায় অনেক চাষীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন । আমন ও ইরি-বোরো মৌসুমে জমিতে ধানের বাম্পার ফলন হলেও গত আমন মৌসমে ধান বিক্রি করতে হয়েছে মন প্রতি মাত্র ৬শ থেকে সাড়ে ৬শর টাকার মধ্যে আর ইরি-বোরো মৌসুমের শুধুমাত্র খাটো জিরা ধান মাঝে মাঝে প্রতিমন ৭ থেকে ৮ শত টাকা দরে কেনাবেচা হলেও লম্বা জিরা ও ব্রি-আটাশ সহ অনান্ন্য প্রজাতির ধান ৫শ থেকে সাড়ে ৬শর মধ্যে কেনাবেচা হয়েছে। এমনকি পরবর্তিতে দাম বাড়বে বলে লোকসানের ভয়ে যে সব কৃষকরা ধান রেখেছেন তারা এখনও ধান বিক্রি করতে পারেননি বলেও জানিয়েছেন তারা। তবে আগামীতে আশানুরূপ ধানের দাম পাবেন এ আশাও ব্যক্ত করেছেন তারা।
অপরদিকে আমন ধান লাগানো থেকে ঘরে তোলা পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বা বড় ধরনের কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগ না দেখা দিলে আমন ধানের বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মহাদেবপুরের কর্মকর্তারা।