হাওর বার্তা ডেস্কঃ তার দল এবারের বিপিএলে এক নম্বর পজিশনে নেই। দ্বিতীয় কিংবা তিন নম্বরেও নেই। রংপুর রাইডার্স এখন পয়েন্ট টেবিলে চার নম্বরে। আর মাশরাফি বিন মর্তুজাও টপ স্কোর কিংবা সর্বাধিক উইকেট শিকারি নন। তারপরও এখন বিপিএলের সবচেয়ে আলোচিত পারফরমার এবং সফলতম অধিনায়কের নাম ‘মাশরাফি।’
অধিনায়ক হিসেবে অর্জন, প্রাপ্তি এবং দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে এগিয়ে নেয়ার অসামান্য ক্ষমতায় মাশরাফিই শিরোনামে । বললে বাড়াবাড়ি হবে না; ক্রিকেটার, বোলার, ব্যাটসম্যান, ফিল্ডার আর অধিনায়ক মাশরাফির এবারের জ্বল জ্বলে পারফরমেন্স বিপিএলের চেয়েও বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। মাশরাফির কৃতিত্ব, তার পারফরমেন্স ও ব্যাট-বল হাতে সময় মতো জ্বলে ওঠে দল জেতানোর কথাই উচ্চারিত হচ্ছে বেশি। কিন্তু নির্মম সত্য হলো যে, টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে মাশরাফি এত উজ্জ্বল আর সফল, সেই ফরম্যাটেই তিনি নেই জাতীয় দলে। ‘সাবেকের’ তকমা গায়ে এঁটে ফেলে চন্ডিকা হাথুরুসিংহের নীল নকশায় মনের দুঃখে অধিনায়কত্ব ছাড়ার পাশাপাশি ক্রিকেটের সবচেয়ে ছেট ফরম্যাটে জাতীয় দলে না খেলার ঘোষণা দিয়েছেন মাশরাফি।
এক কথায়, লাল সবুজ জার্সি গায়ে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে আর বাংলাদেশের হয়ে খেলছেন না, নেতৃত্বও দিচ্ছেন না এ অতি কার্যকর পারফরমার। সফলতম অধিনায়ক।
শুধু রংপুর রাইডার্স কিংবা মাশরাফি ভক্তরাই নন, সারা দেশের ক্রিকেট অনুরাগী এবং এবারের বিপিএল পাখির চোখে পরখ করা সব দেশি ও বিদেশি বিশেষজ্ঞরাই মধ্য তিরিশেও মাশরাফির এমন চপলতা, ক্ষিপ্রতা, ভালো খেলার অদম্য বাসনা এবং দল জিতানো দৃঢ় সংকল্প দেখে অভিভূত।
সবার একটাই কথা, আরে এ ক্রিকেটের এ ফরম্যাটে এখনো মাশরাফি দারুণ পারফরমার। এখানো শরীরের ওপর ধকল পড়ে কম। ওয়ানডের মতো ১০ ওভার বোলিং করতে হয় না। চার ওভারই যথেষ্ট। মাঠে ২০ ওভারের বেশি ফিল্ডিংও করতে হয় না। আর মাশরাফি যে সব পজিশনে নামেন তাতে সর্বোচ্চ ২৫-৩০ বলের বেশি ব্যাট করার সুযোগও নেই। সব মিলে ওয়ানডের চেয়ে অনেক কম শক্তি ও সামর্থর প্রয়োজন। যা মাশরাফির জন্য প্লাস পয়েন্ট। তার চেয়ে বড় কথা তার পারফরমেন্সটা এখনো বেশ ভালো।
আর অধিনায়ক হিসেবে তিনিই সেরা। সম সাময়িক আর কেউ তার ধারে কাছে নেই। তাহলে মাশরাফিকে আবার টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক করা হোক। তাকে তার যোগ্য মূল্যায়ন করা হোক।
‘আচ্ছা, মাশরাফিই তো সব দিক থেকে সেরা। টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক হিসেবে তাকেই মানায়। তাকে আবার অধিনায়ক করা হলে কেমন? সেটাই তো বোধ করি সেরা ও সময়োচিত সিদ্ধান্ত হবে।’-গত ক’দিন ধরে বন্দর নগরী, রাজধানী ঢাকা ছাপিয়ে সারা দেশে অনেকের মুখেই এমন কথা। মাশরাফির কাছেও নানা মহল থেকে এমন প্রস্তাব গেছে।
তাকে আবার জাতীয় দলের টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক হবার প্রস্তাব দিয়েছেন অনেকে। এ নিয়ে মাশরাফি কোনো রকম মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকলেও তার একান্ত ঘনিষ্ট মহল থেকে জানা গেছে, বোর্ডের শীর্ষ কর্তাদের কেউ কেউ নাকি এখন আবার মাশরাফির কথাই ভাবছেন।
তার যোগ্য ও দক্ষ নেতৃত্ব আর উজ্জ্বল ও অতি কার্যকর পারফরমেন্স-সব মিলে তার কাঁধে আবারো টি টোয়েন্টি দল পরিচালনার দায়িত্ব দেবার চিন্তা-ভাবনা চলছে। মাশরাফির কাছে সিদ্ধান্ত পাল্টানোর অনুরোধও আসছে প্রচুর।
একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, মাশরাফি নেতৃত্ব থেকে সরে দাড়ানোর পর যার কাঁধে অধিনায়কত্বর গুরু দায়িত্ব বর্তেছে, সেই টি-টোয়েনিট ফরম্যাটে বাংলাদেশের সেরা ও এক নম্বর স্পেশালিস্ট পারফরমার সাকিব আল হাসানও মাশরাফিকেই অধিনায়ক হিসেবে দেখতে আগ্রহী।
ভিতরের খবর, কতদিন আগে সাকিব সরাসরিই মাশরাফিকে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে আবার জাতীয় দলের অধিনায়ক হবার অনুরোধ করেন। এ নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে সরাসরি কোনোরকম মন্তব্য করতে রাজি হননি মাশরাফি।
তবে কাছের মহল থেকে জানা , মাশরাফির ভিতরে চাপা কষ্ট ও দুঃখ আছে। তাকে যে কোচ হাথুরুসিংহের ইচ্ছেতেই শেষ পর্যন্ত টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট থেকে সরে যেতে হয়েছে, এ কথা নতুন করে বলার অবকাশ নেই। মাশরাফিরও খুব ভালো জানা তা। তবে এ নিয়ে সরাসরি কোনো তির্যক মন্তব্য করেননি মাশরাফি।
হাব ভাবে বোঝা গেছে, সাবেক কোচ হাথুরুসিংহেই চাননি মাশরাফি আর টি-টোয়েন্টি খেলুক। দুঃখজনক হলেও সত্য, হাথুরুর নীল নকশা বাস্তব রুপ পেয়েছে বোর্ড শীর্ষ কর্তাদের অনুমোদনেই। বোর্ড সভাপতি, ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান এবং নীতি নির্ধারক মহলের কেউ মাশরাফিকে রেখে দেবার জন্য এগিয়ে আসেননি। মুখে কিছু না বললেও তাদেরও মনে হচ্ছিল , মাশরাফি ‘ডেড হর্স।’ তাকে দিয়ে হয়ত আর ঘোর দৌড় চলবে না।
কিন্তু এবারের বিপিএল চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে, ভালো খেলার অদম্য বাসনা আর সামর্থের সব টুকু নিংড়ে মাশরাফি এখনো অনেক ভালো খেলার সামর্থ রাখেন। দলকে জেতানোর পর্যাপ্ত ক্ষমতাও রাখেন। মুখে কিছু না বললেও জানা গেছে, এটাই মাশরাফির দুঃখ। তখন তাকে থেকে যাবার কথা বলা হয়নি। তাই আপাততঃ সিদ্ধান্ত পাল্টে আবার জাতীয় দলের টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক হবার চিন্তা নেই মাথায়।