ঢাকা ০৫:১০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর চুক্তি চূড়ান্ত করেছে বাংলাদেশ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৪০:২৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ নভেম্বর ২০১৭
  • ৩২১ বার
হাওর বার্তা ডেস্কঃ অনেকটা ছাড় দিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর চুক্তি চূড়ান্ত করেছে বাংলাদেশ। মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোতে বুধবার দু’দেশের মন্ত্রী ও সচিবদের মধ্যে দফায় দফায় আলোচনার পর ‘অ্যারেঞ্জমন্ট’ নামের চুক্তিটি চূড়ান্ত হয়েছে। আজ চুক্তিটি সই হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চির সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর একটি বৈঠকের কথা রয়েছে। বৈঠকের পরই চুক্তি হতে পারে।
মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলরের দফতরের মন্ত্রী খিও তিন্ত সোয়ের সঙ্গে বৈঠকের পর বুধবারের আলোচনা শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমাদের মধ্যে গতকাল (বুধবার) ভালো আলোচনা হয়েছে। আজ (বৃহস্পতিবার) চুক্তিটি সই করার ব্যাপারে আশা করছি।’ বিকাল ৫টা ১০ মিনিটে শুরু হওয়া দুই মন্ত্রীর বৈঠক সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে শেষ হয়। তার আগে দুই মন্ত্রী একান্তে লম্বা সময় বৈঠক করেন।
আগামীকাল পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী দেশে ফিরবেন বলে জানা গেছে। গতকাল দু’দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকের আগে কর্মকর্তারা বসে চুক্তির শর্ত অনেকটা চূড়ান্ত করেন। এদিকে, চুক্তির শর্ত সম্পর্কে জানতে চাইলে নেপিদো থেকে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা গতকাল রাতে হাওর বার্তাকে বলেন, ‘চুক্তি চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে উভয়পক্ষ কিছুটা ছাড় দিয়েছে। বাংলাদেশের প্রস্তাব ছিল, জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরসহ সব উন্নয়ন সহযোগীদের প্রত্যাবসন প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। মিয়ানমার শেষ পর্যন্ত শুধু ইউএনএইচসিআরকে প্রয়োজনমতো কাজে লাগাবে বলে সম্মত হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘চুক্তি সই হওয়ার ২ মাসের মধ্যে প্রত্যাবাসন শুরু হবে। বাংলাদেশ চেয়েছিল কবে নাগাদ প্রত্যাবাসন শেষ হবে তার একটা সময়সীমা। কিন্তু মিয়ানমার এমন সময়সীমা দিতে রাজি হয়নি। তাছাড়া, গত বছরের অক্টোবরের পরে আসা রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার বিষয়েই ফোকাস থাকবে। পরবর্তীতে সব রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হবে।’
এর আগে গত মঙ্গলবার মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া শুরুর ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, এ বিষয়ে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে চলতি সপ্তাহেই একটি স্মারক সই হবে। তার ভাষায় এরপরই বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া শরণার্থীদের ফিরিয়ে নেয়া সম্ভব হবে। তবে তিনি এও বলেন যে, কোনো কিছুই রাতারাতি করা সম্ভব নয়। অগ্রগতি অর্জিত হচ্ছে ধীরে ধীরে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ চুক্তি চূড়ান্ত করার ব্যাপারে দু’দেশের কর্মকর্তারা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত কাজ করেছেন। নেপিদোতে বুধবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দু’দেশের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা আলোচনা শুরু করেন। এ বৈঠক স্থানীয় সময় দুপুর সোয়া ১টায় শেষ হয়। বৈঠকে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক, মিয়ানমারে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সুফিউর রহমানসহ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মন্ত্রী মাহমুদ আলী ও সোয়ে আজ আবারও এ বিষয়ে আলোচনায় বসবেন বলে জানা গেছে। তারপর সু চির সঙ্গে বৈঠক হবে। বৈঠকে দু’পক্ষের মধ্যে চলমান আলোচনায় রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর লক্ষ্যে যাচাই-বাছাই করার জন্য যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের বিষয় অগ্রাধিকার পাচ্ছে। পাশাপাশি, কী প্রক্রিয়ায় এ প্রত্যাবাসন চলবে সেটিও আলোচনা হয়। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো পুরোপুরি শেষ হওয়ার সময়সীমা চাওয়া হচ্ছে। তবে উভয়পক্ষ এ ব্যাপারে অনেক অগ্রগতি করেছে। সবকিছু ঠিক থাকলে বৃহস্পতিবার চুক্তি সই হতে পারে।
মিয়ানমার প্রথমে দু’দেশের মধ্যে ১৯৯২ সালের চুক্তির আলোকে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার কথা বলেছিল। বাংলাদেশ বলেছে, সেই সময় এবং এখনকার চ্যালেঞ্জ এক নয়। ওই সময় রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর পোড়ানো হয়নি। বাংলাদেশ একটি নতুন চুক্তির খসড়া মিয়ানমারের কাছে আগেই দিয়েছে। অক্টোবরে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলরের দফতরের মন্ত্রী খিও তিন্ত সোয়ে বাংলাদেশ সফরে এলে তার হাতে বাংলাদেশ এ খসড়া চুক্তি তুলে দেয়। ওই চুক্তিতে নতুন হিসেবে ছিল রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক অংশীদারদের অন্তর্ভুক্তি। এছাড়াও, মিয়ানমারের তরফে প্রস্তাব ছিল যে, গত বছরের অক্টোবরের পর যেসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে তাদেরই শুধু মিয়ানমার ফেরত নেবে। তবে বাংলাদেশ বলেছে, সব রোহিঙ্গাকেই ফেরত নিতে হবে। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রস্তাবিত নতুন চুক্তির কিছু অংশ সংশোধন করে নতুন চুক্তির ব্যাপারে মিয়ানমার রাজি হয়েছে। এখন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর অন্তর্ভুক্ত থাকছে।
রোহিঙ্গাদের ওপর নিষ্ঠুর দমন-পীড়নের কারণে বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় উঠে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে প্রেসিডেন্সিয়াল স্টেটমেন্টে সহিংসতা বন্ধ করার আহ্বান জানানো হয়। এছাড়াও, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে তৃতীয় কমিটি নামে পরিচিত মানবাধিকার কমিটিতে রোহিঙ্গা সংকট নিরসনের লক্ষ্যে ভোট অনুষ্ঠিত হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সহ ১৩৫ দেশ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়। চীন ও রাশিয়াসহ ১০ দেশ প্রস্তাবের বিপক্ষে এবং ভারত, জাপান, ইরানসহ ২৬ দেশ ভোটদানে বিরত কিংবা অনুপস্থিত ছিল। এ প্রস্তাবে অবিলম্বে রাখাইনে সহিংসতা বন্ধ, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়া এবং কফি আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়নের আহ্বান জানানো হয়।
এর আগে গতকাল দুপুরে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকের পর বার্নিকাট হাওর বার্তাকে বলেন, রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে কি হচ্ছে সে বিষয়ে জানার লক্ষ্যে তিনি এ বৈঠক করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চায় রোহিঙ্গারা নিরাপদে স্বেচ্ছায় রাখাইন রাজ্যে নিজগৃহে ফিরে যাক। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার একটা সময়সীমাও থাকা প্রয়োজন। রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে কিনা জানতে চাইলে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, মিয়ানমার দেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্র কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে না। তবে যারা এ সংকটের জন্যে দায়ী তাদের টার্গেট করে নিষেধাজ্ঞা আরোপের সম্ভাবনা আছে।
এশিয়া ও ইউরোপের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের আসেম বৈঠকের পর ইইউ অভিন্ন নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্রবিষয়ক উচ্চপ্রতিনিধি ফেডেরিকা মোঘেরিনি সাংবাদিকদের বলেন যে, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে একটি চুক্তিতে উপনীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, ইইউ এ প্রক্রিয়াকে সমর্থন দিতে প্রস্তুত রয়েছে। তিনি আরও বলেন যে, কফি আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়নে সু চি আগ্রহী আছেন। মোঘেরিনি জানান, সু চির সঙ্গে তার বৈঠকে উৎসাহব্যঞ্জক অনেক কিছু রয়েছে।
এদিকে, চীনের পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল যে, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোকে চীন সমর্থন করে। চীন চায়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ দ্বিপক্ষীয় প্রক্রিয়াকে সমর্থন করুক। পাশাপাশি, রাখাইনে আর্থসামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে সংকটের স্থায়ী সমাধান করতে হবে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানিয়েছেন যে, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উভয়পক্ষ এ প্রস্তাবে রাজি হয়েছে।
Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর চুক্তি চূড়ান্ত করেছে বাংলাদেশ

আপডেট টাইম : ১১:৪০:২৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ নভেম্বর ২০১৭
হাওর বার্তা ডেস্কঃ অনেকটা ছাড় দিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর চুক্তি চূড়ান্ত করেছে বাংলাদেশ। মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোতে বুধবার দু’দেশের মন্ত্রী ও সচিবদের মধ্যে দফায় দফায় আলোচনার পর ‘অ্যারেঞ্জমন্ট’ নামের চুক্তিটি চূড়ান্ত হয়েছে। আজ চুক্তিটি সই হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চির সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর একটি বৈঠকের কথা রয়েছে। বৈঠকের পরই চুক্তি হতে পারে।
মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলরের দফতরের মন্ত্রী খিও তিন্ত সোয়ের সঙ্গে বৈঠকের পর বুধবারের আলোচনা শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমাদের মধ্যে গতকাল (বুধবার) ভালো আলোচনা হয়েছে। আজ (বৃহস্পতিবার) চুক্তিটি সই করার ব্যাপারে আশা করছি।’ বিকাল ৫টা ১০ মিনিটে শুরু হওয়া দুই মন্ত্রীর বৈঠক সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে শেষ হয়। তার আগে দুই মন্ত্রী একান্তে লম্বা সময় বৈঠক করেন।
আগামীকাল পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী দেশে ফিরবেন বলে জানা গেছে। গতকাল দু’দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকের আগে কর্মকর্তারা বসে চুক্তির শর্ত অনেকটা চূড়ান্ত করেন। এদিকে, চুক্তির শর্ত সম্পর্কে জানতে চাইলে নেপিদো থেকে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা গতকাল রাতে হাওর বার্তাকে বলেন, ‘চুক্তি চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে উভয়পক্ষ কিছুটা ছাড় দিয়েছে। বাংলাদেশের প্রস্তাব ছিল, জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরসহ সব উন্নয়ন সহযোগীদের প্রত্যাবসন প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। মিয়ানমার শেষ পর্যন্ত শুধু ইউএনএইচসিআরকে প্রয়োজনমতো কাজে লাগাবে বলে সম্মত হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘চুক্তি সই হওয়ার ২ মাসের মধ্যে প্রত্যাবাসন শুরু হবে। বাংলাদেশ চেয়েছিল কবে নাগাদ প্রত্যাবাসন শেষ হবে তার একটা সময়সীমা। কিন্তু মিয়ানমার এমন সময়সীমা দিতে রাজি হয়নি। তাছাড়া, গত বছরের অক্টোবরের পরে আসা রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার বিষয়েই ফোকাস থাকবে। পরবর্তীতে সব রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হবে।’
এর আগে গত মঙ্গলবার মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া শুরুর ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, এ বিষয়ে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে চলতি সপ্তাহেই একটি স্মারক সই হবে। তার ভাষায় এরপরই বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া শরণার্থীদের ফিরিয়ে নেয়া সম্ভব হবে। তবে তিনি এও বলেন যে, কোনো কিছুই রাতারাতি করা সম্ভব নয়। অগ্রগতি অর্জিত হচ্ছে ধীরে ধীরে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ চুক্তি চূড়ান্ত করার ব্যাপারে দু’দেশের কর্মকর্তারা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত কাজ করেছেন। নেপিদোতে বুধবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দু’দেশের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা আলোচনা শুরু করেন। এ বৈঠক স্থানীয় সময় দুপুর সোয়া ১টায় শেষ হয়। বৈঠকে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক, মিয়ানমারে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সুফিউর রহমানসহ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মন্ত্রী মাহমুদ আলী ও সোয়ে আজ আবারও এ বিষয়ে আলোচনায় বসবেন বলে জানা গেছে। তারপর সু চির সঙ্গে বৈঠক হবে। বৈঠকে দু’পক্ষের মধ্যে চলমান আলোচনায় রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর লক্ষ্যে যাচাই-বাছাই করার জন্য যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের বিষয় অগ্রাধিকার পাচ্ছে। পাশাপাশি, কী প্রক্রিয়ায় এ প্রত্যাবাসন চলবে সেটিও আলোচনা হয়। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো পুরোপুরি শেষ হওয়ার সময়সীমা চাওয়া হচ্ছে। তবে উভয়পক্ষ এ ব্যাপারে অনেক অগ্রগতি করেছে। সবকিছু ঠিক থাকলে বৃহস্পতিবার চুক্তি সই হতে পারে।
মিয়ানমার প্রথমে দু’দেশের মধ্যে ১৯৯২ সালের চুক্তির আলোকে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার কথা বলেছিল। বাংলাদেশ বলেছে, সেই সময় এবং এখনকার চ্যালেঞ্জ এক নয়। ওই সময় রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর পোড়ানো হয়নি। বাংলাদেশ একটি নতুন চুক্তির খসড়া মিয়ানমারের কাছে আগেই দিয়েছে। অক্টোবরে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলরের দফতরের মন্ত্রী খিও তিন্ত সোয়ে বাংলাদেশ সফরে এলে তার হাতে বাংলাদেশ এ খসড়া চুক্তি তুলে দেয়। ওই চুক্তিতে নতুন হিসেবে ছিল রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক অংশীদারদের অন্তর্ভুক্তি। এছাড়াও, মিয়ানমারের তরফে প্রস্তাব ছিল যে, গত বছরের অক্টোবরের পর যেসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে তাদেরই শুধু মিয়ানমার ফেরত নেবে। তবে বাংলাদেশ বলেছে, সব রোহিঙ্গাকেই ফেরত নিতে হবে। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রস্তাবিত নতুন চুক্তির কিছু অংশ সংশোধন করে নতুন চুক্তির ব্যাপারে মিয়ানমার রাজি হয়েছে। এখন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর অন্তর্ভুক্ত থাকছে।
রোহিঙ্গাদের ওপর নিষ্ঠুর দমন-পীড়নের কারণে বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় উঠে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে প্রেসিডেন্সিয়াল স্টেটমেন্টে সহিংসতা বন্ধ করার আহ্বান জানানো হয়। এছাড়াও, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে তৃতীয় কমিটি নামে পরিচিত মানবাধিকার কমিটিতে রোহিঙ্গা সংকট নিরসনের লক্ষ্যে ভোট অনুষ্ঠিত হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সহ ১৩৫ দেশ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়। চীন ও রাশিয়াসহ ১০ দেশ প্রস্তাবের বিপক্ষে এবং ভারত, জাপান, ইরানসহ ২৬ দেশ ভোটদানে বিরত কিংবা অনুপস্থিত ছিল। এ প্রস্তাবে অবিলম্বে রাখাইনে সহিংসতা বন্ধ, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়া এবং কফি আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়নের আহ্বান জানানো হয়।
এর আগে গতকাল দুপুরে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকের পর বার্নিকাট হাওর বার্তাকে বলেন, রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে কি হচ্ছে সে বিষয়ে জানার লক্ষ্যে তিনি এ বৈঠক করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চায় রোহিঙ্গারা নিরাপদে স্বেচ্ছায় রাখাইন রাজ্যে নিজগৃহে ফিরে যাক। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার একটা সময়সীমাও থাকা প্রয়োজন। রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে কিনা জানতে চাইলে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, মিয়ানমার দেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্র কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে না। তবে যারা এ সংকটের জন্যে দায়ী তাদের টার্গেট করে নিষেধাজ্ঞা আরোপের সম্ভাবনা আছে।
এশিয়া ও ইউরোপের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের আসেম বৈঠকের পর ইইউ অভিন্ন নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্রবিষয়ক উচ্চপ্রতিনিধি ফেডেরিকা মোঘেরিনি সাংবাদিকদের বলেন যে, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে একটি চুক্তিতে উপনীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, ইইউ এ প্রক্রিয়াকে সমর্থন দিতে প্রস্তুত রয়েছে। তিনি আরও বলেন যে, কফি আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়নে সু চি আগ্রহী আছেন। মোঘেরিনি জানান, সু চির সঙ্গে তার বৈঠকে উৎসাহব্যঞ্জক অনেক কিছু রয়েছে।
এদিকে, চীনের পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল যে, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোকে চীন সমর্থন করে। চীন চায়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ দ্বিপক্ষীয় প্রক্রিয়াকে সমর্থন করুক। পাশাপাশি, রাখাইনে আর্থসামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে সংকটের স্থায়ী সমাধান করতে হবে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানিয়েছেন যে, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উভয়পক্ষ এ প্রস্তাবে রাজি হয়েছে।